পরিবার পরিকল্পনা কাকে বলে ? বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ কি ?

পরিবার পরিকল্পনা
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা একটি কল্যাণধর্মী কর্মসূচী হিসেবে পরিগণিত হয়। এ
কর্মসূচীর প্রবর্তক আমেরিকার মার্গারেট স্যাঙ্গার। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করেছে।
পরিবার পরিকল্পনা হচ্ছে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের কার্যক্রম। সংকীর্ণ অর্থে জন্মনিয়ন্ত্রণ দ্বারা
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস করার প্রচেষ্টাকে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম বলা হয়। নিঃসন্দেহে এটি
একটি কল্যাণকর কর্মসূচী যা মূলতঃ পরিবারকেন্দ্রিক। ব্যাপক অর্থে পরিবারের আয় ও পরিবারের
সদস্য সংখ্যার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে পরিকল্পিত উপায়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের
মাধ্যমে ছোট পরিবার গড়ে তোলাই পরিবার পরিকল্পনার লক্ষ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞানুযায়ী পরিবার পরিকল্পনা জীবন-যাপনের এমন একটি চিন্তাধারা ও পদ্ধতি,
যা কোন ব্যক্তি বা দম্পতি স্বীয় জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও দায়িত্ববোধের প্রেক্ষিতে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে গ্রহণ
করে। যাতে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের উন্নতি সাধিত হয় এবং তারা দেশের সামাজিক
উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম হয়।
পরিবার পরিকল্পনা বলতে সে কর্মসূচীকে বুঝায়, যা দ্বারা পরিকল্পিত, ছোট, সুখী, স্বাস্থ্যবান ও
সমৃদ্ধশালী পরিবার গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সন্তানের জন্মদান পরিকল্পনা অনুযায়ী হওয়াই পরিবার
পরিকল্পনা কর্মসূচীর মূলকথা।
বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনার লক্ষ্য
পরিবার পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সন্তান
লাভ, লালন-পালন, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা এবং তাদের সামগ্রিক কল্যাণে সহায়তাদান। পরিবার
পরিকল্পনা কর্মসূচীর লক্ষ্যগুলো নিæরূপ ঃ
(১) পরিকল্পনা মাফিক সন্তান গ্রহণে সহায়তা করা;
(২) মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা এবং সবল শিশু লাভে সহায়তা করা;
(৩) পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করা;
(৪) জাতীয় জনসংখ্যা নীতির লক্ষ্য অর্জনে সহায়তাদান;
(৫) দেশের সম্পদের নিরিখে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সীমিত রাখা;
(৬) জনসংখ্যা সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব
বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে স্বীকৃত আদর্শ পদ্ধতি হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা। বাংলাদেশের জাতীয়
সমস্যা হচ্ছে অধিক জনসংখ্যা। বাংলাদেশের সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশী হওয়ায় এ
দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বিরাজমান অধিক জনসংখ্যা সমস্যার প্রেক্ষাপটে নিæোক্ত
দৃষ্টিকোন হতে বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরা যায়। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম নিঃসন্দেহে একটি কল্যাণমূলক কর্মসূচী যা মূলতঃ পরিবারকেন্দ্রিক।
জনসংখ্যাবিদদের মধ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় বিষয়ে দু’টি ভিন্নমত রয়েছে-একটি হচ্ছে প্রত্যক্ষ
উপায়ে জন্মহার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এবং অপরটি হচ্ছে পরোক্ষ উপায়ে জন্মহার সীমিত করার পদ্ধতি।
প্রত্যক্ষ উপায়ে জন্মহার নিয়ন্ত্রণের জন্য গর্ভনিরোধ দ্রব্যাদি ব্যবহার এবং গর্ভ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন
ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এর পক্ষে যুক্তি হচ্ছে, বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এমন পর্যায়ে
গিয়ে ঠেকেছে যে, সময় অপচয় করার অবকাশ নেই। বর্তমানে বিশ্বে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে,
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে প্রতি অর্থ বছর অন্তর বিশ্বের জনসংখ্যা একশত কোটি করে বৃদ্ধি
পাবে। ইতিমধ্যেই বিশ্বের জনসংখ্যা ছয়শত কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সুতরাং প্রত্যক্ষ উপায় ছাড়া
জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
পরোক্ষ উপায়ে জন্মহার সীমিত করার পক্ষপাতী জনসংখ্যাবিদদের মতে জন্মহার দ্রæত কমাতে গেলে
গুরুত্ব দেয়া উচিত অর্থনৈতিক বিকাশ এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের প্রতি। জীবনযাত্রার মান উন্নত
করার প্রয়োজনে মানুষ জন্মহার সীমিত রাখতে সচেষ্ট হবে। পরোক্ষ পদ্ধতির সমর্থকদের যুক্তি হচ্ছে,
প্রত্যক্ষ উপায়ে জন্মনিরোধের আশু ফল লাভ করা গেলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। কারণ পরিবার
সীমিত রাখার তাগিদ অনুভব না করলে, সাধারণ লোকের পক্ষে জন্মনিয়ন্ত্রণের কার্যকর প্রচেষ্টা গ্রহণ
করারই কথা নয়।
বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ উপায়ে জন্মহার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত এজন্য যে, বাংলাদেশে যে হারে
জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে যথেষ্ট সময় নেয়ার সুযোগ নেই। ১৯৯১ সালের আদমশুমারির
তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.১৭ এবং এ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আগামী বত্রিশ
বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে। এমতাবস্থায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণই
অধিক যুক্তিযুক্ত। প্রত্যক্ষ পদ্ধতি গ্রহণ ব্যতীত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় বিশেষ
করে এদেশে।
তবে, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি অবলম্বনের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে-জনগণের মধ্যে ছোট পরিবার
গঠনের আকঙ্খা সৃষ্টি। ছোট পরিবার গঠন যাতে সর্বস্তরে জনগণের নিকট কাম্য হয়, সে জন্য
জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষার
স¤প্রসারণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ব্যতীত পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বাংলাদেশের ন্যায় দরিদ্র দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থান
করছে। এজন্য দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমিত পরিবারের আকাঙ্খা সৃষ্টি না করতে পারলে,
শুধু পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির মাধ্যমে জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব নয়। জনগণের জীবনযাত্রার মান
উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের আকাঙ্খা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন বলে
বিশেষজ্ঞমহল মত পোষণ করেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যা মোকাবেলা করার বাস্তবসম্মত
উপায় হচ্ছে প্রত্যক্ষ উপায়ে জন্মহার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। আবার পরিকল্পনা পদ্ধতিকে গ্রহণযোগ্য করার
জন্য অপরিহার্য হলো পরোক্ষ উপায়ে জন্মহার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। পরোক্ষ উপায় গ্রহণের মাধ্যমে
জনগণের মধ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্খা সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা
বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান। ১৯৫৩
সালে পরিবার পরিকল্পনা সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে সর্বপ্রথম পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী
সাংগঠনিক মর্যাদা লাভ করলেও ১৯৬৫ সাল থেকে এটি সরকারি পর্যায়ে গৃহীত হয়। ১৯৭৬ সালের
জুন মাসে বাংলাদেশে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ঘোষণা করা হয় যাতে জাতীয় কর্মসূচী হিসেবে
জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জরিপ, ১৯৯৭-৯৮-এর
তথ্যানুযায়ী পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাস্তবায়নে নিæোক্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়। (১) মাঠ পর্যায়ে অপর্যাপ্ত তদারকি ব্যবস্থা; (২) প্রচলিত পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থাদির অপর্যাপ্ততা; (৩) সেবা প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যাবলীর অপর্যাপ্ত সংযোজন; জন্মহার দ্রæত কমাতে হলে গুরুত্ব দেয়া উচিত অর্থনৈতিক বিকাশ এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের প্রতি।
(৪) মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের উদ্বুদ্ধকরণের অভাব;
(৫) কমিউনিটি পর্যায়ে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ ও প্রয়োগের অভাব প্রভৃতি।
বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো আলোচনা করা হলো ঃ
(১) ধর্মীয় প্রভাব ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ঃ পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত ধর্মীয় অনুশাসনের প্রকৃত
ব্যাখ্যার অভাবে এ কর্মসূচীর প্রতি নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, যেমন ঃ পর্দা প্রথা, অদৃষ্টবাদিতা,
ধর্মান্ধতা ইত্যাদি বিদ্যমান। ধর্মীয় অনুশাসন পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীকে বাধাগ্রস্থ করছে।
(২) নিরক্ষরতা ঃ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। নিরক্ষরতার কারণে বৃহৎ জনগোষ্ঠী
জনসংখ্যার বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে অসচেতন। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীকে তারা নিছক জন্মনিয়ন্ত্রণ
পদ্ধতি হিসেবে মূল্যায়ন করে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে। এটি যে পরিবার কল্যাণধর্মী কার্যক্রম তা
বুঝতে তারা অক্ষম।
(৩) নারীদের সামাজিক মর্যাদা ঃ বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা পুরুষ শাসিত এ সমাজ ব্যবস্থায়
অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীদের অংশগ্রহণের হার শতকরা মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ হওয়ার কারণে
পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষেত্রে তাদের মতামতকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। কিন্তু একথা সত্য যে,
পরিকল্পিত পরিবার গঠনে নারীদের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
(৪) দারিদ্র্য এবং নি¤œ জীবনযাত্রার মান ঃ দারিদ্র্যের প্রভাব ও জীবনযাত্রার মান সাংঘাতিকরকম
নিæমানের হওয়ায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী গ্রহণের প্রতি জনগণের মধ্যে অনীহা লক্ষ্য করা যায়।
(৫) পুত্র সন্তান লাভের আকাঙ্খা ঃ পুত্র সন্তান লাভের আকঙ্খা, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের
অন্যতম বাধা। ইধহমষধফবংয ওহংঃরঃঁঃব ড়ভ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ঝঃঁফরবং (ইওউঝ)-এর গবেষণা তথ্য
অনুযায়ী ৪০টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ, জর্ডান, কোরিয়া, নেপাল, পাকিস্তান ও সিরিয়ায়
এ প্রবণতা প্রবল এবং শীর্ষে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদ শতকরা ৯৭ জন পুত্র সন্তান
লাভের জন্য অধিক সংখ্যক সন্তান নিতে দ্বিধা করে না। শহুরে জনপদ শতকরা ৮০ ভাগ নারী পুত্র না
হওয়া পর্যন্ত সন্তান নিতে ইচ্ছুক। শতকরা দুজন মা-বাবা পরবর্তী সন্তান কন্যা হোক এটি কামনা করে
না, তিন পুত্রের জননীদের শতকরা ৯৩ জন একটি কন্যার জন্য অধিক আগ্রহী। ২-৩টি পুত্র এবং
একটি কন্যা উপযুক্ত সন্তান সংখ্যা বলে এদেশের জনগোষ্ঠী মনে করে।
(৬) জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো ব্যবহারের জটিলতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনগণের ভীতি
ঃ বাংলাদেশের প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো বিদেশী প্রযুক্তি-নির্ভর এবং আমদানিকৃত। জনগোষ্ঠী
অজ্ঞতার কারণে এ সব পদ্ধতিগুলো নিয়মিত ও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। তাছাড়া স্থায়ী
পদ্ধতিগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও জনগণের মধ্যে ভীতি কাজ করে যা পরিবার পরিকল্পনার
অন্যতম অন্তরায়।
(৭) সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ঃ বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী অত্যন্ত সীমিত এবং
শহরকেন্দ্রিক। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রত্যক্ষ কোন নিরাপত্তা কর্মসূচী না থাকায় বৃদ্ধ বয়সের ভরসা
হিসেবে দেখা দেয় সন্তান-সন্তুতি ।
(৮) মাঠ কর্মীদের সামাজিক মর্যাদা ঃ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা মাঠ কর্মীদের
বেশির ভাগই সমাজের নি¤œ শ্রেণী হতে আসায় তারা গ্রামীণ সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে পরিবার
পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করতে এবং আগ্রহ সক্ষম হয় না।
(৯) ক্রটিপূর্ণ উৎসাহ দান পদ্ধতি ঃ বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীসহ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ
পদ্ধতি গ্রহণকারীদের নগদ অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে দালালদের
