অষ্টাদশ শতকে যে রাজনৈতিক মতবাদ উনবিংশ শতকে প্রাধান্য বিস্তারে অন্যসব মতবাদকে ছাড়িয়ে যায় তা’ হ’ল
উপযোগবাদ। যে মতবাদে দেশের রাষ্ট্র ও সরকার, আইন ও আইনসভা, নীতি ও নৈতিকতা, শান্তিও কারাগার ইত্যাদি
সবকিছুরই সংস্কার সাধনের মাধ্যমে মানবকল্যাণের উপযোগী করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয় তাই উপযোগবাদ নামে
পরিচিত। উপযোগবাদে রাষ্ট্র ও বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বক্তব্যের অবতারণা করা হলেও চ‚ড়ান্তবিচারে এটি
কোন রাজনৈতিক মতবাদ ছিল না। এটিকে বরং নীতিশাস্ত্রসম্পর্কিত মতবাদ বললেই যথার্থ হবে। কারণ এ মতবাদের
মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের প্রকৃতি ও অভিপ্রায়ের সঠিক ব্যাখ্যা দেয়া এবং নৈতিক বিচারের মান নির্ধারণ করা। অর্থনীতি ও
আইনশাস্ত্রের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রেও এ মতবাদকে পুরাপুরি কাজে লাগান হয়েছে। উপযোগবাদ বিশেষ কোন দার্শনিকের
একক চিন্তাসঞ্জাত মতবাদ নয় বরং কয়েকজন চিন্তাবিদের নিবিঢ় অনুধ্যান ও চিন্তাধারার সমন্বিত ফসল। এ সব চিন্তাবিদের
মধ্যে রয়েছেন জেরেমী বেনথাম, জেমস মিল ও জন স্টুয়ার্ট মিল। এ তিন মূল প্রবক্তার অনুগামী হয়েছেন জর্জ গ্রোট,
জন অস্টিন, ম্যালথাস, এডাম স্মিথ, রিকার্ডো প্রমুখ চিন্তাশীলগণ। এদের মধ্যে বেনথাম, জেমস মিল ও জন স্টুয়ার্ট
মিল- এর উপযোগবাদী চিন্তাধারাই হবে আলোচনার কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু। এরা প্রত্যেকেই ব্যক্তি মানুষের কল্যাণের চিন্তাকে
সামনে রেখে উপযোগবাদের প্রাসাদ নির্মাণ করেন।
বেনথামের উপযোগবাদ (১৭৪৮-১৮৩৩)
প্রথমেই একথা বলে নেয়া ভাল যে, বেনথাম উপযোগবাদের প্রবর্তক নন। বরং তিনি ছিলেন এর বলিষ্ঠ উপস্থাপক, সুস্পষ্ট
ব্যাখ্যাকার। উনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে যখন ব্যবসায়ী শ্রেণী শিল্পপতি শ্রেণীতে রূপান্তরিত হবার মধ্যে দিয়ে বাণিজ্য
ও শিল্প-পুঁজিবাদের প্রসার ঘটছিল, সে সময় তিনি তার মতামত প্রদানে এগিয়ে আসেন।
উপযোগিতার নীতি
বেনথাম রাষ্ট্র, সরকার, নৈতিকতা, আইন প্রণয়ন প্রভৃতি ব্যাপারে বক্তব্য রাখার ক্ষেত্রে যে নীতিকে উপজীব্য করেছেন
তা হ’ল উপযোগিতার নীতি (চৎরহপরঢ়ষব ড়ভ টঃরষরঃু)। এ নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেনথাম নিজেই বলেন যে ,
উপযোগিতার নীতি হচ্ছে সেই নীতি যা’ সংশ্লিষ্ট পক্ষের সুখ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনুক‚ল বা প্রতিক‚ল প্রবণতার ভিত্তিতে যাবতীয়
কাজের অনুমোদন দান করে। অন্যভাবে বললে, যে নীতি সুখ অন্বেষণকে ত্বরান্বিত বা ব্যাহত করে তাই উপযোগিতার
নীতি।’ রাষ্ট্রশাসন ও বিচার সম্পাদনে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বেনথাম এই নীতির প্রয়োজনীয়তার উপর
