কুরআন মজীদে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'য়ালা ক্রোধ সম্পর্কে কী ইরশাদ করেছেন?

উত্তর : আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সূরা আলে ইমরানে বলেন,

الَّذِينَ يُنْفِقُوْنَ فِي السَّرَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَلِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ

الْمُحْسِنِينَ

“যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয় করে, আর ক্রোধ সংবরণকারী ও মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালোবাসেন।” (আলে ইমরান ৩:১৩৪)

এ আয়াত থেকে জানা যায় যে মানুষের কল্যাণে অর্থ ব্যয় করা, ক্রোধ সংবরণ করা ও ক্ষমাশীলতা মহৎ গুণাবলির অন্যতম। এ আয়াত থেকে আমরা আরো জানতে পারি যে ক্রোধ সংবরণকারীদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং তারা সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।

প্রশ্ন-২৯১ : ক্রোধ কি মনের রোগ বা হৃদয়ের ব্যাধি? এ রোগ প্রশমিত করতে বা এ রোগের চিকিৎসায় নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী উপদেশ দিয়েছেন?

উত্তর : হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বলেছেন, “ক্রোধ নিশ্চয়ই মানুষ তার অন্তরে ধারণ করে থাকে।” (মুসনাদে আহমাদ ও মুসতাদরাকে হাকিম) ৮২৬ এ হাদীসের ওপর ভিত্তি করে ক্রোধ বা রাগকে 'মনের রোগ' বা 'হৃদয়ের ব্যাধি' হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। ইমাম গায্যালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “ক্রোধ নিবারণের উপায় হচ্ছে জ্ঞান বা প্রজ্ঞা ও কার্যাবলির সমন্বয়ে গৃহীত কতিপয় বাস্তব পদক্ষেপ।” বস্তুত ক্রোধ একপ্রকার ব্যাধি যা মানুষকে আল্লাহর রোষ জন্মাতে সাহায্য করে। অহংকার, গৌরব, ঔদ্ধত্য, সুখ্যাতি জনিত সম্মান, প্রশংসনীয় কাজ, অর্জিত সাফল্য, উচ্চতর মর্যাদালাভের বাসনা ইত্যাদি ক্রোধ সৃষ্টির অন্যতম সহায়ক। তাছাড়া অতিমাত্রায় আত্মগর্ব বা আত্মতুষ্টি, নিজের সম্পর্কে উন্নত ধারণা, আত্ম-প্রশংসা, অধিক সম্পদ অর্জনের অভিলাষ, ঠাট্টা-বিদ্রূপ, উপহাস ইত্যাদি উৎপত্তির কারণে মানুষের মাঝে ক্রোধ নামক ব্যাধিটি সৃষ্টি হয়ে থাকে । তাই মানুষের এসবের প্রতি অদম্য বাসনা কমাতে হবে; পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ, এসব খারাপ বিষয় বা দিক যদি কারো মাঝে বিদ্যমান থাকে, তাহলে তার আচরণ বা স্বভাবে পরিবর্তন আসে এবং তখন তার ক্রোধ না এসে পারেনা। তাই নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপদেশমতো আমাদের এ রোগের চিকিৎসা করতে হবে। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তুমি রাগন্বিত হও, তখন নীরবতা অবলম্বন করো (এভাবে তিনবার বলেছেন)।” (মুসনাদে আহমাদ) ৮২৭

এ দুটো উপদেশই অত্যন্ত কার্যকর।

প্রশ্ন-২১২ : নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দুটো উপদেশ ছাড়া ক্রোধ দমনে আর কি করা উচিত?

উত্তর : প্রথমত : রাগের সময় কারো ভিতর অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার ইচ্ছা জাগ্রত হলে তাকে আল্লাহর ভয় করতে হবে এবং স্মরণ করতে হবে যে, আমি যদি এ ব্যক্তির ওপর প্রতিশোধ নিই, তাহলে কিয়ামতের দিন আমার ওপর আল্লাহও প্রতিশোধ নিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত : কেউ যদি রাগের মাথায় কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উদ্যত হয়, তখন তাকে মনে রাখতে হবে যে, উক্ত ব্যক্তি বা তার লোকজন একদিন তার উপরও প্রতিশোধ নিতে পারে। একটি কথা আছে যে, বাঘের প্রতিশোধ নেবার ইচ্ছে থাকে বার বছর, আর মানুষের থাকে সারা জীবন তৃতীয়ত : কেউ যখন রাগান্বিত হয় তখন তার চেহারার মধ্যে ক্রোধের প্রভাব পড়ে। রাগান্বিত মানুষের কুৎসিত চেহারা ভয়ংকর প্রাণীর চেহারার মতো। আর যে ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করে, তার চেহারা কোমল, মিষ্ট ও জ্ঞানী লোকের চেহারার মতো।

চতুর্থত : রাগান্বিত লোককে মনে রাখতে হবে যে শয়তান বলে, তুমি যদি রাগান্বিত না হও তাহলে তুমি দুর্বল হয়ে পড়বে। সুতরাং শয়তানের প্ররোচনায় কান দেয়া উচিত নয় ।

