এবার অসুস্থ ব্যক্তির ইবাদত নিয়ে আলোচনা করুন।

আমরা জানি, অসুস্থ ব্যক্তি রোগের তীব্রতার কারণে ইবাদতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঠিকমত সম্পন্ন করতে পারেননা। যেমন উযূ করতে না পারা, দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা, তীব্র ব্যথা-যন্ত্রণায় ছটফট করা ইত্যাদি কারণে ইবাদতের অনেক অত্যাবশ্যকীয় বিষয় বাদ পড়ে যায়। ফলে স্বভাবতই সে অনেক নেকি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সুনির্দিষ্ট বাণী আছে কী?
উত্তর : আপনি ঠিকই বলেছেন। রোগের কারণে মানুষের বাহ্যিক অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তাই স্বাভাবিকভাবে রোগী অনেক ইবাদত করা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ্ তাই তার প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানে বলে দিয়েছেন যা আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ্র কোনো বান্দা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা ভ্রমণরত অবস্থায় থাকে, তখন তার আমলনামায় সেই পরিমাণ নেকিই লেখা হয়, যে পরিমাণ আমল সে সুস্থ থাকাকালে করতো।" (সহীহ আল বুখারী ও আবূ দাউদ) ৫৩
সত্যি! আল্লাহ্ যে অত্যন্ত মহান ও দয়াময়, এ হাদীস তারই দিকে ইঙ্গিত করে। এই হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি, যদি অসুস্থতায় অক্ষমতার কারণে কোনো নেক আমল বাদ যায়, তবে তার সওয়াব সে যথারীতি পেয়েই যাবে। আর রোগের সওয়াব ও অন্যান্য পাপমুক্তির সুযোগ তো আলাদাভাবে সে পাবেই। আলহামদু লিল্লাহ্। তবে সুস্থ হলে ছুটে যাওয়া ফরয-ওয়াজিব আমলের কাযা আদায় করতে হবে। যেহেতু হাদীসে নফল আমলই উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে, ফরয-ওয়াজিব আমল কোনো অবস্থাতেই ছেড়ে দেয়ার সুযোগ নেই। হ্যাঁ, যদি রোগের ধরন এমন হয় যার ফলে ধাবাবাহিকভাবে ছয় ওয়াক্ত পরিমাণ সময় অজ্ঞান থাকে কিংবা জ্ঞান-বিবেক-বুদ্ধি ও বিচার করার শক্তি না থাকে, সে অবস্থায় নামায-রোযার কাযা করতে হবেনা ।
অসুস্থ ব্যক্তি নিজেই নিজের জন্য দু'য়া করবেন, এটাই উত্তম। তিনি নিজের অসুস্থতার নিরাময়ের জন্য এভাবে দু'য়া করতে পারেন, “হে আল্লাহ্! অসুস্থতার নিয়ামতকে সুস্থতার নিয়ামত দ্বারা বদলে দিন।" এ ধরনের দু'য়া আমাদের বুযুর্গ ব্যক্তিগণ করে থাকেন।
আমাদের বুযুর্গ ব্যক্তিগণ অসুস্থতা ও সুস্থতা উভয়কেই নিয়ামত আখ্যা দিয়েছেন। অসুস্থতায় কাতর হয়ে কারো আবোল-তাবোল কথাবার্তা বলা বা অসুস্থতার জন্য কারো প্রতি অভিযোগ করা মোটেও ঠিক নয় । আমাদের মধ্যেও কিছু কিছু লোক আছে, যারা বিভিন্ন সময় আল্লাহ্র প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আর বলে থাকে যে আল্লাহ্ আর কাউকে পেলোনা, আমাকে এতো কষ্টে ফেললো? এসব কথাবার্তা মোটেই কাম্য নয়। এটি সত্য যে অসুস্থতা মানুষকে দুঃখ-কষ্টে ফেলে থাকে। তবে তাই বলে ধৈর্যধারণ না করে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা কিছুতেই কাম্য নয়। কারণ সুস্থতা লাভ করার জন্য ডাক্তারের নিকট যাওয়া ও তার ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করা এবং চিকিৎসা নেয়া সবই রোগী বা তার আত্মীয়দের ইখতিয়ারাধীন। কিন্তু সুস্থতা লাভ করা রোগীর ইখতিয়ারাধীন নয়। বড় জোর রোগী বলতে পারে, আমার কষ্ট-যন্ত্রণা ভয়ানক । আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। হে আল্লাহ্! আমার কষ্ট দূর করে দিন। কারণ সেখানে আল্লাহ্র দু'জন ফেরেশ্তা সর্বদা নিয়োজিত থাকেন, যারা অসুস্থ ব্যক্তির কথাবার্তা আল্লাহ্র নিকট পৌঁছে দেন। কাসেম ইবনে মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার ইন্তিকালের পূর্ব মুহূর্তে তীব্র মাথাব্যথার সময় বলেছিলেন, “ব্যথায় মাথা গেলো! হায় মাথা।" (সহীহ আল বুখারী)
28