অত্যন্তজোর দেন। তাঁর মতে আইন প্রণয়নের মূল ভিত্তি হবে এর উপযোগিতা। এক্ষেত্রে দেখতে হবে যে, প্রণীতব্য
আইন অধিকাংশ লোকের জন্য আনন্দদায়ক হবে কিনা। মুষ্টিমেয় লোকের স্বার্থে প্রণীত আইনকে এ পর্যায়ে তিনি
অনুপযোগী বলে চিহ্নিত করেন। এ প্রসংগে তিনি বলেন, অর্থাৎ “সত্য ও মিথ্যা পরিমাপের প্রধান সূত্রই হ’ল সর্বাধিক সংখ্যকের
সর্বাধিক সুখ।”
উপযোগবাদ
বেনথামের উপযোগবাদের মূল কথা হচ্ছে ‘ আনন্দ বা সুখ অন্বেষণই ব্যক্তির আকাংখার প্রথম সোপান। ব্যক্তি তার
আকাঙ্খা বা বাসনা (ফবংরৎব) এর পক্ষের কাজগুলো করতে এবং বিপক্ষের কাজগুলোকে বর্জন করতে চায়। কিন্তু সমস্যা
এই যে, প্রতিটি মানুষ যেহেতু আলাদা এবং তাদের প্রকৃতিও ভিন্ন তাই তাদের আকাাঙ্খার মধ্যে ভিন্নতা ও বহুমাত্রিকতা
রয়েছে। কোন সরকারের পক্ষেই এ ভিন্নমাত্রিক আকাঙ্খা পূর্ণ করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের
আকাঙ্খা বা বাসনাকেই যথার্থ বাসনা ধরে নিতে হবে এবং এই বাসনা পূরণ করাই হবে সরকারের লক্ষ্য। তার এ তত্ত¡
বিশ্লেষণে যা বেরিয়ে আসে তা’ হল ‘সর্বাধিক সংখ্যক লোকের সর্বাধিক সুখ’
সুখ ও দুঃখনীতির ব্যাখ্যা
বেনথামের মতে, শাসনব্যবস্থা, সার্বভৌম ক্ষমতা ও আইনের মূল্য বিচার করতে হবে সর্বাধিক সুখনীতির মানদন্ডে। এ
গুলো যদি মানুষের সুখের চেযে বেদনাকেই বেশি বৃদ্ধি করে তবে তা’ বর্জন করা অথবা সংস্কার করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে
তিনি বলেন, “প্রকৃতি মানুষকে আনন্দ ও বেদনা নামের দুটি সার্বভৌম শক্তির কর্তৃত্বের অধীনে রেখেছে। এ শক্তিই
আমাদের করণীয় কি তা’ বলে দেয় এবং বর্জনীয় কি তা’ স্থির করে দেয়। একদিকে ন্যায়-অন্যায় এবং অপরদিকে
কার্যকারণ সূত্র তাদের ( আনন্দ ও বেদনার) সিংহাসনের সাথে বাঁধা।” বেনথাম স্পষ্ট করে বলেন যে, সুখ লাভ এবং
দুঃখ হতে পরিত্রাণের চিন্তাই মানুষের কর্মপ্রেরণার মূলে সর্বদা কাজ করে। সুখের অন্য নাম আনন্দ এবং দুঃখের অন্য
নামই হচ্ছে বেদনা।
উপযোগের পরিমাপ
বেনথামের এ মতবাদকে ‘সুখবাদ ’ বলে অভিহিত করা যায়। এ সাথে যৌক্তিকতার সম্পর্ক নেই বলা চলে। বেনথামের
মতে, মিথ্যা বললে যদি কারো আনন্দ বৃদ্ধি পায় তবে তা’ অন্যায় হবে না। আনন্দের কোন উৎকৃষ্টতা ও নিকৃষ্টতা নেই।
কেউ মহাকাব্য পাঠ করে তা’ পেতে পারে। কেউ অশ্লীল চিত্র দেখেও তা’ পেতে পারে। ব্যক্তি শুধু বলবে কোনটি তার
কাছে আনন্দদায়ক। এখানে আনন্দ ও বেদনার মাত্রা পরিমাপের প্রয়োজন নেই। পরিমাণ পরিমাপেরও প্রয়োজন নেই।
ব্যক্তির অবস্থান
আনন্দ ও বেদনা পরিমাপের ক্ষেত্রে বেনথাম গণতান্ত্রিক নীতিকে গ্রহণ করেছেন। এখানে প্রত্যেক ব্যক্তিই একেকটি একক
