পাশ্চাত্য রাজনৈতিক দর্শনে সক্রেটিসের অবদান মূল্যায়ন করুন।

সফিস্ট সম্প্রদায়
সফিস্টরা হলেন প্রাচীন গ্রীসের আদি দার্শনিকদের একটি স্বাধীন গোষ্ঠী, যাঁরা ছিলেন বক্তৃতা
চর্চা, ভাষার অলঙ্করণ ও দর্শনশাস্ত্র প্রভৃতির সিদ্ধহস্ত শিক্ষক। প্রজ্ঞার অধিকারী এ সব শিক্ষক
পার্থিব বিষয়াদির সৃষ্টি রসহস্য জানতে গিয়ে মানব প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনায় অবতীর্ণ হন।
কখনো খোলা মাঠে, কখনো হাট-বাজারে কখনো বা রাস্তার পাশে কিছু মানুষ জড়ো করে
তাঁরা বক্তৃতা করতেন। এদের জ্ঞানানুশীলনে ও রাষ্ট্রচিন্তায় ব্যক্তি মানুষের আলোচনা প্রধান্য
পেত।
খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে অধিকাংশ সফিস্টদের বসবাস ছিল এথেন্সে। নাগরিকতার দৃষ্টিকোণ
থেকে এঁরা ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদাসম্পন্ন। বিদেশীদের মতো সামাজিক সমানাধিকার
ভোগ করলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন বৈষম্যের শিকার। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায়
প্রচলিত এ বৈষম্যনীতি তাঁদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করে।
প্রাচীন গ্রীসের সফিস্টরা পেশাদারী শিক্ষকদের মর্যাদা ভোগ করতেন। আধুনিক যুগের
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো তাঁরা যুব বয়সের শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন ভাবধারা প্রচার
এবং জ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রবাহ ছড়িয়ে দেয়ার কাজে মগ্ন থাকতেন। সফিস্টদের কাছ থেকে
পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শিক্ষা সমাপনান্তে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে যেমন : শাসন,
বিচার ও আইন প্রভৃতি পেশায় যোগ দিত। খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর শুরু থেকে এথেন্সে
গণতান্ত্রিক নীতিমালা প্রণয়ন ও সেগুলোর বাস্তবায়নে উপরোক্ত পেশাগুলো তাৎপর্যবহ হয়ে
উঠে। সফিস্টগণ তরুণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পেশার জন্যে উপযোগী সুবক্তা ও প্রখর তর্কজ্ঞান
সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতেন। সফিস্টরা যুবকদের বিতর্কের কলাকৌশল শেখানোর পাশাপাশি
তাদেরকে রাষ্ট্র ও পরিবার পরিচালনার কৌশল শেখাতেন। সফিস্টদের সার্বিক পেশাগত
ভ‚মিকার জন্য পরবর্তী রাষ্ট্র দার্শনিকদের কেউ কেউ এদের ‘আধা অধ্যাপক ও আধা সাংবাদিক’
হিসেবে অভিহিত করেন। অবশ্য, সমকালীন জনমানুষের কাছে এঁরা ‘জ্ঞানী লোক’ হিসেবে
চিহ্নিত ছিলেন। তবে, দার্শনিক সক্রেটিস এদেরকে ‘জ্ঞানী’ বলতে আগ্রহী ছিলেন না।
সক্রেটিসের দৃষ্টিতে ‘জ্ঞানী’ হলেন ঈশ্বর আর সফিস্টরা ছিলেন বড়জোর ‘জ্ঞানের পূঁজারী’।
সফিস্টদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ ছিল নি¤œরূপ
সফিস্টরা কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সদস্য ছিলেন না এবং এদের মাঝে কোন সাধারণ
দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল না।
সফিস্টদের অনেকেই নিত্যদিন শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন, আবার এদের কেউ কেউ সচেষ্ট
থাকতেন ধারাবাহিকভাবে কোন সামাজিক দর্শন বিকাশের কাজে।
কিছু সফিস্ট ছিলেন ব্যাকরণবিদ এবং ভাষার সৃষ্টি রহস্য নিয়ে প্রশ্নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ
আলোচনায় নিমগ্ন হতেন।
কোন কোন সফিস্ট যুক্তিবিদ্যা বিশারদ
