যুবক-যুবতীদের মধ্যকার প্রেম ও প্রেমে ব্যর্থতাও এক প্রকার মনের রোগ। এ ধরনের মনের রোগ বা হৃদয়ের ব্যাধির কোনো ওষুধ আছে কি?

আপনি ঠিকই বলেছেন যে, প্রেমে পড়া ও প্রেমে ব্যর্থতা এক প্রকার মনের রোগ। শুধু তাই নয়,

এ রোগ ভয়ানক মারাত্মক এবং এর প্রভাব ব্যক্তি, পরিবার এমনকি সমাজের ওপরও পড়ে। পরকীয়া প্রেম আরো মারাত্মক। নিজের স্বামী বা স্ত্রী ও সন্তান পরিজন রেখে অন্যত্র চলে যায়। ঘটনাক্রমে যদি কোন যুবক-যুবতীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তবে তার শেষ পরিণতি অর্থাৎ বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত এ রোগের অন্য কোন চিকিৎসা সাধারণত থাকেনা।

যখন কোনো যুবক শুধু অবাধ মেলামেশার কারণে কোনো যুবতীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে তখন বিয়ের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর প্রস্তাব থাকলেও তাতে সে রাজি হয়না। কারণ, অন্তরের ব্যাধি। ঠিক তেমনি কোনো মেয়ে যদি কোন ছেলের প্রেমে পড়ে, তখন তার বিয়ের জন্য অনেক আকর্ষণীয়, উত্তম ও যোগ্য প্রস্তাব তার পিতামাতা নিয়ে এলেও সে তার প্রেমিককে বিয়ে করাই শ্রেয় বলে মনে করে, ফলাফল যাই হোক না কেনো । এটাই বাস্তব সত্য ।

অবিবাহিত যুবক-যুবতীদের মধ্যকার সম্পর্ককে সাধারণত প্রেম বলা হয়। ইংরেজিতে একে বলা হয় Passion বা infatuation. এ ধরনের প্রেম বা ভালোবাসায় উভয়ের উভয়ের প্রতি তীব্র আকর্ষণ থাকে, যার অর্থ ভালোবাসার তীব্র অনুভূতি, প্রবল অনুরাগ যা তীব্র অনভূতির বহিঃপ্রকাশ। এই infatuation-কে অন্তরের ব্যাধি বা illness of the heart বলা যায়। এটি এমন একটি রোগ, যা অন্তরকে প্রবলভাবে আন্দোলিত করে। তবে এই রোগের উপসর্গ, কারণসমূহ, নিরাময় ইত্যাদি সব কিছু পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি একটি বিশেষ ধরনের রোগ। তবে এই রোগটি যখন তীব্র আকার ধারণ করে, তখন অধিকাংশ চিকিৎসক তা নিরাময় করতে ব্যর্থ হন । অপরদিকে যারা এই রোগে আক্রান্ত, তারাও পারিপার্শ্বিক কারণে এই রোগের ভয়াবহতা ও ফলাফলও সহ্য করতে পারেনা। বস্তুত এই passion রোগটি ঐসব হৃদয়কেই আক্রমণ করে বসে যে হৃদয় আল্লাহ্ ভয়ে ভীত নয় এবং যে হৃদয়ে আল্লাহ্র প্রতি ভালোবাসা উপেক্ষিত হয় ।

প্রশ্ন- ২৮২ : অন্তরের ব্যাধি বা মনের রোগ সৃষ্টি তথা passion রোগ দেখা দেবার কারণ কী? কীভাবে এ রোগের উৎপত্তি হয় বা বিস্তার ঘটে? অনুগ্রহ করে বাস্তবতার নিরিখে বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন।

উত্তর : অন্তরের ব্যাধি বা infatuation গড়ে উঠে বাড়তি বয়সের ছেলেমেয়েদের বা যুবক-যুবতীদের অবাধ মেলামেশার ফলে। Uncontrollled movement together বা free mixing-এর জন্য। একই সাথে আড্ডা দেয়া, কর্মক্ষেত্রে, একই প্রতিষ্ঠানে, অনেক সময় পাশাপাশি টেবিলে কাজ করার সুবাদে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি অথবা একই ক্লাসে অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রথমে পরিচয় ও পরে সখ্যতা গড়ে ওঠা ইত্যাদি এর অন্যতম কারণ। এসব পরিচয় ও সখ্যতাই পরবর্তীতে passion-এ রূপ নেয়। যারা যৌবনে পদার্পণ করে, তাদের মাঝে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, আকাঙ্ক্ষা, প্রেম বা ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়া স্বভাবজাত ধর্ম, অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে আমাদের দেশের রক্ষণশীল সমাজে এটি অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। আমাদের নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একজন মহিলাকে বিয়ে করার সময় চারটি গুণ বিবেচনা করতে হয়- তার ধন-সম্পদ, তার বংশ মর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য ও তার ধর্মপরায়ণতা। তবে ধর্মপরায়ণা পাত্রীকেই তোমার বিয়ে করা উচিত। এতে তোমার কল্যাণ হবে (অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে)।" ৮১২ এটি সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীস।