সত্ত¡া। এ হিসেবে রাজা ও প্রজার সুখভোগের মধ্যে উচ্চ-নীচ প্রভেদ নেই। শুধু বিচার্য হবে সুখভোগে লিপ্ত ব্যক্তিগণ
সংখ্যায় সর্বাধিক কিনা। আইন প্রণেতাগণ আইন প্রণয়নের সময় এ দৃষ্টিভঙ্গিকেই গুরুত্ব দেবেন বলে বেনথাম বিশ্বাস
করতেন। বেনথামের মতে, “ আনন্দ অন্য এমন কোন কিছু অর্জনের সহায়ক মাধ্যম নয় যা সহজাত গুণের অধিকারী।
বস্তুত এ প্রস্তাবনাই হচ্ছে উপযোগবাদের মূল বিবেচ্য বিষয়।”
জেমস মিল (১৭৭৩-১৮৩৬)
উপযোগবাদে জেমস মিল প্রকৃতপক্ষে কোন মৌলিক তত্তে¡র উদ্ভাবক ছিলেন না। তিনি ছিলেন জেরেমী বেনথামের
উপযোগবাদের সমর্থক, সংগঠক ও প্রচারক। তাঁর সমসাময়িককালে বিভিন্নপত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধের ভিত্তিতে তিনি
উপযোগবাদকে একটি শক্তিশালী তত্ত¡ হিসেবে দাঁড় করান। জেমস মিল প্রকৃতপক্ষে উপযোগবাদকে যতœ ও পরিচর্যা করে
একে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেন। তিনি একে ইতিহাস, অর্থনীতি ও মনোবিজ্ঞানের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত
করেন - যা’ বেনথাম করতে পারেন নি।
জেমস মিলের গভীর বিশ্বাস ছিল যে, আইনের সংস্কার সাধিত হবার পূর্বে প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার সাধনের। তিনি
এ ব্যাপারে বেনথামকে অনুপ্রেরণা দান করেন। মিল শিক্ষাকে ব্যক্তির আনন্দ বর্ধনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে
চিহ্নিত করেন। তবে পাশাপাশি শিক্ষার সামাজিক মূল্যও তিনি অনুধাবন করতে সমর্থ হন। তাঁর মতে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে
প্রদত্ত শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে তার মধ্যে সংযম বা আত্ম নিয়ন্ত্রণের গুণকে বিকশিত করা। মানুষ তার আশা আকাক্সক্ষাকে
এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে শিক্ষার মাধ্যমে, যার দ্বারা অন্যের আনন্দ বেদনার সাথে তাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায়। এ
উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মিল শিক্ষাকে বিজ্ঞানের স্তরে উন্নীত করেন এবং একে প্রতিষ্ঠিত করেন মনস্তাত্তি¡ক ভিত্তির উপর।
তার এ উদ্যোগেরই ফল হচ্ছে ‘সংঘমূলক তত্ত¡’ (অংংড়পরধঃরড়হধষ ঃযবড়ৎু) নামক মনোবৈজ্ঞানিক তত্ত¡। এক্ষেত্রে তাঁকে
আমরা বাস্তব উপযোগবাদী বলে আখ্যায়িত করতে পারি। কারণ তিনি তাঁর প্রচেষ্টায় শিক্ষাকে মনোবিজ্ঞানের সাথে
সম্পর্কিত করে তোলেন। তাঁর মতে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হ’ল মানুষের আনন্দ নিশ্চিত করা। কিন্তু এ আনন্দ নির্ভর করে
তার কর্মপ্রয়াসের উপর। আবার মানুষকে কাজে এগিয়ে দেয় তার চিন্তা ও অনুভ‚তি। এ বিচারে শিক্ষা আনন্দের জন্য
অনুকূল চিন্তা ও অনুভ‚তিকে আনন্দের প্রতিক‚ল চিন্তা ও অনুভ‚তির উপর স্থান দেবার ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখে। শিক্ষার সযতœ
