মুহতারাম, আমরা জানি সূরা ফাতিহা কুরআনের সর্বপ্রথম সূরা এবং এর গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। তাই এ সূরা তিলাওয়াতের মাধ্যমে রোগ-ব্যাধি থেকে নিরাময় পাওয়া যায় কি না এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে কোনো বর্ণনা এসেছে কি?

নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় হযরত আবূ সাঈদ ইবনে মু'আল্লা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, “সূরা ফাতিহা কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন সূরা।” (সহীহ আল বুখারী) ৫১০
এই সূরাকে ‘উম্মুল কুরআন' বা 'কুরআনের মা' হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। রোগ নিরাময়ে এ সূরার গুরুত্ব অনেক বেশি। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরাত দিয়ে বলেন, “সূরা ফাতিহা তিলাওয়াতের ফলে বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে আক্রান্ত রোগীও আরোগ্য লাভ করে।” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম) ৫১১
الله الرحمن الرحيم
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ الله الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ اهْدِنَا الصِّرَطَ المُستَقية
صِرَطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ
المَغضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِينَ
পবিত্র কুরআনের সূরা ফাতিহা পৃষ্ঠার ছবি
অন্যত্র নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সূরা ফাতিহা সকল রোগ নিরাময়ের উৎস।" (গুয়াবুল ঈমান) ৫১২
অর্থাৎ এ সূরা প্রত্যেক রোগের জন্য শিফা। It is the source of all healings.
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সূরা ফাতিহা বিষের ওষুধ, medicine for poison.” (শু’য়াবুল ঈমান) ৫১৩
যা হোক, বিষাক্ত কীট-পতঙ্গের দংশনে, সাপের কামড়ে ও শিকলে বাঁধা পাগলের চিকিৎসায় সূরা ফাতিহা ব্যবহারের বর্ণনা হাদীস শরীফে এসেছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জনৈক সাহাবী, কোনো ব্যক্তিকে বিচ্ছু কামড় দিলে সূরা ফাতিহা পাঠ করে তার চিকিৎসা করেছিলেন। এর ফলে সেই ব্যক্তি আরোগ্য লাভ করে এবং এজন্য সে উক্ত সাহাবীকে কতগুলো বকরি পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করে।” (সহীহ আল বুখারী) ৫১৪ আল আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ (সাপ বা বিচ্ছুর) দংশনের ঝাড়-ফুঁক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বলেন, “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোনো বিষাক্ত কীট-পতঙ্গের দংশনে 'রুকাইয়া' ব্যবহার বা ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন।” (সহীহ আল বুখারী) ৫১৫
বস্তুত সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত অন্যতম রুকাইয়া। কুরআনের আয়াত দ্বারা ঝাড় ফুঁক করা জায়েয। কিন্তু শির্কজনিত মন্ত্রপূত করা সম্পূর্ণ হারাম। এ দুটো রিওয়ায়াত ছাড়া আরো কয়েকটি বর্ণনা হাদীস শরীফে এসেছে যে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে বিষাক্ত কীট-পতঙ্গের দংশনে ও সাপের কামড়ের চিকিৎসা করা হয়েছে।

প্রশ্ন-১৭০ : একটু আগেই বললেন যে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে পাগলের চিকিৎসা করা যায়। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে আর কী কী বর্ণনা এসেছে?


