সার্কের জন্ম ও বিকাশধারা
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রশ্নে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট
জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাছে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রস্তাব পেশ
করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৮১ সালের এপ্রিল মাসে কলম্বোতে সাতটি
দক্ষিণ এশীয় দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মাধ্যমে সার্ক গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়।
পররাষ্ট্র সচিবদের আরও তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় কাঠমুন্ডু, ইসলামাবাদ ও ঢাকায়। দক্ষিণ এশিয়ায়
আঞ্চলিক সহযোগিতার অভিযানে এগুলো এক একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। কলম্বো
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিবগণ একমত হন যে, দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা কল্যাণকর,
আকাক্সিক্ষত এবং প্রয়োজনীয়। কলম্বো বৈঠক সহযোগিতার পাঁচটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে। প্রতিটি ক্ষেত্রের
জন্য ষ্টাডি গ্রæপ গঠন করে সমম্বয়কারী দেশে নিয়োগ করা হয় : ১। কৃষি (বাংলাদেশ) ২। পল্লী উন্নয়ন
(শ্রীলঙ্কা) ৩। আবহাওয়া (ভারত) ৪। টেলিযোগাযোগ (পাকিস্তান) ৫। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কার্যক্রম
(নেপাল)। এগুলোই ছিল প্রস্তাবিত পাঁচটি ক্ষেত্র।
কাঠমুন্ডু বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিবগণ সম্ভাব্য সহযোগিতার তিনটি নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করেন : ১।
পরিবহণ ২। ডাক সার্ভিস ৩। বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা। ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র সচিবদের
তৃতীয় বৈঠকে ক্রীড়া, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে গঠিত হয় আর একটি স্টাডি গ্রুপ। একটি সমম্বিত
কার্যক্রম প্রণয়নের জন্য আবার একটি সর্বময় কমিটি গঠন করা হয়। সর্বময় কমিটি কর্তৃক সম্পাদিত
কার্যক্রম ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিবদের চতুর্থ বৈঠকে গ্রহণ করা হয়। নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রিদের
প্রথম বৈঠকে সহযোগিতার ক্রমধারা বাস্তবায়ন পর্যায়ে এগিয়ে যায়। এ বৈঠকে সমম্বিত কার্যক্রম চালু
করবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা গৃহীত হয়।
১৯৮৪ সালের ফেব্রæয়ারীতে নয়াদিল্লীতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সময় হতে এ পর্যায় শুরু হয় এবং
নয়াদিল্লী, মালে ও থিম্পুতে এই কমিটির পরবর্তী চারটি বৈঠক পর্যন্ত তা চলতে থাকে। আঞ্চলিক স্তরে
বছরে একবার পররাষ্ট্র মন্ত্রিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে অবিলম্বে একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের বিষয়টি পররাষ্ট্র
মন্ত্রিদের বৈঠকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রথম সার্ক সম্মেলনের স্থান হিসেবে ঢাকাকে নির্বাচন করা
হয়। ৭ ও ৮ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রথম শীর্ষ সম্মেলন
অনুষ্ঠিত হয়। সমে¥লনে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (ঝঅঅজঈ : ঝড়ঁঃয অংরধহ
অংংড়পরধঃরড়হ ভড়ৎ জবমরড়হধষ ঈড়-ড়ঢ়বৎধঃরড়হ) আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়। সম্মেলনে সাতটি
দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ যোগদান করেন এবং বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট-এর প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত
হন। রাষ্ট্রপ্রধানগণ নিজেদের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসার ও আন্তর্জাতিক ফোরামে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ
করার জন্য একটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন যা ঐতিহাসিক ‘ঢাকা ঘোষণা’ নামে পরিচিত। ১৯৮৫ সালে
ঢাকায় সার্কের ১ম শীর্ষ সম্মেলন হতে শুরু করে এ পর্যন্ত ১০টি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন
দেশে পালাক্রমে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ১৯৯৮ সালে এ যাবৎকালের শেষ শীর্ষ সম্মেলন
অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে।
সার্কের উদ্দেশ্য ও নীতিমালা
এ পর্যায়ে আমরা সার্ক গঠনের উদ্দেশ্য এবং সার্ক সনদে উল্লেখিত নীতিমালা সর্ম্পকে আলোচনা
করব।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর
রাষ্ট্র প্রধানগণ
নিজেদের মধ্যকার
বিরোধ মীমাংসার ও
আন্তর্জাতিক
ফোরামে
ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ
করার জন্য একটি
সিদ্ধান্ত ঘোষণা
করেন যা ’ঢাকা
ঘোষণা’ হিসেবে
পরিচিত।
প্রথমেই আমরা দেখব সার্ক গঠনের উদ্দেশ্য কি কি?
