তাই জ্বরের চিকিৎসায় নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো উপদেশ সংবলিত বাণী বা ব্যবস্থাপত্র আছে কি?

আপনাকে ধন্যবাদ । জ্বর অনেক রোগের উপসর্গ। পৃথিবীর সকল দেশের প্রত্যেক এলাকায়ই এ রোগের প্রকোপ দেখা যায়। ছোট-বড়, যুবক-বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষই এ রোগের শিকার হয়ে থাকে। এমন কোনো ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যিনি জীবনে জ্বরে ভোগেননি। জ্বর অনেক প্রকারের হতে পারে এবং এর উপসর্গও অনেক। অনেক কারণেই জ্বর হতে পারে, যা আমরা জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পারি।
গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এ রোগের প্রকোপ খুব বেশি। প্রায় ১০৫-১০৬° ফা. পর্যন্ত। যাহোক, বর্তমানে এ ধরনের রোগীকে বরফের সেলে ঠাণ্ডা করা হয়। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্বরের চিকিৎসায় ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করতে উপদেশ দিয়েছেন। এই ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারের বিষয়ে বেশ কয়েকটি সহীহ হাদীস রয়েছে, যা একাধিক সাহাবায়ে কিরাম বর্ণনা করেছেন।
১. প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জ্বর জাহান্নামের হাঁপরসমূহের মধ্যকার একটি হাঁপর, এক উত্তপ্ত পাত্রবিশেষ। তোমরা ঠাণ্ডা পানি ঢেলে একে দূর করো।" (ইবনে মাজাহ) ৫৬০
২. রাফি ইবনে খাদীজ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা পৃথকভাবে একটি হাদীস বর্ণনা করেন। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে সৃষ্ট । সুতরাং তোমরা পানি ঢেলে তা ঠাণ্ডা করো।" (সহীহ আল বুখারী ও ইবনে মাজাহ) ৫৬১ ৩. ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের তাপ থেকে । অতএব এর তাপ পানি দ্বারা কমিয়ে দাও।" (সহীহ আল বুখারী) ৫৬২ ৪. আবূ জামরাহ জুবাঈ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মক্কায় ইবনে আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট বসতাম। (একদিন) আমি জ্বরে আক্রান্ত হলাম। তখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তোমার (শরীরের) জ্বর যমযমের পানি দ্বারা শীতল করো। কেননা, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “জ্বর জাহান্নামের তেজ হতেই (হয়ে থাকে)। তাই তা পানি দ্বারা কিংবা যমযমের পানি দ্বারা শীতল করো।” (সহীহ আল বুখারী) ৫৬৩
৫. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি জ্বরে আক্রান্ত হও, তখন পরপর তিনদিন প্রত্যুষে সূর্য ওঠার আগে কিছু ঠাণ্ডা পানি শরীরে ছিঁটিয়ে দাও।” (মুসতাদরাক, আবূ নু'য়াইম, আল-মু'জামুল আওসাত ও মুসনাদে আবূ ইয়ালা) ৫৬৪
৬. আসমা বিনতে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। জ্বরাক্রান্ত কোনো নারীকে তার নিকট আনা হলে তিনি পানি চেয়ে নিয়ে তার গলদেশে (বা বুকে) ঢালতেন আর বলতেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একে পানি ঢেলে ঠাণ্ডা করো।” তিনি আরো বলেছেন, “এটি হলো জাহান্নামের উত্তাপ থেকে।” (ইবনে মাজাহ) ৫৬৫
৭. ঠিক একই ধরনের একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত ফাতিমা বিনতে মুনযির রাদিয়াল্লাহু আনহা।
তিনি বলেন, “যখনই জ্বরে আক্রান্ত কোনো মহিলাকে হযরত আসমা বিনতে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট আনা হতো, তখন তিনি তার জন্য দুয়া করতেন এবং তার শরীরে ও বুকে কিছু পানি ছিটিয়ে দিতেন বা গা মুছে দিতেন এবং বলতেন, আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে পানি দ্বারা জ্বর নিরাময় করতে আদেশ করতেন।” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম) ৫৬৬ ৮. হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জ্বর হলো দোযখের একটি টুকরা। তোমাদের কারো জ্বর হলে সে যেনো তা পানি ঢেলে নিভায়।" (আত-তিরমিযী) ৫৬৭
