বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো আলোচনা করুন।

বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। দু:খজনক হলেও সত্য পৃথিবীর কাছে
বাংলাদেশের পরিচয় ক্ষুধা, দারিদ্র এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত একটি রাষ্ট্র হিসাবে। ১৯৭১ সালে
রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন একটি ভ‚খন্ড লাভ করলেও এ অঞ্চলের
জনগোষ্ঠী এখনো পর্যন্ত অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে সক্ষম হয় নি। এমনকি অর্থনৈতিক মুক্তি লাভের
পথে আমরা জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পেরেছি তাও বলা যায় না। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে
সকল সরকারের পক্ষ থেকেই উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনের বহুবিধ কর্মসূচী গৃহীত হয়েছে। কিন্তু
বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কাঙ্খিখত সাফল্য অর্জনে ব্যর্থতা কতগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে।
প্রথমত: প্রচলিত উন্নয়ন ধারণা চর্চা করার মাধ্যমে কাঙ্খিত অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ আদৌ সম্ভব কিনা?
দ্বিতীয়ত: মৌলিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে কি?
তৃতীয়ত: যদি মৌলিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়ে থাকে তবে সে সমস্যাগুলো নিরসনের জন্য
যথাযথ পদক্ষেপ কেন নেয়া সম্ভব হচ্ছে না? উন্নয়ন যদিও একটি বহুমুখী ধারণা। কোন একটি বিশেষ
ক্ষেত্রের সফলতা বিচার করে ‘উন্নয়ন’কে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তথাপি এ কথা সত্য যে,
অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নততর অবস্থানে পৌঁছানো উন্নয়নে‘র অন্যতম গুরুত্বপূণ শর্ত। পশ্চাদপদ অবস্থানের কারণ
বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান দুরাবস্থা হঠাৎ করে তৈরি হয় নি বরং এর সাথে জড়িত আছে
ঐতিহাসিক বিভিন্ন কারণ। সা¤প্রতিক সময়ের বিভিন্ন অব্যবস্থাও অর্থনীতির ক্ষেত্রে দুর্বল অবস্থা
তৈরিতে ভ‚মিকা রাখছে।
ঔপনিবেশিক শাসন
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পূর্বে বাংলাদেশ দুইশত বছরের বেশি সময় ঔপনিবেশিক শক্তি দ্বারা
শাসিত হয়। ইংরেজ আমল এবং ১৯৪৭ পরবর্তী পাকিস্তান আমল উভয় সময়কালে ঔপনিবেশিক
প্রভুদের মূল লক্ষ্য ছিল এ অঞ্চল থেকে সম্পদ লুন্ঠনের মাধ্যমে নিজেদের দেশকে সমৃদ্ধ করে তোলা।
ঔপনিবেশিক শাসন তার চরিত্র অনুসারেই উপনিবেশের উন্নয়নের পরিবর্তে লুন্ঠনী মনোবৃত্তি দ্বারা
পরিচালিত হয়। ইংরেজ শাসন শেষে পাকিস্তানী শাসনেও পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি চ‚ড়ান্ত বৈষম্য
প্রদর্শন করা হয়। ব্যাপক লুণ্ঠন প্রক্রিয়ার প্রতিক্রিয়ায় স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে ভ‚খন্ড অর্জিত হয়
তার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-ব্যাপক পুঁজির সংকট, অবকাঠামো সমস্যা ইত্যাদি। অথচ এগুলোই অর্থনৈতিক
উন্নয়নের মৌলিক পূর্বশত।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা
কোন একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম শর্ত যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব। যে নেতৃত্ব সঠিক
দিক নির্দেশনা এবং প্রয়োজনে কঠোর অথচ যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম। বাংলাদেশের মত একটি
দুর্বল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্য-সাহসী রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুপস্থিতি
অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে বড় ভ‚মিকা রাখছে। এছাড়াও প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে
কতিপয় মৌলিক ইস্যুতে দ্ব›দ্ব থাকার কারণে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। অথচ যে কোন রাষ্ট্রের
অর্থনৈতিক সাফল্য লাভের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একান্ত প্রয়োজন।
বিদেশী সাহায্য নির্ভরতা
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের কোটি-কোটি ডলার বৈদেশিক সাহায্য পেয়েছে। অথচ
