খেজুরের মাধ্যমে রোগ নিরাময় সম্পর্কে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী কী বলেছেন, অনুগ্রহপূর্বক বিস্তারিত বলবেন কি?

খেজুরের আরবি নামসমূহ হচ্ছে নাখল, রুতাব, বালহ, তামর। Botanical নাম হচ্ছে Phoenix dactylifera L. খেজুরের বর্ণনা আল কুরআনের সূরা নাহল, সূরা আন'য়াম ও সূরা মারিয়ামে রয়েছে। সমগ্র কুরআনে ২০ বার খেজুর কথাটি বর্ণনা করা হয়েছে। আনুমানিক ৩০০০ বছর আগে এর চাষবাদ হতো মধ্যপ্রাচ্যে।
খেজুর সম্পর্কে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক বক্তব্য রেখেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমাকে বলো যে কোন্ গাছটি একজন মুসলমানের সাথে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ? তখন সাহাবীগণ মরুভূমিতে জন্মে এমন বেশ ক'টি গাছের কথা উল্লেখ করেন। তখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এটি হচ্ছে খেজুর গাছ।” ৬৯২
হাদীসটি সহীহ আল বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ আছে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন যে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এমন একটি বৃক্ষ আছে, যা মুসলমানদের ন্যায় বরকতপূর্ণ ও কল্যাণময় । সেটি হলো খেজুর বৃক্ষ।” (সহীহ আল বুখারী) ৬৯৩
নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে খেজুর গাছের চারা রোপণ করতেন। আর এ জন্যই বরকতের জন্য মৃত ব্যক্তির কবরের চারপাশে খেজুর গাছের কচি ডাল মাটিতে রোপণ করতে হয়। কেননা এর মাধ্যমে কবরবাসী কবরের আযাব থেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও মুক্তি পাবে।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু খেজুরকে কাকি, ফুপা বা খালার সাথে তুলনা করে সম্মান করতে বলেছেন। কারণ খেজুরকে সেই মাটি থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে যে মাটি থেকে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছিলো। (আস-সূতী) ৬৯৪

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বেশ কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেন খেজুর দিয়ে নাবীয তৈরি সম্পর্কে। তিনি বর্ণনা করেন যে, “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য সাহাবীগণ রাতে খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রাখতেন। তিনি সেদিন ও তার পরের দিন সকালে সেই পানি পান করতেন। তার পরদিন বিকেলেও তিনি সেই খেজুর-পানি পান করতেন এবং অপরকেও তা পান করতে দিতেন। অবশিষ্ট পানি ফেলে দিতেন।” (সহীহ মুসলিম) ৬৯৫
হযরত সা'দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে আমি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি করে আজওয়া খেজুর (মদীনায় উৎপন্ন এক প্রকার উন্নতমানের খেজুর) ভক্ষণ করে, সেদিন তার ওপর কোনো বিষ বা যাদু কোনোরূপ ক্ষতি করতে পারবেনা।” (সহীহ আল বুখারী) ৬৯৬

অপরদিকে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মদীনার উঁচু এলাকার আজওয়া খেজুরে রোগ মুক্তির উপাদান রয়েছে।” (সহীহ মুসলিম) ৬৯৭ খেজুর একটি উপাদেয় ও জনপ্রিয় খাদ্য। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ঘরে খেজুর আছে, সে ঘরের লোকেরা কখনো ক্ষুধার্ত থাকবেনা।” (সহীহ মুসলিম) ৬৯৮

খেজুর সম্পর্কে আরেকটি হাদীস আছে যা হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রেখে থাকে, সে যেনো খেজুর দিয়ে ইফতার করে। যদি খেজুর পাওয়া না যায় তাহলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। কারণ পানি পবিত্র বা পবিত্রতা সৃষ্টিকারী।” (আন-নাসাঈ ও আত-তিরমিযী) ৬৯৯

প্রশ্ন-২৩১ : খেজুর নিয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে কি? খাদ্য ছাড়া আর কী কাজে এর ব্যবহার হয়?

উত্তর : হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে “তারা (অর্থাৎ তার মা ও অন্যান্যরা) আমাকে মোটা করার জন্য সব কিছুই করেছেন। কিন্তু আমি মোটা হইনি (অর্থাৎ আমি হালকা-পাতলাই থাকি)। তখন তারা (মা ও অন্যান্যরা) আমাকে শসা ও পাকা (তাজা) খেজুর একত্রে খেতে বলেন। ফলে আমার শরীরের ওজন বেড়ে যায়। আমি হৃষ্ট-পুষ্ট হয়ে উঠি (অর্থাৎ আমি মোটা হয়ে যাই)।' হাদীসটি আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ ও আন-নাসাঈ শরীফে উল্লেখ আছে। এটি ছিলো আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বিয়ের আগের ঘটনাসমূহের অন্যতম। এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে শসা ও পাকা খেজুর একত্রে খেলে শরীর মোটা হয়ে যাবে। পাতলা ও ছিপছিপে মানুষের জন্য এটি একটি আদর্শ চিকিৎসা। যে সব ইউনানি চিকিৎসক শরীর মোটা করার জন্য গ্যারান্টি দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন তারা এ ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করতে রোগীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
হজরত আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমার একটি সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু ছিলো। আমি তাকে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে গেলাম। তিনি তার নাম রাখলেন ইবরাহীম। এরপর একটি খেজুর চিবিয়ে রস নিয়ে তা শিশুটির মুখের ভেতর লাগিয়ে দেন। অতঃপর তার বরকতের জন্য নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'য়া করলেন। তারপর তাকে আমার নিকট ফেরত দিলেন । এ ছিলো আবূ মূসা আশ- আরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান।” ৭০১