সার্ক গঠনের উদ্দেশ্য হল : ১। দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জীবনের মান উন্নত করা ২। এই অঞ্চলের
অর্থনৈতিক উন্নতি, সামাজিক প্রগতি ও সাংস্কৃতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করা ৩। দক্ষিণ এশিয়ার
দেশগুলোর মধ্যে যৌথ স্বনির্ভরতাকে উন্নত ও জোরদার করা ৪। একে অন্যের সমস্যায় পারস্পরিক
আস্থা, সমঝোতা ও সহযোগিতার হস্ত প্রসার করা ৫। আর্থ-সামাজিক,সাংস্কৃতিক, কারিগরি ও
বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে সক্রিয় ও পারস্পরিক সহযোগিতা করা এবং ৬। আন্তর্জাতিক ফোরামে অভিন্ন স্বার্থে
পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করা।
সার্কের নীতিমালায় প্রথমেই সার্বভৌম সমতা, আঞ্চলিক অখন্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অন্যের
অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা এবং পারস্পরিক সুযোগ সুবিধার ভিত্তিতে সহযোগিতার কথা
বলা হয়েছে।
সনদে প্রতি বছর একবার সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
সদস্য দেশগুলো প্রয়োজন মনে করলে একাধিকবার বৈঠকে বসতে পারবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রিদের সমন্বয়ে
একটি মন্ত্রি পরিষদ বছরে দু’বার বৈঠকে বসবে। বিশেষ বৈঠক সদস্য দেশগুলোর সম্মতিতে হতে
পারবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রিগণ সংস্থার নীতি প্রণয়ন , অগ্রগতি পর্যালোচনা, সহযোগিতার নয়া ক্ষেত্র
সনাক্তকরণ ও প্রয়োজনবোধে অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। পররাষ্ট্র সচিবদের সমন্বয়ে গঠিত
স্ট্যান্ডিং কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ী বৈঠকে বসবে। সার্বিক সমন্বয়, প্রকল্প ও কর্মসূচি অনুমোদন,
আঞ্চলিক ও বহি:সম্পদ যোগানোর দায়িত্ব ছাড়াও এই কমিটি মন্ত্রি পরিষদের কাছে সময়ে সময়ে
প্রতিবেদন পেশ এবং নীতি ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অভিমত চাইবে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন,
বাস্তবায়ন, সমন্বয় ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্যে টেকনিকাল কমিটি থাকবে। সনদে সংস্থার একটি
সচিবালয় থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থার কর্মতৎপরতা পরিচলনার জন্য সদস্য দেশগুলোর
চাঁদা প্রদান বাধ্যতামূলক হবে না। অঞ্চলের মধ্যে পর্যাপ্ত তহবিল গঠন করা না গেলে সংস্থা বাইরের
উপযুক্ত সূত্র হতে আর্থিক সহযোগিতা নিতে পারবে। সংস্থার প্রতিটি স্তরে সিদ্ধান্ত হতে হবে
সর্বসম্মতিক্রমে।
সাপটা
সার্কের উদ্দেশ্য এবং নীতিমালা আলোচনার পর আমরা সার্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ‘সাপটা’ নিয়ে
আলোচনা করব। সাপটা (ঝঅচঞঅ)-এর পূর্ণ অর্থ হল: দক্ষিণ এশীয় অগ্রাধিকার মূলক বাণিজ্য
ব্যবস্থা
সার্কভুক্ত দেশগুলো ১৯৯৩ সালের ১১ই এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৭ম শীর্ষ সম্মেলনের সময় সাপটা
চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। বর্তমানে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার বাস্তবতাকে সামনে রেখে অত্র