কাঙ্খিত অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন এবং একটি স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এর
পরিবর্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের বিদেশী সাহায্য নির্ভরতা বেড়ে চলেছে (সরকারী এবং বেসরকারী
পর্যায়ে)। এমতাবস্থায় অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীল থেকে
প্রকৃত অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন অসম্ভব। এছাড়াও বিদেশী সাহায্যের যথাযথ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনেক
সময় সন্দেহের অবকাশ থাকে।
পুঁজি এবং উদ্যোক্তা সংকট
পূর্বে আলোচিত ঐতিহাসিক কারণে (ঔপনিবেশিক শাসন) বাংলাদেশে প্রথম থেকেই প্রয়োজনীয়
পুঁিজর সমস্যা ছিলো। এ সাথে পুঁজি পাচার ও রাষ্ট্রীয় পুঁজির যথার্থ ব্যবহার না ঘটায় অর্থনীতির বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান দুরাবস্থা হঠাৎ করে তৈরী হয় নি। বরং এর পেছনে বুহুবিধ ঐতিহাসিক কারণ বিদ্যমান রয়েছে।
ক্ষেত্রে সংকট প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া ‘বাজার অর্থনীতি’ ব্যবস্থায় দক্ষ ও সাহসী উদ্যোক্তা না
থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আসে না। বাংলাদেশে প্রাইভেট সেক্টরের পুঁজি বিনিয়োগকারীরা
দীর্ঘমেয়াদী পুঁজি লগ্œীর, পরিবর্তে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে দ্রæত মুনাফা লাভে অধিক আগ্রহী। এ
কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসছে না।
বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা
মূলধন সমস্যা
যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মূলধনের যোগান অন্যতম শর্ত। কেন না পুঁজি বা
মূলধনের অভাবে সরকারের পক্ষে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশেও পুজিঁ সংকটের কারণে অর্থনৈতিক পূনর্গঠনের জন্য পদক্ষেপগুলো নেয়া প্রায়শ:ই সম্ভব
হয় না। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় পুঁজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অব্যবস্থা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বার্ষিক উন্নয়ন
কর্মসূচীর বিভিন্ন খাতওয়ারী বরাদ্দ আলোচনা করা হল।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর বিভিন্ন খাতওয়ারী বরাদ্দ ১৯৯৬-৯৭ (অংকসমূহ কোটি টাকায়)
কৃষি-৭৪৮.৭০
পল্লী উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান-৯৭৪.৬৩
বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদ -১০২১.৩১
শিল্প - ১৮৫.০৭
বিদ্যুৎ -১৩০৮.১৫
পরিবহন-২৪৪০.১৫
জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা-৩৯১.৯৫
তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ- ৪৭৯.৫২
বৈজ্ঞানিক ও কারিগরী গবেষণা -৬০.০২
নিæ মাথাপিছু আয়
বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় অত্যন্ত নি¤œ। এই নিæ আয়ের দ্বারা অধিকাংশ লোকই জীবন
ধারণের ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারে না। মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানো এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রের
পক্ষে সম্ভব হয় নি। এমতাবস্থায় অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়ের হারও অত্যন্ত নি¤œ। শতকরা মাত্র ৫-৭ ভাগ।
এধরনের নি¤œ সঞ্চয়ের হার অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের যোগান দিতে
পারে না।
ক্ষুদ্র অভ্যন্তরীণ বাজার
ক্ষুদ্র অভ্যন্তরীণ বাজার, মূলধন সমস্যা, তদুপরি নিæ মাথাপিছু আয়ের কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্ত
রীণ বাজার শক্তিশালী হতে পারছে না। একদিকে বিভিন্ন প্রতিক‚ল শর্তের ফলে দেশীয় পণ্যের
উচ্চমূল্য অন্যদিকে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার অভাবে দেশের ভেতরে একটি শক্তিশালী বাজার গড়ে
উঠছে না। তার পরির্বতে বিদেশী পণ্যের তুলনামূলক সস্তা দাম হওয়ায় দেশীয় শিল্প বিকাশে বাঁধা
তৈরী হচ্ছে।
কৃষিখাতে অব্যবস্থা
বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর একটি দেশ। এদেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী
কৃষিখাত এখনো একান্ত প্রয়োজনীয়। যদিও জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান প্রতি বছর কমছে
তবুও কৃষিখাতের সফলতা পরবর্তীতে শিল্প খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের
জন্য কৃষিখাতের বিকাশ আরো প্রয়োজন এ কারণে যে, জনগোষ্ঠির সর্ববৃহৎ অংশ এখনো কৃষিখাতে নিয়োজিত।
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর বন্যা, খরা, জলোচ্ছাসজনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের
শিকার হয়। নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করেছে। দুর্যোগ
জনিত ক্ষয়ক্ষতির ফলে একদিকে মানব সম্পদের ব্যাপক ঘাটতি তৈরী হয়। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের
পুণর্বাসনের জন্য প্রচুর পরিমাণ নগদ অর্থ ব্যয় হয়।উপরোক্ত সমস্যাগুলো ছাড়াও আরো কিছু বিষয়
উলে খ করা যায় যেগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমস্যা তৈরী করছে। যেমন: খাদ্য ঘাটতি, নিæ -
শিক্ষা হার, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন।
সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান মৌলিক সমস্যাবলী থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে নিæলিখিত কর্মসূচী গ্রহণ
করা যেতে পারেমানব সম্পদ উন্নয়ন ও মানব উন্নয়ন
বর্তমানে তথাকথিত উন্নয়নের নামে মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনার দর্শন ত্যাগ করা হয়েছে।মানব সম্পদ
উন্নয়ন বলতে আমরা বুঝি জনগোষ্ঠীর দক্ষতার উন্নয়ন। অন্যদিকে মানব উন্নয়নের প্রধান তিনটি
নিদের্শক চিহ্নিত করা হয়: জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ু, স্বাক্ষরতা বা জ্ঞানবুদ্ধি এবং গড় আয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা তৈরি করতে হলে উভয় ক্ষেত্রে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা
প্রয়োজন।
বিদেশী সাহায্য নির্ভরতা হ্রাস
একথা এখন প্রমাণিত যে, বিদেশী সাহায্য নির্ভর হয়ে কোন রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্পূর্ণ ভাবে অর্থনৈতিক
মুক্তি অর্জন অসম্ভব। বরং দীর্ঘস্থায়ী নির্ভরশীলতা তৈরীর সম্ভাবনা থাকে। যদিও হঠাৎ বিদেশী সাহায্য
পরিহার করলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তথাপি বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত
করতে হলে বিদেশী সাহায্য নির্ভরতার পরিমাণ ক্রমাগত কমিয়ে আনতে হবে।
দেশী পণ্যের বাজার
বাংলাদেশে বর্তমানে ‘বাজার অর্থনীতি’ ব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে। কিন্ত বাজার অর্থনীতির নামে
দেশীয় বাজার সম্পূর্ণভাবে বিদেশী পণ্যের হাতে ছেড়ে দিলে, দেশী পণ্যের শক্তিশালী বিকাশ ঘটে না,
উদ্যোক্তারা উৎসাহ হারায় এবং জাতীয় স্বার্থবাহী উন্নয়ন হয় না। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বড়
শর্ত বাজার অর্থনীতি ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও দেশীয় পণ্যের বাজার নিশ্চিত করা।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো যদি মৌলিক ইস্যুগুলোতে ঐকমত্যে পৌছাতে না পারে সে ক্ষেত্রে
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরী হয়।
এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলে স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় অথচ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অন্যতম পূর্বশর্ত। সেজন্য অর্থনৈতিক মুক্তি যদি নিশ্চিত করতে হয় সে ক্ষেত্রে
বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরী করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা উত্তরণের জন্য আরো কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো, যেমন- কৃষি ও
শিল্প খাতের বিকাশ, প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, দ্রুত শিক্ষা বিস্তার, যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি।
কৃষি আধুনিকীকরণ
বাংলাদেশের শ্রমশক্তি অধিকাংশই কৃষিখাতে নিয়োজিত। গ্রামীণ জনগণের আয়ের প্রধান কৃষি।
