সার্বভৌমত্ব বলতে কি বোঝায়? সার্বভৌমত্বের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দিক সম্পর্কে আলোচনা করুন।

সার্বভৌমত্ব
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সার্বভৌমত্ব। রাষ্ট্র গঠনের জন্য যে সব মৌল উপাদান প্রয়োজন
সার্বভৌমত্ব তাদের মধ্যে অন্যতম। সার্বভৌমত্বকে রাষ্ট্র নামক রাজনৈতিক সংগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলা হয়ে
থাকে। এটি এমন এক ক্ষমতা যার ফলে নাগরিক ও অন্যান্য সংঘ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে এবং সে সাথে রাষ্ট্র
কোন বৈদেশিক শক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত ও স্বাধীন থাকে।
রাষ্ট্রকে যদি দেহের সঙ্গে তুলনা করা যায় তাহলে রাষ্ট্র নামক দেহের প্রাণ হচ্ছে সার্বভৌমত্ব। কাজেই এর স্বরূপ বা
প্রকৃতি এবং অবয়ব সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা একান্তআবশ্যক। যুগে যুগে সার্বভৌমত্বের ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে
এবং আধুনিক কালে এসে এ ধারণা এক চ‚ড়ান্তরূপ পরিগ্রহ করেছে। এ ইউনিটে আমরা সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা, স্বরূপ বা
প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন তত্ত¡ ও মতবাদ, সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে সচেষ্ট হয়েছি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের চ‚ড়ান্তক্ষমতাকে নির্দেশ
করে। এটি রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সার্বভৌমত্ব ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে
রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও স্বরূপ বহুলাংশে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রকৃতি ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে।
বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলোবী (ডরষষড়ঁমযনু)
সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “রাষ্ট্রের চ‚ড়ান্তইচ্ছাই হলো সার্বভৌমত্ব” এর মতে, সার্বভৌমত্ব হচ্ছে ‘‘প্রত্যেক প্রজার এবং প্রজাদের সব
ধরনের সংঘের উপর মৌলিক, চরম, অসীম ও সর্বাতœক ক্ষমতা”। ব্যাকষ্টোনের কথায় বলতে গেলে বলতে হয়,
“সার্বভৌম ক্ষমতা সর্বোচ্চ, অপ্রতিরোধ্য, চ‚ড়ান্তও অনিয়ন্ত্রিত কর্তৃত্বকে বোঝায়”।
ফরাসী দার্শনিক জ্যাঁন বদিন সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন এভাবে-নাগরিক ও প্রজাদের উপর
আরোপিত রাষ্ট্রের চ‚ড়ান্তও আইন দ্বারা অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা হচ্ছে সার্বভৌম ক্ষমতা।” এছাড়াও অপর একজন ফরাসী
লেখক দুগুইয়ের (উঁমঁরঃ) মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের আদেশ প্রদান করার ক্ষমতা, এটি রাষ্ট্র হিসেবে সংগঠিত
জাতির ইচ্ছাস্বরূপ, এটি রাষ্ট্রাভ্যন্তরে সকল ব্যক্তিকে নিঃশর্ত আদেশ প্রদান করার ইচ্ছা।”
সার্বভৌমত্বের উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের চরম ও পরম
ক্ষমতা। এটি রাষ্ট্রের চ‚ড়ান্তক্ষমতা। যার স্বরূপ পরিবর্তনের সাথে রাষ্ট্রের প্রকৃতির পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
সার্বভৌমত্বের দু’টো দিক রয়েছে - অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব এবং বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব। অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের
সেই চ‚ড়ান্তক্ষমতা যার ফলে রাষ্ট্র সকল নাগরিক ও সংঘের কাছ থেকে আনুগত্য দাবি করতে পারে। এটি রাষ্ট্রের চ‚ড়ান্ত
আইনগত কর্তৃত্ব নির্দেশ করে।
অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব
অভ্যন্তরীণ সার্বভৌম বলতে বুঝায় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরস্থ অর্থাৎ নির্দিষ্ট ভ‚-খÐের মধ্যে সব কিছুর উপর সর্বময় কর্তৃত্ব।
অপরদিকে, বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব অনুসারে রাষ্ট্র অপর কোন বৈদেশিক রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও আধিপত্য থেকে মুক্ত ও স্বাধীন।
রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে অবশ্যই বিদেশের সঙ্গে চুক্তি ও সন্ধির ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকতে হবে। অন্যথায় এর সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন হতে
বাধ্য। শুধু তাই নয় পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের বেলায়ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের ইচ্ছাই থাকবে চ‚ড়ান্ত। এক কথায় বাহ্যিক
সার্বভৌমত্বের অর্থ হচ্ছে জাতীয় স্বাধীনতা। অধ্যাপক লাস্কী তাই বলেছেন, “আধুনিক রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র। অন্যান্য
সম্প্রদায় হতে এটি স্বাধীন। এটি তার নিজস্ব ইচ্ছাকে সত্যিকার অর্থে অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সম্প্রদায়ের উপর আরোপ
করতে পারে যা অপর কোন বাহ্যিক শক্তি দ্বারা প্রভাবিত হবে না।”
সার্বভৌম ক্ষমতার সাথে রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগ ক্ষমতার (ঈড়বৎপরাব ঢ়ড়বিৎ) সামঞ্জস্য বিদ্যমান। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে
সরকার নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় আইন ও বিধি বিধান মেনে চলতে বাধ্য করতে পারে। কাজেই রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা রক্ষা এবং
আইন প্রবর্তন ও প্রয়োগের যে পূর্ণ ক্ষমতা তাকেই সার্বভৌম ক্ষমতা বলে আখ্যায়িত করা যায়। সকল নাগরিকই সার্বভৌম
ক্ষমতার অধীন।
সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য
সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে এর কতিপয় বৈশিষ্ট্য প্রতিভাত হয়ে উঠে। বৈশিষ্ট্যগুলো নি¤œরূƒপ:
 সর্বজনীনতা: সার্বভৌমত্বের ধারণা সর্বজনীন। রাষ্ট্রের সকল ব্যক্তি ও সংঘ এর অধীন। এটি চিরন্তন। এতদ্সত্বেও
সার্বভৌম ক্ষমতা আইন দ্বারা সীমিত।
 চরমতা: সার্বভৌম ক্ষমতা চরম ও চ‚ড়ান্তক্ষমতা। রাষ্ট্রের আদেশ ও নিষেধ সকল নাগরিকের জন্য অবশ্য পালনীয়।
অন্যকোন শক্তিই রাষ্ট্রের এ ক্ষমতার উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব- ুন্টস্লী (ইষঁহঃংপযষর) অবশ্য
বলেন যে, রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা বাহ্যিক দিক দিয়ে অপরাপর রাষ্ট্রের অধিকার এবং অভ্যন্তরীণ দিক দিয়ে এর
নিজস্ব প্রকৃতি ও ব্যক্তিবর্গের অধিকার দ¦ারা সীমিত।
 অবিভাজ্যতা: সার্বভৌমত্বের অপর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এটিকে বিভক্ত করা সম্ভবপর নয়। আমরা জানি
যে, ঐক্যবদ্ধ জনসমাজই রাষ্ট্র, আর সে জন্য সার্বভৌম ক্ষমতাকে বিভক্ত করলে জনসমষ্টি ঐক্যসূত্রে গ্রথিত হয়ে
জনসমাজে পরিণত হতে পারে না।
 হস্তান্তর অযোগ্যতা: সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তরের অযোগ্য। অর্থাৎ একে হস্তান্তর করা যায় না। সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের
প্রাণস্বরূপ, এ ক্ষমতার উপরই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। এর অনুপস্থিতি ঘটলে রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটে। কোন রাষ্ট্রের
পক্ষে এ ক্ষমতা হস্তান্তর করা আত্মহত্যারই সামিল।
 স্থায়ীত্ব: স্থায়ীত্ব সার্বভৌমত্বের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সাথে সার্বভৌমত্বের অস্তিত্ব বিদ্যমান।