হাদীসটি সহীহ আল বুখারী ও মুসলিমে আছে। অন্যত্র উল্লেখ আছে যে শিশুটি যখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দেয়া হলো তখন সে কাঁদতে ছিলো। যখন তিনি খেজুর চিবিয়ে রস তার মুখে দিলেন তখন তার কান্না থেমে যায়। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে নবজাতক শিশুদেরকে নিয়ে আসা হতো। তিনি তাদের বরকতের জন্য দু'য়া করতেন এবং খেজুর চিবিয়ে তাদের মুখে পুরে দিতেন।” (সহীহ মুসলিম) ৭০২ আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুও অনুরূপ দুইটি হাদীস বর্ণনা করেন। (সহীহ মুসলিম) ৭০৩

নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীসটির গুরুত্ব অনুধাবন করে যুক্তরাজ্যের বেশ ক'টি হাসপাতালে গবেষণা শুরু হয়। ফলাফলে জানতে পারা যায় যে চিনি বা গুড় শিশুদের ব্যথা দূর করে কান্নার সময় কমিয়ে দেয়। দেখা যায়, চিনির পরিমাণ যতো বেশি, তাদের কান্না ততো দ্রুত থেমে যায়। গবেষণায় বিভিন্ন পরিমাণের চিনির দ্রবণ তৈরি করে শিশুদের মুখের ভেতর দেয়া হতো। এর পরপরই তাদের আঙ্গুল থেকে রক্ত নেয়া হাতো। শিশুরা কান্না শুরু করতো ঠিকই, তবে শীঘ্রই তা থেমে যেতে চিনির দ্রবণের ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে। এই গবেষণাটির নাম ছিলো, "The analgesic effects (pain killing effects) of sucrose in full term infants; a randomized controlled trial." এ গবেষণার ফলাফল British Medical Journal, 1995 and Independent Newspaper-এ প্রকাশিত হয়। ইনটারনেট Search দিয়ে এ তথ্য সহজেই বের করা যেতে পারে। গবেষণায় আরো প্রমাণিত হয় যে, “১২% চিনির দ্রবণ শিশুদের খাওয়ানোর পর তাদের আঙুল থেকে রক্ত নেয়া হলে অথবা মুসলমানি করানো হলে তাদের যে কান্না হতো, তা শীঘ্রই থেমে যেতো।”

এই গবেষণা থেকে আমরা আরো জানতে পারি, শিশুদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বেদনানাশক হচ্ছে চিনি বা গুড়। সম্ভবত এ কারণেই দীর্ঘদিন যাবত আমাদের দেশে ঐতিহ্য চলে আসছে যে ছোট শিশুদের মুসলমানির সময় মুখে বেশি পরিমাণে গুড় বা চিনি দেয়া হয়। সত্যি, ভাবতে অবাক লাগে! নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এসব কথা বলেননি বা এ ব্যবস্থাপত্র দেননি যে "খেজুরে প্রায় শতকরা ৬০-৭০ ভাগ চিনি রয়েছে, যা শিশুদের কান্না থামাতে কার্যকর।"

প্রিয় দর্শক-শ্রোতা-পাঠক! নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব মূল্যবান বাণীর গুরুত্ব অনুধাবন করে খেজুর নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে আমরা জানতে পারি যে খেজুর ব্যথা-বেদনা দূর করতে, শরীরের ওজন বাড়াতে, ক্যান্সার ও হৃৎপিণ্ডের অসুখের চিকিৎসায় বেশ উপকারী।

প্রশ্ন-২৩২ : আর কী কী রোগে খেজুর ব্যবহার করা যায়?

উত্তর : হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট giddiness (মাথাঘোরা, মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা)-এ আক্রান্ত ব্যক্তি আসলে তিনি তাকে খেজুর খাবার উপদেশ দিতেন। কারণ রক্তে চিনির পরিমাণ কমে গেলে বা নিম্ন রক্তচাপ এ রোগের অন্যতম কারণ ।

এসব উপকার ছাড়াও খেজুরের ওপর গবেষণায় জানা যায় যে খেজুর vitamins ও minerals সমৃদ্ধ । It is a vitamin and mineral supplement. It is a muscle relaxant. এটি রাতকানা প্রতিরোধ করে। It stops night-blindness. খেজুরে ভিটামিন এ, বি-সহ nicotinic acid বিদ্যমান, যা pellegra প্রতিরোধ করতে সক্ষম। সন্তানসম্ভাবা মেয়েদের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী। It is also an ideal food duing confinement. হযরত মারিয়াম আলাইহিস সালামের জন্য বেহেশত থেকে খেজুর আসতো খাদ্য হিসেবে।

আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে একদা খেজুর খেতে

নিষেধ করেছিলেন। কারণ ঐ সময় হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ophthalmia বা চোখের রোগে ভুগছিলেন। কারণ ophthalmia রোগে আক্রান্ত রোগী খেজুর খেলে মাথাব্যথা হতে পারে এবং অন্যান্য খারাপ উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে date is contraindicated in eye sickness. আস্-সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “খেজুর ও pine kernel একত্রে খেলে সঙ্গমশক্তি বৃদ্ধি পায় ।” (আস্-সুয়ূতী) ৭০৪

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]