যদি পিতা-মাতা বা অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়ের প্রেম ও বিয়েতে রাজি না হন তাহলে কী উপায় আছে এই passion বা অন্তরের ব্যাধি নিরাময়ের? অর্থাৎ কী উপায়ে এই হৃদয়ের রোগের চিকিৎসা করা যেতে পারে?

উত্তর : প্রেম ও ভালোবাসাকে আমরা কয়েকটি প্রকারে ভাগ করতে পারি। কোনো বস্তুকে ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসার বস্তুটিকে পাওয়ার অদম্য বাসনা বা আকাঙ্ক্ষা ভালোবাসার একটি ধরন। এ ধরনের ভালোবাসায় দুটো উপাদানের ভিতর একটি যদি অনুপস্থিত থাকে, তাহলে সে ভালোবাসার অস্তিত্ব বা মূল্য নেই । That is passion does not exist.

প্রথম ধরনের ভালোবাসা হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং রসূলের প্রতি অনুরাগ বা মহব্বত। এ ভালোবাসাও গভীর ও তীব্র হতে পারে । অনেকে আল্লাহর জন্য এবং তার জীবন বিধান এ যমীনে কায়েমের জন্যে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননা। জিহাদে তাই মুসলমানরা উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবনপণ যুদ্ধ করেন। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি প্রেম-ভালোবাসাও মানুষকে নিজের ঘর-বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে । আমরা দেখেছি ইসলামের সূচনালগ্নে কিভাবে মানুষ নিজের ঘরবাড়ি, প্রিয়জন ত্যাগ করে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হিজরত করেছেন; ইতিহাস তার সাক্ষী। তেমনি দেশের প্রতি ভালোবাসা অর্থাৎ দেশপ্রেম আছে বলেই মানুষ মাতৃভূমির জন্য জান দিতে উদ্বুদ্ধ হয়, যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, শাহাদাত বরণ করে। তাই বর্তমানেও রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত আর ভালোবাসা মানুষকে ব্যাকুল করে তোলে । আপনি দেখুন, রসূল সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে কটাক্ষ করে, তাঁর নির্মল চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করে, তাঁকে কটূক্তি করে কেউ শান্তিতে থাকতে পারে কিনা? অনেকের বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। ইদানিং আমাদের দেশে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কটাক্ষ করা ও তাঁর প্রতি কটূক্তি করা এই সরকারের সময় বেড়ে গিয়েছে । অথচ সরকার দেখেও দেখেনা, শুনেও শোনেনা ।

তৃতীয় প্রকার ভালোবাসার ভিত্তি হচ্ছে উভয় ব্যক্তির বা উভয় পক্ষের চাওয়া-পাওয়া ও ইচ্ছার সাদৃশ্য বা মিলের বিষয়। এ ধরনের ভালোবাসা ক্রমেই প্রকটতর হয় এবং এটি থামানো খুবই কঠিন। কারণ, এতে উভয় ব্যক্তির গুণাবলির সমন্বয় ঘটে থাকে। যাহোক, যুবক-যুবতীদের গভীর প্রেমে পতিত হওয়া এক প্রকার হৃদয়ের ব্যাধি বা মনের রোগ। তাই অন্যান্য রোগের ন্যায় এরও নিরাময় রয়েছে। যদি প্রেমিকের কোনো legal বা বৈধ উপায় থাকে সেই প্রেমকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে, তবে দোষের কিছু নেই। বরং এটিই তার এ রোগের চিকিৎসা বা নিরাময় । ইবনে মাজাহ শরীফে একটি হাদীস উদ্ধৃত আছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আমরা প্রেমিক-প্রেমিকার (পারস্পরিক ভালোবাসা স্থাপনের) জন্য বিয়ে ছাড়া অন্য কোনো সমাধান দেখছিনা।" (ইবনে মাজাহ) ৮১৭ অর্থাৎ প্রেমে আসক্ত দু'জনের জন্য বিয়েই হচ্ছে কার্যকরী বা চূড়ান্ত নিরাময় । নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও বৈধ উপায় বেছে নিয়েই ভালোবাসার বস্তুটিকে নিজের করে পাবার উপদেশ দিয়েছেন। তিনি যুবকদের নির্দেশ দিয়েছেন বিয়ে করার জন্য, কারণ তাঁর দৃষ্টিতে বিয়েই এ রোগের উৎকৃষ্ট ওষুধ। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের ভিতরে যারা স্বচ্ছল বা সামর্থ্যবান, তারা যেনো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কারণ বিবাহ দৃষ্টিকে অবনত রাখে ও লজ্জাস্থানকে সংযত রাখে। আর যারা বিয়ে করতে অপারগ বা অস্বচ্ছল, তারা যেনো রোযা রাখে, কেননা রোযা যৌন কামনাকে নিবৃত্ত করবে (অর্থাৎ এটিই তাদের নিরাময়)।” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম) ৮১৮