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একথার ওপর ভিত্তি করে আমাদের পিতা-মাতা তাদের ছেলেমেয়ের বিয়ের ব্যাপারে এ চারটি গুণ যার মাঝে বিদ্যমান, এমন বর বা কনে তালাশ করেন। পাত্র- পাত্রী নির্বাচনে অনেক কিছু তারা দেখে-শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। মোটকথা সব পিতা-মাতা তথা অভিভাবকগণই তাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে নিজেদের পছন্দ মোতাবেক নিজস্ব মত ও পথ অনুযায়ী নিজস্ব তত্তাবধানে সু-সম্পন্ন করতে চান। তারা সবাই ছেলেমেয়েদের কল্যাণই চান, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ বিয়ের পর ছেলেমেয়েরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করবে এবং তাদের উত্তরাধিকারী হবে। তাই ছেলেমেয়েরা সাধারণত পিতা-মাতা তথা অভিভাবকদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কিছু করে ফেলতে সাহস পায়না বা করা উচিত নয়।

পিতা-মাতা কোনো বিয়েতে যদি রাজি না থাকেন বা প্রবল আপত্তি জানান অথবা বিয়ে মেনে না নেন তাহলে এই passion-এ আক্রান্ত যুবক-যুবতীদের জীবন ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। এ অবস্থায় অনেক পিতা-মাতা ছেলে-মেয়েদের বাড়িতে ঢুকতেই দেননা। ফলে এই রোগে আক্রান্তরা বাধ্য হয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে court marriage করে বসে অথবা অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করে, যেমন live together without marriage ইত্যাদি। আর উপার্জনশীল না হলে এরা মানবেতর জীবনযাপন শুরু করে । অপরদিকে ব্যর্থ প্রেমের প্রভাব সহ্য করতে না পেরে কেউ আবার আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। এরূপ উদাহরণ আমাদের সমাজে ভুরি ভুরি আছে। তাই preventive measures হিসেবে কিছু ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

কাজেই আমার পরামর্শ, ঘটনাক্রমে যদি কোনো দু'জনের ভেতর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বা মন দেয়া- নেয়া হয় অথবা ভালোবাসার বীজ বপন হয়ে তা ধীরে ধীরে প্রেমের দিকে ধাবিত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়, তখন অনতিবিলম্বে বিষয়টি তাদের পিতা-মাতার নজরে আনা উচিত বা তাদের সামনে পেশ করে পূর্বাহ্নেই সম্মতি বা অনুমতি নেয়া উচিত। আর অনুমতি পেলেই সামনে অগ্রসর হওয়া যেতে পারে। যদি সম্মতি না দেন তবে যে কোনো মূল্যেই হোক সেই মুহূর্তেই সম্পর্কের ইতি টানা উচিত অর্থাৎ উভয়কেই কেটে পড়া উচিত । নতুবা ultimate উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য তাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে, যা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আর যদি সম্মতি মিলেও যায়, তখন ব্যাধিটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবার পূর্বেই তাদের বিয়ে করে ফেলা উচিত। নতুবা এ প্রেমই তাদেরকে শেষ পর্যন্ত বিবাহ বহির্ভূত কাজ তথা অশ্লীলতা, ব্যভিচার বা যিনার দিকে ধাবিত করবে। কারণ শয়তান তো সেখানে catalyst হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত থাকে । অতএব সাধু সাবধান! এ ব্যাপারে হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোনো পুরুষ মহিলার সাথে নির্জনে বাস করলে শয়তান তাদের তৃতীয়জন (সঙ্গী) হয় ।” (আন-নাসাঈ কুবরা) ৮১৩

হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে স্ত্রীলোক আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে, তার জন্যে সাথে কোনো মাহরাম পুরুষ ছাড়া একদিনের দূরত্বের সফর করাও বৈধ নয়।” (সহীহ মুসলিম) ৮১৪

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী ও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাও একই ধরনের হাদীস বর্ণনা করেছেন ।

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে সাথে মাহরাম ব্যক্তি ছাড়া কোনো পুরুষ যেনো কোনো মহিলার সাথে নিরিবিলি স্থানে সাক্ষাৎ না করে এবং কোনো স্ত্রীলোক যেনো কোনো মাহরাম লোক ব্যতীত একাকী সফর না করে।” (সহীহ মুসলিম) আর মুসনাদে আহ্লাদে যে হাদীসটি উদ্ধৃত হয়েছে, তার ভাষাটিও প্রায় একই : “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে, সে যেনো কিছুতেই কোনো মহিলার সাথে বিবাহ অযোগ্য কোনো পুরুষ আত্মীয় বা মাহরাম ব্যতীত নির্জনে মিলিত না হয়। কারণ তৃতীয়জন সেখানে থাকে, সে হলো শয়তান।" (মুসনাদে আহমাদ)
আর শয়তানের কাজ যে কি তা তো আপনারা সবাই জানেন। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীসের ওপর ভিত্তি করে ইসলাম বিয়ের আগে boy friend, girlfriend relationship নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। Islam does not support LBW. It supports LAW. এখানে LBW মানে leg before wicket নয়, এটি হচ্ছে love before wedding. আর LAW-এর অর্থ হচ্ছে love after wedding. তাই বিয়ের পর আপনি স্ত্রীকে যতো বেশি ভালোবাসবেন আপনার দাম্পত্য জীবন ততো বেশি সুখের হবে। আপনার ছেলেমেয়েদের মাঝে ততো বেশি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। তাই যারা বিয়ের আগে গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়ে এবং পিতা-মাতার অসম্মতিতে তাদের প্রেমকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে ব্যর্থ হয়, তারাই আত্মহত্যার মতো জঘন্যতম পথ বেছে নেয় । সুতরাং যথাসময়ে এ রোগের চিকিৎসা হওয়া উচিত।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]