ধূমপানের ব্যাপারে কোনো Islamic legal verdict বা ফতোয়া কী?

প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ গবেষক ও লেখক ড. ইউসুফ আল-কারযাভী ‘ধূমপান নিষেধ' বলে Islamic legal verdict দিয়েছেন ।
প্রখ্যাত মুফতী মুহাম্মদ আল-হানূতীও ইউসুফ আল কারযাভীর বরাত দিয়ে বলেছেন, “ইসলামে হালাল হারাম বইতে তিনি একে নিষিদ্ধ বলেছেন।” তিনি আরো বলেছেন, ১৮-০৪-২০০০খ্রি. রাতে বিবিসিতে প্রচারিত এক সংবাদে জানলেন, সর্বশেষ গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা তাদের জীবনের শেষদিকে ধূমপান করে থাকে, তাদের স্মরণশক্তি কমে যায়। এছাড়া সচারাচর পরিসংখ্যান এটাই বলে যে, সিগারেটে যে নিকোটিন নামক alkaloid পদার্থ আছে তাতে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান রয়েছে, যা খরগোশের উপর পরীক্ষায় নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে।

প্রশ্ন-১৩০ : মুহতারাম ধূমপান যে নিষেধ, এর অনুকূলে আরো কোনো প্রমাণ আছে কি?
উত্তর : অবশ্যই আছে। ধূমপান যে নিষেধ তার প্রধান প্রমাণ হচ্ছে, যাদের নিকট কুরআন-হাদীস ও Theology-এর জ্ঞান গভীর। অর্থাৎ যারা ইসলামী বিষয়ের পণ্ডিত ব্যক্তি, তারা ধূমপান নিষিদ্ধ মনে

করেন এবং নিজেরাও ধুমপান করেন না। কারণ তারা সবাই জানেন যে এটা শরীরের জন্য নিশ্চিত ক্ষতিকর। আর নিশ্চিত ক্ষতিকর বস্তু খাওয়া বা পান করা বৈধ নয়। তাই ধুমপানও বৈধ নয়। বাংলাদেশে প্রায় ৭০ হাজার গ্রামে প্রায় আনুমানিক পাঁচ লক্ষাধিক মসজিদ রয়েছে। গড়ে ৫-১০টি মসজিদ আছে প্রতি গ্রামে। এই লক্ষ লক্ষ মসজিদের ৫-৬ লক্ষ ইমাম বা খতীব এবং মুয়াজ্জিনের ভিতর কাউকে খুঁজে পাবেন না, যিনি ধূমপান করা শরীআতসম্মত মনে করেন এবং নিজেও করেন। কারণ তাদের নিকট ইসলাম ও কুরআনের জ্ঞান আছে। ধূমপানে নৈতিক দিক বিবেচনা করলে দেখবেন- কোনো সন্তান তার পিতামাতার সামনে ধূমপান করেনা বা করতে সাহস পায় না। কোনো ছাত্র তার শিক্ষকের সামনে ধূমপান করাকে বেয়াদবী মনে করে । এছাড়া শ্বশুর-শাশুড়ি বা এমন বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বীর সামনেও কেউ ধূমপান করার মতো দুঃসাহস করেনা। এর দ্বারা অবশ্যই প্রতীয়মান হয় যে ধূমপান নিষিদ্ধ । ধূমপান যদি নিষিদ্ধ না হতো তাহলে কোনো মুফাসসিরে কুরআন, কুরআনের হাফিয, ক্কারী কিংবা মাওলানা সাহেব ধূমপান করেন না কেনো? তবে অবশ্য ব্যতিক্রম থাকাটা স্বাভাবিক, যার কারণে কোন বস্তু বৈধ হয় না।
Smoking kills

প্রশ্ন-১৩১ : কোনো লেখাপড়া না জানা লোক যদি ধূমপান করেন তাহলে আমরা সাধারণত বুঝে থাকি যে, তিনি ধূমপানের কুফল বা ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে অজ্ঞ। কিন্তু শিক্ষিত কোনো লোক যদি ধূমপান করেন বা ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন অথবা ধূমপান পরিত্যাগ না করেন, তাহলে এর পিছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন?


