জনগণের কল্যাণ সাধনই আধুনিক রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দশ্য। আধুনিক প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই মূলত কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলতে সেই রাষ্ট্রকে বুঝায় যার সমুদয় সম্পদ ও শক্তিকে নাগরিকের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত করা
হয়। যে রাষ্ট্রে ব্যক্তি ও সমাজের উন্নতি ও মঙ্গলের জন্য কর্মসূচী প্রণয়ণ ও বাস্তবায়ন করে তাঁকে কল্যাণ রাষ্ট্র বলা হয়।
কল্যাণ রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। মৌলিক চাহিদা বা
প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই রাষ্ট্র পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি এবং সুষম বন্টন নিশ্চিত করে।
এছাড়া বিনা খরচে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, বেকার ভাতা এবং বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। সংক্ষেপে
আমরা বলতে পারি কল্যাণ রাষ্ট্র মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকারকে সমুন্নত রেখে সর্বাধিক কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয়
কার্যাদি সুসম্পন্ন করে থাকে । রাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিকের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করাই এই রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য।
যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, সুইডেন, কানাডা প্রভৃতি রাষ্ট্র কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদ্ভব ও বিকাশ
স্বৈরাচারী শাসন এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার হাত থেকে মুক্তি লাভের প্রচেষ্টা মানুষের দীর্ঘদিনের। অতীতে রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য
ছিল কেবল শাসকশ্রেণীর স্বার্থ সংরক্ষণ করা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, অপরাধমূলক কাজ দমন করা ইত্যাদি। ব্যক্তি
স্বাতন্ত্রবাদের প্রবক্তা জন স্টুয়াট মিল, হার্বাট স্পেনসার রাষ্ট্রের কার্যাবলীকে অভ্যন্তরীণ শান্তিও শৃঙ্খলা বিধান, রাষ্ট্রকে
বহিঃশত্রæর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা, অপরাধীদের শাস্তিও দন্ড প্রদান প্রভৃতি কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেন। এসব
কারণে রাষ্ট্রকে পুলিশী রাষ্ট্র বলা হত।
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে রাষ্ট্রের কার্যাবলী সম্পর্কে জনগণের মনোভাবে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হতে
থাকে। চিন্তাশীল মানুষ পুঁজিবাদের কুফল থেকে বাঁচার জন্য একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা ভাবতে শুরু করে। প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের পর আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভ‚মিকা অধিক মাত্রায় অনুভ‚ত হতে থাকে। সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারণা ব্যাপক
প্রসার লাভ করে। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম হবার পর পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো জনকল্যাণমূলক
নানাবিধ কাজে আত্মনিয়োগ করতে শুরু করে।
জাতিসংঘের প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, “যে রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুবিধা প্রদান
করে এবং বেকারত্ব কিংবা অসুস্থ্যতা বা অন্য কোন কারণে জীবিকা অর্জনে ব্যর্থ হলে জনগণের পূর্ণ নিশ্চয়াতা বিধান
করতে পারে তাকে কল্যাণ রাষ্ট্র বলা হয়।’’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কল্যাণমূলক কার্যাদির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। মূলত সামজতন্ত্রকে প্রতিরোধ করার জন্য
পুঁজিবাদী বিশ্ব বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্ম পন্থা গ্রহণ করে। এই ভাবে চরম পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মাঝামাঝি একটি
মধ্যম ব্যবস্থা হিসেবে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। বর্তমান বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কম-বেশী কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য:
সমাজসেবামূলক কার্য সম্পাদন
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সকল ক্ষেত্রে কল্যাণমুখী কর্মসুচি গ্রহণ ও
সম্পাদন করে। সমাজের সর্বাধিক মঙ্গলের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা, সামাজিক বীমা, বেকারভাতা, বিনা খরচে শিক্ষা
ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। রাস্তাঘাট নির্মান, পানীয় জলের সরবরাহ সুস্থ ও অসহায় মানুষের সাহায্য ও পূনর্বাসন ইত্যাদি
বিবিধ সমাজ সেবামূলক কার্যাবলী সম্পাদন করে।
