হাদীস শরীফে কীভাবে মেহেদি ব্যবহার করার বর্ণনা আছে? মেহেরবানী করে বলবেন যে কীভাবে আমরা মেহেদি ব্যবহার করতে পারি?

হাদীস শরীফে মেহেদি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তার কোনো বিস্তারিত বর্ণনা নেই। আমরা মেহেদি পাতা পিষে নিয়ে (smash) করে ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগিয়ে, পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতে পারি। ইনশা'আল্লাহ ব্যথা দূর হয়ে যাবে ।

সম্মানিত দর্শক-পাঠকমগুলি! যদি কারো পায়ে কোনো কারণে আঘাত লাগে, কোনো কাঁটা বা লোহা বিধে, সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করুন। মেহেদি শরীরের দূষিত রক্তকে শুষ্ক করে। মেহেদির ব্যথানাশক গুণাগুণের কারণ হচ্ছে মেহেদি পাতায় lawosone নামক এক প্রকার naphthoquinone আছে, যার জীবাণু নাশকারী গুণ রয়েছে এবং এই পদার্থটিই পাতার লালচে রংয়ের জন্য মূলত দায়ী। তাই মেহেদির একস্ট্রাকট বা paste যদি আহত স্থানে লাগিয়ে রাখা যায়, তাহলে এই জীবাণুনাশকারী গুণের কারণে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে।

এ ব্যাপারে আমি দর্শক-শ্রোতা-পাঠকমণ্ডলীকে একটি উপদেশ দিচ্ছি বা নিয়ম শিখিয়ে দিচ্ছি। আপনারা মেহেদির পাতা সংগ্রহ করে ধুয়ে নিয়ে পাটায় পিষে নিন। তারপর বাজার থেকে sodium benzoate কিনে সামান্য পানিতে মিশিয়ে (০.৫-১% দ্রবণ করে) তা হেনা paste এর সাথে মিশ্রিত করে রাখলে উক্ত paste অনেকদিন ব্যবহার করা যাবে।

আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিন ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা আসেনা- ১. কাফির মুর্দার নিকট, ২. জাফরান রং ব্যবহারকারী ব্যক্তির নিকট এবং ৩. অপবিত্র ব্যক্তির নিকট (তবে অসুস্থতাবশত গোসলের পরিবর্তে উযূ করলে তাতে কোনো ক্ষতি নেই)।” (আবূ দাউদ) ৭৩২

এ বিষয়ে আরো একটি হাদীস বর্ণনা করছি যা জাবির রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একদা হযরত আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পিতা আবূ কুহাফাকে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আনা হলো। তার মাথার ও দাড়ির সকল চুলই সাদা ছিলো ।” নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, “এই চুলের রং পরিবর্তন করো, তবে কালো রং পরিহার করো।” (সহীহ মুসলিম ও ইবনে মাজাহ) ৭৩৩

"Change this white colour, but avoid the black colour." এই হাদীসটি সহীহ মুসলিম ও ইবনে মাজাহ শরীফ থেকে নেয়া হয়েছে। কালো রংয়ের খিযাব ব্যবহার প্রসঙ্গে একটি হাদীস বর্ণনা করেন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেছেন যে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শেষ যামানায় কিছু লোক এমন হবে, যারা কবুতরের সিনার মতো কালো রংয়ের খিযাব ব্যবহার করবে। তারা জান্নাতের খুশবু পাবেনা।" (আবূ দাউদ) ৭৩৪

