উদারতাবাদ বলতে আপনি কি বুঝেন ? উদারতাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করুন।

পৃথিবীর ইতিহাসের বিবর্তনময় পথে বিভিন্ন সময়ে জন্ম হয়েছে বিভিন্ন মতবাদের। উদারতাবাদ তেমনি একটি মতবাদ
যা ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী নিয়ে একটি আন্দোলন হিসেবে আবির্ভূত। ব্যক্তিস্বাধীনতার পথে বাঁধা
দূর করে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার এর মধ্যে ব্যক্ত ছিল। অন্যদিকে উপযোগবাদ মানব জীবনে
সুখের সন্ধানে ব্যাপৃত। যা কিছু উদ্যোগ তার মূল লক্ষ্যই যে আনন্দ প্রাপ্তি এবং বেদনাকে পরিহার করার প্রচেষ্টা, এ
মতবাদ সে কথাই বলার চেষ্টা করে। পুঁজিবাদ সন্ধান দেয় প্রতিযোগিতাপূর্ণ এক স্বাধীন সমাজের যেখানে ব্যক্তি অবাধে
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে মেধা, শ্রম ও দক্ষতা দিয়ে। সবশেষে সমাজতন্ত্রেধ্বনিত হয়েছে পূর্ববর্তী তিনটি
মতবাদের বিরুদ্ধে উদ্ধত সুর। এ মতবাদ শ্রমজীবী মানুষের কর্তৃত্বে সামাজিক মালিকানার মাধ্যমে উৎপাদন ও বন্টন
ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের ভেতর দিয়ে ব্যক্তি মানুষের মুক্তির পথ খুঁজে পেতে চায়। সে জন্য ব্যক্তিকে প্রয়োজনে সামাজিক ও
যৌথ স্বার্থের কাছে বিলীন করতে চায়। সমাজের শ্রেণী ব্যবধান ঘুঁচিয়ে গড়তে চায় এক শ্রেণীহীন ও শোষণহীন সমাজব্যবস্থা। অর্থ ও সংজ্ঞা
উদারতাবাদ বা শব্দটি ল্যাটিন খ শব্দ হতে শব্দের অর্থ স্বাধীন। শব্দগত অর্থে তাই
উদারতাবাদ হচ্ছে স্বাধীনতার মতবাদ। আধুনিক রাষ্ট্রদর্শনে উদারতাবাদ উনিশ শতকের বিশের দশকে জন্ম নিলেও এর
মূল ষোড়শ শতাব্দীর ‘রেনেসাঁ’ ও ‘রিফরমেশন’ আন্দোলন পর্যন্তবিস্তৃত। এ দুটি আন্দোলনে ব্যক্তির স্বকীয় সত্ত¡া প্রতিষ্ঠিত
করার জন্য প্রয়াস চালানো হয়েছিল। উদারতাবাদ এ প্রয়াসেরই নবতর সংস্করণ। আধুনিক রাষ্ট্রদর্শনে উদারতাবাদ
গণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নামেও সমধিক প্রচলিত। চিন্তার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংঘ বা
সমিতি গঠনের স্বাধীনতার সমন্বয়ে ব্যক্তি নাগরিকের অধিকারের যে সৌধ বা ইমারত গড়ে ওঠে, উদারতাবাদ তারই
ফল।
সংজ্ঞা
উদারতাবাদের সুনির্দিষ্ট ও সর্বজনীন কোন সংজ্ঞা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ দিতে পারেন নি। সাধারণভাবে উদারতাবাদ বলতে
সেই মতবাদকে বুঝায়, যা’ ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির
অধিকারকে ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপায় বলে মনে করে এবং রাষ্ট্রের কার্যাবলীকে সীমিত করতে চায়। উদারতাবাদ হচ্ছে
মানুষের প্রগতি ও মুক্তির পথে সৃষ্ট বাঁধাবিপত্তি দূর করার দাবি সম্বলিত আন্দোলন। এটি হচ্ছে মানুষের মধ্যে নিহিত
তার বিপুল শক্তি ও সম্ভাবনার সার্থক বিকাশ সাধন করে তাকে তার নিজ সত্ত¡ায় প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস। উদারতাবাদ
মানুষের রাজনৈতিক জীবনেই সীমিত নয় বরং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনকে অন্তর্তুক্ত করে মানবতার সার্বিক
কল্যাণ ও মুক্তির লক্ষ্যেই পরিচালিত। সে হিসেবে অধ্যাপক হ্যালোয়েলের ) ভাষায়, “উদারতাবাদ শুধুমাত্র
একটি চিন্তাধারা নয়, এটি একটি জীবনদর্শনও বটে। জীবনদর্শন হিসেবে এটি মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়
