অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বলতে কি বুঝায়? বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো

অর্থনৈতিক পরিকল্পনা
বর্তমান পৃথিবীতে রাষ্ট্রসমূহের কোনটিই সম্পদের দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, মূলত: কোন রাষ্ট্রের
পক্ষেই সকল দিক থেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়া সম্ভবও নয়। দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রে এ কথা আরো
বেশী ভাবে সত্য। অথচ এদের প্রত্যেককেই স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অধিকতর অর্থনৈতিক উন্নয়নের
জন্য কর্মসূচী গ্রহণ করতে হয়। এমতাবস্থায় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ একান্ত আবশ্যিক।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বলতে সাধারণত: এমন একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা বুঝায় যার মাধ্যমে কোন
একটি দেশের সম্পদের যথার্থ ব্যবহার ঘটবে এবং জনসাধারণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে।
অর্থনীতিবিদ ডিকেনসন এর মতে, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হচ্ছে একটি সুনিদিষ্ট
কর্তৃপক্ষের সচেতন সিদ্ধান্ত যা সামগ্রিক ভাবে অর্থ ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে জরিপ করার মাধ্যমে কোন
দ্রব্য কি পরিমাণে উৎপাদিত হবে এবং বন্টিত হবে সে সম্পর্কে নিদের্শনা প্রদান করবে। বারবারা উটন
র ধারণা অনুসরণ করে বলা যায়, সরকারী কর্তৃপক্ষের দ্বারা সুচিন্তিত এবং
সুবিবেচিত অর্থনৈতিক গুরুত্বাবলীর নির্বাচনই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে
এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা হল।
প্রথমত: পরিকল্পনা হবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক, সচেতন এবং স্বত:স্ফ‚র্ত।
দ্বিতীয়ত: অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমন্বয় এবং বাস্তবায়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকবে।
তৃতীয়ত: অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সীমিত সম্পদের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্ব
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ এ কারণেই যে, এ হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সীমিত
সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে গতিশীলতা আসে এবং অধিকতর
কল্যাণমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা
হল:
ক্স অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রে বিদ্যমান বৈষম্য হ্রাস পাওয়ার পরিবর্তে বৃদ্ধি পেতে
থাকে। ফলে অস্থিতিশীলতা তৈরী হয়। মানুষের মধ্যে বৈষম্যের বোধ যত বেশী প্রবল হতে থাকে
বিশৃং খলা এবং সংঘাত তত বৃদ্ধি পায়।
ক্স সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে উৎপাদকের স্বার্থ নিশ্চিত হতে পারে এবং একচেটিয়া
মুনাফা জমা হওয়ার প্রবণতা তৈরী হতে পারে না।
ক্স যথার্থ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। অন্যদিকে
পরিকল্পনাহীন অর্থনীতিতে সম্পদের অপচয় এবং অপব্যবহার ঘটে।
ক্স দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোতে বিদ্যমান পুঁজি সংকট অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দ্বারা মোকাবেলা সম্ভব হয়।
ক্স দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর মূলধন ও দক্ষতার অভাব থাকে। একই সাথে অভ্যন্তরীণ বাজার দুর্বল থাকার
কারণে প্রায়শ:ই উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাঙ্খিত গতি সঞ্চার করা সম্ভব হয় না। যথাযথ অর্থনৈতিক
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে পূর্বোক্ত সমস্যাগুলো বহুলাংশে মোকাবেলা করা যায়।
বাংলাদেশ এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতা
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ। প্রায় ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের মধ্যে বারো কোটি
মানুষের বাস। জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে এ হার বিশ্বে সর্বোচ্চ। জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশী
দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করে। শিক্ষার হার, স্বাস্থ্য সেবার মান, প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণের ক্ষমতা,
যে কোন মানদন্ডের বিচার করা হোক না কেন- বাংলাদেশের অবস্থা অত্যন্ত উৎকন্ঠাজনক। সে সাথে
রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি যা কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের ফসল উৎপাদনকে
ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে কৃষি কিংবা শিল্পখাতের কোনটিই
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিকশিত হতে পারছে না। এ সমস্ত হতাশা ব্যঞ্জক পরিস্থিতির সাথে যুক্ত হয়েছে
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন এবং বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর অর্থনীতি। এমতাবস্থায়
বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে যদি উন্নয়নের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতেই হয়, তাহলে একটি সুষ্ঠু-সুচিন্তিত সুষম
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। নিæে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিঁকতা
আলোচনা করা হলো।
জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করা ব্যতীত কোন রাষ্ট্রের পক্ষেই উন্নত হওয়া অসম্ভব। বাংলাদেশে
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সুষ্ঠু ভাবে র্চ্চা না হওয়ার ফলে জাতীয় সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার ঘটতে দেখা