সফিস্টদের কেউ কেউ রাজনীতি ও নৈতিকতার মতো বিষয়াদি নিয়ে গভীর যুক্তি-তর্কে
অবতীর্ণ হতেন।
সফিস্টরা সাধারণত মানবতাবাদ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন, যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মানুষ
সম্পর্কে কৌশলী চিন্তা।
সফিস্টরা যে-কোন বিষয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্নের অবতারণা করে যুক্তিশীল সিদ্ধান্তে উপনীত
হতেন। রাজনৈতিক নেতা অথবা ধর্মীয় পুরোহিতদের সামনে যুক্তিনির্ভরভাবে নির্ভয়ে কথা
বলতেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সফিস্টরা ছিলেন দু‘ভাগে বিভক্ত। একদল বিশ্বাস করতেন
প্রকৃতিগতভাগে মানুষ সবাই সমান এবং অসমতা তৈরী হয়েছে মানুষের তৈরী আইনের মাধ্যমে
দুর্বলদের শাসন ও শৃঙ্খলিত করার জন্যে। দ্বিতীয় দলটি মনে করতেন, মানুষ প্রকৃতিগতভাবে
অসমান এবং নৈতিকতা হল সবলদের দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্যে দুর্বলদের আবিষ্কার। পূণ্যের
দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সফিস্টরা মানুষকে সার্থক নাগরিক ও সুযোগ্য সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার
চেষ্টা চালান।
সফিস্টরা ছিলেন প্রচলিত দাসপ্রথার বিরোধী এবং গ্রীকদের বর্ণবাদী চিন্তার প্রতিপক্ষ। তাঁরা
সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা ও অধিকারের প্রবক্তা হিসেবে কাজ করেন। তাঁদের সবচে গুরুত্বপূর্ণ
অবদান হলো দর্শন শাস্ত্রের বিকাশ সাধন; যাতে পদার্থবিদ্যা, অধিবিদ্যা, নৈতিকতা, রাজনীতি
ও জ্ঞানতত্ত¡ অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রাচীন গ্রীসের প্রখ্যাত সফিস্টদের মাঝে প্রোটোগোরাস, এন্টিফন,
ক্যালিকেলস্, থ্রেসিমেকাস, গর্জিয়াস প্রভৃতি নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। সাধারণ নাগরিক বা
রাজনীতিজ্ঞ হিসেবে কিভাবে সফলতা অর্জন করা যায় প্রোটাগোরাস তা-ই প্রচার করে বেড়ান।
গর্জিয়াস ছন্দ ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সফিস্টগণ রাজনীতিকে একটি বাস্তবমুখী শাস্ত্রে পরিণত করেন। সফিস্টদের প্রতি প্লেটো
অনেকটা খড়গহস্থ হলেও তিনি তাঁর অনেক ধ্যান-ধারণা সফিস্টদের কাছ থেকে গ্রহণ করেন।
সক্রেটিসের দর্শন ও লেখায় অনেক বিষয় যেমন; ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ সফিস্টদের সাধারণ শিক্ষা
থেকে আহরিত যা প্রকারান্তরে এ বিষয়ে প্লেটোর ধারণাকে পরিশীলিত করেছে।
সক্রেটিস (৪৭০ খ্রি.পূ. - ৩৯৯ খ্রি. পূ.)
ইউরোপীয় সভ্যতার আদি প্রাণপুরুষ, দর্শনের আদি রূপকার সক্রেটিস খ্রীষ্টপূর্ব ৪৬৯ সালে
গ্রীসের অন্তর্গত এথেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রী আর মাতা
ছিলেন পেশাগত ধাত্রী। মায়ের পেশার অনুসরণে নতুন নতুন চিন্তার জন্মদানকে ত্বরান্বিত
করতেন সক্রেটিস। এথেন্সের অপরাপর যুবকদের মতো প্রথাগত শিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি।
পুরনো ধাঁচের অভিজাততান্ত্রিক শিক্ষা সক্রেটিসের মতো মানুষকে কিছুকালের জন্য একজন
যুদ্ধংদেহী ব্যক্তিতে রূপান্তরিত করে। একজন ভারী অস্ত্রধারী যোদ্ধা হিসেবে তিনি এথেনীয়
সেনাবাহিনীতে যোগাদানপূর্বক কয়েকটি সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। সরকারের
অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও তিনি কাজ করেন কিছু দিন। পয়ষট্টি বছর বয়সে তিনি
কাউন্সিল সদস্যপদ লাভ করেন। তবে, কাউন্সিলের রাষ্ট্রীয় সংবিধান পরিপন্থী কিছু অন্যায়