ও অর্থনৈতিক আকাক্সক্ষাগুলোকে প্রতিফলিত করে থাকে।’’ অনেকে একে অবাধ পুঁজি ও ধনতান্ত্রিক বিকাশের মতাদর্শিক
আন্দোলন বলেও মনে করে থাকেন।
উদারতাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ
‘লিবারেল’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৮১৬ সালে। ইংল্যান্ডের টরী মন্ত্রী ক্যাসল রেগ এ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।
১৮২২ সালে বিখ্যাত ইংরেজ কবি বাইরন, শেলী ও হান্ট ‘দি লিবারেল’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৭৯
সালে ঐ একই নামে একটি সাময়িক পত্রিকা বের হয়। এই সময় জেমস মিল, জেরেমী বেনথাম, জন স্টুয়ার্ট মিল প্রমুখ
উদারনৈতিক চিন্তাচেতনার অগ্রপথিক হিসেবে চিহ্নিত হন।
সপ্তদশ শতকে ইউরোপে বিশেষত ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানীতে উদারতাবাদী চিন্তাধারার সূত্রপাত ঘটে। কেউ কেউ এ
মতবাদের সাথে জন লক-এর নামও যোগ করেন। প্রথম দিকে এটি ছিল এক ধরনের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি। পরবর্তীতে
উদারতাবাদ একটি মতাদর্শে পরিণত হয়। ডি. জে ম্যানিং তাই বলেন,
অষ্টাদশ ও উনিশ শতকে এসে উদারতাবাদ একটি নৈতিক আন্দোলন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ইংল্যান্ড হয়ে উঠে
এর তীর্থক্ষেত্র। বেনথাম, জেমস্ মিল ও জন স্টুয়ার্ট মিল এ আন্দোলনের পুরোভাগে এসে দাঁড়ান। ফ্রান্সের বিদগ্ধ সমাজে
এ মতবাদ তার রেশ ছড়িয়ে দেয় - যা ছিল ১৭৮৯ সালে সংগঠিত ফরাসী বিপ্লবের উজ্জীবনী শক্তি। সেখানে এ মতবাদ
পতনমুখী সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল সোচ্চার। কঁদরসে, নিরাবু ও জিরোঁদে ছিলেন এদের প্রতিনিধি। ফরাসী বিপ্লবীদের
ক›েঠ উচ্চারিত সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের বাণীই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সৃষ্টি করে বিপুল আলোড়ন।
এ আলোড়ন জার্মানীতে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে সনাতন সামন্তব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রচন্ড বিক্ষোভ। ১৯১০ সালে
বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী ও উদারতাবাদী আন্দোলনের দূর্গে পরিণত হয়। তবে সেখানে উদারতাবাদ
গণমানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে নি। বরং তা প্রধানত বুদ্ধিজীবী মহলে কেন্দ্রীভ‚ত থাকে। ভাববাদী দার্শনিক হেগেল ছিলেন
এদের অগ্রনায়ক। জার্মানীর ঐক্যের প্রশ্ন মূখ্য থাকায় সেখানকার শাসকগণ সর্বাত্মকবাদী নীতির সাহায্যে গণমানসে
উদারতাবাদের বিস্তার রোধ করেন।
উদারতাবাদের শ্রেণীবিভাগ
সামন্তব্যবস্থার শেষ দিকে ষোড়শ শতাব্দীতে ক্ষমতাবান অভিজাত ও যাজক শ্রেণীর বিরুদ্ধে উদারতাবাদ একটি আন্দোলন
রূপে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু ক্রমে এই মতাদর্শ বুর্জোয়া ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ইন্ধন হিসাবে কাজ করতে থাকে। এই
পরিবর্তন লক্ষ্য করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা উদারতাবাদকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। ক. সনাতন (ঈষধংংরপধষ) উদারতাবাদ
ও খ. আধুনিক ) উদারতাবাদ।
সনাতন উদারতাবাদ
এ প্রকৃতির উদারতাবাদের মূল কথা হ’ল রাষ্ট্র ব্যক্তি-স্বাধীনতার রক্ষাকর্তা। ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র, ব্যক্তি রাষ্ট্রের জন্য নয়।