প্রতারণার শিকার হয়ে জন্মদানে সক্ষম এবং অবিবাহিতরা স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করে। এমতাবস্থায় এ
কর্মসূচী গ্রহণের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক।
(১০) জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অপ্রতুলতা ঃ বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রচারণা
এবং কার্যক্রমের প্রভাবে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণেরও আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর
চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশী আমদানি নির্ভর জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহ চাহিদার তুলনায়
কম থাকায় ইচ্ছা সত্তে¡ও অনেক পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে সক্ষম হচ্ছে না।
(১১) কর্মসূচী উদ্বুদ্ধকরণে দক্ষতার অভাব ঃ পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী উদ্বুদ্ধকরণের উপর
নির্ভরশীল। জনগণকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে এটি গ্রহণ করার জন্য যে উদ্বুদ্ধকরণ ক্ষমতার প্রয়োজন তা মাঠ
পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে না থাকার ফলে তারা এ কর্মসূচীকে সর্বস্তরের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে
তুলতে পারছে না।
(১২) সমন্বয় এবং তত্ত¡াবধানের অভাব ঃ বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী সরকারি এবং
বেসরকারী পর্যায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ কর্মসূচীর সাথে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ এবং অসংখ্য
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জড়িত। এদের কাজের সুষ্ঠ সমন্বয় এবং তত্ত¡াবধানের অভাবে এটি বাংলাদেশের
কল্যাণমুখী কর্মসূচী হিসেবে আজও গড়ে উঠতে পারে নি।
এছাড়াও যৌথ পরিবার ব্যবস্থা এবং সন্তান জন্মদান, সন্তান-সন্তুতি লালন-পালনের স্বল্প ব্যয়,
শিশুশ্রমের প্রতি গুরুত্ব আরোপ, যৌতুক প্রথার প্রভাবে বাল্যবিবাহের প্রসার, স্বাস্থ্য সেবার অভাব,
অধিক শিশু মুত্যুর হার ইত্যাদি পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করে।
সারকথা: পরিবার পরিকল্পনা হচ্ছে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের কার্যক্রম। পরিবারের আয় এবং
পরিবারের সদস্য সংখ্যার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে পরিকল্পিত উপায়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা
নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ছোট পরিবার গড়ে তোলাই পরিবার পরিকল্পনার লক্ষ্য। বাংলাদেশের পরিবার
পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সন্তান লাভ,
লালন-পালন, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা এবং তাদের সামগ্রিক কল্যাণে সহায়তাদান। কিন্তু বাংলাদেশের
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্মীয় প্রভাব, নিরক্ষরতা, নারিদের নি¤œ সামাজিক মর্যাদা,
দারিদ্র ও নিæ জীবনযাত্রার মান, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির অপ্রতুলতা, কর্মসূচী
উদ্বুদ্ধকরণে দক্ষতার অভাব, সমন্বয় এবং তত্ত¡াবধানের অভাব ইত্যাদি। বাংলাদেশের মত একটি অতিজনবহুল দরিদ্র রাষ্ট্রে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা অতীব জরুরি।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের প্রবর্তক মার্গারেট স্যাঙ্গার কোন দেশের নাগরিক ?
ক. যুক্তরাজ্য;
খ যুক্তরাষ্ট্র;
গ. ফ্রান্স;
ঘ. জার্মানী।
২. কোন্ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ঘোষণা করা হয় ?
ক. ১৯৭২;
খ. ১৯৭৩;
গ. ১৯৭৬;
ঘ. ১৯৮০।
৩. পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাংলাদেশে সাংগঠনিক মর্যাদা লাভ করে কত সালে?
ক. ১৯৫৩;
খ. ১৯৬৫;
গ. ১৯৭৬;
ঘ. ১৯৭৩।
৪. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীদের অংশগ্রহণের শতকরা হার কত?
ক. ৫ থেকে ১০ ভাগ;
খ. ১০ থেকে ১৫ ভাগ;
গ. ১৫ থেকে ২০ ভাগ;
ঘ. ২০ থেকে ২৫ ভাগ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. পরিবার পরিকল্পনা কাকে বলে ?
২. বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ কি ?
রচনামুলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনার আবশ্যকতা আলোচনা করুন।
২. বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো আলোচনা করুন।
উত্তরমালা ঃ ১. খ, ২. গ, ৩. ক, ৪. ক।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]