ঝাড়-ফুঁক বা দু'য়া-দরূদ অসুস্থ ব্যক্তির দেহে কোনো প্রভাব ফেলে কি? অর্থাৎ ঝাড়-ফুঁক বা দু'য়া উপকারী কি না এ সম্পর্কে medical science-এর আলোকে কিছু বলুন।

বস্তুবাদী দুনিয়ায় অনেক ডাক্তারও একথা স্বীকার করেন যে দুয়া ও আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ মানসিক সংযোগ রোগীদের রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে একটি কার্যকরা উপাদান। ডা. লারী ডসী একজন প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী, medical scientist. তিনি The Healing Words বা রোগ নিরাময়ের বাণীসমূহ নামে একটি বই লেখেন। বইটিতে বেশ কয়েকটি গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করেছেন। এর একটি গবেষণার বিষয়বস্তু সম্মানিত দর্শক-পাঠক শ্রোতাদের উদ্দ্যেশ্যে পেশ করছি।
ডা. ব্রাইড নামে একজন গবেষক ডাক্তার আমেরিকার সানফ্রানসিসকো হাসপাতালে ১৯৮৮ সালে ১০ মাসব্যাপী একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। তিনি হাসপাতালের ৩৯৩ জন জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে প্রথমে এ ও বি দুটি গ্রুপে ভাগ করেন। 'এ' গ্রুপের রোগীদের সবার নাম উল্লেখ করে তাদের আপনজন ও ডাক্তার দু'য়া করতে থাকেন রোগ মুক্তির জন্য। তারা এ দু'য়া করেন হাসপাতাল ত্যাগের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত । 'বি' গ্রুপের রোগীদের কারো জন্য কোনো দু'য়া বা প্রার্থনা করা হয়নি। গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, যেসব রোগীর আরোগ্যের জন্য দু'য়া করা হয়েছিল, তারা অনেক আগে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে। শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে cardiac arrest বা heart failure-এর সংখ্যা অনেক কম ছিলো। তাদের মধ্যে ২.৫ গুণ কম heart failure-এর ঘটনা ঘটেছে এবং তাদেরকে ১/৫ ভাগ পরিমাণ কম এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করতে হয়েছে ।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আরও জানান, যাদের পতিপরায়ণা, নিষ্ঠাবতী, প্রেমময়ী সহধর্মিণী ছিলো, তারা অতি দ্রুত আরোগ্যলাভ করে হাসপাতাল ছেড়েছে। আর যেসব পুরুষ angina pectoris রোগে আক্রান্ত এবং যাদের loving and caring wife আছে, তাদের angina pectoris তাদের চেয়ে কম হয়েছে, যারা অবিবাহিত এবং স্ত্রী পরিত্যক্তা ।
এ ধরনের আরো একটি গবেষণার ফলাফল হার্ভার্ড কনফারেন্সে প্রকাশিত হয়। সেখানে ৪০৬ জন রোগীকে নির্বাচনের কথা জানানো হয়। তাদের অর্ধেকের রোগমুক্তির জন্য তাদের আপনজন তথা আত্মীয়-স্বজন তাদের প্রভুর নিকট দু'য়া করেন। বাকি অর্ধেকের জন্য কোনো দু'য়া বা প্রার্থনা করা হয়নি। গবেষণার ফলাফল মনিটরিংয়ের জন্য ১১টি parameters নির্ধারণ করা হয়। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, যেসব রোগীর জন্য দু'য়া করা হয়েছে, ১১টি parameters-এর ১০টিতেই “রোগীরা সুস্থ হয়েছে বলে” জানা যায়। আরো জানা যায় যে, যেকোনো ধরনের প্রার্থনাই কার্যকর প্রশ্ন-১৬৫ : ড. মুহতারাম, এ বিষয়ে আমাদের এই উপমহাদেশে আরো কোনো ঐতিহাসিক উদাহরণ আছে কি যে শুধুমাত্র দু'য়ার মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক রোগমুক্তি প্রদান করেছেন?
উত্তর : এ বিষয়ে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও তাফহীমুল কুরআনের তাফসীরকারক মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর ব্যক্তিগত জীবনের একটি উদাহরণ দিচ্ছি। ১৯৪৮ সালে তিনি যখন কারাগারে অন্তরীণ, তখন তার মূত্রনালিতে একটি পাথর সৃষ্টি হয়। ফলে ষোল ঘণ্টা পর্যন্ত তার প্রস্রাব আটকে থাকে। তিনি তখন আল্লাহর কাছে দু'য়া করেন, “আমি জালিমদের কাছে চিকিৎসার জন্য আবেদন করতে চাইনা। তুমিই আমার চিকিৎসা করো।" পরে প্রস্রাবের রাস্তা থেকে পাথরটি সরে যায় এবং পরবর্তী বিশ বছর যাবত তা সরে থাকে। তারপর ১৯৬৮ সালে সেটি আবার তাকে কষ্ট দিতে থাকে। তখন অপারেশন করে তা বের করে ফেলা হয়। আর একবার ১৯৫৩ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় তিনি দু'পায়ের গোছায় দাদে আক্রান্ত হয়ে ভীষণ কষ্ট পেতে থাকেন। কোনো রকম চিকিৎসায় তিনি আরাম পাচ্ছিলেন না। গ্রেফতার হওয়ার পর আল্লাহর কাছে ১৯৪৮ সালের মতোই আবারো সেই একই দু'য়া করেন। এরপর কোনো প্রকার চিকিৎসা ও ওষুধ ছাড়াই সব দাদ একেবারে নির্মূল হয়ে যায় । তারপর ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি আর এ রোগে আক্রান্ত হননি । সম্মানিত দর্শক-পাঠক! ঠিক এ ধরনের আরেকটি ঐতিহাসিক উদাহরণ এখানে আমি পেশ করবো, যেখানে আল্লাহর নিকট শুধু [ একনিষ্ঠভাবে দু'য়া করার ফলে রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়েছিল। মুঘল সম্রাট বাবরের ছেলে হুমায়ূন খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অনেক চিকিৎসার পরও তার আরোগ্য লাভের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না এবং তিনি মৃত্যুর দিন গুণছিলেন। অবশেষে বাবর আল্লাহর নিকট দু'হাত তুলে কায়মনোবাক্যে দু'য়া করেন, “হে আল্লাহ। আপনি আমার পুত্র হুমায়ুনকে আরোগ্য দান করুন, এমনকি আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও।" অর্থাৎ "বাবর প্রার্থনায় বলেছিলেন, আল্লাহ! আপনি আমার মৃত্যুদান করুন তথাপিও হুমায়ুনকে আরোগ্য দান করুন।” আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'য়ালা বাবরের প্রার্থনা কবুল করলেন। কিছুদিন পর বাবর অসুস্থ হয়ে ৪৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন । আর হুমায়ুন সুস্থ হয়ে ওঠে তাঁর পিতার সিংহাসনে আরোহণ করেন ।
এ ধরনের আরো অনেক উদাহরণ আলোচনায় আনা যেতে পারে, যেখানে ছেলেমেয়ের জন্য পিতা- মাতার দু'য়া অতি দ্রুত কবূল হয়েছে। তাই আমার অনুরোধ, কোনো অসুস্থ ব্যক্তি যদি সকল প্রকার
চিকিৎসার পরও তার রোগমুক্তির সম্ভাবনা না থাকে এবং বাঁচার আশা নেই বললেই চলে, তিনি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের prescription মোতাবেক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন। আমার বিশ্বাস, তিনি আরোগ্যলাভ করবেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা'য়ালা ইরশাদ করেন,
أَجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ
“যে আমাকে ডাকে আমি তাঁর ডাক শুনি এবং জবাব দেই (অর্থাৎ যে আমার নিকট আবেদন করে আমি তাঁর আবেদন মঞ্জুর করি)।” (বাকারাহ ২:১৮৬)
অপরদিকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যার জন্য প্রার্থনার দুয়ার খুলে দেয়া হয়েছে, তার জন্য অনুগ্রহের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।" (আত-তিরমিযী) ৪৯১
In fact certain verses of the holy Qur'an have tremendous effects on healing.