উত্তর : হযরত খারিজা ইবনুস্ সালত তামিমী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “আমরা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তা চলতে শুরু করলাম এবং পথিমধ্যে এক আরব গোত্রের নিকট পৌছালাম। তারা বলল, আমরা সংবাদ পেয়েছি আপনারা এই ব্যক্তি তথা মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে কল্যাণ নিয়ে এসেছেন। আপনারা কি কোনো ওষুধ বা আমলবিশেষ এনেছেন? কারণ আমাদের নিকট শিকলে বাঁধা একজন উন্মাদ বা পাগল রয়েছে। আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন তারা সেই শিকলে বাঁধা পাগলটিকে সামনে এনে হাজির করলো। তিনি বলেন, আমি সূরা ফাতিহা তার উপর পর পর তিনদিন সকাল ও সন্ধ্যায় পাঠ করলাম। আমি যখনই সূরা ফাতিহা পাঠ করা শেষ করতাম, তখন জিহ্বা থেকে লালা (থুথু) নিয়ে তার উপর নিক্ষেপ করতাম। আর তখনই মনে হচ্ছিল যে সে যেনো কোনো বন্ধন, পিঞ্জর, গোলামি বা শিকল থেকে মুক্তি পাচ্ছিল । তিনি আরো বলেন, তারা আমার জন্য কিছু পারিশ্রমিক নিয়ে এলো। কিন্তু আমি বললাম, না, যে পর্যন্ত না আমি ঘটনাটি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বর্ণনা করি এবং তাঁর দিক-নির্দেশনা পাই । তারপর আমি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ফিরে এলাম এবং পুরো বিষয়টি খুলে বললাম। তখন রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পারিশ্রমিক হিসেবে যে বকরি দিয়েছে তা নাও।” (মুসনাদে আহমাদ ও আবূ দাউদ) ৫১৬
অন্য এক হাদীস বর্ণনাকারী হযরত মুসাদ্দাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ প্রসঙ্গে বলেন, “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি এছাড়া আর কিছু পড়েছিলে কি না?' অর্থাৎ তুমি সূরা ফাতিহার সাথে আরো কিছু পাঠ করেছ কি? জবাবে আমি বললাম, না। তখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “উক্ত পারিশ্রমিক গ্রহণ করো। কারণ, যাঁর হাতে আমার জীবন! অনেকে আজেবাজে মন্ত্র পড়ে ফুঁক দিয়ে পারিশ্রমিক আদায় করে থাকে, অথচ তুমি সঠিক পদ্ধতিতে ঝাড়-ফুঁক দিয়ে পারিশ্রমিক নিয়েছো।” (আবূ দাউদ) ৫১৭
আবূ লায়লা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, “আমি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসে থাকা অবস্থায় এক বেদুঈন তাঁর নিকট এসে বললো, আমার এক অসুস্থ ভাই আছে। তিনি বলেন, তোমার ভাই কি রোগে আক্রান্ত? সে বললো, (কোন কিছুর) কুপ্রভাব (আছর)। তিনি বলেন, তুমি যাও এবং তাকে আমার নিকট নিয়ে এসো। আবূ লায়লা (রা) বলেন, সে গিয়ে তার ভাইকে নিয়ে আসলে তিনি তাকে নিজের সামনে বসান। আমি শুনতে পেলাম, তিনি সূরা ফাতিহা (১), সূরা বাকারার প্রথম চার আয়াত (২:১-৪), মধ্যখানের দুই আয়াত (২:১৬৩-১৬৪), আয়াতুল কুরসী (২:২৫৫) ও বাকারার শেষ তিন আয়াত (২:২৮৪-৬) এবং আলে ইমরানের একটি আয়াত, আমার মনে হয় তিনি ১৮ নং আয়াত (৩:১৮) পড়েছিলেন এবং সূরা আ'রাফের এক আয়াত (৭:৫৪), সূরা মুমিনূনের এক আয়াত (২৩:১১৭), সূরা জিনের এক আয়াত ( ৭২:৩), সূরা সফফ্ফাতের প্রথম দশ আয়াত (৩৭:১- ১০), সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত (৫৯:২২-২৪), সূরা ইখলাস্ (১১২) এবং সূরা ফালাক্ক (১১৩) ও সূরা নাস (১১৪) পড়ে তাকে ফুঁ দিলেন। তাতে বেদুঈন এমনভাবে সুস্থ হয়ে দাঁড়ালো যে, তার কোনো রোগই অবশিষ্ট ছিল না।” (ইবনে মাজাহ) ৫১৮

প্রশ্ন-১৭১ : সূরা ফাতিহার মাধ্যমে রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তা তিলাওয়াতের কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম আছে কি?


উত্তর: বস্তুত সূরা ফাতিহা তিলাওয়াতের কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তাঁর সাহাবীগণ বর্ণনা করেননি যে কতবার, কীভাবে, কোন নিয়মে, কখন তা পাঠ করতে হবে। আপনি যতো বেশি বেশি তা পাঠ করবেন ততোই মঙ্গল । ততোই আল্লাহ পাক আপনাকে সাহায্য করবেন বা আল্লাহ্ পাকের সাহায্য পাবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। তবে কোনো হাক্কানী আলেম ডেকে পারিশ্রমিক দিয়ে পাঠ করানোর চেয়ে নিজে বা পরিবার-পরিজনের দ্বারা পাঠ করে দু'য়া করাই উত্তম। আর যদি নিজে সহীহভাবে পড়তে অক্ষম হন তাহলে কোনো আলেমে দীন দ্বারা পাঠ করানো যাবে। আমি সম্মানিত দর্শক-শ্রোতা ভাই-বোনদের উদ্দেশে বলছি, আপনাদের কারো পরিবারে যদি দুর্ভাগ্য- ক্রমে কোনো শিকলে বাঁধা পাগল থাকে, যার জন্য বহু চিকিৎসা করে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা সবাই বেশি বেশি করে 'বিস্মিল্লাহ' সহকারে সূরা ফাতিহা পাঠ করে তার গায়ে ফুঁক দিন এবং আল্লাহর সাহায্য চান। ইনশা'আল্লাহ সে পাগল ভালো হয়ে যাবে। বাস্তবিকপক্ষে এই সূরা অত্যন্ত কার্যকরী ওষুধ যা উপরোক্ত হাদীস থেকে জানা যায়। আর এ চিকিৎসায় তেমন কোনো টাকা- পয়সা খরচ করতে হয়না।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]