রাষ্ট্র নিজেই নিজের লক্ষ্য নয় - যেমন মনে করতেন আদর্শবাদীরা তা ঠিক নয়। বরং রাষ্ট্র হচ্ছে ব্যক্তির লক্ষ্যে পৌঁছাবার
উপায়। সেই লক্ষ্য হ’ল, ব্যক্তির স্বাধীনতার সুরক্ষা। জন লক-এর রচনায় এ উদারতনীতিবাদের সম্যক আভাস পাওয়া
যায়। প্রকৃতির রাজ্যের অসুবিধা হতে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠনের যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তার
মধ্যেই উদারতাবাদের পরিচয় মেলে। তাঁর এ তত্তে¡র মূল কথা হ’ল, সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলেও এর
ভিত্তিতে রাষ্ট্র কখনই ব্যক্তির উপর নিরংকুশ ও সর্বগ্রাসী কর্তৃত্ব দাবি করতে পারে না। রাষ্ট্র-নিযুক্ত ব্যক্তি এই কর্তৃত্ব
প্রয়োগ করবে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে। এই সীমা নির্ধারিত হবে ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকার রক্ষার সর্বোচ্চ
লক্ষ্য দ্বারা।
সনাতন উদারতাবাদ রাষ্ট্রের কার্যাবলী সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। বেন্থাম, এডাম স্মিথ প্রমুখ এ ধারণার
বশবর্তী হয়েই রাষ্ট্রের কার্যাবলী সীমিত করে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে বিস্তৃত করার পক্ষপাতী ছিলেন। বেন্থাম বলেন, ব্যক্তি
যতক্ষণ পর্যন্ততার ব্যক্তিগত কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হিত সাধনে সমর্থ হবে ততক্ষণ রাষ্ট্রের
হস্তক্ষেপ নি®প্রয়োজন। কারণ রাষ্ট্র তার আইনের দ্বারা যে নিগ্রহ ব্যবস্থা চালু রাখে তা’ অশুভ। এডাম
স্মিথ-এর মতে, প্রতিরক্ষা, অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা সংরক্ষণ, সর্বপ্রকার অন্যায় ও অত্যাচারের হাত থেকে নাগরিকদের
রক্ষার মত ক্ষেত্র ছাড়া বাদবাকী ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।
আধুনিক উদারতাবাদ
উনবিংশ শতকের শেষদিকে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রভাবে ইউরোপে সাধারণ মানুষের দুঃখদুর্দশা বৃদ্ধি পায়। মুষ্টিমেয়
ধনীলোকের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ জমতে থাকে এবং তা’ আন্দোলনে
রূপ নেয়। এ অবস্থায় সনাতন উদারতাবাদকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার দায়িত্ব নেন জন স্টুয়ার্ট মিল, টি এইচ গ্রীণ ,
ম্যাকাইভার, হ্যারল্ড জে লাস্কি প্রমুখ চিন্তাবিদ। এরা তাঁদের পূর্বসূরীদের সুরে সুর না মিলিয়ে রাষ্ট্রের ভ‚মিকা ও কার্যাবলী
সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তোলার প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপ করেন। তাঁদের এ ভ‚মিকার ফলে আধুনিক উদারতাবাদ
ইতিবাচক উদারতাবাদ নামে পরিচিত হয়।
এ ধারণার অন্যতম লেখক ও চিন্তাবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল-এর মতে, রাষ্ট্র কেবল ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে সৃষ্ট
প্রতিবন্ধকতা দূর করেই থেমে যাবে না সেই সাথে মানবকল্যাণে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এ সবের মধ্যে রয়েছে
সর্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, একচেটিয়া কারবার নিয়ন্ত্রণ, কাজের
সময়সীমা নির্ধারণ ইত্যাদি। এসব হ’ল মানুষের আর্থ-কেন্দ্রিক কার্যাবলী। তবে রাষ্ট্র কিছুতেই মানুষের আত্মকেন্দ্রিক