প্রশ্ন-১৬৬ : মুহতারাম, এবার এতোক্ষণ যে আলোচনা করলেন তার মর্মার্থ বা সারাংশ সম্মানিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলুন।


উত্তর: সম্মানিত দর্শক-শ্রোতা-পাঠক! এতোক্ষণ ঝাড়-ফুঁক ও দু'য়া-কালামের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্পর্কে যে আলোচনা করলাম তার উপসংহারে বলতে চাই যে বর্তমানে বিশ্বে ৫/৬ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি বিদ্যমান। এগুলো হচ্ছে, আধুনিক এ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, হার্বাল, অলটারনেটিভ ও ট্রাডিশনাল বা কবিরাজি চিকিৎসা ব্যবস্থা। তবে এসব চিকিৎসা পদ্ধতির প্রত্যেকটির কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা জানি, কোনো একটি চিকিৎসা পদ্ধতিই সর্বপ্রকার রোগের আরোগ্য প্রদানের একচেটিয়া কৃতিত্বের দাবি করতে পারেনা। Accident জনিত এমন অনেক অসুস্থতা আছে যার জন্য আধুনিক surgical operation-এর বিকল্প নেই। আবার এমনও অনেক রোগ আছে যার জন্যে কোনো internal medicine মোটেই কার্যকর নয়। সেখানে physiotherapy এর প্রয়োজন। আবার depression জাতীয় অনেক অসুস্থতা আছে, যেখানে spiritual medicine ব্যবহার করতে হবে। আর এই spiritual medicine-ই হচ্ছে দু'য়া ও প্রার্থনার মাধ্যমে চিকিৎসা, ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা। এটি অনেক ক্ষেত্রে খুব দ্রুত ও কার্যকর।
তাই বর্তমানে integrated medical system-এর মাধ্যমে সকল প্রকার রোগের চিকিৎসা প্রদানের দাবি উঠছে অনেক মহল থেকে। একজন রোগী যে পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ ও রোগ থেকে আরোগ্যলাভ চান, তাকে সে পদ্ধতিতেই চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেয়া উচিত। আর এ ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলেই আমাদের সমাজে সকল ধরনের অসুস্থতার নিরাময় লাভ করা সম্ভব হবে।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]