তাবিয বা মাদুলির মাধ্যমে চিকিৎসা করার জন্য নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি অনুমতি দিয়েছেন?

উত্তর : হযরত হারাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এবং আরো কয়েকজন
মহিলার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান যে তারা এ কাজ বা অভ্যাসটির বিরোধিতা করেননি। এখানে আমি কয়েকটি হাদীস আলোচনায় আনবো যা সহীহ মুসলিম, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আমাদে উদ্ধৃত আছে। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকজন স্ত্রী বলেন যে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো গণকের নিকট গিয়ে তার নিকট (অদৃশ্য) বিষয়ের কোনো কিছু জিজ্ঞেস করে, চল্লিশ রাত পর্যন্ত তার কোনো নামায কবুল হবেনা।" (সহীহ মুসলিম) ৪৯২
সচরাচর ব্যবহৃত কতিপয় তাবিয ও মাদুলির ছবি
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “(অদৃশ্য থেকে শ্রুত) সুন্দর কথাবার্তা ও উত্তম নিদর্শনসমূহ নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পছন্দনীয় ছিলো । তিনি কোনো কিছুকেই কুলক্ষণ মনে করা অপছন্দ করতেন।” (ইবনে মাজাহ) ৪৯৩
আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করা বা খারাপ শুভ-অশুভ কিছুর পূর্বলক্ষণ সূচক নিদর্শনে বিশ্বাস করা শির্কী কাজ।” (ইবনে মাজাহ) ৪৯৪ কাবীসা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিতা থেকে জেনে বর্ণনা করেন যে আমি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “জ্যোতিষদের মাটিতে দাগ কেটে যাত্রা শুভ-অশুভ নির্ধারণের কথায় বিশ্বাস করা ও ভালমন্দ নির্ণয়ের জন্য লটারীর ব্যবস্থা করা কুফরী কাজের অন্তর্ভুক্ত।” (আবূ দাউদ) ৪৯৫ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। একদা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন, “পাখির দ্বারা শুভ-অশুভ নির্ণয় করা শিরক।” (আবূ দাউদ) ৪৯৬
গলায় ঝুলানোর উপযোগী মাদুলি
ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন কিছুতেই অমঙ্গল (শুভ-অশুভ) কিছু থাকলে তা রয়েছে অশ্বে, বাসগৃহে ও স্ত্রীলোকে (নারীতে)।” (সহীহ মুসলিম ও আবূ দাউদ)
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, যিনি তার হাতের কবজিতে bracelet (পিতলের বলয়) পরেছিলেন, 'এটি কী?' তিনি বললেন, 'এটি একটি তাবিয। এটি অবসন্নতাজনিত রোগের জন্য ধারণ করেছি।' তখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “এটি খুলে ফেলো। অন্যথায় এটি তোমাকে দুর্বল করবে বা তোমার অবসন্নতা বৃদ্ধি পাবে।" (ইবনে মাজাহ) ৪৯৮
হযরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী যয়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমার স্বামী হযরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার শরীরে তাগার স্পর্শ পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এটি কী? আমি উত্তরে বললাম, হুমরা রোগের তাবিয। এ কথাগুলো শুনে হযরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ওটা ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে বলেন, “ইবনে মাসউদের গৃহিণী । তোমরা শিরকের মুখাপেক্ষী হয়োনা । কেননা আমি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ঝাড়-ফুঁক, পৈতা এবং জাদু-মন্ত্র শিরকের অন্তর্ভুক্ত।” (ইবনে মাজাহ)
আবূ দাউদ শরীফে উদ্ধৃত হাদীসের ভাষা কিছুটা ভিন্ন । ৫০০
হযরত যয়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহা আরো বলেন, আমি আমার স্বামীকে বললাম, “আমার চোখে ব্যথা হলে আমি অমুক ইয়াহুদীর কাছে গিয়ে ঝাড়-ফুঁক করাতাম এবং তার মাধ্যমেই আমি সুস্থ হয়েছি। এ কথাগুলো শুনে হযরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “(শয়তানি আমল, যা ঐ ব্যক্তি) চোখের ব্যথা শয়তানের আঘাতের কারণে যা সে নিজের হাতে করতো। যখন মন্ত্র পড়া শুরু করতো তখন সে তোমাকে রেহাই দিতো, আর মন্ত্র পড়া বন্ধ করলে সে তোমার চোখে আঙ্গুলের খোঁচা মারতো। এ ক্ষেত্রে তুমি যদি তাই করতে যা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে করেছিলেন, তবে তোমার জন্য উপকারী হতো ও আরোগ্য লাভেও অধিক সহায়ক হতো। তুমি নিম্মোক্ত দু'য়া পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে তা তোমার চোখে ছিটিয়ে দাও ।
“আযহিবিল বা'সা রব্বান নাস, ইশফি আনতাশ্ শাফী, লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা, শিফাআন লা ইউগাদিরু সাকামান। "
“হে মানুষের প্রতিপালক! কষ্ট দূর করে দিন। হে রোগ আরোগ্য দানকারী! আরোগ্য দান করুন। আপনার আরোগ্য দান ছাড়া আরোগ্য লাভ করা যায়না। আপনি এমন শিফা দান করুন, যেনো এরপর আর কোনো রোগ বা কষ্ট না থাকে।" (ইবনে মাজাহ) ৫০১