এলাকার আন্তঃবাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যেই স্বাক্ষরিত হয়েছে সাপটা চুক্তি। ১৯৯৭ সাল হতে এ সমঝোতা
চুক্তিট কার্যকরী হয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়িত হলে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্যের ক্ষেত্রে
ভৌগোলিক বা সীমানাগত কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। অনেকের মতে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে
অর্থবহ করে তোলার জন্য সাপটার মত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই। তবে
সাপটা চুক্তিতে বেশ নমনীয় শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে যার ফলে সার্ক দেশগুলো সহজেই তা
কার্যকর করতে পারে। শর্তানুযায়ী কোন দেশ তার অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে
এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে সে ব্যবস্থা হতে বেরিয়ে আসার স্বাধীনতা রাখে। স্বাভাবিকভাবেই ভারত বড়
দেশ হবার কারণে সাপটার সিংহ ভাগ সুবিধা সে ভোগ করবে। কেননা, ভারতের সাথে অন্যান্য
সার্কভুক্ত দেশগুলোর বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে যা ভারসাম্যপূর্ণ না হলে সে সব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত
হবে। তবে সাপটা চুক্তিতে স্বল্প-উন্নত দেশগুলোকে বিশেষ ও অধিক আনুক‚ল্যের আশ্বাস দেয়া
হয়েছে।
সাপটাকে ২০০১ সালে সাফটায় (ঝড়ঁঃয অংরধহ ঋৎবব ঞৎধফব অমৎববসবহঃ-ঝঅঋঞঅ)
রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া চলছে। সাফটা কার্যকর হলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্ত:রাষ্ট্রীয়
বাণিজ্য ব্যাপকভাবে প্রসারিত হবে।
সার্কের সাফল্য ও ব্যর্থতা
আমরা লক্ষ্য করছি, অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সার্ক তেরটি বছর অতিক্রম করলো। এর সাফল্য ও
ব্যর্থতা সম্পর্কে চ‚ড়ান্ত মন্তব্য করার সময় এখনও হয় নি। সার্ক গঠনে সাফল্য যে তেমন কিছুই
আসেনি তা নয়, তবে প্রত্যাশার চেয়ে তা নিতান্তই কম। ইতোমধ্যে সার্কভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে
সহযোগিতার ১৫ টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন - ১. শিক্ষা; ২. স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কার্যক্রম;
সার্বভৌম সমতা,
আঞ্চলিক অখন্ডতা,
রাজনৈতিক
স্বাধীনতা, অন্যের
অভ্যন্তরীণ
ব্যাপারে হস্তক্ষেপ
না করা এবং
পারস্পরিক
সুযোগ-সুবিধার
ভিত্তিতে
সহযোগিতারএইসব মূলনীতির
উপর ভিত্তি করেই
সার্ক গঠিত
হয়েছে।
সাপটা
কে সাফটায়
রূপান্তরিত করার
প্রক্রিয়া চলছে। এ
প্রক্রিয়া কার্যকর হলে
দক্ষিণ এশীয়
দেশগুলোর মধ্যে
আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য
ব্যাপকভাবে প্রসারিত
হবে আশা করা
যায়।
৩. কৃষি ও বনজ সম্পদ; ৪. আবহাওয়া; ৫. ডাক যোগাযোগ; ৬. পল্লী উন্নয়ন; ৭. মাদক দ্রব্যের
চোরাচালান ও এর অপব্যবহার প্রতিরোধ; ৮. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি; ৯. ক্রীড়া; ১০. শিল্প ও সংস্কৃতি; ১১.