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিবর্গের পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু এতে করে সার্বভৌমত্বের বিলুপ্তি ঘটে না।
 এককত্ব: সার্বভৌম ক্ষমতা একক ক্ষমতা। রাষ্ট্রের মধ্যে কেবলমাত্র একটি সার্বভৌম ক্ষমতা থাকতে পারে। একই
রাষ্ট্রের একাধিক সার্বভৌম ক্ষমতা থাকা সম্ভবও নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয়। একক সার্বভৌম ক্ষমতার অভাবে রাষ্ট্রের
সংহতি, ঐক্য এবং স্থায়িত্ব বিনষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক । অবশ্য বহুত্ববাদীরা ভিন্ন কথা বলেন।
 ব্যাপকতা: রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সার্বভৌম ক্ষমতা সর্বত্রই বিরাজমান। সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের মধ্যকার সকল ব্যক্তি,
গোষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠানের উপর সমভাবে প্রযোজ্য। আইন অমান্য করে রাষ্ট্র কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর নিজের
ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারে না।
সারকথা
সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি রাষ্ট্রের চ‚ড়ান্তক্ষমতার নির্দেশক। অর্থাৎ রাষ্ট্রের চ‚ড়ান্তইচ্ছাই
সার্বভৌমত্ব। এ ক্ষমতার দু’টো দিক রয়েছে - অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। এ ক্ষমতা বলেই রাষ্ট্র সকল নাগরিক ও সংঘের
কাছ থেকে আনুগত্য দাবি করতে পারে আবার রাষ্ট্র উপর অন্য কোন বৈদেশিক রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও আধিপত্য হতে মুক্ত ও
স্বাধীন থাকতে পারে। সর্বজনীনতা, চরমতা, অবিভাজ্যতা, হস্তান্তর অযোগ্যতা, স্থায়ীত্ব, ব্যাপকতা ইত্যাদি সার্বভৌমত্বের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। সার্বভৌমত্ব ছাড়া -
ক. রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায়;
খ. রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব;
গ. রাষ্ট্র নিজেকে বহি:শত্রæর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে;
ঘ. রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
২। “নাগরিক ও প্রজাদের উপর আরোপিত রাষ্ট্রের চ‚ড়ান্তও আইন দ্বারা অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা হচ্ছে সার্বভৌম ক্ষমতা”উক্তিটি কার?
ক.উইলোবীর;
খ. অষ্টিনের;
গ. বদিনের;
ঘ. মেকিয়াভেলীর।
৩। “রাষ্ট্রের চ‚ড়ান্তইচ্ছাই হচ্ছে সার্বভৌমত্ব”- এ উক্তিটি কে করেছেন?
ক. বার্জেস;
খ. অষ্টিন;
গ. বদিন;
ঘ. উইলোবী।
৪। বাহ্যিক সার্বভৌমত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্রক. নিজেকে বহি:শত্রæর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে;
খ. নিজেকে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ থেকে মুক্ত রাখতে পারে;
গ. রাষ্ট্রাভ্যন্তরের সকল ব্যক্তি ও সংঘের উপর আধিপত্য বজায় রাখে;
ঘ. নিজেকে বহি:শত্রæর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে না।
৫. কোন্ শতাব্দীতে সার্বভৌম ক্ষমতা পরিপূর্ণ রূপ লাভ করে?
ক. ষোড়শ শতাব্দীতে;
খ. সপ্তদশ শতাব্দীতে;
গ. ত্রয়োদশ শতাব্দীতে;
ঘ. অষ্টাদশ শতাব্দীতে।
উত্তরমালা : ১) ঘ ২) গ ৩) ঘ ৪) ক ৫) ক।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা দিন।
২. সার্বভৌম ক্ষমতা বলতে কি বোঝায়?
৩. সার্বভৌমত্বের দু’টো প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সার্বভৌমত্ব বলতে কি বোঝায়? সার্বভৌমত্বের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দিক সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২. সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]