স্বাধীনতার অর্থ কি? স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলো বর্ণনা করুন।

সাধারণ কথায় স্বাধীনতা হচ্ছে মানুষের ইচ্ছামত কোন কিছু করা বা না করার অবাধ অধিকার। এ অর্থে অধীনতামুক্ত
অবস্থাকেই বলা যেতে পারে স্বাধীনতা। অর্থাৎ স্বাধীনতা বলতে বোঝায় সব ধরনের নিয়ন্ত্রণের অনুপস্থিতি। কিন্তু
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এ ধরনের অবাধ স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতারই নামান্তর। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা এক হতে পারে না। এ
ধরনের স্বাধীনতার কোন অস্তিত্ব নেই।
প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা মানেই নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা। স্বাধীনতা বলতে নিয়ন্ত্রণ বা বিধি-নিষেধের অনুপস্থিতি বোঝায় না।
সকলের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রত্যেকের কর্মকাÐের উপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলে।
মনে রাখা দরকার যে, স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত হলে তা এতটুকু খর্ব হয় না; বরং এর ফলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক কল্যাণ
অধিকমাত্রায় সাধিত হয়। সামাজিক কল্যাণ স্বাধীনতার মূলমন্ত্রহিসেবে কাজ করে।
বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তাঁদের স্ব স্ব দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। অধ্যাপক লাস্কী স্বাধীনতার
সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি সে ধরনের পরিবেশের সযতœ সংরক্ষণ যাতে করে মানুষ তাদের
আÍোন্নতি করতে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা লাভ করে এবং সে ধরনের পরিবেশ রক্ষার জন্য অদম্য আগ্রহ প্রকাশ করে।”
অধ্যাপক গেটেল -এর মতে, “স্বাধীনতা হচ্ছে সেসব কাজ করা এবং উপেভাগ করার সরাসরি ক্ষমতা যেগুলো
করা ও উপভোগ করার মত।”
জন স্টুয়ার্ট মিল তাঁর গ্রন্থে স্বাধীনতার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে
বলেন, কেবল অপরের অনিষ্ট করা হতে নিবৃত্ত করার ক্ষেত্রেই কোন সভ্য সমাজের সদস্যকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলপূর্বক
কাজ করানো যায়। তার দৈহিক বা মানসিক উপকার হবে এ উদ্দেশ্যে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করানো উচিত
নয়। মিল এ প্রসঙ্গে অত্যন্তসুন্দর কথায় বলেন, “ব্যক্তি তার নিজের উপর, নিজ দেহ ও মনের উপর সার্বভৌম।“ লিখেছেন, “স্বাধীনতা বলতে কোন রকম বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়া ব্যক্তির
ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ও বিকাশ সাধনকে বোঝায়।” "
মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তাঁর মতে, অর্থাৎ অর্থনৈতিক শোষণ থেকে কোন নির্যাতিত
শ্রেণীকে মুক্ত করার নাম হচ্ছে স্বাধীনতা। এ সংজ্ঞার মূল বক্তব্য হচ্ছে সকল প্রকার স্বাধীনতার ভিত্তি হলো অর্থনৈতিক
স্বাধীনতা। কেননা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার উপস্থিতিই রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে পারে।
স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ
স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ রয়েছে। নি¤েœসেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল।
 প্রাকৃতিক স্বাধীনতা: প্রাকৃতিক স্বাধীনতা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা যার বলে ব্যক্তি তার ইচ্ছামত সবকিছু করতে
পারে। এদিক থেকে প্রাকৃতিক স্বাধীনতা উন্মুক্ত লাইসেন্স-এর নামান্তর। এ স্বাধীনতা শক্তি বা বলের উপর প্রতিষ্ঠিত।
চুক্তিবাদী দার্শনিকদের (হবস্, লক, রুশো) ধারণানুসারে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে প্রাকৃতিক অধিকার তথা স্বাধীনতা
ভোগ করত। কিন্তু সমাজ তথা রাষ্ট্রে বসবাসকারী মানুষ এ ধরনের প্রাকৃতিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না; কেননা
এতেকরে সমাজ ও রাষ্ট্রে অরাজকতা দেখা দেবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গিলক্রাইস্ট (এরষপযৎরংঃ) এর মতে, প্রাকৃতিক
