অষ্টিনের মতে সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো কি? বিস্তারিত বর্ণনা করুন।

সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে দুটো পরস্পর বিপরীত ধর্মী মতবাদ রয়েছে। একটি হচ্ছে একত্ববাদ আর অপরটি হচ্ছে বহুত্ববাদ।
প্রথম মতবাদ অনুসারে সার্বভৌমত্ব একক, অবিভাজ্য এবং হস্তান্তরযোগ্য নয়। পক্ষান্তরে, দ্বিতীয় মতবাদ অনুসারে
সার্বভৌমত্ব সমাজের বিভিন্ন সংঘ ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিহিত, এটি কোন একক ক্ষমতা নয়। কোন একক প্রতিষ্ঠান এ
ক্ষমতার অধিকারী নয়।
অষ্টিনের একত্ববাদী সার্বভৌম মতবাদ
সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে অষ্টিনের একত্ববাদ মতবাদ একটি উল্লেখযোগ্য মতবাদ। ইংরেজ আইন বিশারদ
জন অষ্টিন এ মতবাদের প্রবক্তা। তিনি ১৮৩২ সালে তাঁর '' নামক গ্রন্থে
সার্বভৌমত্বের একত্ববাদী ধারণা ব্যক্ত করেন। সার্বভৌমত্বের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি হবস্ এবং বেন্থাম
) দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন। এ দু’জনকে অনুসরণ করে অষ্টিন আইন এবং প্রথার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়
করেন। তাঁর মতে, আইন হচ্ছে অধঃস্তনের প্রতি উর্ধ্বতনের আজ্ঞা বিশেষ, এর সঙ্গে নৈতিক সূত্র বা প্রচলিত প্রথার
কোন সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্রের মধ্যে সার্বভৌম শক্তিই চরম ও চ‚ড়ান্তশক্তি। আর একারণেই সার্বভৌমের আদেশই আইন।
এদিক থেকে অষ্টিন কেবল মাত্র আইনের একটি উৎস আছে বলে মনে
করেছেন।
অষ্টিন সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন এভাবে; “যদি কোন সুনির্দিষ্ট উর্ধ্বতন মানবীয় কর্তৃপক্ষ সমাজের অপর
কোন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আনুগত্য স্বীকার না করে সমাজের অধিকাংশ ব্যক্তির নিকট থেকে স্বভাবজাত আনুগত্য লাভ
করে, তাহলে সেই সমাজে উক্ত সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষই সার্বভৌম। আর উক্ত উধর্¦তন কর্তৃপক্ষকে নিয়ে গঠিত সমাজ হল
রাজনৈতিক ও স্বাধীন সমাজ।”
সার্বভৌমত্বের উপরোক্ত সংজ্ঞার বিশ্লেষণ থেকে এর কতিপয় বৈশিষ্ট্য প্রতিভাত হয়ে ওঠে।
 প্রতিটি স্বাধীন রাজনৈতিক সমাজ কোন না কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে যে বা যারা
সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহার করেন।
 সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ স্বাভাবতই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এ কর্তৃপক্ষ কারো আনুগত্য স্বীকার
করে না এবং কারো ইচ্ছায়ও পরিচালিত হয় না। অর্থাৎ সার্বভৌম ক্ষমতা চরম ও অসীম।
 সার্বভৌম ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট। এ ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ সাধারণ জনগণের মত অনির্দিষ্ট বা নৈর্ব্যক্তিক নয়।
 সার্বভৌমত্ব একক সত্ত¡া। এ ক্ষমতা অবিভাজ্য, একে বিভক্ত করা যায় না।
 জনগণের সহজাত অনুগত্যই সার্বভৌমত্বের মানদন্ড। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সার্বভৌম শাসকের প্রতি আনুগত্য
পোষণ করবে।
সুতরাং এটি স্পষ্ট যে, অষ্টিনের সার্বভৌম তত্ত¡ মূলত রাষ্ট্রের চরম, চ‚ড়ান্ত, অবিভাজ্য এবং অপ্রতিহত ক্ষমতারই পরিচয়
বহন করে। সার্বভৌম শাসকের আদেশই চ‚ড়ান্তবিশ্লেষণে আইন হিসেবে স্বীকৃত। সার্বভৌম ক্ষমতা সর্বব্যাপক এবং
চিরন্তন।
সার্বভৌমত্বের একত্ববাদ তথা অষ্টিনের মতবাদকে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনা করেছেন।
