মদের ব্যবসার সাথে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের ব্যাপারে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছেন?

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের সাথে জড়িত ১০ ধরনের মানুষকে লা'নত (অভিসম্পাত) করেছেন । তারা হচ্ছে :
১. যে উৎস থেকে মদ আহরণ করে (one who extracts wine );
২. যে মদ তৈরি করে (one who manufactures wine );
৩. যে মদ পান করে (one who drinks wine);
৪. যে মদ পান করায় ( one who makes one drink wine);
৫. যে মদ আমদানি করে (one who imports wine);
৬. যার জন্য মদ আমদানি করা হয় (one for whom wine is imported );
৭. যে মদ বিক্রয় করে (one who sells wine );
৮. যে মদ ক্রয় করে (one who purchases wine );
৯. যে মদ সরবরাহ করে (one who supplies wine to others) এবং
১০. যে মদের ব্যবসার লভ্যাংশ গ্রহণ করে (one who receives profit from wine business)। (ইবনে মাজাহ)
ইবনে মাজাহ শরীফে আরেকটি হাদীস উদ্ধৃত আছে যা বর্ণনা করেছেন ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু । রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শরাবের উপর দশভাবে অভিসম্পাত করা হয়েছে। স্বয়ং শরাব (অভিশপ্ত), শরাব উৎপাদক, যে তা উৎপাদন করায়, তার বিক্রেতা, তার ক্রেতা, তার বহনকারী, তা পানকারী ও তা পরিবেশনকারী (এদের সকলেই অভিশপ্ত)।” (ইবনে মাজাহ) ৪৩৫
এ হাদীস থেকে বুঝতে পারা যায় যে, যারা মদের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত, তাদের সম্পর্কে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি মদ পান করে বা মাতল ও নেশাযুক্ত হয়, ৪০ দিন পর্যন্ত তার নামায বা দুয়া কবুল হবে না। সে মারা গেলে দোযখে প্রবেশ করবে।" (আবূ দাউদ, আত-তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো
বলেছেন, “যখন ব্যভিচারী ব্যভিচার করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করেনা, আর যখন চোর চুরি করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় চুরি করেনা, আর যখন মদপান করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় মদপান করেনা। এরপরও তওবার সুযোগ রাখা হয়েছে।” (সহীহ মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও আন-নাসাঈ) ৪৩৭ অর্থাৎ মদ ও ঈমান একসাথে চলতে পারেনা। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুও একই ধরনের হাদীস বর্ণনা করেন। আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শরাব পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।” (ইবনে মাজাহ)

প্রশ্ন-১৫০ : আচ্ছা মুহতারাম, মদ ও অ্যালকোহল এ দুটো জিনিসের পার্থক্য নিয়ে আমাদের সমাজে ভিন্ন মত পরিলক্ষিত হয়। অনুগ্রহপূর্বক বিজ্ঞানের আলোকে এ দুটোর পার্থক্য বুঝিয়ে বলবেন কী?