উত্তর : অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং intelligent প্রশ্ন, যা প্রতিটি মানুষের মাঝেই চিন্তার উদ্রেক করবে। তবে উত্তর কিন্তু সহজ। নিরক্ষর বা অক্ষরজ্ঞানহীন কোনো লোক যদি ধূমপান করেন তাহলে বুঝা যায় যে অজ্ঞতার কারণে তিনি নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ধূমপানের কুফল সম্পর্কে তিনি অজ্ঞ। আর যদি কোনো শিক্ষিত লোক ধূমপান করেন, তাহলে এতে প্রতীয়মান হয় যে তিনি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন বটে, তবে তিনি জ্ঞানী হননি। কারণ যে ব্যক্তি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন তাকে কী কেউ জ্ঞানী লোক বলবে? আর যদি কোনো ডাক্তার বা চিকিৎসক ধূমপান করেন তাহলে বুঝতে হবে তিনি নিজের স্বাস্থ্যের চেয়ে তার রোগীর স্বাস্থ্যকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তিনি ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তার রোগীকে অবহিত করেন এবং prescription বা ব্যবস্থাপত্রে ‘ধূমপান নিষেধ” বা ‘ধূমপান থেকে বিরত থাকুন' কথাটি লিখে দেন। এটি তিনি ভালো করে জেনেই লিখেন। এর পেছনে কারণ হচ্ছে, তিনি রোগীকে সুস্থ করতে পারলে পারিশ্রমিক বা fee পাবেন। আর নিজের চিকিৎসা করলে তো কোনো টাকা-পয়সা পাবেন না ।
সম্মানিত দর্শকমগুলি! আমি বিনয়ের সাথে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই যে যেসব আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত লোক ধূমপান করেন, তারা কেউই বুদ্ধিমান নন। কারণ, একজন সত্যিকার বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশি সচেতন থাকেন। স্বাস্থ্যই সম্পদ, Health is wealth', এই ধ্রুব সত্যটি যিনি মানেন না তাকে কি আপনি বুদ্ধিমান বলবেন? এ প্রসঙ্গে এখানে আমি স্বাস্থ্য, সুস্থতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে কতিপয় হাদীস বর্ণনা করবো।
আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে এক ব্যক্তি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললো, “হে আল্লাহর রসূল! কোন দু'য়া সর্বোত্তম? তিনি বলেন, “তুমি তোমার রবের নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। যদি তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও নিরাপত্তা দান করা হয় (অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং সুস্থতা প্রদান করা হয়) তাহলে তুমি পরম সাফল্য লাভ করলে।” (আত-তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ) ৪০৮ আওসাত ইবনে ইসমাঈল আল-বাজালী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর তিনি আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছেন “তোমরা আল্লাহ্র নিকট সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করো। কেননা ঈমানের পর কাউকে সুস্থতা ও নিরাপত্তার চেয়ে অধিক উত্তম (সম্পদ) আর কিছু দান করা হয়নি।” (ইবনে মাজাহ) ৪০৯
বস্তুত মানুষের সুস্থ দেহ থাকা মানে সমগ্র পৃথিবী তার হাতের মুঠোর মধ্যে থাকার সমান । উদাহরণস্বরূপ, একজনের নিকট ১ কোটি টাকা আছে। কিন্তু তিনি সর্বদা অসুস্থ। অপরজনের নিকট মাত্র ১০০০ টাকা আছে। তবে তিনি সর্বদা সুস্থ থেকে দৈনন্দিন কাজকর্ম করে যাচ্ছেন। কে বেশি সুখী? নিশ্চয়ই যিনি সুস্থ তিনিই। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, “হে আব্বাস! হে আল্লাহর রসূলের চাচা! আল্লাহ্র কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা প্রার্থনা করুন।” (আত-তিরমিযী) ৪১
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত এক সাহাবী রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রসূল! কোন দু'য়া সর্বোত্তম? রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন; “তেমার প্রতিপালকের নিকট সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কামনা করো।” লোকটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে এসে একই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ জবাব দিলেন এবং বললেন, “ভুমি দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা লাভ করলেই সফলকাম হবে।” (আত-তিরমিযী) ৪১১
তিরমিযী শরীফের আরো একটি হাদীস বর্ণনা করছি। আল্লাহ্র রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করা (অর্থাৎ আল্লাহ্র কাছে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য দু'য়া) ছাড়া আর কোনো উত্তম দু'য়া নেই।" (আত-তিরমিযী) ৪১২
"No supplication is more pleasing, more rewarding, more favourite and more important than a request for good health." (At-Tirmizi) 412
সালামা ইবনে উবায়দুল্লাহ ইবনে মুহসিন আল খিতমী রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে মিহসান আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যুষে সুস্থতা নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ ঘুম থেকে ওঠে, বাসায় নিরাপদে থাকে, সারাদিনের খাদ্য- সামগ্রী তার নিকট মওজুদ থাকে, তাকে সমগ্র পৃথিবী দান করা হয়েছে।” (আত-তিরমিযী) ৪১৩ আধুনিক বিশ্ব আল্লাহ্র রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এসব বাণীরই প্রতিধ্বনি করছে মাত্র। তারা যখন বলেন, 'স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল', এতে নতুনত্ব কিছুই নেই।
সম্মানিত ভাই ও বোনেরা! স্বাস্থ্য ও তার গুরুত্ব সম্পর্কিত আল্লাহ্র রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এতোগুলো হাদীস থাকা সত্ত্বেও আমি ভেবে পাই না যে কীভাবে একজন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলিম ধূমপানে আসক্ত হতে পারেন। তার কাছে ধূমপানের হাজারো কুফল ও জটিল জটিল ব্যাধির তথ্য থাকা সত্ত্বেও কেনো তিনি ধূমপান থেকে বিরত থাকতে পারেননা? এর উত্তর সম্ভবত এটিই যে তিনি রোগ নিরাময়কে রোগ প্রতিরোধের চেয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ তার নিকট গ্রহণযোগ্য concept হচ্ছে ‘Cure is better than prevention'. অথচ সারা বিশ্বব্যাপী উৎকৃষ্ট slogan হচ্ছে 'Prevention is better than cure'.
এজন্যই আমরা দেখতে পাই, ধূমপায়ী যখন বার্ধক্যে উপনীত হয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন, তখন রোগ থেকে বাঁচার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তখন বৃদ্ধ বয়সে সিঙ্গাপুর, মাদ্রাজ, ব্যাংকক, আমেরিকা, ইউরোপ ছুটে যান চিকিৎসার জন্য। তারা কেউই এ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে বা মরতে চাননা । কবি শামসুর রাহমান যখন মৃত্যু পথযাত্রী, তখনও তাকে সিঙ্গাপুর নেয়ার জন্য প্রায় এক প্রকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু পরে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]