ব্যক্তি স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ
কল্যাণকামী রাষ্ট্র ব্যক্তির স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ উম্মুক্ত করে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যক্তি
স্বাধীনতার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি এবং ব্যক্তির অধিকার সংরক্ষণ করে।
জীবনযাত্রার মান সংরক্ষণ
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নাগরিকদের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। সমাজের ধনী দরিদ্রের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে সামাজিক
ভারসাম্য রক্ষা করে।
সকলের স্বার্থ সংরক্ষণ
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র জাতি, ধর্ম, শ্রেণী ,গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের সাধারণ স্বার্থ সংরক্ষরণ করে। এ ব্যবস্থা বিশেষ শ্রেণী বা
গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে না। শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি সকলের স্বার্থ রক্ষার জন্য সচেষ্ট হয়।
পূর্ণ কর্মসংস্থান
কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পূর্ণ কর্মসংস্থানকে লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। উইলিয়াম বেভারিজ তার "ঋঁষষ ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ
রহ ধ ঋৎবব ঝড়পরবঃু" গ্রন্থে পূর্ণ কর্মসংস্থানকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন।
মধ্যমপন্থা অবলম্বন
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানার মধ্যে সামঞ্জস্য
বিধান করে মানুষের দুঃখ কষ্টের লাঘব করে থাকে। পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমন্বয় ঘটিয়ে সুফল লাভের
ব্যবস্থা করে।
শিক্ষা সংস্কৃতি
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র মানুষের মধ্যে উদারতাবোধ, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
এ লক্ষ্যে সাহিত্য- সংস্কৃতি শিল্পকলা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিকাশে রাষ্ট্র মনোযোগী হয়। সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য রাষ্ট্র
কবি, শিল্পী সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের উৎসাহ দিয়ে থাকেন।
সারকথা
মানুষের সার্বিক কল্যাণ সাধনই কল্যাণ রাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্য। এই রাষ্ট্রের যাবতীয় সম্পদ সামাজিক মঙ্গলের জন্য ব্যয়
করা হয়। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র জনসাধারণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান করে। এধরণের রাষ্ট্র জাতি, ধর্ম,
নির্বিশেষে সকলের সাধারণ স্বার্থ রক্ষা করে এবং সমাজে ভারসাম্য আনয়ন করে । আধুনিক বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র
কম বেশী কল্যাণকামী রাষ্ট্র।
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। রাষ্ট্রের সমুদয় সম্পদ নাগরিকের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত করা হয়-
(ক) সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে;
(খ) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে;
(গ) পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে;
(ঘ) কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে।
২। রাষ্ট্রের কার্যাবলী সম্পর্কে জনগণের মনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয় কখন?
(ক) বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে;
(খ) অষ্টাদশ শতাব্দীতে;
(গ) ঊনিশ শতকে;
(ঘ) বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে।
৩। রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হয় কত সালে?
(ক) ১৯১৭;
(খ) ১৯১৮;
(গ) ১৮১৭;
(ঘ) ১৯২০।
৪। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় কখন?
(ক) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর;
(খ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পর;
(গ) ফরাসী বিপ্লবের পর;
(ঘ) রুশ বিপ্লবের পর।
৫। জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান কোন ধরনের রাষ্ট্রের লক্ষ্য?
(ক) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র;
(খ) সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র;
(গ) সাম্যবাদী রাষ্ট্র;
(ঘ) কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
৬। ঋঁষষ ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ রহ ধ ভৎবব ঝড়পরবঃু গ্রন্থের লেখক কে?
(ক) হার্বাট স্পেনসার;
(খ) জন ষ্টুয়ার্ট মিল;
(গ) উহলিয়াম বেভারিজ;
(ঘ) জন লক।
উত্তর মালা: ১ (ঘ), ২ (ক), ৩ (ক), ৪ (খ), ৫ (ঘ) ও ৬ (গ)।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদ্ভব ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র