রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি আলোচনা করুন।

< মানুষ স্বভাবগতভাবে সামাজিক জীব। মানুষ পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। একা তা সম্ভব নয় বলেই
মানুষকে যৌথ ধারায় আসতে হয়। এ থেকেই সমাজ ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। সংগঠনের মাধ্যমে মানুষ অভ্যস্তহয়েছে
সামাজিক বন্ধন, নিয়মনীতি কিংবা আচার আচরণে। আর এসব কিছুকে সুন্দর, শাশ্বত ও কল্যাণময় করার জন্য মানুষই
গ্রহণ করেছে সুকুমার সব নীতিমালা। এসবের পরিচালনার দায়িত্ব বর্তেছে রাষ্ট্র নামক মানবীয় সংগঠনের উপর। সমাজবদ্ধ
মানুষের উদ্ভব এবং বিকাশ, বিবর্তন বা পরিবর্তন, দ্ব›দ্ব বা সংঘাত, ভ‚মিকা ও কার্যাবলী কিংবা উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যাও
বিশ্লেষণ নিয়ে গড়ে উঠেছে যে জ্ঞান তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান। রাষ্ট্রের প্রকৃতি, কার্যকলাপ ও সংগঠন আচরণ ইত্যাদি নিয়ে
রাষ্ট্রবিজ্ঞান সামগ্রিকভাবে আলোচনা করে। বিষয়বস্তু ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সুসমৃদ্ধ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান মূলত রাষ্ট্রের ভিত্তি ও সরকারের মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি গতিশীল সমাজ বিজ্ঞান।
বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তাঁদের সংজ্ঞা থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ ও প্রকৃতি জানা
যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আদি গুরু এরিস্টটল তাঁর পলিটিক্স নামক গ্রন্থটিতে রাজনৈতিক কার্যকলাপের বিশ্লেষণকে সর্বশ্রেষ্ঠ
বিজ্ঞান বলে উল্লেখ করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্যাটলিন বলেনঃ “রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষের
রাজনৈতিক কার্যকলাপের ব্যখ্যা দান করে এবং সমাজে ববসবাসকারী মানুষের কথা আলোচনা করে।” পল জানে
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজ বিজ্ঞানের
সেই শাখা যা রাষ্ট্রের মূলভিত্তি ও সরকারের মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করে।” সেলির মতে, “ধনবিজ্ঞান যেমন সম্পদের,
জীববিজ্ঞান যেমন জীবের, বীজগণিত যেমন সংখ্যার, জ্যামিতি যেমন স্থান ও আয়তন নিয়ে আলোচনা করে, তেমনি
রাষ্ট্রবিজ্ঞান শাসন ব্যবস্থার ঘটনাবলীর অনুসন্ধান করে”। রবার্ট ডালের মতে, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে ক্ষমতা, শাসন, কর্তৃত্ব
সংক্রান্তআলোচনা।” রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে তার সংজ্ঞার চরিত্রগত গুণগত ও সংখ্যাগত পরিবর্তন
পরিলক্ষিত হচ্ছে।
যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জাতিগোষ্ঠির দ্ব›দ্ব ইত্যাদি নানাবিধ কারণে মানুষের জীবন স্বচ্ছন্দ গতিতে চলছে না। অন্যদিকে
যোগাযোগ ব্যবস্থার অভ‚তপূর্ব উন্নতি দ্বারা দূরকে নিকট করতে সমর্থ হলেও মানুষে মানুষে ব্যবধানকে করেছে দুস্তর ও
দূরতিক্রম্য। এর ফলে মানুষের জীবনে সমস্যা হয়েছে বহুমাত্রিক এবং রাজনীতির সুনিপুণ প্রয়াস এ অবস্থাতেও মানব
সমাজের সমস্যার সমাধানের প্রয়াস চালাচ্ছে। এ পর্বে তার সমস্যা অধ্যয়ন কেবল রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে করলেই
হচ্ছেনা বরং সমাজতাত্তি¡ক দৃষ্টিকোন থেকেও প্রগাঢ়ভাবে বিবেচনা করতে হচ্ছে। সে দৃষ্টিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে রাজনীতি
ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সমাজতাত্তি¡ক বিশ্লেষণ। এভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান দিন দিন গতিশীল সমাজ বিজ্ঞানে উন্নীত হচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নামকরণ