টেলিযোগাযোগ; ১২. পর্যটন; ১৩. পরিবহণ; ১৪. উন্নয়নে নারী সমাজ এবং ১৫. সাপটার আওতায়
বাণিজ্য উদারকরণ। সহযোগিতার এসব ক্ষেত্র চিহ্নিত করার পর এগুলো বাস্তবায়নের জন্য সমম্বিত
কর্মসূচীও গ্রহণ করা হয়েছে।
শুধু বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা স¤প্রসারণই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের সরকার প্রধানদের এক
টেবিলে বসার পরিবেশও সার্কের জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। পারস্পরিক সন্দেহ আর অবিশ্বাসের
পরিপ্রেক্ষিতে নি:সন্দেহে এটা একটা মনস্তাত্তি¡ক বিজয়। এর ফলে অবিশ্বাসের মাত্রা এবং পরস্পরের
মুখ না দেখার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমেছে। এস.ডি. মুনির মতে, ‘এ ক্ষেত্রে সার্কের সাফল্য হচ্ছে
আস্থা ও বোঝাপড়া সৃষ্টি যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে।’
এ ছাড়া, সার্কের আওতায় এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর সেমিনার
- সিম্পোজিয়াম হচ্ছে। এ সব একাডেমিক কার্যক্রমের ফলে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা
সহজে অনুধাবন করা যাচ্ছে। সার্ক না হলে হয়তো তা সম্ভব হতো না। সার্কের সাফল্যের আরো দু’টি
দিক হচ্ছে সার্ক ফেলোশীপ নিয়ে এখন অনেকেই গবেষণা করতে পারছেন। সার্কের ভিসা অব্যাহতির
আওতায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, এম. পি. এবং ভাইস চাান্সেলরগণ এ এলাকায় বিনা ভিসায় ভ্রমণ
করতে পারছেন। সম্পর্ক উন্নয়নের প্রশ্নে এ দিকগুলোও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু একথা ঠিক, সাফল্যের চেয়ে সার্কের ব্যর্থতার দিকগুলোই বেশী স্পষ্ট। সার্ক ইসি বা আসিয়ান
(অঝঊঅঘ)-র মতো সহযোগিতা স¤প্রসারণ করতে পারে নাই। পারস্পরিক আস্থা অর্জন ও
সমঝোতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সার্ক এদের চেয়ে পিছিয়ে আছে। সমালোচকদের দৃষ্টিতে, দ্বিপাক্ষিক
বিষয়ে সার্ককে নিবৃত্ত করে রাখাতে সার্ক সম্মেলন সাত দেশের সরকার প্রধানদের পিকনিক পার্টিতে
পরিণত হয়েছে। কেননা, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতা হচ্ছে এখানকার বিবাদগুলো মূলত:
দ্বিপাক্ষিক চরিত্রের। কাশ্মির নিয়ে পাক-ভারত যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতি; ভারতের সাথে বাংলাদেশের
তালপট্টি, শান্তি বাহিনী, ফারাক্কা, কাটাতরের বেড়া, পুশব্যাক, আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে ৫৪টি
নদীতে বাঁধ নির্মাণ সমস্যা; শ্রীলংকার তামিলদের ভারত কর্তৃক সমর্থন ও সশস্ত্র ট্রেনিং প্রদান;
নেপালের সাথে ভারতের ট্রানজিট সংক্রান্ত বিরোধ; মালদ্বীপে ভারতের হস্তক্ষেপ ইত্যাদি উদাহরণ
হিসেবে উল্লেখযোগ্য। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এ অঞ্চলের অধিকাংশ সমস্যাই হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক এবং
ভারতের সাথেই সকল প্রতিবেশীর বিবাদ। কিন্তু সার্ক ফোরামে এসব দ্বিপাক্ষিক সমস্যা উত্থাপন করা
যাবে না। আঞ্চলিক বিরোধই যদি নিস্পত্তি করা না যায় তাহলে সম্পর্ক উন্নয়নে সার্কের গুরুত্ব কি
