বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামো
বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামো আলোচনা করার পূর্বে পরিবার প্রত্যয়টি নিয়ে আলোচনা করা
প্রয়োজন। পরিবার কাকে বলে এবং পরিবারের প্রকারভেদ আমরা পূর্বের পাঠে আলোচনা করেছি।
একথা সত্য যে পিতা-মাতা ও সন্তানসহ পরিবার নামক গোষ্ঠী পৃথিবীর সর্বত্র বিদ্যমান। বাংলাদেশের
প্রেক্ষাপটে পরিবার হলো এমন একটি ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন যেখানে বৈবাহিক এবং রক্ত সম্পর্কসূত্রে
স্বামী-স্ত্রী তাদের অবিবাহিত সন্তানসহ এবং ক্ষেত্র বিশেষে সন্তানাদির স্ত্রী-পরিজনসহ বসবাস করে
থাকে। বর্তমানে অবশ্য পরিবারের পাশাপাশি খানা (যড়ঁংবযড়ষফ) প্রত্যয়টি সমাজবিজ্ঞান গবেষণায়
ব্যবহৃত হচ্ছে। খানা নি¤œলিখিত তিনটি উপাদানের দ্বারা তৈরী হয় ঃ
১. একই চুলায় রান্না অর্থাৎ একই হাঁড়ি থেকে যারা একত্রে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে;
২. একটি সুনিদিষ্ট বাজেট দ্বারা এ খাদ্য গ্রহণ সম্ভব হয় যেখানে আয়-ব্যয়ে সবাই একত্রে অংশ গ্রহণ
করে থাকে, এবং
৩. হাঁড়িকে সচল রাখতে প্রত্যেকে ট্যাক্স প্রদানে বাধ্য থাকে।
একথা বলা যায়, খানায় যারা বসবাস করেন তারা মূলতঃ পরিবারই গঠন করেন। তাই আধুনিক
পরিবারকে সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার সুবিধার্থে খানা-পরিবার বলা হয়। এবার আসা যাক
বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামো আলোচনায়। বাংলাদেশের পরিবারের নির্দিষ্ট কোন কাঠামো নেই যা
স্থায়ী। বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামোর নিæলিখিত বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় ঃ
১. ধর্মগত বিভিন্নতা,
২. এলাকার (শহর/গ্রাম) বিভিন্নতা;
৩. ভ‚মিগত (সমতল/উচুঁ) বিভিন্নতা;
৪. অর্থনৈতিক শ্রেণীমর্যাদার বিভিন্নতা, ইত্যাদি ।
বাংলাদেশের পরিবার কাঠামো আলোচনায় প্রাধান্য পায় উপরোক্ত বিভিন্নতাগুলো।
অণুপরিবার ও যৌথ পরিবার
ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারগুলো যৌথ পরিবারের আওতাভুক্ত। তবে শহরাঞ্চলের
পরিবারগুলোকে অণু পরিবার বলা যেতে পারে। গ্রামাঞ্চলে ঐতিহ্যগত পরিবারগুলো এখন ভেঙ্গে
যাচ্ছে। ভেঙ্গে যাওয়ার পেছনে অবশ্য অনেক কারণ রয়েছে, যেমন ঃ অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, সম্পত্তি
বন্টন পেশাগত বিভিন্নতা, ব্যাক্তিত্বের সংঘাত, সহসা আগত আধুনিকতার ছোঁয়া ইত্যাদি। তবে
গ্রামাঞ্চলের মুসলিম পরিবারগুলোর তুলনায় হিন্দুপরিবারগুলো এখনও যৌথ কাঠামোর আওতাভুক্ত ।
শহরাঞ্চলেও আজকাল যৌথ পরিবারের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। অনেক সময় শহরাঞ্চলের
অনুপরিবারগুলো যৌথ পরিবারে রুপান্তরিত হয়ে যায় যখন গ্রামাঞ্চল থেকে জ্ঞাতিসম্পর্কীয় আত্বীয়
স্বজন অণুপরিবারের সঙ্গে বসবাস আরম্ভ করে।
পিতৃপ্রধান পরিবার
বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামো পিতৃপ্রধান। অনেকে অবশ্য এমন ধারণা পোষণ করেন যে পিতৃপ্রধান
পরিবারে নারীর মর্যাদা দেয়া হয় না, তা ঠিক নয়। গ্রামাঞ্চলের পরিবারগুলো বেশীর ভাগই
পিতৃপ্রধান। শহরাঞ্চলের পরিবারগুলো পিতৃপ্রধান হলেও উচ্চ শিক্ষার প্রভাব এবং উদার মনোভঙ্গীর
কারণে পরিবারগুলোতে এক ধরনের সমতাবোধ তৈরী হয়েছে। ফলে বাহ্যিক দিক থেকে পরিবার
কাঠামো পিতৃপ্রধান মনে হলেও পরিবারের যাবতীয় সিদ্বান্তে স্বামী-স্ত্রীর মতামতকে মূল্য দেয়া হয়।
