রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্তমতবাদ হিসেবে বল প্রয়োগ মতবাদের মূল বক্তব্য লিপিবদ্ধ করুন।

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত বলপ্রয়োগ মতবাদীদের মতে, মানুষ স্বভাবতঃই ক্ষমতালিপ্সু এবং কলহপ্রবণ ও বলবানের
পূঁজারী। আদিকাল থেকে সবল দুর্বলের উপর আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। বল প্রয়োগের মাধ্যমে বলবান ব্যক্তি বা
গোষ্ঠী দুর্বল ব্যাক্তি বা গোষ্ঠিীকে বশীভ‚ত করে উক্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর প্রভুত্ব স্থাপন করতে সচেষ্ট হয়। এভাবেই
পরবর্তীতে বিভিন্ন উপজাতির উদ্ভব হয় এবং ধীরে ধীরে সেগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এই সংঘর্ষে বিজয়ী উপজাতি
বিজিত উপজাতির উপর প্রভুত্ব করতে থাকে। বিজয়ী উপজাতির দলপতি জনগণের শাসক বা সম্রাট বলে স্বীকৃত হয়।
ফলে উদ্ভব হয় রাষ্ট্রের। সুতরাং এটি স্পষ্ট যে, বল প্রয়োগ মতবাদ অনুসারে রাষ্টের উৎপত্তি হয়েছে দৈহিক বল বা শক্তির
মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, এভাবে সৃষ্ট রাষ্ট্র বলপ্রয়োগের মাধ্যমে টিকেও থাকে ।
বলপ্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে এ ধারণায় আস্থা স্থাপন করেন বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তাঁদের মধ্যে
রয়েছেন ওপেনহ্যাইমার , জেলেনিক, কোকার , লীকক্, প্রমুখ।
ওপেনহ্যাইমার বলেন, ‘‘উৎপত্তিতে সম্পূর্ণরূপে এবং অস্তিত্বের প্রথম পর্যায়ে অপরিহার্যভাবে ও সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্র বিজয়ীর
বলপ্রয়োগ দ্বারা বিজিত মানব সম্প্রদায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত এক সামাজিক প্রতিষ্ঠান’’। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেংকস্-এর মতে
‘‘ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এটি স্পষ্ট যে, আধুনিক রাষ্ট্রগুলো মূলত সফল যুদ্ধ বিগ্রহেরই ফলশ্রæতি’’।
জেলেনিক লিখেছেন, ‘‘যখন কোন বলবান নেতা তার অনুসারী ও সহযোগীদের সহায়তায় কোন এলাকা বা অঞ্চলের
উপর স্থায়ীভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছে তখনই রাষ্ট্র সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।” কোকার-এর মতে, বল প্রয়োগ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও যুদ্ধবাদিতার মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। লীকক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক দিক দিয়ে
বিচার করলে রাষ্ট্রের উৎপত্তির সন্ধান করতে হবে মানুষ দ্বারা মানুষের উপর আক্রমণ এবং মানব সম্প্রদায়কে দাসত্বের
শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার মধ্যে, দুর্বল উপজাতিগুলোর উপর আক্রমণ ও তাদের অধীনতায় আনার মধ্যে এবং সর্বোপরি
বলবানের স্বার্থ ও প্রভুত্ব - লিপ্সার মধ্যে’’।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বল প্রয়োগ মতবাদের আসল বক্তব্য হলো বল প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটেছে; অন্যকোন
উপাদান এক্ষেত্রে তেমন ক্রিয়াশীল নয়। রাষ্ট্রের উৎপত্তিতে বল প্রয়োগের ভ‚মিকা থাকা সত্তে¡ও এই মতবাদটি বিভিন্নভাবে
সমালোচিত হয়েছে।
বলপ্রয়োগ মতবাদের সমালোচনা
 বলপ্রয়োগ মতবাদটি একটি ভ্রান্তমতবাদ বলে অনেকে মনে করে থাকে। রাষ্ট্র গঠনে দৈহিক শক্তি বা বল অন্যতম
উপাদান সন্দেহ নেই, তবে এটি একমাত্র উপাদান নয়। দৈহিক বল ছাড়াও মানুষের সামাজিক প্রকৃতি, ধর্মীয়
ঐক্যবোধ, কৃষ্টিগত রাজনৈতিক চেতনা প্রভৃতি উপাদান রাষ্ট্র গঠনে প্রভ‚ত পরিমাণে সহায়তা করেছে।
 বলপ্রয়োগ মতবাদকে নৈতিকতার দিক থেকে সমর্থন করা যায় না। এটি স্বৈরতন্ত্রের পথ প্রশস্তকরে এবং জনগণের
স্বাধীনতা, অধিকার ও গণতান্ত্রিক আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এই মতবাদ পাশবিক শক্তির প্রতিভ‚। সঙ্গত কারণেই
এটি বন্যদের জন্য প্রযোজ্য, সভ্য মানুষের জন্য নয়।
 এ মতবাদ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের পরিপন্থী। এটি ব্যক্তির মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্যকে অস্বীকার করে। এটি শান্তিও প্রগতির পরিপন্থী।
 এ মতবাদ অত্যন্তমারাতœক ও ভয়াবহ। এটি আন্তজার্তিক শান্তিও সংহতির বিরোধী । বলপ্রয়োগ মতবাদ কেবল
যুদ্ধবাদের প্রবক্তা; এটি মানব চরিত্রে শুধু ক্ষুদ্রতা ও নীচতা খুঁজে পায়। কিন্তু মানব চরিত্রে কেবল ক্ষুদ্রতা ও নীচতারই
