সিডও সনদের মূল কথা কি? উন্নয়ন এবং নারীমুক্তির সম্পর্ক উল্লেখ করুন।

নারী মুক্তি এবং উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক
যেহেতু যে কোন জনগোষ্ঠীর অর্ধেক অংশই নারী, সেহেতু যে কোন সমাজ বা রাষ্ট্রই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায়
সুফল লাভ করতে হলে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক
সমাজ ব্যবস্থায় নারীমুক্তি বিষয়টি অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিক
অনুশাসন ও পুরুষ আধিপত্যের বেড়াজাল নারী সমাজের প্রকৃত মুক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি
করে। বর্হিজগতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ধারায় অংশগ্রহণ এবং একই সাথে পারিবারিক কর্মকান্ডকে
সমন্বিত করতে গিয়ে বিভিন্ন দ্ব›েদ্বর সূত্রপাত হয়। ১৯৬০ ’র শেষ এবং ১৯৭০’র দশকের শুরুতে
একদল উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ গবেষণার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, তৃতীয় বিশ্বে প্রচলিত উন্নয়ন
প্রক্রিয়ায় নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারে না এবং যতদিন পর্যন্ত নারীরা এই প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ
করবে না ততদিন পর্যন্ত নারীমুক্তি এবং সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই চিন্তা ভাবনার প্রভাবেই
জাতিসংঘ ১৯৭৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নারী বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যু আলোচনা ও গবেষণার জন্য
নামে একটি বিশেষ সংগঠন গঠন করে। পরবর্তীতে
১৯৭৯ সালে নারী অধিকার সনদে নারীর প্রতি
সকল ধরনের বৈষম্য অবসানের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে। যা সনদে স্বাক্ষরকারী সকল সদস্য রাষ্ট্র
মেনে চলতে বাধ্য। তথাপি লক্ষ্য করা যায় যে, এখনো পর্যন্ত, বিশেষত: তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে
নারীমুক্তি বিষয়ে বিশেষ অগ্রগতি সাধিত হয় নি। একই সাথে উন্নয়ন ধারায় নারীদের ব্যাপক অংশ
গ্রহণের ক্ষেত্রে এখনো সমস্যা তৈরি হচ্ছে। একদিকে, নারী শ্রম অপেক্ষাকৃত সস্তা হওয়ার কারণে
তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে উন্নয়ন কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ সম্ভাবনা বেড়েছে।
অন্যদিকে বহুবিধ কুসংষ্কার এবং অনুশাসন নারী সমাজের মুক্তি প্রক্রিয়াকে বিঘিœত করছে।
সারণী-১
বাংলাদেশে শিক্ষিতা বিবাহিতা মহিলাদের চাকুরী না করার প্রধান কারণ
কারণ শতকরা কত ভাগ
শিশু পালন ২৪.০
স্বামী বা পরিবারের আপত্তি ২০.০
সংসার ও চাকুরী দুই কাজের ভার নেওয়া সম্ভব নয় ১৪.১
পছন্দ মত চাকুরীর অভাব ১৭.৪
চাকুরীর প্রয়োজন নেই ৭.৪
চাকুরী করার ইচ্ছা নেই ৫.৪
শিক্ষাগত যোগ্যতা কম ৬.৩
অন্যান্য ৪.২
মোট ১০০.০
সূত্র: বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষা, ১৩ খন্ড, ১৪০২ বাংলা।
উপরোক্ত ছক পর্যালোচনা থেকে বোঝা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাংসারিক বিভিন্ন দায় দায়িত্ব (যা
একচেটিয়া ভাবে নারীদের কর্তব্য বলেই ধরে নেয়া হয়) এবং বিধি-নিষেধের কারণেই নারীরা ঘরের বাইরে আসতে পারছেন না। যতদিন পর্যন্ত নারীরা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে না ততদিন পর্যন্ত নারী মুক্তি এবং সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানের ২৭ এবং ৩১ নং ধারায় আইনের দৃষ্টিতে সমতার মৌলিক
অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল ব্যক্তিকে আইনগত সহায়তা লাভের
সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৮ নং ধারা অনুসারে কোন ব্যক্তি লিঙ্গীয়
কারণে রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের স্বীকার হবে না এবং রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান
সুযোগ লাভের কথাও বলা হয়েছে। উপরোক্ত ধারাগুলো একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের মৌলিক শর্ত
পূরণ করে নারী-পুরুষ সমানাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। কিন্তু, বাংলাদেশ, সংবিধানের এই সব
অঙ্গীকারগুলো বাস্তবে পূরণ না হওয়ায় নারীর সাংবিধানিক অধিকার রক্ষিত হয় নি এবং উন্নয়ন
প্রক্রিয়া নারীর যথাযথ অংশগ্রহণও নিশ্চিত হয় নি।
নারী মুক্তির বর্তমান এজেন্ডার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সম অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষমতায়ন। নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে তা সমগ্র উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সুফল আনবে। এই সুফল অর্জন করতে হলে
প্রচলিত দ্ব›দ্ব সংশয় পরিহার করা প্রয়োজন। একই সাথে নারী সমাজের যোগ্যতা অর্জনও গুরুত্বপূর্ণ
দিক হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। নারীরা যদি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, সমাজ বা রাষ্ট্র পরিচালনা প্রভৃতি
ক্ষেত্রে অবদান রাখার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয় তাহলেই পুরুষের সাথে সমকক্ষতা অর্জনের