সিদ্ধান্তের সাথে তিনি দ্বি-মত পোষণ করেন। সে সময়ে এথেন্সে চলছিল একনায়ক ত্রিশের
শাসন। এক পর্যায়ে একনায়ক ত্রিশের সরকারের একটি অন্যায় সিদ্ধান্তকে সাহসিকতার সাথে
তিনি পালনে অস্বীকৃতি জানান।
সক্রেটিসের পারিবারিক জীবন খুব সুখকর ছিল না। স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি মনোযোগী হওয়া তাঁর
হয়ে উঠেনি। অধিকাংশ সময় তিনি শিষ্য পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতেন; যাদের মাঝে যোদ্ধা
থেকে শুরু করে পুরোহিত, শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রীয় কার্যে নিয়োজিত দক্ষ ব্যক্তি প্রভৃতি সব ধরনের
মানুষ অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশেষত তৎকালীন তরুণ সমাজ তাঁর প্রতি দারুনভাবে আকৃষ্ট হয়েছিল।
ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার ভার যাদের উপর অর্পিত হবে সেই যুব সমাজকে আদর্শ, রীতিনীতি ও পরামর্শ দিয়ে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আন্তরিক প্রয়াস চালান
সক্রেটিস। তাঁর শিষ্যদের অন্যতম ছিলেন প্লেটো ও জেনোফোন। অনুসারিদের সাথে
রাজনীতি ও নৈতিকতা বিষয়ক প্রশ্ন নিয়ে গভীর আলোচনায় তিনি নিমগ্ন থাকতেন।
সক্রেটিসকে বলা হয় প্রাশ্চাত্য রাজনৈতিক দর্শনের পিতামহ এবং নীতি শাস্ত্রের পুরোধা। তাঁর
অন্যতম বাণী ছিল ‘সদগুণই জ্ঞান’। তাঁর মতে, জ্ঞান দু‘প্রকার : একটি হলো আপাত জ্ঞান
এবং অপরটি প্রকৃত জ্ঞান। তিনি বলেন, সব মানুষের কর্তব্য হলো সত্য জ্ঞানের সন্ধান করা
এবং তা তারা তখনই আয়ত্ব করতে পারবে যখন তারা নিজেদেরকে জানতে পারবে। জ্ঞানের
মতো সদগুণও দু’প্রকার। এক ধরনের সদগুণ মতামত নির্ভর; অন্যটি সত্য নির্ভর। প্রথমটি
ক্ষণস্থায়ী এবং দ্বিতীয়টি চিরস্থায়ী।
সমকালীন সফিস্টদের তুলনায় সক্রেটিস তাঁর জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।
তিনি বলতেন, ‘আমি একটি বিষয় জানি এবং তা হল আমি কিছুই জানি না।’ প্রশ্নের পর
প্রশ্নোত্থাপনের মাধ্যমে তিনি শিষ্যদের বুঝিয়ে দিতেন একটি বিষয সম্পর্কে তারা কতটা অজ্ঞ।
তাঁর মতে, দর্শনের শুরু হয় আত্মজিজ্ঞাসা দিয়ে (কহড়ি ঃযুংবষভ)। তিনি মনে করতেন
‘পৃথিবীতে মানুষের চাইতে বড় কিছু নেই; আর মানুষের মাঝে আত্মার চাইতে বড় কিছু হয়
না।’ মানুষের কি হওয়া উচিৎ আর কোন গুণের পেছনে ধাবিত হওয়া কর্তব্য এ সব বিষয়
নিয়ে তিনি আলোচনায় অবতীর্ণ হতেন। সদগুণ ও উত্তম রাষ্ট্রের মাঝে যোগসূত্রতা স্থাপনে
তিনি সক্ষম হন। রাষ্ট্রকে তিনি প্রকৃতিগত ও অপরিহার্য মানবিক সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত
করেন।
প্রচলিত অভিজাততান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও যান্ত্রিক শৃঙ্খখলাবোধের প্রতি সক্রেটিস ছিলেন
বীতশ্রদ্ধ। তিনি মনে করতেন, সমাজে স্থায়ী সুখ-স্বাছন্দ্য প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রজ্ঞার
প্রাধান্য থাকা বাঞ্জনীয়। তিনি মনে করতেন, শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির মাঝে যখন যুক্তিশীল
চিন্তা প্রতিষ্ঠিত হবে তখন ব্যক্তি ন্যায়-অন্যায়ের প্রভেদ বুঝতে পারবে এবং আইনের ভয়ভীতি ছাড়াই অন্যায়কে সযতেœ পরিহার করবে। সক্রেটিসের মতে, দর্শনের কাজ হল যুক্তির
মাধ্যমে আত্মশৃঙ্খলা স্থাপন। মিথ্যা ধারণাগুলো বর্জন এবং যুক্তিশীল চিন্তার মাধ্যমে বিকল্প
ধারণা কার্যকর করার বিষয়টি তাঁর দর্শরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