এসব সমালোচকদের মধ্যে গার্নার, সিজউইক, লাস্কী, স্যার হেনরী মেইন প্রমুখের নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
সমালোচনাগুলো নি¤œরূপ:
 আইনগত সার্বভৌমত্ব: অষ্টিনের সার্বভৌমত্ব মূলতঃ আইনগত সার্বভৌমত্ব। তিনি রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বকে
সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেছেন।
 প্রথাগত বিধানগুলো উপেক্ষা: অষ্টিন তাঁর সার্বভৌমত্বের ধারণা দিতে গিয়ে প্রথাগত বিধানগুলো সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা
করেছেন। অষ্টিনের মতে সার্বভৌমের আদেশই আইন কিন্তু অনেক সময় আইন সার্বভৌমের আদেশের রূপ পরিগ্রহ করে না।
 গণতন্ত্রের পরিপন্থী: অষ্টিনের তত্ত¡ অনুসারে সার্বভৌম ক্ষমতাই সর্বোচ্চ আর অন্যান্য সকল ক্ষমতাই সেই ক্ষমতার
অধীনস্থ। কিন্তু আধুনিককালে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণের সার্বভৌমত্ব সর্বাগ্রে স্বীকৃত।
 অচল মতবাদ: অষ্টিনের সার্বভৌমত্বের ধারণা বর্তমানে অনেকাংশে অচল বলে মনে করা হয়। রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগ
ক্ষমতার উপর এটি ভিত্তিশীল। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন, আইন শাস্তির ভয়ে মেনে চলা হয় না বরং
আইন মেনে চলার অভ্যাস জনগণের সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে নিহিত। জনগণ স্বভাবতঃই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল
থাকে। সঙ্গত কারণেই অষ্টিনের এ মতবাদ বর্তমানে অনেকটা অচল হয়ে পড়ছে।
এতসব সমালোচনা থাকা সত্বেও অষ্টিনের সার্বভৌম ক্ষমতা সংক্রান্তধারণাকে সম্পূর্ণরূপে মূল্যহীন বলা চলে না, বরং
সার্বভৌমত্বের ধারণাকে তিনি এক সুনির্দিষ্ট রূপ দিয়েছেন। আর এখানেই তাঁর কৃতিত্ব।
সারকথা
সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে দু’টো ভিন্নধর্মী মতবাদ রয়েছে - একটি হচ্ছে একত্ববাদী এবং অপরটি হলো বহুত্ববাদী মতবাদ।
একত্ববাদী মতবাদ অনুসারে সার্বভৌম শাসকই আইনের উৎস। এ ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ স্বভাবত:ই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। সার্বভৌম ক্ষমতা চরম, অসীম, অবিভাজ্য এবং সুনির্দিষ্ট।
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। জন অষ্টিন হলেন একজনক. একজন ইংরেজ আইন বিশারদ; খ. হল্যান্ডের আইন বিশারদ;
গ. আমেরিকান আইনজ্ঞ; ঘ. ইটালীয়ান আইন বিশারদ।
২। জন অষ্টিনের বইয়ের নামক. লেভিয়াথান; খ. দি প্রিন্স;
গ. দি প্রিন্সিপলস্ অফ্ মরাল অবলিগেশনস্; ঘ. লেকচারস্ অন জুরিসপ্রæডেন্স।
৩। সার্বভৌমত্বের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অষ্টিন প্রভাবিত হনক. হবস; খ. লক;
গ. ম্যাকিয়াভেলী; ঘ. জন স্টুয়ার্ট মিল।
৪। জন অষ্টিনের সার্বভৌমত্ব সংক্রান্তমতবাদকে বলা হয়ক. বহুত্ববাদ; খ. একত্ববাদ;
গ. নামসর্বস্ব সার্বভৌমত্ব; ঘ. সীমিত সার্বভৌমত্ব।
৫। ‘সার্বভৌমের আদেশই আইন’- উক্তিটি কে করেছেন?
ক. ম্যাকাইভার; খ. জি.ডি.এইচ.কোল;
গ. হল্যান্ড; ঘ. অষ্টিন।
৬। অষ্টিনের সার্বভৌমত্ব মতবাদ হলোক. প্রথাগত; খ. আইনগত;
গ. নীতিগত; ঘ. ধর্মীয়।
উত্তরমালা : ১. ক ২. ঘ ৩. ক, ৪. খ ৫. ঘ ৬. খ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। অষ্টিনের মতে সার্বভৌম শাসকই আইনের উৎস। ব্যাখ্যা করুন।
২। ‘সার্বভৌমের আদেশই আইন’ - উক্তিটি বিশ্লেষণ করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। অষ্টিনের সার্বভৌমত্ব মতবাদটি সমালোচনাসহ আলোচনা করুন।
২। অষ্টিনের মতে সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো কি? বিস্তারিত বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]