মিসওয়াকের ব্যবহার সম্পর্কে নবীজির উপদেশ সম্পর্কে জানলাম। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখন কখন বা কয়বার মিসওয়াক করতেন ?

উত্তর : এ প্রশ্নের উত্তরে আমি বেশ ক'টি সহীহ হাদীস আলোচনায় আনবো, যা থেকে বিষয়টি সম্পর্কে আমরা পরিষ্কার ধারণা পাবো ইনশা'আল্লাহ। বস্তুত দাঁত ও মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার

ব্যাপারে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সারা জীবনের অন্যতম একটি নিয়মিত আমল হলো মিসওয়াক করা। আমির ইবনে রবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে যখন রোযা রাখতেন তখন সে মাসে আমি বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মিসওয়াক করতে দেখেছি।” (সহীহ আল বুখারী) ৭৭৯

আরক গাছ থেকে তৈরি মিসওয়াক (Miswak from Salvadora persica plant )

হযরত হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি হাদীস বর্ণনা করেন, যা সহীহ আল বুখারী শরীফে উদ্ধৃত আছে। হযরত হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে ঘুম থেকে উঠতেন তখন তিনি মিসওয়াক দ্বারা মুখ পরিষ্কার করতেন।” (সহীহ আল বুখারী) এ হাদীসে নামায বা তাহাজ্জুদ নামাযের কথা নেই। ৭৮০
হযরত হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন, “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়তে উঠতেন, তখন তিনি মিসওয়াক দিয়ে তাঁর মুখ পরিষ্কার করতেন।” (সহীহ মুসলিম ও ইবনে মাজাহ) ৭৮১

সুরাইহ ইবনে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “আমি হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কী কাজ করতেন? তিনি জবাব দিলেন, সর্বপ্রথম তিনি মিসওয়াক করতেন।” (সহীহ মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও আন-নাসাঈ) ৭৮২ হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরো বর্ণনা করেন, “ইন্তেকালের পূর্বেও আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক ব্যবহার করেছেন।" (সহীহ আল বুখারী) ৭৮৩

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায় মিসওয়াক করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু রোযা রেখে সকালে ও বিকালে মিসওয়াক করতেন। ইবনে শিরীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রোযা অবস্থায় কাঁচা রসযুক্ত মিসওয়াক ব্যবহারেও কোনো ক্ষতি নেই।” (সহীহ আল বুখারী) ৭৮৪

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি হাদীস বর্ণনা করেন । তিনি বলেন, “একদা তিনি আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট রাত যাপন করেছিলেন। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ রাতে জেগে বাইরে গিয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের এ আয়াতটি (ইন্না ফি খালকিস্ সামাওয়াতি ওয়াল আর.............ওয়াক্বিনা ‘আযাবান্নার) পাঠ করলেন। এরপর ঘরে ফিরে এসে মিসওয়াক করলেন ও উযূ করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে নামায পড়লেন।” (সহীহ মুসলিম) ৭৮৫ উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে আমরা জানতে পারি যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখ ও দাঁতের যত্নে মিসওয়াক-এর প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করতেন। তিনি নিজে নিয়মিত মিসওয়াক করতেন এবং সাহাবাদেরও মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতেন ।

প্রশ্ন-২৬৯ : এবার মিসওয়াকের উপকারিতা বা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু আলোচনা করুন ।

উত্তর : মিসওয়াকের উপকারিতা অনেক এবং তা বিভিন্ন প্রকারের। এটি দাঁতকে পরিষ্কার রাখে এবং মুখমণ্ডলকে দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত করে এবং তা পরিচ্ছন্ন রাখে। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মিসওয়াক মুখকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে এবং মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা'য়ালার সন্তুষ্টি বিধান করে।" (সহীহ আল বুখারী ও আন-নাসাঈ) ৭৮৬ অপরদিকে আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায় যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা মিসওয়াক করো। কেননা মিসওয়াক মুখ পবিত্র ও পরিষ্কার করে এবং মহান প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপায়।” (ইবনে মাজাহ) ৭৮৭

নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, “তোমরা কুরআন তিলওয়াতের জন্য মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখো।" (মুসনাদে আল বাযযার) ৭৮৮

হযরত আলী ইবনে তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “তোমাদের মুখ হলো কুরআনের রাস্তা । অতএব তোমরা দাঁতন (মিসওয়াক করে তা পবিত্র ও সুগন্ধিযুক্ত করো।” (ইবনে মাজাহ) ৭৮৯

বস্তুত মুখ পরিষ্কার রাখার বড় মাধ্যম বা উপায় হচ্ছে দাঁত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। যদি দাঁত পরিষ্কার না থাকে বা দাঁতে কোনো রোগ-ব্যাধি থাকে, তাহলে তা বিশ্রী দেখায় এবং মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। আশপাশের লোকেরা এতে ক্ষুব্ধ হয় ও তিরস্কার করে। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি খানা খাবে, সে যেনো খিলাল করে।” (দারিমী)

খিলাল করার মাধ্যমে দাঁতের গোড়ায় আটকে থাকা খাদ্যাংশ বের হয়ে যায়- তা বের না হলে মুখ দুর্গন্ধযুক্ত হয় ও এগুলো দাঁতকে নষ্ট করে ফেলে ।

মিসওয়াকের উপকারিতা সম্পর্কে আরো একটি রিওয়ায়াত পেশ করেন হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বর্ণনা করেন যে, “মিসওয়াক ব্যবহার করলে ১০ ধরনের উপকার পাওয়া যায়।” (সুনানে দারে কুতনী, জামে সগীর ও আস-সুয়ূতী) ৭৯১

এ উপকারগুলো হচ্ছে মুখে সুঘ্রাণ আসা, মুখের অভ্যন্তরে gumকে শক্তিশালী করা, phlegm দ্রবীভূত করা, দাঁত থেকে scaling দূর করা, পেটকে খাদ্য গ্রহণের জন্য উপযোগী করে তোলা, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, মানুষের প্রতিভা বৃদ্ধি পাওয়া, ফেরেশতাদের খুশি করতে পারা ইত্যাদি। মিসওয়াক নিঃশ্বাসকে সুগন্ধিযুক্ত করে, gingivaকে শক্তিশালী করে এবং dental caries প্রতিরোধ করে। যারা নিয়মিত মিসওয়াক ব্যবহার করেন তারা দাঁতের ক্ষয়রোগ থেকে রক্ষা পান। এছাড়া মিসওয়াক দাঁতের উপরিভাগে যে scale পড়ে, তা থেকে রক্ষা করে এবং জীবাণুযুক্ত প্লেক দূর করে।

মিসওয়াকের অপরিসীম গুরুত্বের কথা অনুধাবন করে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মিসওয়াক শেষে উযূ করে নামায পড়া মিসওয়াক না করে নামায পড়া অপেক্ষা ৭০ গুণ উত্তম।” (মুসনাদে আহ্মাদ ও মুসতাদরাকে হাকিম) ৭৯২

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহ আনহুর ছেলে আব্দুর রহমান তার পিতা থেকে জেনে বলেন, “প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য শুক্রবার গোসল করা, মিসওয়াক ব্যবহার করা, আর সম্ভব হলে সুগন্ধি ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক।” (সহীহ মুসলিম) ৭৯৩

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]