নামকরণ থেকে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র সংক্রান্তবিজ্ঞান ( বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ রীতি
অনুসরণে রাষ্ট্র এবং সরকার নিয়ে অধ্যয়নের যে শাস্ত্রগড়ে উঠেছে তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলা যায়। সমাজ জীবন শুরুর
সাথে সাথেই মানুষ আজকের মত রাষ্ট্র গঠন করতে পারে নি। প্রাচীনকালের কওম বা গোত্রবদ্ধ মানুষের জীবন থেকে
সমাজ, জনপদ থেকে জনসমাজ এবং অবশেষে জাতিত্বের অহংকারে জনসমাজ থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনে পরিণতি লাভ
করেছে। রাজনীতি সংক্রান্তঅধ্যয়নকেই আমরা রাাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে অভিহিত করতে পারি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নামকরণ সম্পর্কে অনেক মতভেদ রয়েছে। গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল এই শাস্ত্রটিকে রাজনীতি
নামে অভিহিত করেছেন। আবার কেউ কেউ এ শাস্ত্রকে রাষ্ট্রীয় দর্শন বলে আখ্যািিয়ত
করেছেন। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্যাটলিনের মতে, রাজনীতি ও রাষ্ট্র দর্শন এ দুই বিষয় নিয়েই রাষ্ট্রবিজ্ঞান। ফ্রেডরিক,
সিজউইক, জেলিনেক প্রমুখ পন্ডিতগণ এ শাস্ত্রকে রাষ্ট্রনীতি বলে উল্লেখ করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান শাস্ত্রটিকে প্রধানত তত্ত¡গত
রাজনীতি ও ব্যাবহারিক রাজনীতি এ দু’ভাগে ভাগ করা যায়। তত্ত¡গত
রাজনীতি বলতে রাষ্ট্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তুকে বুঝায়। তত্ত¡গত রাজনীতি রাষ্ট্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা
করে। ব্যবহারিক রাজনীতি রাষ্ট্রের কার্যাবলী পর্যালোচনা করে। যেমন, শাসনতন্ত্র, শাসনতান্ত্রিক আইন, নির্বাচক মন্ডলী,
আইন সভা, আইন প্রণয়ন পদ্ধতি ইত্যদি।
সারকথা
রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে রাষ্ট্র সংক্রান্তসামাজিক বিজ্ঞান। রাষ্ট্রের কার্যক্রম, রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং সমস্যা সমাধানের
জন্য রাষ্ট্রীয় সংগঠনের সুসংবদ্ধ অধ্যয়নকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান সরকারের মূলনীতি ও রাষ্ট্রের মূলভিত্তি নিয়ে
আলোচনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আধুনিক ধারণাগুলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে একটি গতিশীল সামাজিক বিজ্ঞানে উন্নীত করেছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্টীয় সংগঠন, শাসনব্যবস্থা, রাষ্ট্রের উদ্ভব ও বিকাশ, আন্ত:রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে।
সঠিক উত্তর লিখুন।
১. এরিস্টটল সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান বলেছেন
ক. সমাজবিজ্ঞানকে;
খ. অর্থনীতিকে;
গ. নীতি শাস্ত্রকে;
ঘ. রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে।
২. Political Science is that part of social science which analyses the foundations of the state and the principles of government এ সংজ্ঞাটি দিয়েছেন কে?
ক. এরিষ্টটল;
খ. পলজানে;
গ. ক্যাটালিন;
ঘ. গার্নার।
৩ ÔPolitical science deals with political activities of men in society and their different social roles এই উক্তিটি কার?
ক. হবসের;
খ. জন লকের;
গ. রুশোর;
ঘ. ক্যাটালিনের।
৪.এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে কি নামে অভিহিত করেছেন?
ক. চড়ষরঃরপধষ ঝপরবহপব;
খ. চড়ষরঃরপং;
গ. অঢ়ঢ়ষরবফ ঢ়ড়ষরঃরপং;
ঘ. ঞযবড়ৎবঃরপধষ ঢ়ড়ষরঃরপং.
উত্তরমালা: ১. ঘ, ২. খ, ৩. ঘ, ৪. খ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]