ও জ্ঞানোদীপ্ত ব্যবহার দ্বারা মানবজীবন সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলার এ ধারণা প্রমাণের জন্যই তিনি তার পুত্র জন স্টুয়ার্ট
মিলকে শিক্ষাদানের সার্বিক দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করেন। বলা বাহুল্য, স্টুয়ার্ট মিল তার পিতার এ মহান প্রয়াসের যোগ্য
প্রতিদানই দিয়েছিলেন নিজেকে উপযোগবাদের দ্বিতীয় মহানায়কে পরিণত করার মাধ্যমে।
জন স্টুয়ার্ট মিল (১৮০৬-১৮৭৩)
পৈত্রিক সূত্রে জন স্টুয়ার্ট মিল ছিলেন উপযোগবাদী গোষ্ঠী দ্বারা প্রভাবিত। ব্যক্তিকেন্দ্রিক চেতনায় আচ্ছন্ন এ গোষ্ঠীর মূল
ধারণা ছিল
সুখ কামনা ও দুঃখ বর্জনের প্রয়াসই ব্যক্তিজীবনকে চালিত করে ;
আনন্দ ও বেদনার পরিমাণ মাপা যায় ;
সার্বভৌম আইন পরিষদ প্রয়োজনে দন্ড বিধান করে এমন বিধিব্যবস্থা প্রণয়ন করতে পারে যাতে ব্যক্তি সর্বাধিক সুখ
ও স্বল্পতম দুঃখ লাভ করে।
জন স্টুয়ার্ট মিল তাঁর পূর্বসুরীদের এ গাণিতিক সুখবাদকে পাশ কাটিয়ে উপযোগবাদকে এক নতুন রূপে প্রকাশ
করেন। বেনথাম যেখানে সুখের পরিমাণকে অগ্রাধিকার দেন, মিল সেখানে গুরুত্ব দেন সুখের গুণগত দিকের উপর।
বেনথাম সুখের উৎস বিচার করার পক্ষপাতী ছিলেন না। মিল এর বিরোধিতা করতেন। তাঁর মতে, সব সুখের চরিত্র
এক নয়। দর্শন চর্চা করে কেউ সুখ লাভ করে। কেউবা তা’ লাভ করে দুর্নীতির প্রশ্রয় দিয়ে। এক্ষেত্রে যে সুখ ব্যক্তির
নৈতিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি করবে তাই গ্রহণযোগ্য।
প্রকৃতিগতভাবে মিল কিছুটা আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল ছিলেন। সামাজিক বন্ধনের মধ্যে সহমর্মিতার প্রতি তাঁর তীব্র
আকর্ষণ ছিল। এজন্য তিনি জেরেমী বেনথামের প্রাণহীন আনন্দ নীতিকে গ্রহণ করতে পারেন নি। এদিক হতে তিনি
ছিলেন বাস্তবধর্মী দার্শনিক। বেনথামের উপযোগবাদের অবাস্তবতা দূর করে তিনি তা’ দাঁড় করিয়েছিলেন বাস্তবতার
পটভ‚মিতে। একে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানসম্মত রূপ।
মিল- এর উপযোগবাদ
মিল - এর উপযোগবাদ তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ হতে উৎসারিত। তার মতে, অর্থাৎ নিজের উপর এবং নিজ দেহ ও মনের উপর ব্যক্তি সার্বভৌম।
এর পাশাপাশি সে যেমন সমাজবাদী জীব, তেমনি রাষ্ট্রশক্তির সক্রিয় অংশীদার। এ পটভ‚মিকায় ব্যক্তি তার জীবনের জন্য
যে আনন্দ সন্ধান করে ও বেদনাকে এড়াতে চায় তা’ প্রধানত দু’প্রকার: উচ্চতর ও নি¤œতর। তার মতে, উৎসের বিবেচনা
করে অর্থাৎ গুণগত দিককে উপেক্ষা করে কোন আনন্দ যথার্থ বিবেচিত হতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন,
“পরিণত শুকর ছানার চেয়ে অপরিণত মানবসন্তান শ্রেয়। পরিতুষ্ট নির্বোধের চেয়ে শ্রেয় হচ্ছেন অপরিতুষ্ট সক্রেটিস। তার