স্বাধীনতার অর্থ “স্বাধীনতার অবৈজ্ঞানিক ব্যবহার।”
 নাগরিক স্বাধীনতা: নাগরিক স্বাধীনতা বলতে বোঝায় সে ধরনের স্বাধীনতা যা মানুষ রাষ্ট্র ও সমাজে বসবাস করতে
গিয়ে ভোগ করে। এ অধিকার ভোগ অবারিত নয়; আইন দ্বারা তা সীমিত। আইনই নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষক। এ
স্বাধীনতা তাই আইনের শাসনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। গেটেল (এবঃঃবষষ) এ প্রসঙ্গে বলেন, “সুনির্দিষ্ট আইন,
বাস্তবায়নে নিশ্চয়তা এবং আইনের সামনে সমতা মানুষের মাঝে পরস্পর নাগরিক স্বাধীনতাকে প্রসারিত করেছে।
 ব্যক্তিগত স্বাধীনতা: ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অর্থ এই যে, ব্যক্তির সামনে এমন সুযোগ থাকতে হবে যাতে করে সে
কোন প্রকার স্বেচ্ছাচারী এবং অবৈধ প্রতিরোধ ছাড়া নিজের খুশীমত কর্ম সম্পাদন করতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তিরই
অধিকার থাকবে অপর কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার। ব্যক্তি মাত্রই তার পরিধান,
আহার, জীবনযাত্রার মান, বিয়ে, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করবে। রাষ্ট্র এসব ক্ষেত্রে কোন হস্তক্ষেপ করা
থেকে বিরত থাকবে। এফ.এ. হায়েক লিখেছেন, "
 রাজনৈতিক স্বাধীনতা ঃ রাজনৈতিক স্বাধীনতা এমন স্বাধীনতা নির্দেশ করে যার মাধ্যমে নাগরিকরা রাজনৈতিক
জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকাÐে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা কতিপয় ন্যূনতম অধিকার
অন্তর্ভুক্ত করে। এগুলো হচ্ছে ভোটের অধিকার, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার অধিকার, সরকারী পদ লাভের
অধিকার, রাজনেতিক মতামত ব্যক্ত করার অধিকার, ক্ষমতাসীন সরকারের নীতিমালা ও কর্মকাÐের সমালোচনা
করার অধিকার এবং আবেদন করার অধিকার।
অধ্যাপক লাস্কীর মতে, রাজনৈতিক স্বাধীনতা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কর্মকাÐে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাধীনতা। এ প্রসঙ্গে
তিনি বলেন, "
অর্থাৎ “রাজনৈতিক স্বাধীনতা থাকলেই কেবল আমি সরকারী কর্মকাÐে নিজেকে স্বাধীনভাবে নিয়োজিত করতে পারি...
আমার মতামতকে আমি যাতে ব্যক্ত করতে পারি এবং তা করতে গিয়ে যাতে আমি অন্যান্যদের সঙ্গে মত বিনিময়
করতে পারি।” রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লীকক ) রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে ‘সাংবিধানিক স্বাধীনতা’ এবং গিলক্রাইস্ট
একে ‘গণতন্ত্রের সমার্থক’ বলে অভিহিত করেছেন।
 অর্থনৈতিক স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলতে কোন নাগরিকের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করা
বোঝায়। এ অর্থে প্রতিটি নাগরিকের যোগ্যতা অনুসারে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা আবশ্যক। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার
অভাবে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয় এর অনুপস্থিতিতে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে
না। বংশ, গোত্র, বিশ্বাস, ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সকলের সমান অর্থনৈতিক সুযোগ থাকা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার
এক অত্যবশ্যকীয় শর্ত। অধ্যাপক লাস্কী (খধংশর) যথার্থই বলেছেন, “অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি প্রতিটি
নাগরিকের দৈনন্দিন ন্যূনতম অন্ন সংস্থানের নিরাপত্তা ও সুযোগের উপস্থিতি ... আগামীকালের অভাব থেকে আমার
রক্ষা পেতে হবে।”
 জাতীয় স্বাধীনতা: জাতীয় স্বাধীনতা বলতে কোন জাতি বা দেশের স্বাধীনতাকে বোঝায়। ব্যক্তি যেমন স্বাধীনতা
পেতে আগ্রহী তেমনি রাষ্ট্রও। জাতীয় স্বাধীনতা কেবল তখনই অস্তিত্বশীল হয় যখন কোন জাতি বা সম্প্রদায় স্বাধীন
ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয়। প্রকৃতপক্ষে জাতীয় স্বাধীনতার অপর নাম হচ্ছে জাতীয় সার্বভৌমত্ব। প্রত্যেক
রাষ্ট্র বা জাতিই স্বীয় স্বাধীনতা বজায় রাখতে সদা সচেষ্ট থাকে। স্বাধীনতা ব্যতীত কোন জাতিই উন্নতি করতে পারে