তাই দ্বিতীয় নিরাময় হচ্ছে, ঘটনাক্রমে যদি কেউ প্রেম রোগে ভোগে, আর বিয়ে করার সামর্থ্য না থাকে, বা বৈধ কোনো পন্থা না থাকে, তাহলে তাকে রোযা রাখতে হবে। কারণ এই রোযাই তাকে এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভে সাহায্য করবে। কারণ রোযা আত্মসংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শিক্ষা দেয়। অপরদিকে কুরআন মজীদে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'য়ালা বলেন,

يُرِيْدُ اللهُ اَنْ يُخَفِّفَ عَنْكُمْ وَخُلِقَ الْإِنْسَانُ ضَعِيفًا ،

“আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে বিধি-নিষেধের বোঝা লঘু করে (তোমাদের জীবনকে সহজ করে) দিতে চান, (কারণ), মানুষকে অত্যন্ত দুর্বল করেই সৃষ্টি করা হয়েছে।” (আন-নিসা ৪:২৮ )

এ আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা মানুষের দুর্বলতার কথা বলেছেন যে তারা তাদের যৌন চাহিদা পূরণ না করে থাকতে পারেনা। আর তাই বিয়ে করার মাধ্যমে মানুষের যৌন চাহিদা পূরণের কাজকে তিনি অনেক সহজ করে দিয়েছেন। আর যদি বৈধভাবে বিয়ের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে মিলিত হবার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে এ রোগটি আরো প্রকট আকার ধারণ করে যার চিকিৎসা করা যেকোনো ডাক্তারের পক্ষেই কঠিন হয়ে পড়ে। এখানে বৈধ উপায় বলতে দেশ, জাতীয়তা, ধর্ম

পারিবরিক আইন-কানুন ইত্যাদির সমর্থন বুঝানো হয়েছে ।

তাই আমার সুচিন্তিত পরামর্শ হচ্ছে, এমতাবস্থায় তাদের উভয়কেই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তাদেরকে জানতে হবে যে patience is the only cure. তাদের নিজেদের বুঝাতে হবে যে, তাদের এই তীব্র প্রেম-বাসনা বাস্তবায়িত হোক আল্লাহ্ পাক তা চাননা। তাই তাদের নিজেদেরকেই convince বা রাজি করাতে হবে। তাদেরকে বুঝতে হবে যে এর বাইরে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত তাদের জন্য সমূহ বিপদ ও ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন, মেয়েকে অপহরণ করা, গুম করা ইত্যাদি। এক গায়ক এক মেয়েকে অপহরণ করে কোর্টে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে। মেয়ের বাবা থানায় মামলা করায় সেই প্রেমিককে বেশ কিছুদিন জেল খাটতে হয়। এতে প্রেমিক-প্রেমিকার সম্মান বাড়ে না কমে? তাই নিজেদেরকে এই বলে আশ্বস্ত করতে হবে যে এ পৃথিবীতে ভালোবাসার কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ ক্ষণস্থায়ী। আর পরকালীন আনন্দ, সুখ, সন্তুষ্টি চিরস্থায়ী। তাই এই চিরস্থায়ী আনন্দ ও সুখের আশায় ক্ষণস্থায়ী আনন্দবস্তুকে পরিত্যাগ করা কঠিন কিছু নয়; বরং এটাই উত্তম। কারণ ক্ষণস্থায়ী ভালোবাসার বস্তুর বিনিময়ে আল্লাহ্ তাকে অফুরন্ত নিয়ামতে ভরা জান্নাতে স্থান দেবেন। আরো উত্তম এবং আরো সুন্দর বা সুন্দরী সাথী তাকে প্রদান করবেন। এই চিন্তা ও অনুভূতিই তাকে ধীরে ধীরে এ রোগের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

প্রেম নামক ব্যাধির সর্বশেষ চিকিৎসা:

এতোক্ষণ passion-এর চিকিৎসা নিরাময়ের কথা বললাম, এসব চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও যদি কারো মন বা হৃদয় তা মেনে নিতে ব্যর্থ হয়, তখন তাকে নিম্নবর্ণিত একটি বৈধ পন্থার আশ্রয় নিতে হবে : প্রথমত : তাকে প্রেমিক বা প্রেমিকার খারাপ, অপছন্দনীয় ও নেতিবাচক দিকগুলো স্মরণ করতে হবে, যাতে কোনো এক সময় তার মনে হয়, আমি তো এই প্রেমিক বা প্রেমিকার চেয়ে সব দিক দিয়ে অনেক উত্তম সঙ্গী পাবো। দ্বিতীয়ত : তাকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে যে যেসব ভালো গুণের জন্য সে তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল, তার চেয়ে তার খারাপ দোষগুলো, তার ত্রুটি, ব্যর্থতা অনেক বেশি প্রবল ও লক্ষণীয়। যেমন তার ব্যবহার, সে অতি তাড়াতাড়ি রেগে যায় অথবা তার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো দিক, যা তার কাছে অপছন্দনীয় ইত্যাদি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। তাই তাকে তার বিকল্প সঙ্গী খুঁজে পেতেই হবে । তৃতীয়ত : তার প্রতিবেশী বা বন্ধুবান্ধবদের বা শুভাকাঙ্ক্ষীদের জিজ্ঞেস করে তাকে জানতে হবে তার প্রেমিকার অন্যান্য দিক, যা সে জানেনা। এটি নিশ্চিত যে প্রিয় বস্তুর ভেতরে লুকায়িত কোনো অপছন্দনীয় গুণাবলি বা চারিত্রিক দুর্বলতার বিষয় বা তথ্য জানা থাকলে এক পর্যায়ে সে তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। আর এইভাবে আস্তে আস্তে তাকে ভোলার চেষ্টা করবে। However, some people say one should not resort to this type of work, as it is against the teaching of the Qur'an.

وَلَا تَجَسَّسُوا

‘অলা তাজাস্সাসু’– “তোমরা গুপ্তচরবৃত্তি করোনা।” (হুজুরাত ৪৯:১২)

চতুর্থত, তাকে মনে করতে হবে যে এই সুন্দর চেহারা ও বাহ্যিক লাবণ্যের ভিতরে একটি কুৎসিত চেহারা সুপ্ত অবস্থায় আছে, যা সে জানেনা। এটি একদিন প্রকাশ পেয়ে পরবর্তীতে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহের কারণ হিসেবে দেখা দিতে পারে বা অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

সম্মানিত দর্শক-শ্রোতা ভাই-বোনেরা! এর পরেও যদি হৃদয়ের এ ব্যাধিটির নিরাময় না হয়, তাহলে তাকে সর্বশেষ চিকিৎসা হিসেবে নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহ্র প্রতি আত্মসমর্পণ করতে হবে। তাকে আল্লাহ্র সাহায্য চাইতে হবে। কারণ যারা এ ধরনের বিপদে পড়ে আল্লাহকে কায়মনোবাক্যে ডাকে, তখন আল্লাহ তাদের ডাক শোনেন। Passion-এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে তাঁর নিকট নিজের সকল দুর্বলতা পেশ করে এই রোগ থেকে আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করতে হবে । তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তি শীঘ্রই এ রোগের প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে পারে। আল্লাহ্ বলেছেন,

ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ

“তোমরা আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো (অর্থাৎ তোমাদের দু'য়া কবূল করবো)।” (মু'মিনুন ৪০:৬০ )

উল্লেখ্য, এই দুয়াটি বেশি বেশি পড়লে ভাল ফল আশা করা যায়, দুয়া : “ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কাইয়্যূমু বিরহমাতিকা আসতাগীছু আলিহ্ লী শা'নী কুল্লাহু অলা তাকিলনী ইলা নাফসী তরফাতা আইনিন ।” “হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার করুণা ও রহমতের উসীলায় আমি সাহায্য প্রার্থনা করছি (দুঃখ-কষ্ট থেকে পানাহ চাচ্ছি)। আপনি আমার সকল অবস্থা সংশোধন (ঠিক) করে দিন। আর আমাকে আমার নস (প্রবৃত্তি) এর কাছে এক মুহূর্তের জন্য ছেড়ে দিবেন না।" (আত-তিরমিযী) ৮১৯

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]