পঞ্চমত : রাগান্বিত ব্যক্তিকে মনে রাখতে হবে যে, আমি কী কারণে রাগান্বিত হবো। আল্লাহ যা চান তা তো ঘটবেই। ষষ্ঠত : তাকে মনে রাখতে হবে যে, ক্রোধ সংবরণে যে পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে, তার ভিত্তি হচ্ছে কুরআন মজীদ এবং নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা। ক্রোধ দমন করার পুরস্কারের আশাই মানুষকে ক্রোধান্বিত হয়ে প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত রাখবে। সাহল ইবনে মুআয রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার পিতা থেকে জেনে বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ক্রোধকে সংবরণ করে অথচ সে কাজ করতে সে সক্ষম; (তার এ সবরের কারণে) কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাকে সকলের সামনে ডেকে বলবেন; তুমি যে হূরকে চাও, পছন্দ করে নিয়ে যাও।” (আবূ দাউদ) ৮২৮ জামে আত-তিরমিযী শরীফে উদ্ধৃত হাদীসের বর্ণনাকারীর নাম মু'আয ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু । তিনি বলেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ক্রোধ কার্যকর করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তা সংবরণ করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সমস্ত মাখলূকের সামনে ডেকে আনবেন এবং তাকে তার পছন্দমতো যে কোনো হূর বেছে নেয়ার এখতিয়ার দিবেন।” (আত-তিরমিযী) ৮২৯ সুলায়মান ইবনে সারাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি একটি বাক্য সম্পর্কে অবহিত, যা কেউ উচ্চারণ করলে তার রাগ দূরীভূত হবে। বাক্যটি হচ্ছে, ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শয়ত্বনির রাজীম।' অর্থাৎ “আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি শয়তান থেকে, যে বিতাড়িত (গৃহহীন ও নির্বান্ধব)।” ৮০০

এটি সহীহ আল বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ ও তিরমিযী শরীফের হাদীস।

সম্মানিত দর্শক-শ্রোতা! রেগে যাওয়া এক প্রকার হৃদয়ের ব্যাধি। তাই এসব পরামর্শ প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এসব পরামর্শ মেনে চললে রাগ দূর করা সম্ভব।

প্রশ্ন-২৯৩ : এবার আলোচনা করুন, কী কী সুনির্দিষ্ট কাজ করলে তৎক্ষণাৎ রাগ সংবরণ করা সম্ভব?

উত্তর : এক নম্বর কাজ হচ্ছে যখন রাগান্বিত হবেন, তখন দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়বেন, আর বসে থাকলে শুয়ে পড়বেন ।

দুই নম্বর কাজ হচ্ছে, তাকে উযূ করতে হবে। কারণ আগুন পানি ছাড়া দূর করা যায়না।

তিন নম্বর কাজ হচ্ছে, তাকে মুখে উচ্চারণ করতে হবে, “আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি শয়তান থেকে, যে গৃহহীন ও নির্বান্ধব।” অর্থাৎ “বিতাড়িত শয়তান থেকে আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”

চার নম্বর যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে, তাকে মাটির কাছে যেতে হবে। কারণ তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেহেতু ক্রোধের ফলাফল হচ্ছে উত্তাপ। এর বিপরীত কাজটি হচ্ছে তাকে মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে যাতে তার দেহ প্রশান্ত হয় ও ঠাণ্ডা থাকে ।

সম্মানিত দর্শক-পাঠক! আশা করা যায়, এই ৪টি কাজ আপনাকে রাগ বা ক্রোধ নিবারণে সহায়তা করবে। আর এসবের পরেও যদি তার রাগ না থামে, তখন তাকে ঠাণ্ডা পানিদ্বারা গোসল করাতে হবে, কারণ আগুনকে পানি দ্বারা নিভানো হয়ে থাকে। রাগের ব্যাপারে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ের নিম্নের কতিপয় ঘটনা প্রণিধানযোগ্য :