এ সকল হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, চুলে, দাড়িতে, গোঁফে খেযাব বা কালো রং ব্যবহার করা বৈধ নয়। অবশ্য কোনো কোনো উলামায়ে কিরাম কারো রোগের কারণে বা অন্য কারণে অপরিণত বয়সে চুল সাদা হয়ে গেলে স্ত্রীকে খুশি করানোর উদ্দেশ্যে কালো খেযাব ব্যবহার করা বৈধ বলেন। তদুপরি যারা ব্যাপকভাবে কালো খিযাবের ব্যবহার নাজায়েয বলেন তাদের মতের স্বপক্ষে পেশকৃত দলীল- প্রমাণগুলো শক্তিশালী বলে গণ্য। তবে চুল পাকার পরিণত বয়সে সর্বসম্মতিক্রমে কালো খেযাব ব্যবহার বৈধ হবে না। হ্যাঁ, জিহাদের ময়দানের বিধান ব্যতিক্রম, যেহেতু সেক্ষেত্রে কালো খেযাব ব্যবহার বৈধ । সাহাবায়ে কিরামের একটা বৃহৎ অংশ জিহাদের উদ্দেশ্যে চুলে কালো খেযাব ব্যবহার করতেন। (যাদুল মা'আদ ও আত-তা'লীকুল মুমাজ্জাদ আলা মুয়াত্তা মুহাম্মাদ লিল লাখনাবী)

অবশ্য সাদা চুল রাখার তুলনায় কালো ব্যতীত অন্য কোনো খেযাব ব্যবহার করা মুস্তাহাব, যা স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। উল্লেখ্য যে, খেযাব যদি চুলে আবরণ সৃষ্টি করে যে, নখ দিয়ে ঘষলে আবরণ উঠে আসে সেক্ষেত্রে খেযাব লাগানো অবস্থায় উযূ-গোসল সহীহ হবেনা, পবিত্রতা অর্জন হবেনা। তখন নামায আদায়ও সহীহ হবেনা। এখানে আরেকটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তাহলো, আমাদের সমাজে অনেক পুরুষকে হাতে-পায়ে মেহেদি লাগাতে দেখা যায়। এ কাজটি বৈধ নয়। যেহেতু হাদীসে শুধুমাত্র মহিলাদেরকে হাতে-পায়ে মেহেদি লাগানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে, পুরুষদের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অপরদিকে আমর ইবনে শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদা চুল উপড়াতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এটা মুমিনের নূর।" (আত-তিরমিযী) ৭৩৫

প্রশ্ন-২৪৭ : খ্রিস্টান বা ইয়াহুদিরা চুলে মেহেদি ব্যবহার করে কি?

উত্তর : হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসের মাধ্যমে আমি এর উত্তর দিচ্ছি। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানগণ (চুলে) মেহেদি রং ও খিযাব ব্যবহার করেনা। অতএব তোমরা (খিযাব লাগিয়ে) তাদের বিপরীত (কাজ) করো।” (সহীহ আল বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ ও ইবনে মাজাহ) ৭৩৬

প্রশ্ন-২৪৮ : মুহতারাম, আপনি যে দুটো রংয়ের কথা বললেন তার সাথে আমাদের সম্মানিত দর্শক- শ্রোতামণ্ডলীকে পরিচয় করিয়ে দেবেন কি?

উত্তর : হেনা হচ্ছে মেহেদি, যা আমরা সবাই চিনি। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। অনেকে বাড়ির আঙিনায় এ গাছ লাগিয়ে থাকেন। এর ব্যবহার আপনারা সবাই জানেন। বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় হাতে বা পায়ে দেয়ার জন্য। আরবি নাম ফাগিয়া, আর হিন্দি ও উর্দু নাম মেহেদি বা মেন্দি । বৈজ্ঞানিক নাম Lawsonia inermis. এটি Lythraceae family-এর গাছ।

নীলের ইংরেজি নাম হচ্ছে Indigo। আরবি নাম কাতাম, কুতম বা ওয়ামাহ। বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Indigofera tinctoria L. এটি Papilinoceae প্রজাতির গাছ। এ গাছটিও বাংলাদেশে পাওয়া যায়। যারা botanist বা ইউনানি হাকিম, তারা এ গাছটি আপনাকে চিনিয়ে দিতে পারবেন।

প্রশ্ন-২৪৯ : মুহতারাম, এবার সম্মানিত দর্শক-শ্রোতা-পাঠকমণ্ডলীর উদ্দ্যেশে কিছু বলুন যে এসব হাদীস থেকে আমরা কী শিক্ষা লাভ করি? বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাসহ বলুন।