এর নিয়ম হচ্ছে, ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে প্রবহমান ঝর্ণায় নেমে স্রোত প্রবাহের দিকে মুখ করে সে বলবে, “আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আপনার বান্দাকে রোগমুক্ত করে দিন এবং আপনার রসূলকে সত্যবাদী প্রমাণ করুন।” অতঃপর ঝর্ণার পানিতে তিনবার ডুব দিবে। তিনদিন এরূপ করবে। তিনদিনেও যদি জ্বর না ছাড়ে তবে পাঁচদিন এরূপ করবে। পাঁচদিনেও নিরাময় না হলে সাত দিন এরূপ করবে। সাতদিনেও ভাল না হলে নয়দিন এরূপ করবে। আল্লাহর হুকুমে জ্বর নয়দিনের বেশি অতিক্রম করতে পারবে না। (আত-তিরমিযী) ৫৬৮
যারা দু'সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জ্বর নিবারণে ব্যর্থ, তারা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করতে পারেন। অন্যত্র নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন যমযমের পানি পান করা হয়, তখন অতিশয় কৃশতাপ্রাপ্ত বা ক্ষয়প্রাপ্ত ব্যক্তি এবং জ্বরে আক্রান্ত রোগীও আরোগ্যলাভ করে ।” (আস-সুয়ূতী) ৫৬৯
উপরে যে ৮টি হাদীস আমি আলোচনা করলাম, তার প্রায় প্রত্যেকটিতে জ্বরের চিকিৎসায় ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারের উপদেশ বা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রখ্যাত হাকীম জালিনুস, যাঁকে আমরা বিজ্ঞানী গ্যালেন নামে জানি, তিনি তার লিখিত 'কিতাবুল বারী' নামক বইয়ে জ্বরের চিকিৎসার জন্য পানিকে সর্বোত্তম ও উপকারী বলে উল্লেখ করেছেন। যুগশ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ ইমাম রাযী রহমাতুল্লাহ আলাইহিও তার ‘কাবীর’ গ্রন্থে জ্বরের চিকিৎসায় ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারের বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন।
আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বলে যে সূর্যই সকল তাপের উৎস। বেহেশত-দোযখ সম্পর্কে বিজ্ঞান গবেষণা করে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। তাই এ সম্পর্কে বিজ্ঞানের সাথে বিরোধ- অবিরোধের কোন প্রশ্নই উঠেনা। ইসলামের দৃষ্টিতে জ্বরের উৎপত্তি (source of fever) জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। কারণ, জাগতিক সকল তাপের উৎস জাহান্নাম। জাহান্নামের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের তাপের চেয়ে ৭০গুণ বেশি। জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহ চিত্র আমরা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও অনেক হাদীস থেকে জানতে পারি। তাই সেখান থেকেই আল্লাহ্র ইচ্ছায় এ পৃথিবীতে সকল রকম গরম ও উত্তাপের সৃষ্টি হয় । তাই আমরা বলতে পারি সূর্যের উৎসও জাহান্নাম । কারণ, সূর্যকে আল্লাহ তা'য়ালা সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর সকল মানুষ, জীব-জন্তু এবং সকল সৃষ্ট জীবের জীবন-ধারণ ও কল্যাণের জন্য, আর জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন দুষ্কর্মশীল লোকদের শাস্তির জন্য ।
জ্বরের চিকিৎসায় ঠাণ্ডা পানির ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। জ্বরে পানির ব্যবহার বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত এবং এটি একটি অতি সাধারণ ব্যবস্থা। প্রত্যেক আধুনিক ডাক্তারই এ ব্যাপারে একমত যে পানিই সবচেয়ে নিরাপদ ও সহজলভ্য, যা জ্বর নিবারণে কার্যকর। জ্বর বেড়ে গেলে শরীরে বা মাথায় পানি ঢেলে তাপ নিবারণ করা প্রাচীনকাল থেকে চলে আশা একটি ডাক্তারি বিধান। এমনকি জ্বরের তাপ অতি মাত্রায় বেড়ে গেলে রোগীর সারা শরীর পানির সাহায্যে ঠান্ডা করা হয়। প্রয়োজনে গোসল করানো হয়। Heat stroke-এ যারা ভোগেন, তাদের জন্য এবং বিশেষ করে tropical countries এ পানির সাহায্যে শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনা খুবই সাধারণ একটা বিষয়। তাই জ্বর সম্পর্কে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীসমূহ সবই চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত, এতে কোনো সন্দেহ নেই । বর্তমানে জ্বর কমাতে আধুনিক ডাক্তারগণ প্রথমে যে ব্যবস্থাপত্র দেন, তাহলো Antipyretic drug, যা হচ্ছে paracetamol বা aspirin বা অন্যান্য analgesic এবং সাথে সাথে মাথায় পানি ঢালা ও শরীর ভেজা কাপড়ে মুছে দেয়া হয়। বস্তুত প্যারাসিটামল নামীয় ওষুধ শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সবচেয়ে সাধারণ এবং সস্তা এক প্রকার ওষুধ। এ ওষুধ সেবনের সাথে সাথে ঠান্ডা পানির সাহায্যে সারা শরীর ঘন ঘন মুছে দেয়া