সক্রেটিস তাঁর অনুসারীদের ভ্রান্ত মতামতকে পরাভ‚ত করে সঠিক মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার
জন্য তার্কিক পদ্ধতি গ্রহণ করেন। তিনি প্রতিপক্ষকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে
এমন জায়গায় নিয়ে আসতেন যে তাদের আর তাঁর মতবাদ গ্রহণ করা ছাড়া অপর কোন উপায়
থাকত না। সক্রেটিস তথ্য প্রমাণ ভিত্তিক যুক্তিশীল চিন্তায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বৈজ্ঞানিক
পদ্ধতিতে প্রথমত একটি বিষযের পরীক্ষামূলক অনুমান নিধারণ করতেন। অত:পর বাস্তব
জীবন থেকে উদাহরণ সংগ্রহের মাধ্যমে এর যথার্থতা নির্ণয়ের চেষ্টা করতেন। তার প্রদত্ত
শিক্ষাই ছিল মানুষ প্রকৃত জ্ঞান স্বার্থের উপযোগী হবে না; বরং তা হবে শাশ্বত ও চিরন্তন।
সক্রেটিসের মতে আত্মসম্মানবোধ, নিজের সম্পর্কে জানা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ হল মানুষের
সবচে’ বড় ধর্ম।
সফিস্টরা যে ভাবে সম্মানীর বিনিময়ে তাঁদের ছাত্রদের পার্থিব জীবনের উপযোগী শিক্ষাদান
করতেন, সক্রেটিস একে এথেন্সের প্রচলিত অভিজাততান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পরিপূরক মনে
করতেন। তাঁর মতে, সফিস্টদের শিক্ষা যে অসহিঞ্চু ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের জন্মদান করে তা
সমাজের কাজে লাগে না। শিক্ষার মাধ্যমে যদি আতœ-নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা না যায় তাহলে
এথেন্সে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এমন পরিস্থিতি বিরাজ করবে। সক্রেটিসের সমকালীন এথেন্সের
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আইন দ্বারা পরিচালিত ছিল না বিধায় সেখানে প্রজ্ঞার অধিকারী ও
উচুমানের সদ্গুণ সম্পন্ন লোকদেরই সরকারের প্রশাসনিক কাজে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন বলে
তিনি অভিমত দেন।
সক্রেটিসের কাছে তাঁর স্বদেশের আইন ছিল অত্যন্ত মূল্যবান। আইনকে তিনি শ্রদ্ধা করতেন
অনেকটাই ঐশ্বরিক বিধি- বিধানের মতো। তাঁর কথায়, একমাত্র ন্যায়নীতির লড়াই ছাড়া
কারো আইন ভঙ্গ করা উচিৎ নয়। এথেন্সের যুবকদের বিপথগামী করে তোলা এবং প্রচলিত
ধর্মীয় মতবাদের ভিত্তিকে ভাঙ্গার দায়ে অত্যাচারী ত্রিশের শাসকদের হাতে সক্রেটিসকে
কারাবন্দি কতে হয় এবং বিচারকরা তাঁকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। তাদের জ্ঞানগুরুকে মৃত্যুর
হাত থেকে বাঁচাতে সক্রেটিসের শিষ্যরা তাঁকে কারাগার থেকে পালিয়ে যেতে প্ররোচিত করে।
সক্রেটিস এথেন্সের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তিনি শিষ্যদের অনুরোধ সাড়াদানে
বিরত থাকেন। তাঁর মতে, শাসক এবং শাসিত সবাই আইনের অধীন। সফিস্টরা যদিও
আইনকে শাসকদের দাস হিসেবে দেখতেন, সক্রেটিসের কাছে আইন হল সার্বভৌম মনিব।
আইনকে তিনি সকল নাগরিকের সমবেত ইচ্ছা হিসেবে ব্যক্ত করেন যাতে সবার দায়িত্ব ও
কর্তব্য লিপিবদ্ধ থাকে। তিনি বলেন, আইন মেনে চলা সবার জন্যই মঙ্গলকর।
রাষ্ট্রতত্তে¡র ইতিহাসে সক্রেটিস এক ব্যতিক্রমধর্মী আসন দখল করে আছেন। বিপ্লবী ভাষাধারার
মাধ্যমে এথেনীয় সরকারের ভিতকে তিনি কাঁপিয়ে তুলেছিলেন। তাঁকে কেউ খ্রীষ্টেরও পূর্বেকার
খ্রীষ্টান হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়াস পান। তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক সততার মাধ্যমে তিনি নজির স্থাপন