উত্তর : প্রথম শিক্ষা হচ্ছে, মেহেদি ও কাতাম এ দুটো রংই প্রাকৃতিক বা natural dye, যা সম্পূর্ণ নিরাপদ, চুলের কোনো ক্ষতি করেনা। কিছুদিন পর নিয়মিত গোসলে ও অন্যান্য পরিচ্ছন্নতায় সাবান ব্যবহার করলে এমনিতেই এ রং চলে যায় । এগুলো বাজারের কৃত্রিম চুলের রংগুলোর চেয়ে অনেক উত্তম ।

মেহেদীর বিকল্প কৃত্রিম বা রাসায়নিক রংগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করার পর এর ব্যবহার বন্ধ করলে দেখা যাবে যে, চুল আগের চেয়ে অনেক বেশি সাদা হয়ে গেছে। কারণ চুলের সাথে এসব রংয়ের কিছু ক্রিয়া- বিক্রিয়া ঘটে থাকে। এ হাদীসগুলো থেকে জানা যায় যে মেহেদি চুলের রং লালচে বা বাদামি করে, আর নীল বা ওয়াসমাহ্ সাদা চুল কালো করে থাকে। আর এ দুইয়ের সংমিশ্রণে যে রং তৈরি হয় তা এ দুটি রংয়ের মাঝামাঝি একটি রং।

হাদীসগুলোর আরো একটি শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে, আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুলে কালো রং দেয়া পছন্দ করতেন না। কিন্তু যদি কালো ও লাল অথবা কালো ও বাদামি রং একত্রে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়, তাতে আপত্তি নেই। He disallowed dyeing the hair black, but if the black colour is mixed with henna or katam, then there is no harm in it.

ইমাম আন-নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে পুরুষদের জন্য চুলে হলুদ ও লাল রং দেয়া মুস্তাহাব। আর কালো রং দেয়া হারাম অথবা মাকরূহ। তবে হাদীস বিশারদগণ শুধুমাত্র জিহাদের জন্য চুলে কালো রং ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করে তারা দলিল হিসেবে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন যা বর্ণনা করেছেন সুহাইব আল-খায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন যে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা যা দিয়ে চুল রঙিন করো তার মধ্যে এই কালো খিযাব খুবই উত্তম। তাতে তোমাদের প্রতি নারীদের আকর্ষণ আছে এবং জিহাদে তা তোমাদের শত্রুদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টিকারী।” (ইবনে মাজাহ) ৭৩৭

বিশ্ববিখ্যাত লেখক ও হাদীস বিশারদ হাফিয ইবনুল কাইয়িম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমাদের সমাজে মাঝে মাঝে অন্যকে ধোঁকা দেয়ার জন্য চুলে কালো খিযাব দেয়া হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো বয়স্কা মহিলা তার চুল খিযাবের সাহায্যে কালো করেন, তিনি তখন তার স্বামী বা অন্য লোককে ধোঁকাই দিয়ে থাকেন। অপরদিকে কোনো বয়স্ক পুরুষ যদি চুল কালো করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তিনি অন্য মহিলা বা নিজের স্ত্রীকে ধোঁকা দেন। এটি এক প্রকার প্রতারণা বা cheating বিধায় তা নিষেধ। এটি বন্ধ হওয়া উচিত। It should be stopped. তিনি আরও বলেন, যদি চুল কালো করার পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য বা ধোঁকা দেবার উদ্দেশ্য না থাকে, তবে তা জায়েয। ইবনে জারির রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বর্ণনা মতে আমরা জানতে পারি যে “হযরত ইমাম হুসাইন এবং ইমাম হাসান তাঁদের চুলে কালো রং দিয়েছিলেন।” (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ) তবে মূলত তাঁরা জিহাদের উদ্দেশ্যে কালো খিযাব ব্যবহার করতেন। তাছাড়া অনেকে বলেছেন যে, তাঁরা কাতাম বা খয়েরী রংও ব্যবহার করতেন।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]