মূল্য অনেক বেশি। কোন নির্বোধ কোন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করলে নিজ স্বার্থে করে। কিন্তু কোন মানবসন্তান বা
সক্রেটিস ভিন্নমত পোষণ করেন নিজ ও অপর - উভয় দিক বিবেচনা করে।”
ঔচিত্যবোধ বা বাঞ্চনীয়তা ছিল মিল-এর উপযোগবাদের মূল বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে তিনি বেনথামের আকাঙ্খাবোধকে
প্রাধান্য দেন নি। তার মতে, ব্যক্তির কোন কাজ তার অন্তর্নিহিত আনন্দের জন্য কিংবা আনন্দলাভকে ত্বরান্বিত করতে
সহায়ক হিসেবে বাঞ্ছনীয় হতে পারে। মিলের মতে, রাষ্ট্র একটি স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান এবং কেবল রাষ্ট্রেই ব্যক্তি পরিপূর্ণ
সুখ পেতে পারে। বরং রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে ব্যক্তির সুখ বিধান। রাষ্ট্র প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও ব্যক্তির
স্বাধীনতা ও কল্যাণ নিশ্চিত করবে। কারণ ব্যক্তির সুখ তার স্বাধীনতা ও কল্যাণের উপর নির্ভরশীল।
উপযোগবাদের সমালোচনা
বেনথামের উপযোগবাদ: ডবিøউ টি জোনস্ - এর মতে, বেনথামের উপযোগবাদ হলো:
দ্ব্যর্থবোধক;
অপ্রচুর ও
প্রয়োগের অযোগ্য।
বেনথাম তাঁর আলোচনায় উপযোগিতার নীতির জন্য সঠিকতা, সুস্পষ্টতা ও অভিপ্রায়ের ব্যাখ্যাকে শর্ত নির্ধারণ করলেও
নিজ মতের ক্ষেত্রে এসব শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি অভিপ্রায়কে ‘ নৈতিক পরিমাপ’ দ্বারা পরিমাপযোগ্য হতে
হবে বলে যে ঘোষণা তিনি দিয়েছেন তা’ পূরণে নিজেই ব্যর্থ হয়েছেন।
‘সর্বাধিক সংখ্যক লোক-এর সর্বাধিক সুখ’ নীতি বেনথামীয় উপযোগিতার মূল বক্তব্য। কিন্তুবাস্তবে এর প্রতিফলন
অনিশ্চিত। কারণ সর্বাধিক সংখ্যক লোক ও সর্বাধিক সুখ - এর একত্র অবস্থান একই সাথে সম্ভব নয়।
‘মানুষের আনন্দ অন্বেষণ করা উচিত’ - বেনথামের এ মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মানুষ আনন্দ অন্বেষণের জন্য ব্যস্ত
থাকতে পারে না। বরং সে তার জীবনের পূর্ণতা অর্জনের জন্য কাজ করে। এই কাজে সাফল্য তাকে যেমন আনন্দ দেয়
তেমনি এর ব্যর্থতাও তার জন্য দুঃখের কারণ হয়। এ দুটোকে মেনে নিয়েই ব্যক্তি সম্মুখে অগ্রসর হয়। শুধু আনন্দ লাভের
অভিপ্রায় থাকলে ব্যর্থতা ব্যক্তিকে দমিয়ে দিতে পারে।
আনন্দ ও বেদনা পরিমাপের জন্য বেনথাম যে নৈতিকতা নির্ধারণ করেছেন তা’ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এ দুটিই মনোগত
অনুভ‚তি। গাণিতিকভাবে এর পরিমাপ করা যায় না।
বেনথাম আনন্দ ও বেদনার গুণগত দিক অস্বীকার করে এবং পরিমাণগত দিককে অগ্রাধিকার দিয়ে মূলত মানুষকে পশুর
স্তরে নামিয়ে এনেছেন। তার এ যুক্তি সচেতন মানুষ গ্রহণ করতে পারে না।