উচিত। In fact paracetamel is the safest drug of choice for reducing body temperature, followed by the use of cold water to wipe out the body as frequently as possible. বস্তুত পানির সাহায্যে শরীরের তাপমাত্রা কমানো সবচেয়ে সহজ ও inexpensive উপায়। এ ব্যবস্থাপত্রে কোনো টাকা-পয়সা খরচ হয়না। অনেক ডাক্তার অতি দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য গোসল করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পরে জ্বর কমে গেলে রক্ত পরীক্ষা করে কারণ নির্ণয় করত সঠিক antibiotic দেয়া হয় সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য। তাই আমরা দেখতে পাই, জ্বরের চিকিৎসায় ঠাণ্ডা পানির ব্যবহার পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত ।
পানির সাহায্যে জ্বরের সাময়িক উপশম হয়। পুরাপুরি নিরাময়ের জন্য জীবাণুনাশক প্রয়োজন হয় । যেমন টাইফয়েড জ্বর। ভাইরাল জ্বরে কোন এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। তাছাড়া কার্যকর কোন এন্টিভাইরাল ওষুধ এখনও বাজারে নেই ।
এ প্রসঙ্গে আমি আরো একটি হাদীস বর্ণনা করছি, যা হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা
করেছেন। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলতেন, “আমি অসুস্থ হলে আমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করো এবং ৭ মশক পানি আমার শরীরে ঢেলে দিও।” (সহীহ আল বুখারী)
ইংরেজি অনুবাদটি এভাবে এসেছে, "Be generous to me in my illness and pour seven water-skins of water over me." (Sahih Al Bukhari) 570
এখানে অসুস্থতা বলতে 'জ্বরকেই' বুঝানো হয়েছে। কারণ জ্বরই একমাত্র অসুস্থতা, যাতে তিনি প্রায়ই ভুগতেন এবং তাঁর জ্বরের তীব্রতা অন্য সকল মানুষের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি ছিলো। তাই জ্বর হলে মাথায় পানি ঢালা ও ঠাণ্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দেয়ার ব্যবস্থাপত্র কোনো আধুনিক ডাক্তারের আবিষ্কার নয়। এটি দু'জাহানের নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবস্থাপত্র বা উপদেশ মাত্র। এ প্রসঙ্গে দুটো হাদীস আমি আলোচনা করবো। প্রথমটি বর্ণনা করেছেন হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু । তিনি বলেন, “আমি একবার নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুগ্নাবস্থায় তাঁর খেদমতে গেলাম। তখন তিনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর শরীরে হাত দিলাম এবং বললাম, আপনার জ্বরের তীব্রতা তো ভীষণ! নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তোমাদের দু'জন লোকের সমপরিমাণ জ্বর আমার একার। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনার তো দ্বিগুণ সওয়াব (সম্ভবত তাই)। তখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনো মুসলমান যদি কষ্ট পায়, তা রোগ যন্ত্রণাই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণেই হোক, তাহলে আল্লাহ্ তা'য়ালা তার গুনাহসমূহ দূর করে দেন, যেমনভাবে বৃক্ষের পাতাগুলো ঝরে যায়।” (সহীহ আল বুখারী) ৫৭১
দ্বিতীয় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা। তিনি বলেন, “আমি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হতে বেশি রোগ যাতনা ভোগ করতে আর কাউকে দেখিনি।” (সহীহ আল বুখারী) ৫৭২ ৫৭৩
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সাথে নিয়ে জ্বরাক্রান্ত এক রোগীকে দেখতে গেলেন। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগীকে বললেন, “সুসংবাদ গ্রহণ করো। কেননা, মহান আল্লাহ বলেন, এটা আমার আগুন যা আমি দুনিয়াতে আমার মুমিন বান্দার ওপর চাপিয়ে দেই, যাতে আখিরাতে তার প্রাপ্য আগুনের বিকল্প হয়ে যায়।” (ইবনে মাজাহ)

প্রশ্ন-১৯১ : মুহতারাম, গত একটি পর্বে আপনি জ্বরের চিকিৎসায় ঠাণ্ডা পানির ব্যবহার সম্পর্কে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। এবার মেহেরবানী করে বলুন, কারো জ্বর হলে বা কেউ অসুস্থ হলে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী কী পথ্য বা খাদ্য পরিবেশনের জন্য উপদেশ দিয়েছেন? আধুনিক বিজ্ঞান কি তা সমর্থন করে ?