না।
আইন ও স্বাধীনতা
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে আইন ও স্বাধীনতার মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণ করা একটি জটিল সমস্যা। স্বাধীনতা
বলতে সব ধরনের নিয়ন্ত্রণের অবসান বোঝায় না; অর্থাৎ স্বাধীনতা মানে ফ্রি লাইসেন্স নয়। প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা হচ্ছে
নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা। স্বাধীনতা কেবলমাত্র আইনানুগ রাষ্ট্রব্যবস্থাতেই অস্তিত্বশীল। রাষ্ট্র কর্তৃক স্বাধীনতা প্রদত্ত হলেই চলে
না, স্বাধীনতা রক্ষার ব্যবস্থাও রাষ্ট্রকে সমভাবে করতে হয়। সুষ্ঠু রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার জন্য যেমন জনগণকে স্বাধীনতা দিতে হয়
ঠিক তেমনি তা রক্ষার জন্য প্রয়োজন যথাযথ আইনের। বস্তুত আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ।
আধুনিক রাষ্ট্রের সাফল্য আইন ও স্বাধীনতার যথাযথ সমন্বয়ের উপরই নির্ভরশীল।
আইন ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দু’টো বিপরীতধর্মী মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। কোন কোন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর
মতে, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরোধী। এ দুটোর মধ্যে তেমন কোন সামঞ্জস্য নেই। আইনের আধিক্যের ফলে
স্বাধীনতা খর্ব হয়। আইনের আধিক্য যত বেশি হয স্বাধীনতাও সে পরিমাণে হ্রাস পায়। প্রতিটি আইন কোন না কোনভাবে
জনগণের স্বাধীনতা খর্ব করে। উইলিয়াম গডউইন ক্রপট্কীন হাবার্ট স্পেনসার
(ঐবৎনবৎঃ ঝঢ়বহপবৎ) প্রমুখ চিন্তাবিদ এ মতবাদ সমর্থন করেন।
অপরদিকে কোন কোন দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আইন ও স্বাধীনতার মধ্যে অত্যন্তঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিরাজমান বলে বর্ণনা
করেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এরিস্টটল , মন্টেস্কু এবং জন লক (ঔড়যহ খড়পশব)।
তাঁরা সকলেই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন যে, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এবং জনগণের কর্মকাÐ নিয়ন্ত্রণের জন্য
আইনের প্রয়োজন সর্বাগ্রে। আইনের মাধ্যমেই কেবল ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং জনকল্যাণ সাধন করা সম্ভব। আইন
স্বাধীনতা খর্বতো করেই না বরং তা সংরক্ষিত এবং প্রসারিত করে। কি নৈতিকতা, কি মানবিকতা, কি সভ্যতা সবই
আইনের প্রত্যক্ষ ফসল।
আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে শেষোক্ত মতামতটি অধিক পরিমাণে গ্রহণযোগ্য। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মাত্রই আইনের
মাধ্যমে ব্যক্তি স্বাধীনতা সংরক্ষণ করতে প্রয়াসী হয়। জনগণের ক্রিয়াকলাপের উপর প্রয়োজনমত বিধিনিষেধ আরোপ
করে আইন স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে কাজ করে। কাজেই বলা হয়ে থাকে যে, ‘আইন স্বাধীনতার শর্ত’ ''
আবার আইন শুধুমাত্র স্বাধীনতার শর্তই নয়, ‘আইন স্বাধীনতার রক্ষকও বটে।’
আইনের বাইরে মানুষের কোন সত্ত¡া নেই। রাষ্ট্রের বাইরে যেমন ব্যক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না ঠিক তেমনি আইনের
বাইরেও স্বাধীনতার অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। বরং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং আইনের অনুশাসন মান্য করার
মাঝেই ব্যক্তি স্বাধীনতার বীজ নিহিত একথা আজ সর্বজনস্বীকৃত।
স্বাধীনতার রক্ষাকবচ
ব্যক্তিস্বাধীনতা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সোপান। এর কোন বিকল্প নেই। কাজেই কিভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করা
যায় সেদিকে দৃষ্টি রাখা একান্তঅপরিহার্য। এক্ষেত্রে একাধিক পন্থা অবলম্বন করা হয়ে থাকে যেগুলোকে স্বাধীনতার
রক্ষাকবচ বলে অভিহিত করা হয়। স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলো নিæরূপ:
 আইন: স্বাধীনতার প্রথম ও প্রাচীন রক্ষাকবচ হচ্ছে আইন। আইনের মাধ্যমেই মূলত ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষিত হয়ে