প্রতিযোগিতা করতে পারবে। নারী সমাজের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনভাবেই প্রকৃত উন্নয়ন
বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ ও নারী উন্নয়ন
পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে, প্রকৃত ‘উন্নয়ন‘ বাস্তবায়িত করতে হলে উক্ত প্রক্রিয়ায় নারীদের
অংশগ্রহণ একান্ত আবশ্যক। সে সাথে নারী সমাজের বর্তমান অবস্থানের ব্যাপক উন্নতি ঘটানো
প্রয়োজন। বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এ কথাগুলো সত্য। সামগ্রিক দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা
করলে দেখা যায়, নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয় নি।
যদিও নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারী সমাজের ভ‚মিকা
বাড়ছে। নারী অধিকার আন্দোলন প্রসারিত হচ্ছে তথাপি দেশের অধিকাংশ নারীই এই প্রক্রিয়াগুলোর
বাইরে অবস্থান করেন। কেননা, গ্রাম নির্ভর বাংলাদেশের মৌলিক কাঠামো পরিবারে কাজের প্রকৃতি
বংশানুক্রমিক ভাবে নির্দিষ্ট থাকে। পরিবারগুলো পিতৃতান্ত্রিক আদর্শ এবং নিয়মকানুন দ্বারা পরিচালিত
হয়। এমতাবস্থায় সন্তান লালন-পালন, রান্না-বান্না, ঘর-গৃহস্থালী পরিস্কার করা - এগুলোই একজন
গ্রামীণ নারীর কাজ হিসাবে বিবেচিত। যদিও বিভিন্ন বেসরকারী এবং সরকারী কর্মকান্ডের ফলে গ্রামীণ
সমাজের বিদ্যমান পরিবার কাঠামোতে কিছুটা আলোড়ন তৈরি হয়েছে তবু শিক্ষা ও সচেতনতার
অভাবে নারী মুক্তি এবং নারী উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে না। বহির্জগতের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ সীমিত
থাকার ফলে নারীদের মধ্যে অধিকার বোধ প্রবল হয় না। নারীদের প্রতি কোন প্রকার বৈষম্য যদিও
আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ তবু বাংলাদেশের নারীরা (এমনকি শহুরে শিক্ষিত নারীরাও) প্রতিনিয়ত বিভিন্ন
ধরনের বৈষম্যের স্বীকার হয়। এই বৈষম্য- অসাম্য বলবৎ থাকা অবস্থায়-নারী সমাজের মুক্তি অর্জন
সম্ভব নয়। নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ এবং নারী উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য নিম্মোক্ত প্রস্তাবসমূহ
বাস্তবায়ন আবশ্যক।
নারী শিক্ষার দ্রুত প্রসার;
ধর্মীয় এবং সামাজিক কুসংস্কার দূর করার জন্য সামাজিক আন্দোলন বৃদ্ধি;
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণ;
নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক যে কোন পদক্ষেপ রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দমন করা;
নারী সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচার - প্রচারনা
সারকথা: যে কোন জনগোষ্ঠীর অর্ধেক অংশ নারী। তাই উন্নয়ন এজেন্ডায় নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা না
হলে তা থেকে কোন সুফল আসতে পারে না। বহুযুগের প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নারীমুক্তি
ও নারীর ভাগ্যোন্নয়নে বাঁধা হিসেবে কাজ করছে। ১৯৭৫ সালে ’সিডও সনদ’র মাধ্যমে নারীর প্রতি
সকল প্রকার বৈষম্য অবসানের অঙ্গীকার করা হয়েছে, যদিও বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক
দেশেই এখনো সিডও সনদের বাস্তবায়ন হয়নি। ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার রোধ, নারী সমাজের
সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষা প্রসার সর্বোপরি যথাযথ রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নারী সমাজের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। নারীদের প্রতি যে কোন প্রকার বৈষম্য যদিও আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ তবু বাংলাদেশের নারীরা (এমনকি শহুরে শিক্ষিত) প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের স্বীকার হয়।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. ঈঊউঅড সনদের মাধ্যমেক. নারী নির্যাতনকে বৈধ বলে গণ্য করা হয়;
খ. উন্নয়ন কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়;
গ. পুরুষদের বহুবিবাহ বৈধ ঘোষণা করা হয়;
ঘ. নারীর প্রতি সকল বৈষম্য রহিত করার ঘোষণা দেয়া হয়।
২. প্রকৃত উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য-
ক. সমাজে পুরুষাধিপত্য একান্ত প্রয়োজন;
খ. নারীদের গৃহে আবদ্ধ রাখা উচিত;
গ. নারীমুক্তি প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে;
ঘ. সকল চাকুরী থেকে নারীদের ছাঁটাই করা প্রয়োজন।
৩. গ্রামীণ বাংলাদেশের পরিবার গুলোক. পিতৃতান্ত্রিক;
খ. পুরুষ এবং নারী সমান ক্ষমতা সম্পন্ন;
গ. নারী অধিকার রক্ষা করে;
ঘ. মাতৃতান্ত্রিক।
৪. গ্রামীণ নারীর কাজ হিসাবে বিবেচিতক. সারাদিন গাল-গল্প করা;
ধ. স্বামীর সাথে ক্ষেত-খামারে কাজ করা;
গ. সালিশ -দরবার করা;
ঘ. সন্তান লালন পালন, রান্না,ঘর-গৃহস্থালী পরিস্কার করা।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমুলক প্রশ্ন
১. সিডও সনদের মূল কথা কি?
২. উন্নয়ন এবং নারীমুক্তির সম্পর্ক উল্লেখ করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. নারী মুক্তি এবং উন্নয়নের বাঁধাসমূহ আলোচনা করুণ।
উত্তরমালা: ১. ঘ, ২. গ, ৩. ক, ৪.ঘ।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]