এর বাইরে আর কিছু বলেননি। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি অভ্যাস ছিলো, যখন তিনি কোনো পীড়িত ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন অথবা কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে যদি তাঁর নিকট আনা হতো, তখন তিনি এভাবে দু'য়া করতেন, “হে আল্লাহ্! হে সকল মানুষের রব! তার কষ্ট দূর করে দিন। আপনি তাকে আরোগ্য দান করুন। আপনিই আরোগ্য দানকারী। আপনার নিরাময়ই আসল নিরাময়। আপনি এমন নিরাময় দান করুন, যার পর আর যেনো কোনো কষ্ট বা রোগ অবশিষ্ট না থাকে।” (সহীহ আল বুখারী) প্রশ্ন-২২ : মুমূর্ষু রোগীর করণীয় কী হতে পারে? তিনি কী ধরনের দু'য়া করবেন?
৫৫
উত্তর : মানুষসহ প্রত্যেক জীবিত প্রাণীকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। তাই যিন্দেগির এ
শেষ মুহূর্তটি সবার জন্যই বড় কঠিন পরীক্ষা। আমাদের প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরজগতের সফরের জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তা হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাই ভালো জানতেন । তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর অন্তিম মুহূর্তে এ কথা বলতে শুনেছি, “আল্লাহুম্মাগ ফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াল হিক্কনী বির্ রফীলি আ'লা ।”
“হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার ওপর রহমত দান করুন, আর আমাকে (আমার) সর্বশ্রেষ্ঠ (উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন) বন্ধুর সাথে মিলিয়ে দিন।” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম) ৫৬ হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরো বলেন, আমার নিকট পানি ভর্তি একটি পেয়ালা ছিলো। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত মুবারক পেয়ালার মধ্যে ডুবাচ্ছিলেন এবং স্বীয় মুখমণ্ডলের ওপর সে পানি লাগাচ্ছিলেন আর মুখে উচ্চারণ করছিলেন, “হে আল্লাহ্! আমাকে মৃত্যুর কঠোরতা থেকে (মৃত্যু কষ্ট ও মৃত্যু যন্ত্রণা লাঘবে) সাহায্য করুন।” (আত-তিরমিযী) ৫৭
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত বিভিন্ন রিওয়ায়াত থেকে আরো জানা যায়, মুমূর্ষু ব্যক্তি অথবা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি এভাবে দু'য়া করতে পারেন, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল 'আযীমুল 'আলীম। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ওয়ারব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম।”
“আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মা'বূদ নেই, যিনি মহান ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মা'বূদ নেই, যিনি এই পৃথিবী ও আকাশসমূহের মালিক এবং মহা সিংহাসনের মালিক।" (সহীহ আল বুখারী) ৫৮ সম্মানিত দর্শক-শ্রোতা-পাঠক! এ দুটো রিওয়ায়াতের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে অন্তিম মুহূর্তে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাবার্তা কি ছিলো। আর আমরা কী করি? অনেকেই মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট থেকে জমি লিখে নেয়ার জন্য জমির দলিল নিয়ে হাযির হই। আবার অনেকেই মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট ক্ষমা চাই; সেও মাফ চায়। বস্তুত আমার আপনার মাফ করা না করাতে তেমন কী-ই বা আসে যায়। আল্লাহ্ যেনো তাকে মাফ করেন এটাই বড় কথা। তবে ঋণ থাকলে তার জন্য ঋণ প্রদানকারী ব্যক্তির নিকট মাফ চাওয়া উত্তম। কারণ ঋণগ্রহণকারী ব্যক্তিকে ঋণদাতা ক্ষমা না করলে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা নাও করতে পারেন কিংবা ক্ষমা করতেও পারেন । তবে সেটা আল্লাহ্র ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]