থাকে। কোন নাগরিকের স্বাধীনতা ক্ষুণœ বা বিপন্ন হলে আইন তা রক্ষা করতে অগ্রসর হয়। স্বাধীনতার উপস্থিতি বা
অনুপস্থিতি আইন দ্বারা আরোপিত শাস্তির প্রকৃতি ও অনুপাতের উপর বিশেষভাবে নির্ভর করে। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রীয়
আইনকে স্বাধীনতার পূর্বশর্ত বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
 গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা: গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতা রক্ষিত হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে যে, গণতন্ত্রও স্বাধীনতা
একই সূত্রে গাঁথা। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় স্বাধীনতা যতটা নিরাপদ অন্য কোন সরকার ব্যবস্থায় তা ততটা নয়।
কারণ গণতন্ত্রএমন এক সরকার ব্যবস্থা যাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চ‚ড়ান্তবিশ্লেষণে জনগণের হাতে ন্যস্তথাকে। পক্ষান্তরে
অন্যান্য সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা মূলত কতিপয় ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রিভ‚ত হয়। ফলে ব্যক্তি স্বাধীনতা সঙ্কুচিত
হয় বহুগুণে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, একমাত্র গণতন্ত্রপ্রতিষ্ঠিত হলেই ব্যক্তিস্বাধীনতা সুরক্ষিত হওয়া সম্ভব।
 সংবিধান: প্রায় সকল দেশের সংবিধান সে দেশের জনগণের স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত
সংবিধান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সংবিধান রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের উপর এমন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে
যাতে করে সরকার স্বীয় ইচ্ছামত সবকিছু করতে পারে না। সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্য থেকে সরকারকে যাবতীয়
কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
 মৌলিক অধিকার: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো স্বীকৃতি লাভ করে। সাধারণত সংবিধানে এসব
মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ থাকে। এগুলো এক বিশেষ মর্যাদা লাভ করে এবং দেশের সাধারণ আইনের চেয়েও তা
অধিক পবিত্র বলে মনে করা হয। মৌলিক অধিকারগুলো বিঘিœত হলে জনগণ আদালতে বিচারপ্রার্থী হতে পারে।
সরকার এসব অধিকার লংঘন বা স্থগিত করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে সরকারের কর্মকাÐের উপর জনগণের মৌলিক
অধিকারগুলো এক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হিসেবে কাজ করে থাকে।
 ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বা পৃথকীকরণ নীতিও জনগণের স্বাধীনতার অপর এক রক্ষাকবচ। সরকারের
ক্ষমতা আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার ফলে এক বিভাগ অপর বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ
করতে পারে না। অপরদিকে তিনটি বিভাগের মধ্যে এক ধরনের পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যও রক্ষিত হয়। ফলে
কোন একটি বিভাগের পক্ষে স্বৈরাচারী হয়ে উঠা সম্ভবপর নয়।
 বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: ব্যক্তি স্বাধীনতার অপর একটি উল্লেখযোগ্য রক্ষাকবচ হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।
এ স্বাধীনতার অর্থ হলো বিচারকরা আইন ও শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত ও স্বাধীন থেকে নিজেদের দায়িত্ব
ও কর্তব্য সম্পন্ন করবেন। যে রাষ্ট্রে বিচার বিভাগ যত বেশি স্বাধীন সে রাষ্ট্রে জনগণের স্বাধীনতা তত অধিক পরিমাণে
রক্ষিত হবে।
 আইনের শাসন: স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আইনের শাসনের প্রয়োগ অনস্বীকার্য। অধ্যাপক ডাইসী (উরপবু) ব্যক্তি
স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য আইনের শাসনের উপস্থিতির উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
আইনের শাসনের অন্যতম শর্ত হচ্ছে- আইনের চোখে সকলে সমান। অর্থাৎ সকলেই আইনের দ্বারা সমানভাবে
