সার্বভৌমত্বের বহুত্ববাদী ধারণা অষ্টিনের একত্ববাদী মতবাদের বিরুদ্ধ এক মতবাদ হিসেবে আতœপ্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে
বিভিন্ন সংঘের নিজস্ব সত্ত¡া বা স্বাভাবিক ক্ষমতার সমর্থনে বহুত্ববাদী মতবাদ প্রচারিত ও সমর্থিত হয়েছে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বহুত্ববাদের উদ্ভব ঘটে। বর্তমান শতাব্দীতে সমাজতন্ত্র, জৈব মতবাদ ও বেন্থামের আশাবাদ
প্রভৃতি আইনের মাধ্যমে সংস্কার করা সম্ভব এ ধারণা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা পুঞ্জিভ‚ত হয়েছে।
ফলে সমাজ জীবনের প্রায় সমগ্র অস্তিত্ব রাষ্ট্রের করতলগত হয়েছে। এতে করে সংঘ ও ব্যক্তির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। রাষ্ট্র
ও বিভিন্ন সংঘের মধ্যে বিতর্ক ও দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়। এভাবে কেন্দ্রিভ‚ত রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে যে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা
দেয় সেটিই ক্রমশ বহুত্ববাদের রূপ পরিগ্রহ করে।
অধ্যাপক মেইটল্যান্ড, লাস্কী, হবসন, জি,ডি,এইচ, কোল, লিন্ডসে, বার্কার, ম্যাকাইভার প্রমুখ বহুত্ববাদের সমর্থক।
তাঁরা সকলেই এ বিষয়ে একমত যে, সামাজিক সংঘগুলো রাষ্ট্র কর্তৃক সৃষ্ট হয় নি, সংঘগুলোর নিজস্ব সত্ত¡া আছে। সঙ্গত
কারণেই অন্যান্য সংঘের কর্মকান্ডে অহেতুক হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই। রাষ্ট্র যেমন তার নিজস্ব পরিসরে
সার্বভৌম, সংঘগুলোও তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে সার্বভৌম। সমাজ যেহেতু সংঘমূলক, কর্তৃত্বও সংঘমূলক। তাই কর্তৃত্ব
রাষ্ট্রের একচেটিয়া নয়।
বহুত্ববাদের একাধিক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়:
বহুত্ববাদ রাষ্ট্রের বিলোপ সাধনের পক্ষপাতী নয়। এ মতবাদ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্বীকার করে, তবে এর পাশাপাশি
সার্বভৌম রাষ্ট্রের ধ্বংস কামনা করে।
বহুত্ববাদের অপর একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এটি রাষ্ট্রের সকল প্রকার অনাবশ্যকীয় ক্ষমতা বিভিন্ন সংঘের মধ্যে বন্টন
করে দিতে আগ্রহী। আর এই ক্ষমতা বন্টনের মাধ্যমে বহুত্ববাদ স্বাধীনতা সংরক্ষণে সচেষ্ট হয়।
বহুত্ববাদ রাষ্ট্র ও সমাজকে অভিন্ন সত্ত¡া বলে মনে করে না। এ মতবাদের সমর্থকরা রাষ্ট্রকে রাজনৈতিক, সামাজিক,
ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি সংঘের এক যুক্ত সংঘ বলে মনে করে।
বহুত্ববাদীদের মতে, রাষ্ট্রও সংঘমূলক। বিভিন্ন ধরণের সংঘের মধ্যেই মানুষের সত্ত¡া বিকাশ লাভ করে, শুধু মাত্র রাষ্ট্র
নামক সংঘের মধ্যেই মানুষের সত্ত¡া বিকশিত হয় না।
একত্ববাদীদের মতে, সার্বভৌমত্ব অবিভাজ্য, কিন্তু বহুত্ববাদীদের মতে, সার্বভৌমত্ব অবিভাজ্য নয়। তাঁরা মনে
করেন যে, সার্বভৌমত্ব কেবলমাত্র রাষ্ট্রেরই বৈশিষ্ট্য নয়, অন্যান্য সংঘও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। আর এসব
সংঘের সার্বভৌমত্বই রাষ্ট্রের চ‚ড়ান্ত, চরম ও অপ্রতিহত ক্ষমতার সীমা নির্দেশ করে।
অষ্টিনের সার্বভৌম সংক্রান্তএকত্ববাদী মতবাদ বহুত্ববাদীদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে বটে। কিন্তু বহুত্ববাদও
সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। এর বিরুদ্ধে উত্থিত সমালোচনাগুলো নিন্মরূপঃ
নৈরাজ্যবাদের সমর্থক: বহুত্ববাদের বিরুদ্ধে এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। একত্ববাদীরা অভিযোগ করেন যে,
বহুত্ববাদীরা সার্বভৌম শাসক ও ব্যক্তির অনুগত্যকে বিভক্ত করার মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের জন্ম দেয়।
সার্বভৌমত্বের আইনগত ধারণার উপেক্ষা: বহুত্ববাদীরা সার্বভৌমত্বের নৈতিক ধারণার উপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ
করেন। তাঁরা মনে করেন, বিভিন্ন সংঘের স্বাতন্ত্র্যের যে অধিকার রয়েছে তা তাদের নৈতিক অধিকার মাত্র; কোন
রূপ আইনসঙ্গত অধিকার নয়। এভাবে দেখা যায়, বহুত্ববাদীরা অনেক সময় নৈতিক অধিকার ও আইনসঙ্গত
অধিকারের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
একক সার্বভৌম ক্ষমতার অস্বীকৃতি: বহুত্ববাদ একক সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। একক
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে রাষ্ট্র বিভিন্ন সংঘের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু
বহুত্ববাদীরা রাষ্ট্র কর্তৃক এ ধরণের হস্তক্ষেপের বিরোধী। প্রকৃতপক্ষে অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং জনসাধারণ সম্পর্কিত
বিষয়ের মধ্যে সীমারেখা নির্দেশ করা অত্যন্তদুরূহ। তদুপরি এ ধরনের সীমারেখা নির্দেশ করার ভারই বা কার উপর
অর্পিত হবে। একমাত্র সমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রকেই এ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। কাজেই রাষ্ট্রের হাতে সার্বভৌম
ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তার উপর অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বারোপ: বহুত্ববাদ রাষ্ট্রকে চ‚ড়ান্তক্ষমতার আধার বলে মেনে
নেয় না। রাষ্ট্রের কতকগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কার্যের উপর এটি তেমন কোন গুরুত্ব আরোপ করে না। কিন্তু একথা
সর্বজনস্বীকৃত যে, ব্যক্তি জীবনের দ্ব›দ্ব- সংঘাত ও সমস্যাদির আইনসঙ্গত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাধান এবং ভৌগলিক
অখন্ডতা নিশ্চিতকরণের জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী, অপর কোন সংঘ বা প্রাতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা
কিছুতেই সম্ভবপর নয়।
অবাস্তব ধারণার প্রতিভ‚: বহুত্ববাদের একটি বিশেষ ত্রæটি হচ্ছে এই যে, এটি রাষ্ট্রের সঠিক ধারণা উপলব্ধি করতে
ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। সমাজ তথা রাষ্ট্র যে শ্রেণী স্বার্থ সংরক্ষণ করে অর্থাৎ উৎপাদনের উপাদানগুলো যে শ্রেণী দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয় রাষ্ট্রও তাদের ইচ্ছানুসারে পরিচালিত হয়, এই বাস্তবতা বহুত্ববাদীরা উপলব্ধি করতে
ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
বহুত্ববাদের বিভিন্নমুখী ত্রæটি ও সমালোচনা থাকা সত্বেও এর যে কোন মূল্য নেই তা নয়। এ মতবাদের সর্বাপেক্ষা উত্তম
দিক হচ্ছে, এটি ক্ষমতা বন্টনের পক্ষ সমর্থন করে। বহুত্ববাদ জোর দিয়ে বলে যে, সমূদয় ক্ষমতা যদি রাষ্ট্রের হাতে
কেন্দ্রিভ‚ত থাকে তাহলে সামাজিক কল্যাণ ব্যাহত হতে বাধ্য। একারণেই এটি বিভিন্ন সংঘের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন করে
দিতে আগ্রহী। এছাড়া এ মতবাদকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবতা বিবর্জিতও বলা চলে না। এর ফলেই বিভিন্ন গণতান্ত্রিক শাসন
ব্যবস্থায় আইন সভাসমূহে সংঘ প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা রাখা সম্ভবপর হয়েছে। বলা বাহুল্য যে, এ মতবাদ সর্বাত্মকবাদের
বিরূদ্ধে এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।
সারকথা
একত্ববাদী মতবাদের বিপরীতে সার্বভৌমত্বের বহুত্ববাদী ধারণার উদ্ভব হয়েছে। বহুত্ববাদের মূল কথা হলো সার্বভৌম
ক্ষমতা কোন একক ব্যক্তির হাতে নিয়োজিত না থেকে তা রাষ্ট্রাভ্যন্তরে বিভিন্ন সংঘের হাতে নিয়োজিত থাকবে। অর্থাৎ
এ মতবাদ ক্ষমতা বিভাজনের উপর গুরুত্বারোপ করে।
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। সার্বভৌমত্বের বহুত্ববাদী মতবাদের প্রবক্তা হলেন -
ক. হল্যান্ড; খ. ফাইনার;
গ. লাস্কী; ঘ. হবসন।
২। বহুত্ববাদ সার্বভৌম রাষ্ট্রেরক. বিকাশ সাধন করে; খ. ধ্বংস কামনা করে;
গ. কর্ম-পরিধি বৃদ্ধির পক্ষ সমর্থন করে; ঘ. অস্তিত্ব অস্বীকার করে।
৩। বহুত্বাবাদের উদ্ভব ঘটেক. ষোড়শ শতাব্দীতে; খ. সপ্তদশ শতাব্দীতে;
গ. অষ্টাদশ শতাব্দীতে; ঘ. ঊনবিংশ শতাব্দীতে।
৪। বহুত্ববাদীদের মতে সার্বভৌম ক্ষমতাক. অবিভাজ্য; খ. হস্তান্তরের অযোগ্য;
গ. বিভাজ্য; ঘ. আইনগত।
৫। কেন্দ্রীভ‚ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে তা হলক. একত্ববাদ; খ. নৈরাজ্যবাদ;
গ. বহুত্ববাদ; ঘ. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ।
উত্তরমালাঃ ১. গ,ঘ ২. খ ৩. ঘ ৪. গ ৫. গ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. বহুত্ববাদের মূল বক্তব্য কি?
২. বহুত্ববাদের উদ্ভব কিভাবে হয়েছে?
৩. বহুত্ববাদীরা সার্বভৌম ক্ষমতা বিভিন্ন সংঘের হাতে আরোপ করতে চান কেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিট - ৫ পৃষ্ঠা - ৭১
১। বহুত্ববাদকি? সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে বহুত্ববাদীদের ধারণা বিশ্লেষণ করুন।
২। সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে বহুত্ববাদের মূল্যায়ন করুন।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র