বিশপ বাটলার বেনথামের উপযোগবাদের সমালোচনা করে বলেন যে, শুধু আনন্দলাভের বাসনা মানব কর্মপ্রয়াসের মূল
উৎস হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে মানুষ একটি অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করে। এ কাজে সফলতা তাকে যে
আনন্দ দেয় তা’ পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ ও মূল নয়।
জনস্টুয়ার্ট মিল উপযোগবাদের মৌলিক কোন বিশ্লেষণ করেন নি। তিনি তার পূর্বসুরী বেনথামের উপযোগবাদে বাস্তবধর্মী,
কালোপযোগী ও সংশোধিত মাত্রা যুক্ত করেছেন মাত্র।
বেনথাম যতটা সুস্পষ্ট ও সমন্বিতভাবে উপযোগবাদকে উপস্থাপন করেছেন মিল তা’ পারেন নি। মিল - এর উপযোগবাদ
নিশ্চিত ও দ্ব্যর্থহীন নয়। অবশ্য এজন্য আমরা তার দীক্ষাগুরু পিতার কঠোর শাসন ও অভিভাবকত্বকে দায়ী করতে
পারি।
সারকথা
উনবিংশ শতকে সমাজতন্ত্রনামে এক নতুন ও বিপ্লবী মতবাদ সাড়া জাগানোর ফলে উপযোগবাদের প্রভা কিছুটা ¤øান
হয়ে যায়। ব্যক্তির একচেটিয়া সুখের তত্ত¡ সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনের বেদীমূলে নিজেকে উৎসর্গ করে। কিন্তু সম্প্রতি
সমাজতন্ত্রের পতনের পর এ মতবাদ পুনরায় মানবসমাজে তার প্রকাশ ঘটাচ্ছে বলে মনে হয়। তত্ত¡ হিসেবে উপযোগবাদের
সমালোচনা বা সীমাবদ্ধতা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তা’ সত্তে¡ও বলা যায় যে, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন প্রণেতাগণ
যে কোন আইনের সম্ভাব্য ফলাফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বেনথামের ‘ নৈতিক পরিমাপ’ পদ্ধতিকে
গ্রহণ করতে পারেন। কাজেই তত্ত¡ হিসেবে উপযোগবাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব না থাকলেও বাস্তব গুরুত্ব একেবারেই
নিঃশেষ হয় নি। কিংবা ভবিষ্যতেও হবে না বলে মনে করা যায়।
সঠিক উত্তর লিখুন।
১. উপযোগবাদ প্রথম কার লেখায় অভিব্যক্তি লাভ করে ?
ক. রিকার্ডো;
খ. স্মীথ;
গ. হিউম;
ঘ. গার্নার।
২. বেনথাম কোন্ শতকে তাঁর উপযোগবাদী চিন্তাধারা উপস্থাপন করেন ?
ক. ষোল;
খ. সতের;
গ. আঠারো;
ঘ. উনিশ।
৩. বেনথামের উপযোগবাদ অন্য কোন্ নামে পরিচিত ?
ক. মরমীবাদ;
খ. সুখবাদ;
গ. দুঃখবাদ;
ঘ. লোকায়তবাদ।
সঠিক উত্তর ঃ ১. গ ২. ঘ ৩. খ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. উপযোগবাদী দার্শনিকদের নাম উল্লেখ করুন।
২. উযোগবাদ কোন শতকের মতবাদ?
৩. সর্বাধিক সংখ্যক লোকের সুখ বলতে আপনি কি বুঝেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. জেরেমী বেনথামের উপযোগবাদ সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২. উপযোগবাদ সম্পর্কে জন স্টুয়ার্ট মিল - এর বক্তব্য আলোচনা করুন।
৩. উপযোগবাদের মূল্যায়ন করুন।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র