এদেশে কৃষি ব্যবস্থা এখনো আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাসের পরিবর্তে প্রথাগত পদ্ধতির উপর
নির্ভরশীল। অথচ জনসংখ্যার চাপ প্রচন্ডভাবে বৃদ্ধির কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অন্যতম পূর্বশর্ত।
প্রয়োজন। তাছাড়া কৃষিখাত শক্তিশালী না হলে শিল্পখাতের উন্নয়ন অসম্ভব। এ সব কারণে যান্ত্রিক
পদ্ধতিতে চাষাবাস, ভ‚মি ব্যবস্থা সংস্কার এবং উন্নত উপকরণ ব্যবহারের উপায় নিশ্চিতও করে
কৃষিখাতের আধুনিকীকরণ করা একান্ত প্রয়োজন।
শিল্পবিকাশ
শিল্পখাতের বিকাশ ছাড়া আধুনিককালে কোন রাষ্ট্রের পক্ষেই উন্নয়ন সম্ভব হয় না। বাংলাদেশে
শিল্পখাতের উন্নয়নের গতি অত্যন্ত মন্থর। গার্মেন্টস, চামড়া ও অন্যান্য কয়েকটি খাতে উন্নয়ন হলেও
এগুলোকে মৌলিক শিল্পোন্নয়ন বলা যায় না। কাঁচামাল, প্রযুক্তি, পুঁজি ও দক্ষতার অভাবে ভারী শিল্প
বিকশিত হচ্ছে না। বাংলাদেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শিল্পখাতের বিকাশে জন্য সরকারি ও
বেসরকারি উভয় পর্যায়েই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রাকৃতিক সম্পদ
প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার উন্নয়নের জন্যে অপরিহার্য। তেল, গ্যাস, কয়লাসহ যে সব
প্রাকৃতিক সম্পদ বাংলাদেশে রয়েছে সেগুলো উত্তোলন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ
যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। পুঁজির অভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে বিদেশী সহায়তা
প্রয়োজন হয়। কিন্তু ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদের সুফল থেকে বঞ্চিত
হবে। অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে, উন্নয়ন প্রক্রিয়া জোরদার করতে রাষ্ট্রকে অধিক তৎপর
হতে হবে।
সারকথা: সুদীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা, পুঁজি এবং উদ্যোক্তা সংকট, পুঁজি
পাচার ও রাষ্ট্রীয় পুঁজির অপব্যবহার ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ অবস্থানে
রয়েছে। এছাড়াও নিæ মাথাপিছু আয়, ক্ষুদ্র অভ্যন্তরীণ বাজার, কৃষিখাতে অব্যবস্থা, প্রাকৃতিক
বিপর্যয়জনিত সমস্যা এবং মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। মানব
সম্পদ উন্নয়ন ও মানব উন্নয়ন খাতে অধিক বিনিয়োগ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়ন, বিদেশী
সাহায্য নির্ভরতা হ্রাস, কৃষি ও শিল্পখাতের উপযুক্ত বিকাশ ঘটিয়ে সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। সুতরাং
দ্রুত এ পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়া দরকার। এর ফলে এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিও আসবে।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতির কি অবস্থা হয় ?
ক) ব্যাপক সমৃদ্ধি আসে।
খ) জনগণের মাথা পিছু গড় আয় বৃদ্ধি পায়;
গ) শাসকরা এ অঞ্চলের উন্নয়নে মনোনিবেশ করে ;
ঘ) পূর্ব বাংলা থেকে যত বেশী সম্পদ লুণ্ঠন করা হয়।
২. বাংলাদেশে বিদেশী সাহায্য নির্ভরতার কারণে কি হচ্ছে?
ক) নির্ভরতার পরিমাণ ক্রমাগত কমছে;
খ) অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরাম্বিত হচ্ছে;
গ) অর্থনীতি ক্রমাগত বিদেশী সাহায্য নির্ভর হয়ে পড়ছে;
ঘ) অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে।
৩ বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় কত?
ক) উন্নত দেশসমূহের সমান;
খ) অত্যন্ত উচ্চ;
গ) কোন হিসাব নেই;
ঘ) অত্যন্ত নিæ।
৪. মূলধন ঘাটতি থাকার ফলে বাংলাদেশেক) সরকার প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারে না;
খ) জনগণ রাষ্ট্রের ঘাটতি পুরণ করে;
গ) অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরী হচ্ছে;
ঘ) বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. বিদেশী সাহায্য নির্ভরতা কেন হ্রৃাস করা প্রয়োজন ?
২. অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব কি?
রচনামুলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো আলোচনা করুন।
উত্তরমালা: ১.ঘ, ২.গ, ৩.ঘ, ৪.ক

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]