আরব দেশে ঘাঁদা বাঁধা তাকে বলে যার মধ্যে বাঘের নখ ও অন্যান্য জিনিস দ্বারা তাবিয করে গলায় ঝুলানো হয় । আরবের লোকেরা বদনজর থেকে বাচ্চাদের হিফাজতের জন্য তাদের গলায় ঘাঁদা ঝুলাতো । রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে শির্ক বলেছেন। পৈতা হচ্ছে গিঁটযুক্ত মন্ত্রপূত সূতা বিশেষ । উপরোক্ত হাদীসগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাবিযকে
নিষেধ করেছেন তা হল শিরকী তাবিয, যা শয়তানের সাহায্য নিয়ে বা শয়তানি আমল দিয়ে বা মন্ত্ৰ পড়ে তৈরি করা হতো । সুতরাং কোন তাবিয যদি কুরআনের আয়াত লিখে বা পড়ে বা আল্লাহ তা'য়ালার নাম বা সিফাতী নাম লিখে বা পড়ে বা ফুঁক দিয়ে তৈরি করা হয় এবং তা বাচ্চা কিংবা রোগীর শরীরে ঝুলিয়ে বা বেঁধে দেয়া হয় অথবা তা লিখে ভিজিয়ে তার পানি খাওয়ানো হয়, তাহলে তা বৈধ হবে। এটা অনেক সাহাবী ও তাবেয়ী হতে প্রমাণিত আছে ।
হযরত আমর ইবনে শুআইব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি ঘুমের মধ্যে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে সে যদি বলে, “বিসমিল্লাহি আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গদাবিহি ওয়া সূয়ি ইক্কাবিহি ওয়ামিন শাররি ইবাদিহী ওয়ামিন শাররিশ শায়াত্বীনি ওয়া আইয়াহদুরূন" (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করি তাঁর ক্রোধ ও শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিস্ট থেকে, শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে এবং আমার কছে যারা উপস্থিত হয় সেগুলো থেকে), তাহলে সেগুলো তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।” আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এই দু'য়া তাঁর প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে শিক্ষা দিতেন। উক্ত দু'য়া কাগজের টুকরায় লিখে শরীরে ঝুলিয়ে দিতেন। (আবূ দাউদ, আত- তিরমিযী, নাসাঈ ও আল-মুসান্নাফ আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ) ৫০২
হাদীসটি হাসান। হযরত আবূ ইসমাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাঈদ ইবনুল মুসায়িবকে তাবিয সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তদুত্তরে তিনি বলেছেন, কোনো অসুবিধা নেই, যদি তা চামড়ার ভেতরে থাকে । (আল-মুসান্নাফ আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ) ৫০৩
এক ঋতুবতি মহিলার সম্পর্কে, যার শরীরে তাবিয আছে হযরত আতা (তাবেয়ী)কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যদি তা চামড়ার মধ্যে থাকে তাহলে সে যেন তা খুলে রাখে আর যদি রূপার মাদুলীতে থাকে তাহলে সে চাইলে তা রাখতে পারে আর চাইলে খুলে রাখতে পারে। (আল-মুসান্নাফ আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ) ৫০৪
হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত, তিনি মানুষদেরকে তাবিয লিখে দিতেন এবং তা তাদের শরীরে ঝুলিয়ে দিতেন । (আল-মুসান্নাফ আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ) ৫০৫
অনুরূপভাবে হযরত আবূ জা'ফর, মুহাম্মদ ইবনে সীরীন, উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এবং দ্বাহ্হাক থেকেও বর্ণিত আছে যে, তাঁরা তাবিয লেখা, ঝুলিয়ে দেয়া বা বেঁধে দেয়া ইত্যাদিকে বৈধ মনে করতেন। ইমাম ইবনে তায়মিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বিপদ ও সমস্যাগ্রস্ত এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কুরআনে কারীমের আয়াত ও যিকিরকে বৈধ কালি দ্বারা লিখে দেয়া জায়েয আছে। তদ্রূপ তা ধৌত করে পান করানোও বৈধ। যেমন ইমাম আহমাদ ও অন্যরা স্পষ্ট করে বলেছেন। (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তায়মিয়া, ১৯/৬৪)
উপরোক্ত হাদীসগুলোর দ্বারা প্রমাণ হয় যে যেসব তাবিযে শিরক নাই সে সব তাবিয বৈধ। তাছাড়া যে সব হাদীসে ব্যাপকভাবে তাবিয নিষেধ করা হয়েছে তা এজন্য যে আরবরা ধারণা পোষণ করত যে তাবিযের নিজস্ব ক্ষমতা ও কার্যকারিতা আছে। যেমন- আল্লামা শাওকানী ‘নায়লুল আওতার' কিতাবে
(৮/১৭৭) লিখেছেন। সুতরাং আরবরা যে তাবিয ঝুলাতো বা ব্যবহার করতো তার সাথে কুরআনের আয়াতের বা তাসবীহাতের কোনো প্রকার সম্পর্ক ছিল না। তাই তা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং এসব হাদীস দ্বারা কুরআনের আয়াত বা তাসবীহাত দ্বারা লিখিত তাবিযকে হারাম বা শির্ক বলা যাবেনা- যা বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তাবিয বৈধ হওয়ার জন্য ৪টি শর্ত। যথা :
১. এতে শিরকের কোনো আমেজ থাকতে পারবেনা এবং কোনো ধরনের কুফরী কালাম বা শরীয়াহ্ বিরোধী কিছু থাকতে পারবেনা।
২. তাবিযে যা লেখা হবে তা বোধগম্য হতে হবে;
৩. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর সাহায্য নেয়া যাবে না;
৪. তাবিযকে নিজস্ব ক্ষমতা ও কার্যকারিতার অধিকারী বিশ্বাস ও ধারণা পোষণ করা যাবে না । অতএব, যেসব তাবিযে উক্ত ৪টি শর্ত পূর্ণভাবে পাওয়া যাবে, সেসব তাবিয বৈধ হবে; অন্যথায় অবৈধ হবে ।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]