উত্তর : হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, যখন কেউ নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সংবাদ নিয়ে আসতো যে অমুক ব্যক্তি পেটের অসুস্থতার জন্য খানাপিনা গ্রহণ করছেনা, তখন তিনি উপদেশ দিতেন, “তার জন্যে কিছু তালবিনা স্যুপ তৈরি করো এবং তাকে
খাওয়াও।” তিনি আরো বলতেন, “আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন, তালবিনা তোমাদের পেটকে এমনভাবে পরিষ্কার করে, যেমনভাবে কোনো ব্যক্তি স্বীয় চেহারা হতে ময়লা পরিষ্কার করে থাকে।” (মুসনাদে আহমাদ ও মুসতাদরাকে হাকিম) ৫৭৪

তিরমিযী শরীফে যে হাদীসটি উদ্ধৃত হয়েছে সেখানে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বর্ণনার শেষের অংশটি একটু ভিন্ন। সেখানে তিনি বর্ণনা করেন, “যখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে কেউ অথবা তাঁর পরিবারের কোনো ব্যক্তি যদি অসুস্থ থাকতেন, তখন তিনি তাদের জন্যে তালবিনা স্যুপ পাকানোর নির্দেশ দিতেন। সেমতে তাদেরকে স্যুপ পান করাতেন এবং বলতেন, এটি অসুস্থ রোগীর দেহ ও মন তথা অন্তরাত্মায় প্রশান্তি আনয়ন করে এবং তার শরীরের ভেতরের সকল অংশ তথা পাকস্থলী ও নাড়িভুঁড়িকে সহজতর করবে এবং তার দুঃখ-কষ্ট এমনভাবে দূর করবে যেমন মুখ ধৌত করে ময়লা দূর করা হয়।” (আত-তিরমিযী) ৫৭৫
প্রখ্যাত হাদীসশাস্ত্র বিশারদ আস্-সুয়ূতী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বর্ণনা করেন, এখানে 'অসুস্থতা' বলতে ‘জ্বরকে’ বোঝানো হয়েছে। আর স্যুপ (তালবিনা) বলতে ময়দা, পানি ও চর্বির সংমিশ্রণে তৈরি তরল জাতীয় খাবারকে বোঝানো হয়েছে। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, “তিনি রোগী ও কারো মৃত্যুতে শোকাকুল ব্যক্তিকে 'তালবিনা' খেতে নির্দেশ দিতেন এবং বলতেন, আমি রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, 'তালবিনা' রোগীর প্রাণে শক্তি সঞ্চার করে, প্রশান্তি আনয়ন করে ও দুশ্চিন্তা দূর করে।” (সহীহ আল বুখারী) ৫৭৬
তালবিনা সম্পর্কে আরো ৩টি সহীহ হাদীস আছে। হযরত উরওয়াহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা অসুস্থ ও চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকে তালবিনা খেতে নির্দেশ দিতেন আর বলতেন, তালবিনা খেতে কষ্টকর বা অতৃপ্তিকর হলেও শরীরের জন্য উপকারী বা পুষ্টিকর।" (সহীহ আল বুখারী) ৫৭৭
তালবিনা হচ্ছে দুধ ও ময়দা সহযোগে প্রস্তুত এক প্রকার তরল পথ্য জাতীয় খাদ্য। যাহোক, আলোচিত হাদীসগুলো থেকে আমরা জানতে পারি যে Talbina is the best Prophetic medicine for the treatment of sorrows and grief, which modern science supports.
ইউনানি চিকিৎসা ব্যবস্থায় তালবিনা বা যবের গুড়ার মর্যাদা অনেক। প্রখ্যাত হাকীম জালিনুস ( Galen) বলেন, যবের সমতুল্য আর কোনো খাদ্য সৃষ্টি করা হয়নি। কারণ এ খাদ্য সুস্থ-অসুস্থ দুই অবস্থায় কাজ করে। এজন্য রোগীকে যবের গুড়া খাওয়ানো হয়, গমের গুড়া খাওয়ানো হয়না। কারণ যবের গুড়া পিপাসা দূর করে, রক্তের চাপ কমায়, পিত্তাধিক্য দূর করে ও পাকস্থলী পরিষ্কার করে। চিনির সাথে মেশালে এটি উত্তম খাদ্যে পরিণত হয়। মূলত সকল নবী-রসূল আলাহিমুস সালামের খাদ্য ছিলো যব বা বার্লি । আর এ জন্যই মুসলমানদের জন্য তা উত্তম খাদ্য। বর্তমানে বাজারে শিশুদের জন্য যেসব solid food পাওয়া যায় তাতে যবের গুড়া অন্যতম উপাদান হিসেবে থাকে।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]