করে গেছেন যে, ব্যক্তি রাষ্ট্রের আইন নয় বরং যুক্তিশীল চিন্তা দ্বারাই পরিচালিত হবে। দর্শন
শাস্ত্রের তিনিই হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি চিন্তার স্বাধীনতার জন্য খ্রীষ্টপূর্ব ৩৯৯ সালে হেমলক
বিষপানে আতেœাৎসর্গ করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তাঁর এই মহান মৃত্যু জীবিত
সক্রেটিসের চাইতে মৃত সক্রেটিসকে অধিকতর শক্তিশালী দার্শনিকে রূপান্তরিত করেছেন।
সারকথা
খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রীসে সমাজের শাসন কর্তৃপক্ষের সাথে ব্যক্তির সঠিক
সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গ্রীক তার্কিক গোষ্ঠীর চিন্তা-ভাবনার উম্মেষ ঘটে। রাজনীতির
প্রয়োজনে বাগ্মিতা, উপস্থিত বক্তৃতা, কুট-তর্ক, বড় ফাকা বুলি, শ্লেষযুক্ত সরস প্রত্যুত্তর
ইত্যাদি ছন্দ ও শব্দ বিজ্ঞানের অভ‚তপূর্ব শিক্ষার প্রয়োগ সফিস্টদের কাছ থেকেই শুরু।
সক্রেটিস (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৭০-৩৯৯) ছিলেন প্রাচীন গ্রীসের অন্তর্গত এথেন্সের নাগরিক। তিনি
ছিলেন তৎকালীন এথেন্সে প্রচলিত গণতন্ত্রের নামে অজ্ঞ লোকদের শাসনের ঘোর
বিরোধী। তাঁর মতবাদ ছিল ‘সদগুণই জ্ঞান’ এবং অজ্ঞতা, পাপ ও মিথ্যাচারের
সুতিকাগার। অনুমান নির্ভর জ্ঞানের পরিবর্তে বাস্তব ভিত্তিক জ্ঞানের সন্ধানে তিনি তার্কিক
পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তৎকালীন যুবসমাজ তাঁর মতবাদে দারুনভাবে আকৃষ্ট হয়ে উঠে।
প্রচলিত ধর্মীয় ভাবধারার মুলে কুঠারাঘাত করে তিনি যুব সমাককে বিভ্রান্ত করেছেন এই
অভিযোগ এনে গণতন্ত্রী শাসকরা তাঁকে হেমলক বিষপানে আত্মাহুতিদানে বাধ্য করে।
আইনের প্রতি আনুগত্যশীল থেকে চিন্তার স্বাধীনতার এই প্রবক্তা বিচারকদের রায়কে
স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে নেন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। সফিস্ট কারা ছিলেন?
ক) বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি রহস্য ভেদকারী একদল পÐিত;
খ) এথেন্সের নাগরিক;
গ) প্রাচীন গ্রীসের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক;
ঘ) মানব প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনাকারী শিক্ষাবিদ।
২। রাজনৈতিকভাবে সফিস্টরা কয়ভাগে বিভক্ত ছিলেন।
ক) দুই ভাগে;
খ) পাঁচ ভাগে;
গ) তিন ভাগে;
ঘ) কোন ভাগে বিভক্ত ছিলেন না।
৩। সক্রেটিস ছিলেনক) সক্রেটিস আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতি ছিলেন;
খ) সক্রেটিস যুক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন;
গ) সক্রেটিস ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিলেন;
ঘ) সক্রেটিস ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। সফিস্টদের সাথে সক্রেটিসের ধারণাগত পার্থক্য কি?
২। সফিস্টদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য কি ছিল?
৩। সক্রেটিসকে প্রশ্চাত্য চিন্তার পথিকৃত কেন বলা হয়?
৪। সক্রেটিস কেন সমকালীন এথেন্সের গণতন্ত্রের প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন ছিলেন?
৫। কি পদ্ধতিতে সক্রেটিস তাঁর দর্শন প্রচার করেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। রাজনৈতিক দর্শনের বিকাশধারায় সফিস্টদের অবদান কতখানি?
২। পাশ্চাত্য রাজনৈতিক দর্শনে সক্রেটিসের অবদান মূল্যায়ন করুন।
সঠিক উত্তর
১। ক, ২। ক, ৩। খ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]