থাকে? এছাড়া, সার্ক দেশসমূহের মধ্যে নিরাপত্তার ধারণাগত ঐকমত্য ও অভিন্ন পররাষ্ট্র নীতি
অনুপস্থিত। এসব কারণে সার্ক একটি সফল আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারছে না।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভ‚টানকে নিয়ে একটি উপ-আঞ্চলিক জোট গঠনের
প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ ধরনের উপ-আঞ্চলিক জোট সার্কের মূল চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে
পারে-এই আশঙ্কায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হতে পারে নি। তবে, সুনির্দিষ্ট প্রকল্পের ভিত্তিতে সার্কভুক্ত
একাধিক দেশ যৌথ কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে। সার্ক-কাঠামোর মধ্যেই এ সুযোগ রয়েছে। তাই
বিগত সার্ক সম্মেলনে পৃথক উপ-আঞ্চলিক জোট গঠনের পরিবর্তে প্রকল্প- ভিত্তিক কার্য-পরিকল্পনা
গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সারকথাঃ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সন্দেহ দূর করে সহযোগিতা
স¤প্রসারণের লক্ষ্যে সার্ক গঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সার্কের
প্রস্তাবক। সার্ক প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা স¤প্রসারিত হয়েছে। তবে এ
সংস্থাটি ইইসি বা আসিয়ানের মতো কার্যকর হয়ে উঠতে পারে নি। তবে স¤প্রতি ‘সাফটা’ প্রতিষ্ঠার
মধ্যদিয়ে আন্ত:আঞ্চলিক বাণিজ্য স¤প্রসারণের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। যদিও
দ্বি-পাক্ষিক বিরোধ সিমাংসার সুযোগ সার্কের মধ্যে নেই, তবুও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের ফোরাম
হিসেবে এ সংস্থার কিছুটা গুরুত্ব অবশ্যই আছে।
দক্ষিণ এশিয়ার
অধিকাংশ সমস্যাই
দ্বিপাক্ষিক এবং
ভারতের সাথেই
সকল প্রতিবেশীর
বিবাদ। কিন্তু সার্কে
দ্বিপাক্ষিক সমস্যা
উত্থাপন করা যাবে
না। এর ফলে সার্ক
সফল আঞ্চলিক
সংগঠন হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত হতে
পারছে না।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১। কোন্ সালে সার্কের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
ক) ১৯৮৪;
খ) ১৯৮৫;
গ) ১৯৮৬;
ঘ) ১৯৮৭।
২। কততম শীর্ষ সম্মেলনে ‘সাপটা’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
ক) পঞ্চম;
খ) ষষ্ঠ;
গ) অষ্টম;
ঘ) সপ্তম।
৪. কোন কোন সার্কভুক্ত দেশের সাথে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বিবাদ রয়েছে?
ক) বাংলাদেশের সঙ্গে;
খ) পাকিস্তানের সঙ্গে;
গ) নেপাল ও ভুটান মালদ্বীপের সঙ্গে;
ঘ) প্রতিবেশী সবগুলো দেশের সঙ্গে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। কি কি উদ্দেশ্যে সার্ক গঠন করা হয়েছিল?
২। কোন্ উদ্দেশ্যে ‘সাপটা’ চুক্তি সম্পাদিত হয়?
৩। ‘সাফটা’ কি? কখন থেকে কার্যকর হবে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সার্কের জন্ম ও এর বিকাশধারা আলোচনা করুন।
২। সার্কের সাফল্য ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন করুন।
উত্তরমালাঃ ১. খ, ২. গ, ৩. খ, ৪. ঘ।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র