বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করুন।

পররাষ্ট্র নীতির সাধারণ উপাদান
পররাষ্ট্র নীতি এককভাবে নীতি প্রণেতাদের ইচ্ছা ও বিবেচনার উপর নির্ভরশীল নয়। পররাষ্ট্র নীতি
প্রণেতাগণকে বিভিন্ন উপাদানের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। যে সব উপাদানের উপর
ভিত্তি করে পররাষ্ট্র নীতি প্রণীত হয়, সে সব উপাদানকে পররাষ্ট্র নীতির নির্ধারক হিসেবেও অভিহিত
করা যায়। পররাষ্ট্র নীতির সাধারণ উপাদানসমূহ হল-
ভৌগোলিক-কৌশলগত অবস্থান;
জনসংখ্যা;
অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্তর;
মতাদর্শগত পরিবেশ;
সামরিক সামর্থ্য;
প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের আচরণ ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ।
পররাষ্ট্র নীতির উপাদানসমূহের আপেক্ষিক গুরুত্ব
পররাষ্ট্র নীতির নির্ধারক উপাদান অনেক। এর মধ্যে কোন কোন উপাদান দৃশ্যমান (ারংরনষব) এবং
কোন কোনটি অদৃশ্যমান । যেমন, ভৌগলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি,
সামরিক সামর্থ্য ইত্যাদি উপাদানগুলো সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। কিন্তু মতাদর্শগত পরিবেশ,
প্রতিবেশীদের আচরণ ও আন্তর্জাাতিক পরিবেশএ উপাদানগুলো দৃশ্যমান নয়। দৃশ্যমানই হোক
আর অদৃশ্যমানই হোক প্রতিটি উপাদানই পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব
উপাদানের মধ্যে কোনটি মূখ্য এবং কোনটি গৌণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ ছাড়া, সময়ের
পরিবর্তনের সাথে সাথে পররাষ্ট্র নীতির কোন কোন উপাদানের গুরুত্ব কমে যেতে পারে, আবার কোন
কোন উপাদানের গুরুত্ব বেড়েও যেতে পারে। যেমন, দূর পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র এবং উপগ্রহের মাধ্যমে
তথ্য সংগ্রহের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পর ভ‚-কৌশলগত উপাদানের গুরুত্ব কমে গেছে, বেড়ে গেছে
সামরিক সামর্থ্যরে গুরুত্ব। পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের দ্ব›দ্ব নিরসন তথা ¯œায়ুযুদ্ধের অবসানের পর
মতাদর্শের গুরুত্ব কমে গেছে এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির গুরুত্ব বেড়ে গেছে । পররাষ্ট্র নীতির
উপাদানগুলোর গুরুত্ব আপেক্ষিক অর্থে বেড়ে বা কমে যেতে পারে, কিন্তু কোন উপাদানই কখনও
গুরুত্বহীন হয়ে যায় না। একারণে পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে সব উপাদানকেই বিবেচনা করার
প্রয়োজনীয়তা থাকে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বিভিন্ন উপাদান
পররাষ্ট্র নীতির উল্লেখিত উপাদানসমূহের আলোকে এখন আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র
নীতির নির্ধারক উপাদান নিয়ে আলোচনা করব।
ভৌগোলিক-কৌশলগত অবস্থান : ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার
অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তরে ভারত এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। দক্ষিণ-পূর্বে
মায়ানমারের সাথে সংকীর্ণ সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশের তিন দিক ভারত কর্তৃক পরিবেষ্টিত বলে এবং
প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলো ভারতের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হবার কারণে বাংলাদেশের
পররাষ্ট্র নীতিতে ভারতকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হয়। ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং
শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ মীমাংসার নীতি অনুসরণ করা অপরিহার্য হয়ে উঠে। বাংলাদেশের উপক‚ল
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগ হিসেবে পরিগণিত হয়। এ কারণে কৌশলগত বিবেচনায়
বাংলাদেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এই সুযোগকে কাজ লাগিয়ে অর্থনৈতিক সুবিধা