পরিচালিত হবে; আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। কাজেই এটি সহজেই অনুমিত হয় যে,
জনগণের স্বাধীনতা রক্ষাকল্পে আইনের শাসনের কোন বিকল্প নেই।
 সচেতন জনমত: জনগণের সচেতনা স্বাধীনতা রক্ষার একটি বিশেষ শর্ত । স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন জনগণের
মধ্যে স্বাধীনতার জন্য তীব্র আকাক্সক্ষার উপস্থিতি। স্বাধীনতা যাতে এতটুকু খর্ব না হয় যে জন্য জনগণকে সর্বদা
সচেতন থাকতে হবে। অধ্যাপক লাস্কী (খধংশর) যথার্থই বলেছেন, অর্থাৎ চিরন্তন সতর্কতার মাঝেই স্বাধীনতার মূল্য নিহিত।
 ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: যে শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতার অত্যধিক কেন্দ্রীকরণ পরিলক্ষিত হয় সেখান ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণœ
হবে এটাই স্বাভাবকি। পক্ষান্তরে যে শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতার বিভাজন তথা বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা
অধিক পরিমাণে রক্ষিত হয়ে থাকে। ক্ষমতা যখন কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ হয়
তখন তা দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করে। এতে করে প্রশাসন ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ হয় সুনিশ্চিত।
সারকথা
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্বাধীনতা প্রত্যয়টির প্রকৃত অর্থ হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা। কোনরূপ অনিয়ন্ত্রিত বা অবাধ স্বাধীনতার স্থান
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে নেই। অবাধ স্বাধীনতা উন্মুক্ত লাইসেন্সেরই শামিল।
আইনের উপস্থিতিই কেবল স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে পারে। আইন স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ ও প্রসারিত করে।
আইনের মাধ্যমেই কেবল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং জনকল্যাণ সাধন করা যায়। আইনের অনুশাসন মেনে চলার মধ্যেই
স্বাধীনতার বীজ নিহিত। আইন, সংবিধান, মৌল অধিকার, গণতন্ত্র, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা,
আইনের শাসন, সচেতন জনমত ইত্যাদি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে স্বীকৃত।
সঠিক উত্তর লিখুন।
১. রাজনৈতিক স্বাধীনতার মাধ্যমে জনগণ কি করতে পারে?
ক. সামাজিক কর্মকাÐ সম্পাদন করতে পারে;
খ. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে;
গ. অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে পারে;
ঘ. রাষ্ট্রীয় কর্মকাÐে অংশগ্রহণ করতে পারে।
২. স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজনক. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ;
খ. মৌলিক অধিকার;
গ. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ;
ঘ. আইনের শাসন।
৩.“ব্যক্তি তার নিজের উপর , নিজ দেহ ও মনের উপর সার্বভৌম।”- এ উক্তিটি কার?
ক. বেন্থাম;
খ. মিল;
গ. জি. ডি. এইচ. কোল;
ঘ. লাস্কী।
৪. “অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি প্রতিটি নাগরিকের দৈনন্দিন ন্যূনতম অন্ন সংস্থানের নিরাপত্তা ও সুযোগের
উপস্থিতি ... আগামীকালের অভাব থেকে আমার রক্ষা পেতে হবে।” এ উক্তিটি কার?
ক. মিল;
খ. কোল;
গ. গেটেল;
ঘ. লাস্কী।
৫. “স্বাধীনতা বলতে কোন রকম বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়া ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ও বিকাশ সাধনকে বোঝায়” -
এ উক্তিটি কে করেছেন ?
ক. লাস্কী;
খ. মিল;
গ. কোল;
ঘ. ডরোথী পিকলস্।
উত্তরমালা: ১. ঘ ২. ঘ ৩. খ ৪. ঘ ৫. গ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. স্বাধীনতার সংজ্ঞা দিন।
২. রাজনৈতিক স্বাধীনতা কাকে বলে?
৩. আইনকে স্বাধীনতার পূর্বশর্ত বলা হয় কেন?
৪. ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন’ বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. স্বাধীনতার অর্থ কি? স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলো বর্ণনা করুন।
২. আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]