যায়। এই প্রবণতা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করতে হলে নিরপেক্ষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও
বাস্তবায়ন করতে হবে।
মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বিচার করলে বাংলাদেশের স্থান দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেও একে বারে
নীচের দিকে। অধিকাংশ জনগণ ব্যাপক দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনধারণ করছে। জনকল্যাণমুখী
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা
রাখতে সক্ষম হবে-এ আশা করা অন্যায় নয়।
তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের ন্যায় বাংলাদেশও মূলধন সংকটে জর্জরিত। প্রয়োজনীয় মূলধনের
অভাবে জাতীয় কিংবা আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ প্রকল্পই সরকারের পক্ষে বাস্তবায়ন করা
সম্ভব হয় না। সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে বিদ্যমান মূলধন সংকট মোকাবেলা
করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। একদিকে স্বল্প সংখ্যক
লোকের অত্যধিক সম্পদ বৃদ্ধি অন্যদিকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ক্রমাগত অধিকতর দারিদ্র্যের শিকার
হচ্ছে। একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এমন অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকলে অস্থিতিশীলতা এবং সংঘাত সৃষ্টির
সম্ভাবনা থাকে। এ অবস্থায় সকল স্তরের জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষাকারী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ
করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের অর্থনীতি দীর্ঘদিন যাবৎ ক্রমাগত বিদেশী সাহায্য নির্ভর হয়ে পড়েছে। সরকারী এবং
বেসরকারী উভয় পর্যায়ের উন্নয়ন প্রক্রিয়াই একান্তভাবে বিদেশী সাহায্য নির্ভর। এধরনের নির্ভরশীল
অর্থনীতির পক্ষে কোন ক্রমেই উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন কিংবা দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। আবার
আমাদের অর্থনীতিতে নির্ভরশীলতার মাত্রা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে বিদেশী সাহায্যের পরিমাণ তত কমে
আসছে। সুচিন্তিত এবং সুদূর প্রসারী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা যদি গ্রহণ করা না হয় তাহলে একবিংশ
শতাব্দীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
বাংলাদেশের সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি সুষ্ঠু জাতীয় স্বার্থ রক্ষাকারী অর্থনৈতিক
পরিকল্পনার আবশ্যক। যে পরিকল্পনার মাধ্যমে কৃষি ও শিল্প খাতের উন্নয়ন আসবে। দেশীয় উৎপাদিত
পণ্যের বাজার নিশ্চিত হবে এবং বিদেশের বাজারে প্রতিযোগিতা করার মত মান এবং দাম সম্পন্ন পণ্য
তৈরী করা সম্ভব হবে।
সারকথা: কোন রাষ্ট্রই সম্পদের দিক স্বয়ং সম্পূর্ণ নয় বিধায় পরিকল্পনার উপর নির্ভর করতে হয়।
কোন আধুনিক রাষ্ট্রই পরিকল্পনাহীন চলতে পারে না। দ্রæত অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রধান কাম্য বিষয় বলে
দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর অধিকতর গুরুত্ব দিতে হয়। কারণ অর্থনৈতিক
পরিকল্পনার মাধ্যমে, সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনয়ণ এবং
কল্যাণমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হয়। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা না থাকলে রাষ্ট্রে বৈষম্য বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে যদি উন্নয়নের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতেই হয়, তাহলে একটি সুষ্ঠুসুচিন্তিত সুষম অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরী।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বলতে বুঝায়ক) বিদ্যমান সম্পদের যথেচ্ছছ ব্যবহার;
খ) সীমিত সম্পদের যৌক্তিক ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা;
গ) বিদেশী সাহায্য ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া;
ঘ) কোন নিদির্ষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করা।
২. সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অনুপস্থিতিতেক) উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়;
খ) রাষ্ট্রীয় সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হয় না;
গ) দরিদ্র রাষ্ট্র সমূহের উন্নয়নে গতি আসে;
ঘ) দ্রæত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়।
৩. অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ফলেক) রাষ্ট্রের বিদ্যমান বৈষম্য হ্রাস করা সম্ভব;
খ) জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের কোন দায়িত্ব থাকে না;
গ) দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর মুলধনের অভাব প্রকট হয়ে উঠে;
ঘ) সীমিত সম্পদের অপব্যবহার ঘটে।
৪ বাংলাদেশে একটি সুষম অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলেক) জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হবে;
খ) রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবে;
গ) বিদেশী সাহায্য নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে;
ঘ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিসর্জিত হবে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বলতে কি বুঝায়?
২. বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো উল্লেখ করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. অর্থনেতিক পরিকল্পনার গুরুত্ব আলোচনা করুন।
উত্তরমালাঃ ১.খ, ২.খ, ৩.ক, ৪.ক।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]