অর্জনের অনুক‚ল পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করেছে, যার ফলশ্রুতিই হল ‘বিমসটেক’। বাংলাদেশের
দক্ষিণাঞ্চলের ভ‚-ভাগ সন্নিহিত বঙ্গোপসাগর ভারত মহাসাগরের সাথে যুক্ত বলে বাংলাদেশ ভারত
মহাসাগরকে সামরিক প্রতিদ্ব›িদ্বতামুক্ত রাখতে সচেষ্ট। কৌশলগত বিবেচনায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা
যেহেতু ভারত মহাসাগরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের সাথে যুক্ত, সে কারণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি সে
লক্ষ্যেই প্রণীত হয়েছে।
জনসংখ্যা : বাংলাদেশের জনসংখ্যা চীন ও ভারতের মতো অধিকও নয়, আবার ভ‚টান ও মালদ্বীপের
মতো কমও নয়। বাংলাদেশ জনসংখ্যাগত বিবেচনায় বিশ্বের মধ্যম পর্যায়ের একটি দেশ। এ দেশের
বারো কোটি জনসংখ্যা প্রধানত:ই সমজাতীয়। এ সমজাতীয় জনসংখ্যা বাংলাদেশের জাতীয় শক্তি বৃদ্ধি
করেছে এবং বিশ্বে গুরুত্ব বাড়িয়েছে। ফলে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহের মতো বাংলাদেশের নিরাপত্তা ভীতি ও
অস্তিত্ব সংকট তীব্র হয়ে উঠেনি। তাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি কারো প্রতি নতজানু নয়, নিরাপত্তা
ব্যবস্থাও কারো উপর নির্ভরশীল নয়। এ ছাড়া, বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ জনশক্তি
হিসেবে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রবেশ করেছে। এর ফলে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশও শ্রমশক্তির
জন্য বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল। এ কারণে উন্নত দেশের সাথে বাংলাদেশের দরকষাকষির
ক্ষমতাও অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে জনসংখ্যার গুরুত্ব তাই এতো বেশী।
অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্তর : অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনুন্নত। একদিকে এদেশে শিল্পের
বিকাশ ঘটেনি, অন্যদিকে কৃষিতে সনাতন প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা বিদ্যমান রয়েছে। এর ফলে শিল্প ও
কৃষি উভয় ক্ষেত্রে উৎপাদন সংকট বিদ্যমান। এমনকি ভ‚-অভ্যন্তরে যে সব প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদ
আছে তা উত্তোলনের ক্ষমতাও বাংলাদেশের নেই। মূলত: পুঁজি গঠনের নিæ হার ও আধুনিক প্রযুক্তির
অভাবজনিত কারণেই উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে গতিশীল করা যাচ্ছে না। তাই বাংলাদেশকে পুঁজি ও প্রযুক্তির
জন্য উন্নত দেশসমূহের উপর নির্ভর করতে হয়। এ কারণে বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্র নীতিকে
এমনভাবে নির্ধারণ করে যাতে উন্নত বিশ্বের সাথে সু-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঋণ, সাহায্য এবং
প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্তর যদি উন্নত হতো তাহলে
বাংলাদেশ নিশ্চয়ই অর্থনৈতিক সাহায্য আদায়ের পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করতো না।
মতাদর্শগত পরিবেশ : মতাদর্শগত পরিবেশ অনেক সময়েই পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য
নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। পঁচাত্তর-পূর্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সমাজতন্ত্রী মতাদর্শের প্রভাবে
বাংলাদেশ ছিল ভারত ও সোভিয়েত ঘেষা। পরবর্তীকালে উদার ও ইসলামী মতাদর্শ অনুসরণের ফলে
দেশের সম্পর্ক বেড়েছে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ ও পশ্চিমা বিশ্বের সাথে। সা¤প্রতিককালে সমাজতান্ত্রিক
মতাদর্শের চরম বিপর্যয় এবং উদার গণতান্ত্রিক মতাদর্শের ব্যাপক প্রসারের ফলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র
নীতিতে পাশ্চাত্যমুখী ঝোঁক প্রবল হয়ে উঠেছে।
সামরিক সামর্থ্য : বাংলাদেশের চেয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সামরিক ক্ষমতা বহু গুণ বেশী।
সেজন্যে বাংলাদেশের মধ্যে সব সময়েই নিরাপত্তা ভীতি বিরাজ করে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের
পররাষ্ট্র নীতিতে ভারতের সাথে সংঘাত এড়িয়ে চলার এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ
মীমাংসার ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়। কিন্তু জল, স্থল ও আকাশে নিজের আত্বরক্ষার জন্যই উন্নততর
সামরিক প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহের প্রচেষ্টা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ
দিক। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র, চীন প্রভৃতি দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র নীতিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ জনশক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে প্রবেশ করায় অনৈক উন্নত দেশও শ্রমশক্তির জন্য বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের আচরণ ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ : বাংলাদেশের প্রতিবেশী হিসেবে
বিশেষভাবে ভারতের এবং সাধারণভাবে অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশ ও মায়ানমারের আচরণের উপর
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির প্রকৃতি নির্ভর করে। সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বৈরীতা, জনসংখ্যা স্থানান্তর,
সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণ, বাণিজ্য ব্যবধান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রতিবেশীদের আচরণের উপর দ্বিপাক্ষিক
ও আঞ্চলিক পর্যায়ের সম্পর্ক নির্ধারিত হয়। প্রতিবেশীদের আচরণ সংযত ও বন্ধুত্বপূর্ণ হলে
বাংলাদেশও সহযোগিতা স¤প্রসারণে আগ্রহী হয়ে উঠে। তা না হলে জাতিসংঘ ও বিশ্ব-স¤প্রদায়ের
সমর্থন ও সহযোগিতার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার নীতি গ্রহণ করতে হয়। এছাড়া, আন্তর্জাতিক
পরিবেশ, বিশেষ করে পারমাণবিক উত্তেজনা বাংলাদেশকে বিচলিত করে। তাই বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে
পারমানবিক প্রতিযোগিতামুক্ত বিশ্ব-পরিবেশ গড়ে তোলার ইচ্ছা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে
প্রতিফলিত হয়।
এতোক্ষণ আমরা যেসব উপাদান নিয়ে আলোচনা করলাম এগুলোই পররাষ্ট্র নীতির মূখ্য উপাদান।
মূলত এসব উপাদানের ভিত্তিতেই কোন দেশের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারিত হয়।
সারকথা: পররাষ্ট্রনীতির অনেকগুলো উপাদান থাকে। এর মধ্যে কোন কোন উপাদান দৃশ্যমান এবং
কোন কোনটি অদৃশ্যমান। দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্যমান উভয় ক্ষেত্রেই কোন কোন উপাদান সময় ও
পরিবেশের কারণে মূখ্য কিংবা গৌন হিসেবে বিবে হতে পারে। বাংলাদেশর পররাষ্ট্র নীতির গুরুত্বপূর্ণ
উপাদানগুলো হল: কৌশলগত অবস্থান, জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্তর, মতাদর্শগত পরিবেশ, সামরিক সামর্থ্য, প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের আচরণ ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১। পররাষ্ট্র নীতির অদৃশ্যমান উপাদান কোন্টি ?
ক) অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্তর;
খ) জনসংখ্যা;
গ) মতাদর্শগত পরিবেশ;
ঘ) সামরিক সামর্থ্য।
২। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত প্রতিবেশী রাষ্ট্র কোন্টি?
ক) নেপাল;
খ) মায়ানমার;
গ) শ্রীলঙ্কা;
ঘ) পাকিস্তান।
৩। ¯œায়ুযুদ্ধ অবসানের পর মতাদর্শের গুরুত্ব কমে গিয়ে কোন উপাদানের গুরুত্ব বেড়েছে?
ক) অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্তর;
খ) জনসংখ্যা;
গ) ভৌগলিক ও কৌশলগত অবস্থান;
ঘ) সামরিক সামর্থ্য।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। সংকীর্ণ অর্থে পররাষ্ট্র নীতি বলতে আপনি কি বুঝেন?
২। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করুন।
উত্তরমালা: ১. গ, ২. খ, ৩. ক।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]