পরিবার কাঠামোয় প্রাধান্যতার বিষয়কে আলোচনায় আনলে দুটি প্রত্যয়কে সু² বিবেচনায় আনতে হয়
যা হলো ক্ষমতা ও মর্যাদা। বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামোয় পরিবারের নেতৃত্বে পুরুষ থাকার ফলে
আমরা সিদ্বান্তে উপনীত হই যে পরিবারে পুরুষটি ক্ষমতাবান এবং নারীর মর্যাদা কম। এটা মনে রাখা
আধুনিক পরিবারকে
সমাজবিজ্ঞানের
ভাষায় খানা-পরিবার
বলা হয়।
প্রয়োজন, ক্ষমতাবানরা যে সবসময় মর্যাদাধীকারী হবেন-এটি ঠিক নয়। ক্ষমতা সর্বদাই মর্যাদা তৈরী
করে না।
এক বিবাহভিত্তিক পরিবার
বর্তমান বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিবারই এক বিবাহভিত্তিক পরিবার। তবে গ্রামীণ ধনাঢ্য মুসলিম
পরিবারগুলোর কাঠামোতে একাধিক বা বহু বিবাহ ভিত্তিক ক্রমটি দেখা যায়। তবে সম্প্রতি এর
পরিমাণ বেশ কমে এসেছে। শহরাঞ্চলে বহুবিবাহ-ভিত্তিক পরিবার নেই বললেই চলে। যা আছে তা
সংখ্যায় অতি নগণ্য। এটা প্রায়শঃ দেখা যায় মুসলিম-হিন্দুসহ অন্যান্য স¤প্রদায়ে স্বামী অল্প বয়সে স্ত্রী
হারালে কিংবা তালাকপ্রাপ্ত হলে দ্বিতীয় বিবাহ করে। মুসলিম সমাজে বিধবা বিবাহের প্রচলন রয়েছে
যা হিন্দু সমাজে এখনও অনেকটা বাঁধাগ্রস্থ।
পিতৃবাস ও নয়াবাস নীতিভিত্তিক পরিবার
বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামো মূলতঃ পিতৃবাস নীতি অনুসরণ করে। বিবাহোত্তর বসবাসের স্থান
অনুসারে পিতৃবাসভিত্তিক পরিবার হলো এরূপ যেখানে বিবাহের পর নবদম্পত্তি প্রথানুসারে স্বামীর
পিতৃগৃহে বসবাস করে। বাংলাদেশের পিতৃবাসভিত্তিক পরিবার কাঠামো এখনো সচল। পিতৃবাসের
উল্টোনীতি অনুযায়ী মাতৃবাসভিত্তিক পরিবারের সংখ্যা বাংলাদেশে অতি নগণ্য।
তবে ইদানিং ব্যাপক নগরায়ণ এবং শিল্পায়নের ফলে অনেকেই শহরাঞ্চলে কিংবা শিল্প এলাকায়
নয়াবাস ভিত্তিক পরিবার গঠন করে। নয়াবাসভিত্তিক জীবনে নবদম্পত্তি স্বামীর গৃহ কিংবা স্ত্রী বাবার
গৃহ-কোনটিতেই বসবাস করে না। বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামোতে নয়াবাসভিত্তিক পরিবার দিন
দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলেও আজকাল এই কাঠামোর পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। কেননা জনসংখ্যা
বৃদ্ধির ফলে গ্রামাঞ্চলে মানুষের ভিটেবাড়ীতেও অনেক সময় জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। ফলে
নয়াবাসভিত্তিক পরিবার শুধুই শহরাঞ্চল ও শিল্পাঞ্চলে নয়, গ্রামাঞ্চলেও প্রতিদিন বাড়ছে।
মজবুত পরিবার কাঠামো
ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামো অত্যন্ত মজবুত। একটি পরিবারের কাঠামো তখনই
মজবুত হয় যখন পারিবারিক মূল্যবোধগুলো, যেমন- আবেগ, প্রেম, ভালবাসা সহানুভ‚তি, মমতা, ¯েœহ,
শ্রদ্ধা, আত্বঃনির্ভরতা, মানসিক বন্ধন ইত্যাদি দৃঢ় হয়। পরিবারের কাঠামো তা সে অণু হোক, যৌথ
হোক, একক বিবাহভিত্তিক হোক, বহুবিবাহভিত্তিক হোক, পিতৃবাস হোক, নয়াবাস হোক সেখানে
পারিবারিক মূল্যবোধগুলো যখন শক্তিশালী হয় তখনই জ্ঞাতি সম্পর্কের বন্ধনটি আরো প্রবল হয়। এই
প্রবল বন্ধন অনেক সময় যুক্তিকে অগ্রাহ্য করে। জ্ঞাতি সম্পর্ক আমাদের পরিবারের কাঠামোকে এতটা
শক্তিশালী ও মজবুত বন্ধনে আবদ্ধ করার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত স্বজনপ্রীতির প্রসার লক্ষ্য করি।
তবে বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিক্ষার প্রসার, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধের ধারণা, আর্থিক