সন্ধান মেলে না; উন্নত আদর্শ ও সামাজিক কল্যাণ সাধনের ইচ্ছাও পরিলক্ষিত হয়।
 বলপ্রয়োগ মতবাদ জনমতকে অস্বীকার করে। কিন্তু রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের জন্য জনমত ও জনগণের ইচ্ছা একান্তপ্রয়োজন।
কেবল দৈহিক শক্তির উপর নির্ভর করে যে সরকার টিকে থাকতে পারে না ইতিহাসে তার অনেক প্রমাণ রয়েছে।
জার্মানীর হিটলার, ইতালীর মুসোলিনী, রাশিয়ার জার এর জলন্তদৃষ্টান্ত। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব নির্ভর
করে জনগণের ইচ্ছার উপর। ইংরেজ দার্শনিক টি, এইচ, গ্রীণ (ঞ.ঐ. এৎববহ), তাই যথার্থই বলেছেন, “বল নয়
জনগণের ইচ্ছাই রাষ্ট্রের ভিত্তি’’ (''ডরষষ, হড়ঃ ভড়ৎপব রং ঃযব নধংরং ড়ভ ংঃধঃব”). রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে বলপ্রয়োগ
মতবাদ সমর্থন যোগ্য না হওয়া সত্তে¡ও এ মতবাদের যে কোনরূপ গুরুত্ব ও প্রভাব যে নেই তা নয়। একথা
সর্বজনস্বীকৃত যে, বল বা শক্তির সমর্থন ব্যতীত রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। রাষ্ট্রাভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা
এবং বহিঃশত্রæর আক্রমণ থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্যও শক্তির প্রয়োজন। একারণেই বলা হয় যে, “রাষ্ট্র একটি
বলপ্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান’’ (
গুরুত্ব ও প্রভাব
কেবল প্রাচীন ও মধ্যযুগেই নয়, আধুনিক যুগেও বলপ্রয়োগ মতবাদের প্রভাব লক্ষ্যনীয়। গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের
দিগি¦জয়, রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, আধুনিককালে জার্মানীর হিটলার ও ইতালীর মুসোলিনীর রাষ্ট্র শাসন এমনকি
সাম্প্রতিক কালের আন্ত-রাষ্ট্র সম্পর্কের অস্ত্রপ্রতিযোগিতা, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও তা টিকে থাকার পেছনে বল প্রয়োগকেই
সমর্থন দেয়। রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে অনেক দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এ মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। কাজেই এ
মতবাদের গুরুত্বকে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই।
সারকথা
রাষ্ট্রের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ মতবাদ দৈহিক বা পাশবিক বলের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে বলে বিশ্বাস করে।
শুধু তাই নয় এভাবে সৃষ্ট রাষ্ট্র আবার বলের মাধ্যমেই টিকে থাকে। এ মতবাদে আস্থা স্থাপনকারী লেখকগণ বলেন,
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এটি অনুমিত হয় যে, আধুনিক রাষ্ট্রসমূহ মূলত সশস্ত্রযুদ্ধ--বিগ্রহেরই ফল।
কিন্তু এ মতবাদকে বর্তমানে আর সঠিক ধরে নেয়া হয় না। আধুনিককালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রকে জনগণের সম্মতির উপর
প্রতিষ্ঠিত বলে মনে করেন। জনগণের সম্মতিই রাষ্ট্রের প্রকৃত ভিত্তি।
সঠিক উত্তর লিখুন।
১. বল প্রয়োগ মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে?
ক. দৈহিক বলের মাধ্যমে; খ. দৈব শক্তির মাধ্যমে;
গ. চুক্তির মাধ্যমে; ঘ. জনগণের ইচ্ছার মাধ্যমে।
২. বলপ্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে এ ধারণায় বিশ্বাস স্থাপন করেনক. লাস্কী; খ. গার্নার;
গ. ম্যাকাইভার; ঘ. কোকার।
৩. ‘ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এটি স্পষ্ট যে, আধুনিক রাষ্ট্রসমূহ মূলত সফল যুদ্ধ-বিগ্রহের ফল’- উক্তিটি
কে করেছেন?
ক. লীকক; খ. কোকার;
গ. জেংকস্; ঘ. ওপেনহ্যাইমার।
৪. ‘রাষ্ট্রের ভিত্তি হচ্ছে জনগণের সম্মতি, বল নয়’- এ উক্তিটি কার?
ক. জন লকের; খ. লাস্কীর;
গ. রুশোর; ঘ. টি. এইচ. গ্রীনের।
উত্তরমালা: ১. ক, ২. ঘ, ৩. গ, ৪. ঘ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্তমতবাদ হিসেবে বল প্রয়োগ মতবাদের মূল বক্তব্য লিপিবদ্ধ করুন।
২. রাষ্ট্রের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ মতবাদটি নৈতিকতার দিক থেকে সমর্থনযোগ্য নয় কেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. রাষ্ট্রের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ মতবাদটি সমালোচনাসহ আলোচনা করুন।
২. ‘বল নয়, জনগণের ইচ্ছাই রাষ্ট্রের ভিত্তি’ -এ বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]