কার্যাবলীতে হস্তক্ষেপ করবে না।
টি এইচ গ্রীন রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও ব্যক্তির স্বাধীনতার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেন। তাঁর মতে, ব্যক্তির নৈতিক
বিকাশের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলে সেগুলো বৈধ হবে। তবে যে রাষ্ট্র মানুষের নৈতিক বিকাশের দায়িত্ব
পালনে ব্যর্থ হয় তার বিরোধিতা করার অধিকার নাগরিকের রয়েছে।
ম্যাকাইভার, লাস্কি, বার্কার প্রমুখ আধুনিক উদারতাবাদী বহুত্ববাদী ভঙ্গিমায় রাষ্ট্রকে দেখতে চেষ্টা করেছেন। এরা
দেখেছেন যে, সমাজে রাষ্ট্র ছাড়াও রয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। এ সব প্রতিষ্ঠান এমন স্বাধীন
যে তাতে রাষ্ট্র সাধারণত হস্তক্ষেপ করে না। তবে রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তি এবং এ সব প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক বৈরিতার নয়, বরং
সমন্বয়ের। একটি অপরটির সম্পূরক ও পরিপূরক।
উদারতাবাদের সংকট
উদারতাবাদের জয়গানে বিশ্ব যখন মুখর ঠিক তখনই কার্ল মার্কসের সাম্যবাদী চিন্তাধারা রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার ভিত্তিমূলে
প্রচন্ড আঘাত হানে। ১৯১৭ সালে এই মতবাদের ভাবধারায় উজ্জীবিত হয়ে রাশিয়ায় লেনিনের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক
বিপ্লব সাধিত হলে উদারতাবাদের সংকট দেখা দেয়। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সংকট ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শের জনপ্রিয়তা
ক্রমশঃ বৃদ্ধিতে উদারতাবাদ গ্রহণযোগ্যতা হারায়। এ প্রতিক‚ল অবস্থায় উদারতাবাদকে রক্ষা করার জন্য গৃহীত হয়
জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র -এর আদর্শ। এ রাষ্ট্র জনকল্যাণে পূর্বের তুলনায় আরো বেশি উদ্যোগ গ্রহণ
করে। পাশাপাশি মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রচলন, শিল্প ও বাণিজ্যের জাতীয়করণ, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ,
গতিশীল কর ব্যবস্থা প্রবর্তন ইত্যাদির ঘোষণা উদারতাবাদে নতুন মাত্রা ও গতি যোগ করে। প্রায় সত্তর বছর পর
সমাজতন্ত্রের দূর্গ বলে কথিত সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়া, পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতন, ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান,
একমেরু বিশ্বব্যবস্থা ও বিশ্বায়নের ধারণা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গণতন্ত্রের জোয়ার উদারতাবাদকে নতুন করে
চাঙ্গা করেছে। অর্থনীতিতে মুক্ত বাজার, গ্যাট, সাপটা, নাফটা ইত্যাদির মত বাণিজ্যিক চুক্তি, রাজনৈতিক ক‚টনীতির
পরিবর্তে অর্থনৈতিক ক‚টনীতির প্রচলন, আনবিক চুল্লী ও অস্ত্রশস্ত্রতৈরীর ব্যাপারে বিশ্ব পরিবেশবাদী আন্দোলন
উদারতাবাদকে পূনর্জন্ম দান করেছে। বলা যায়, বর্তমান বিশ্ব উদারতাবাদেরই জয়গানে মুখর।
সমালোচনা
উদারতাবাদ গণতন্ত্রের সমর্থক; স্বাধীনতা, সাম্য, মৈত্রী, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের পরিচায়ক বলে অভিনন্দিত হলেও
এর বিরুদ্ধে সমালোচনাও কম হয় নি। এগুলো নি¤েœআলোচনা করা হ’ল।
উদারতাবাদ বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে এর প্রবক্তারা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অবাধ অর্থনীতির যে কথা বলেছেন তা’ ছিল