ভগ্নাবস্থা, ব্যক্তিত্বের সংঘাত, অকারণ ভুল বুঝাবুঝি ইত্যাদি কারণে জ্ঞাতি সম্পর্কের বন্ধন অনেকটা
দুর্বল হয়েছে বটে, পরিবার কাঠামো সে অনুযায়ী দুর্বল হয় নি।
দ্বি-সূত্রীয় নীতিভিত্তিক পরিবার
বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামোতে পাশ্চাত্যের মতই দ্বি-সূত্রীয় নীতি অনুসরণ করা হয়। দ্বি-সূত্রীয়
নীতি হলো পরিবার কাঠামোতে পিতৃ এবং মাতৃ উভয় পক্ষের আÍীয়স্বজনদের মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রদান
করা। তবে আমাদের পরিবার কাঠামো বহুলাংশে পিতৃপ্রধান হওয়ার কারণে বিশেষতঃ গ্রামাঞ্চলের
পরিবারগুলোতে নানা-নানীর চেয়ে দাদা-দাদী, মামা-খালার চেয়ে চাচা-ফুফুর গুরুত্ব বেশী পরিলক্ষিত
হয়। শহরাঞ্চলে দ্বি-সূত্রীয় নীতিভিত্তিক পরিবারের সংখ্যা বেশী দেখা যায়। কেননা, শহরাঞ্চলে
নয়াবাসভিত্তিক পরিবারের সংখ্যা ইদানীং অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গ্রামাঞ্চলে দ্বি-সূত্রীয় নীতিভিত্তিক
পরিবারের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ার পিছনে অর্থনৈতিক শ্রেণী মর্যাদাকে অনেক সময় প্রধান কারণ
হিসেবে দেখা হয়। তবে তারপরেও বলা যায় বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামোতে দ্বি-সূত্রীয় নীতি বেশ
অনুসরণ করা হচ্ছে।
সারকথা : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিবার হলো এমন একটি ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন যেখানে
বৈবাহিক এবং রক্ত সম্পর্কসূত্রে স্বামী-স্ত্রী তাদের অবিবাহিত সন্তানসহ এবং ক্ষেত্র বিশেষে সন্তানাদির
স্ত্রী-পরিজনসহ বসবাস করে থাকে। বাংলাদেশের পরিবার কাঠামোক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের মতই দ্বি-সূত্রীয়
নীতি অনুসরণ করা হলেও পারিবারিক মূল্যবোধগুলো: যেমন- প্রেম, ভালবাসা, আবেগ, সহানুভ‚তি,
মমতা, ¯েœহ, শ্রদ্ধা, আÍঃনির্ভরতা, মানসিক বন্ধন ইত্যাদি এখনও দৃঢ়তর।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. বর্তমানে পরিবারের পাশাপাশি কোন্ প্রত্যয়টি সমাজবিজ্ঞান গবেষণায় ব্যবহৃত হচ্ছে ?
ক. নয়াবাস;
খ. খানা;
গ. দ্বি-সূত্রীয় নীতি;
ঘ. হাঁড়ি;
২. বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামোতে কোন্ স¤প্রদায়ে বিধবা বিবাহের প্রচলন রয়েছে ?
ক. মুসলিম স¤প্রদায়ে;
খ হিন্দু স¤প্রদায়ে;
গ. শহরাঞ্চলের মুসলিম হিন্দু উভয় স¤প্রদায়ে;
ঘ. উপরের সবগুলিই।
৩. বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামোতে কোন্ নীতি অনুসরণ করা হয়?
ক. মজবুত পরিবার কাঠামো নীতি;
খ. পিতৃপ্রধান পরিবার কাঠামো নীতি;
গ. নয়াবাস নীতি;
ঘ. দ্বি-সূত্রীয় নীতিভিত্তিক পরিবার।
৪. খানা কয়টি উপাদানের উপর নির্ভর করে তৈরী করা?
ক. দুইটি;
খ তিনটি;
গ. চারটি;
ঘ. পাঁচটি।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমুলক প্রশ্ন
১. খানা কাকে বলে ?
২. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিবারের সংজ্ঞা কি ?
৩. বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামোতে কোন্ কোন্ কারণে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশের পরিবারের বর্তমান কাঠামো সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করুন।
২. জ্ঞাতি প্রথার সঙ্গে স্বজনপ্রীতির সম্পর্কটি বাংলাদেশের পরিবারের কাঠামোর আলোকে ব্যাখ্যা
করুন।
উত্তরমালা ঃ ১. খ, ২. ক, ৩. ঘ, ৪. খ।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র