উত্তর : এ প্রশ্নটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। আপনি যথার্থই বলেছেন, এ দুটোর মাঝে বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। আমরা যারা চিকিৎসা বিজ্ঞান বা ভেষজ বিজ্ঞানের সাথে জড়িত, তারা সবাই অবগত যে alcohol হচ্ছে generic name. আর এর chemical name হচ্ছে ethanol or ethyl alcohol. Alcohol কে একটি group of chemicals বা solvent নামেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। বহু ধরনের alcohol আছে, যার সবই alcohol হিসেবে classified. Ethyl alcohol এর পাশাপাশি আরেকটি alcohol আছে, যাকে আমরা methanol or methyl alcohol বলে জানি। সাধারণত এ দু'টোকেই আমরা alcohol বলে থাকি । এছাড়া butyl alcohol, propyl alcohol, isopropyl alcohol ইত্যাদি আছে। Ethanol যদি ৯৯.৯৯% বিশুদ্ধ হয়, তাকে আমরা absolute alcohol অথবা absolute ethanol বলি । Rectified sprit বা ethyl alcohol উভয়ই edible or drinkable. পানীয়ে ব্যবহার করা হয় । Methanol হচ্ছে poisonous বা বিষাক্ত। Rectified sprit ল্যাবরেটরিতে extraction এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার হয় । Hardware-এর দোকানে যে alcohol পাওয়া যায়, তাকে বলা হয় methylated sprit. Rectified sprit -এ সামান্য পরিমাণ methanol যোগ করে methylated sprit তৈরি করা হয়, যা বিষাক্ত ও পানের অযোগ্য। অর্থাৎ small amount of methyl alcohol is added to rectified sprit to make it unfit for human consumption. নতুবা খারাপ বা দুষ্ট লোকেরা হার্ডওয়্যারের দোকানে সংরক্ষিত sprit পান করে শেষ করে ফেলতো। তবুও মাঝে মাঝে পত্রিকায় খবর আসে যে বিষাক্ত মদ সেবনে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আসলে মদ বিষাক্ত হওয়ার কারণ নেই । হয় পরিমাণের বেশি কেউ পান করেছে নতুবা methylated sprit পান করেছে যার জন্য মৃত্যু ঘটেছে। Absolute alcohol বা absolute ethanol is water miscible. দ্রাবক হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ল্যাবরেটরির অনেক কাজে এর ব্যবহার বিদ্যমান। ল্যাবরেটরিতে গবেষণা কাজে, পানিতে অদ্রবণীয় জিনিস দ্রবণীয় করার কাজে অথবা কিছু পরিমাণ preservative হিসেবে ব্যবহার করা হয়। Alcohol আবিষ্কারের আগে মধুকে preservative হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যাহোক, আমি যতোটুকু জানি absolute alcohol কেউ পান করতে পারে না, toxicity-এর জন্য। পান করার সাথে সাথে জ্বিহ্বা, গলা পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। এই absolute alcohol বা rectified sprit-এর সাথে পানি মিশিয়ে মদ তৈরি করা হয় । Light wine-এ সাধারণত ১০% থেকে ১৪% alcohol থাকে, আর desert wine-এ ১৪% থেকে ২০% alcohol থাকে, বাকি থাকে ফলের রস, flavouring essences, colouring matter and sweeting agent. যে পানীয়তে alcohol থাকে, তা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস অনুযায়ী পুরোপুরি হারাম, তা যে পরিমাণেই হোক না কেনো । এবং এর ভেতর অন্যান্য হালাল বা উপকারী উপকরণ যা-ই থাকুক না কেনো ।
তবে ওষুধে যে সামান্য পরিমাণ (১% এরও নিচে) alcohol ব্যবহার করা হয়, তা দ্রাবক বা solvent হিসেবে, formulation-এ additive হিসেবে অথবা tablet-এর coating material দ্রবণীয় করার কাজে ব্যবহার হয় । অনেক সময় methanols add করা হয়। তবে granules drying-এর সময় তা বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে কোনো alcohol অবশিষ্ট থাকেনা। ফলে toxicityও থাকেনা। যাহোক, ট্যাবলেট বা কঠিন জাতীয় ওষুধে যে সামান্য পরিমাণ alcohol formulation ও manufacturing এর কাজে ব্যবহৃত হয় (যা পরে বাষ্পীভূত হয়ে যায়), তা ওষুধকে হারাম করে না বলে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অভিমত।
তবে কোনো elixir বা syrup-এ যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ alcohol add করা হয় এবং তা যদি ওষুধের কার্টুনে declared করা থাকে, তাহলে সে ওষুধ নিঃসন্দেহে হারাম। আর যদি alcohol add করার পরও লেবেল বা কার্টুনে declare করা না থাকে, তাহলে বলা যায়, ঐসব অসাধু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরকারি আইন ভঙ্গ করেছে এবং জনগণকে প্রতারিত করছে। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারণ বর্তমানে ওষুধের বোতলের লেবেলে ও কার্টুনের গায়ে ওষুধের উপাদানসমূহ বা active ingredients লেখার বাধ্যতামূলক বিধান রয়েছে এবং নিয়মিত উৎপাদনের আগে সকল ওষুধের recipe সরকারের Drug Administration Autority কর্তৃক অনুমোদন করিয়ে নিতে হয় ।

প্রশ্ন-১৫১ : ধন্যবাদ আপনাকে মদ ও অ্যালকোহল সম্পর্কে বিস্তারিত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করার জন্য। এবার একটু বুঝিয়ে বলুন যে, এসব হাদীসের মূল শিক্ষণীয় দিকগুলো কী কী? অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহর করণীয় কী?


উত্তর : হাদীসগুলোর আলোচনা থেকে দুটো বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়, যা পালন করা মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব। সকল মুসলিম চিকিৎসকের উপর যে দায়িত্বটি সর্বপ্রথম বর্তায় তা হচ্ছে, তারা তাদের রোগীকে এমন কোনো ব্যবস্থাপত্র প্রদান করবেননা যা হারাম, ক্ষতিকর ও নেশা উদ্রেককারী। তবে যদি কোনো alternative বা বিকল্প ওষুধ না পাওয়া যায় অথবা জীবন রক্ষার জন্য আর কোনো উপায় না থাকে, তবে তা আলাদা কথা।
দ্বিতীয় দায়িত্ব হচ্ছে, মুসলিম রোগীদের। কোনো মুসলিম রোগী এমন কোনো চিকিৎসকের নিকট গমন করবেননা, যারা হালাল-হারাম, পাক-নাপাকের ধার ধারেননা। তাছাড়া কোনো রোগী নিজ ইচ্ছায় পছন্দ অনুযায়ী কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেননা, যা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তবে কোনো হালাল ওষুধ না পাওয়া গেলে শুধুমাত্র জীবন রক্ষার জন্য ততোটুকু পরিমাণে নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে যতোটুকু ব্যবহারে জীবন রক্ষা পাবে।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]