প্রকৃতপক্ষে ধনিক পুঁজিপতি শ্রেণীর স্বার্থের অনুক‚ল। সাধারণ মানুষের দুঃখকষ্ট, দৈন্য ,মানুষে-মানুষে বিরাজমান অসাম্য
- বৈষম্য, মানুষ হয়ে মানুষকে শোষণ - নির্যাতন এসব প্রতিরোধে উদারতাবাদ নীরব।
এ মতবাদে স্ববিরোধিতা লক্ষ্য করা যায়। এতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হয়েছে। অথচ ব্যক্তি স্বাধীনতার
কথা বলে সেই কর্তৃত্বকে সীমিত করার দাবীও জানান হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এটা পুঁজিবাদকে রক্ষা করারই কৌশল বলা
যায়। কারণ পুঁজিপতিদের সম্পদ সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে একদিকে স্বীকার করে অন্যদিকে পুঁজিপতিদের শোষণকে
অবাধ করার জন্য এ কর্তৃত্বকে সীমিত করার ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়েছে।
আধুনিক উদারতাবাদ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের জনগণের জন্য যে পরিকল্পনা পেশ করেছে - তাও প্রকৃতপক্ষে ব্যর্থ। এ প্রসঙ্গে
মার্কসবাদীদের মতে, পুঁজিবাদী শোষণ অব্যাহত রেখে সমাজ থেকে, বঞ্চনা, অসাম্য ও দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়। আর
এগুলো দূর করাই কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মৌলিক দাবী। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণার প্রবর্তন প্রকৃতপক্ষে সমাজতন্ত্রের
অব্যাহত জনপ্রিয়তার মোকাবেলায় এক ধরনের আপোষ ফর্মূলা।
সারকথা
অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তে¡ও উদারতাবাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে গণতন্ত্রের সমর্থক হিসেবে পরিচিতি লাভ।
সামন্ততন্ত্রের দানবকে প্রতিহত করে বিশ্বে সাম্য, মৈত্রী ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের জন্ম দিয়েছে এই মতবাদ। ফরাসী বিপ্লবে এই
মতবাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব ঐতিহাসিক সত্য। এই মতবাদ ব্যক্তি স্বাধীনতা সমুন্নতকরণ ও রাষ্ট্রীয় স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদী ভ‚মিকা গ্রহণ করে মানুষের মর্যাদা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার যে প্রয়াস পায়।
সঠিক উত্তর লিখুন।
১. শব্দগত অর্থে উদারতাবাদ কি ?
ক. আধুনিক রাষ্ট্রদর্শন;
খ. স্বাধীনতার মতবাদ;
গ. গণতন্ত্রের মতবাদ;
ঘ. অধিকারের মতবাদ।
২. উদারতাবাদের উদ্দেশ্য কি?
ক. রাষ্ট্রকে সীমাহীন ক্ষমতা প্রদান;
খ. রাষ্ট্রকে উৎখাত;
গ. রাষ্ট্রের সীমা নির্ধারণ;
ঘ. রাষ্ট্রের কার্যাবলী সীমিতকরণ।
৩. উদারতাবাদ কি ধরনের মতবাদ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ?
ক. বিপ্লবী মতবাদ;
খ. বুদ্ধিবৃত্তিক মতবাদ;
গ. নৈতিক আন্দোলন;
ঘ. সংস্কার আন্দোলন।
সঠিক উত্তর : ১.খ ২.ঘ ৩.গ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. উদারতাবাদ কি?
২. কখন উদারতাবাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল?
৩. উদারতাবাদ ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক কিরূপ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. উদারতাবাদ বলতে আপনি কি বুঝেন ? উদারতাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২. উদারতাবাদ কয় প্রকার ? আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]