১. একদা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে উপস্থিত থাকাকালে হযরত আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে একদল কাফির অন্যায়ভাবে তিরস্কার করছিলো। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ধৈর্যের সাথে তিরস্কার হজম করছিলেন। তখন রসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর রাগ চলে আসায় তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তিনি উক্ত বিরোধীদের প্রতিবাদ করেন । তখন রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখ ভার করে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। পরবর্তীতে যখন রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হযরত আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাক্ষাত হয় তখন তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি আমার কেমন বন্ধু, যখন কাফিররা বিনা অপরাধে অন্যায়ভাবে আমাকে ভর্ৎসনা করছিলো তখন আপনি আমার পক্ষে টু শব্দটিও না করে মুচকি হাসলেন। আর যখন আমি অধৈর্য হয়ে নিজেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলাম তখন আপনি মুখ অন্ধকার করে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন? জবাবে রহমাতুল্লিল 'আলামীন মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আবূ বকর! কাফিরদের সীমাহীন যুলুম-অত্যাচার যখন তুমি ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করছিলে তখন আল্লাহ্র রহমতের হাজার হাজার ফেরেশতা তোমার পক্ষে কাফিরদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলো। যেটি ছিলো তোমার জন্যে খুবই কল্যাণকর। কিন্তু যখনই সেখানে শয়তান চলে এসেছিলো, তখন তুমি রাগান্বিত হয়ে প্রতিবাদের পথ বেছে নিলে আর অমনি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তোমার পক্ষের হাজার হাজার রহমতের ফেরেশতাকে আসমানে তুলে নিলেন। যেটি ছিলো তোমার জন্যে অত্যন্ত অকল্যাণকর। তাই আমি মুখ ভার করে সেখান থেকে চলে এসেছি। কারণ শয়তান যেখানে আসে আল্লাহর রসূল তো সেখানে থাকতে পারেনা ।

২. হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু খেলা করছিলেন। উভয়ে তখন কিশোর। খেলার ছলে এক পর্যায়ে হুসাইন

রাদিয়াল্লাহু আনহু আবদুল্লাহকে 'বান্দির বাচ্চা' বলে গালি দিলেন। তখনকার আরবে 'বান্দির বাচ্চা' গালি খুবই ক্ষমাহীন অপরাধ বলে বিবেচিত হতো। গালি তো গালি, তাও আবার আমিরুল মু'মিনীনের ছেলেকে। আর যায় কোথায়! আবদুল্লাহ রেগে লাল হয়ে আমিরুল মু'মিনীনকে (যাঁর ব্যাপারে প্রবাদ আছে ‘ওমর যে পথ দিয়ে যাতায়াত করে শয়তানও সে পথে হাঁটেনা) বিচার দিলো। যথাসময়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো ইমাম হুসাইনকে। জেরা করলেন স্বয়ং আমিরুল মুমিনীন নিজেই । ‘তুমি কি আমার ছেলেকে বান্দির বাচ্চা বলেছো?' শের-ই-খোদা হযরত আলীর সন্তান হুসাইন, তিনিও দৃঢ়কণ্ঠে জবাব দিলেন, হ্যাঁ। উত্তরে ক্ষুব্ধ আমিরুল মু'মিনীন হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এর অর্থ কী, তা কি তুমি জানো? এবারও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত স্বাভাবিক অথচ দৃপ্তকণ্ঠে জবাব দিলেন, উমর দাস (গোলাম) তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ হলো দাসের ছেলে অর্থাৎ 'বান্দার বাচ্চা।' হঠাৎ আগুনে পানি দিলে যেমন 'ধপ' করে নিভে যায়, তেমনি হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুও রাগ সংবরণ করে করুণকণ্ঠে জবাব দিলেন, আমিও আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, এ 'দাসকে' সাথে না নিয়ে মনিব যদি জান্নাতে যায় তাহলে কিয়ামতের সেই কঠিন ময়দানে আমিও কিন্তু আওলাদে রসূলের (মনিবরূপী হুসাইনের) বিরুদ্ধে আপিল করবো। ৩. একবার এক কাফিরের সাথে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মল্লযুদ্ধ বাঁধলে এক পর্যায়ে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু উক্ত কাফিরকে কুপোকাত করে তার বুকের উপর চেপে বসে তলোয়ার দিয়ে তাকে বধ করতে উদ্যত হলেন। ঠিক এ মুহূর্তে উক্ত কাফির নিচ থেকে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মুখে থু থু নিক্ষেপ করলো। এতে উক্ত কাফিরের প্রতি হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু'র রাগ চলে আসে। সাথে সাথে তিনি তাকে কতল না করে ছেড়ে দিয়ে বললেন, তোমার সাথে আমার বিরোধ ছিলো আল্লাহ্র দীন নিয়ে। সেজন্যে তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। যখন তুমি আমাকে থু থু দিলে, তখন তোমার প্রতি আমার ব্যক্তিগত ক্রোধ চলে এসেছে। ব্যক্তিগত ক্রোধের কারণে তোমাকে হত্যা করলে আমাকে আল্লাহ্র নিকট জবাবদিহি করতে হবে। তাই তোমাকে ছেড়ে দিলাম। তুমি মুক্ত।

৪. একবার এক নও মুসলিম ও এক ইয়াহুদীর সাথে একটি বর্মের মালিকানা নিয়ে ঝগড়া বাধে। প্রকৃতপক্ষে বর্মটির মালিক ছিলো উক্ত ইয়াহুদী। মুসলিমটি প্রকৃত মুসলিম ছিলোনা বিধায় সে ভেবেছিল, রসূলের কাছে বিচার নিয়ে গেলে (আমি মুসলমান হওয়ার কারণে) রসূল তো আমার পক্ষেই রায় দিবেন। এ আশায় তারা রসূলের নিকট গেলো। কিন্তু রহমাতুল্লিল আলামীন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ের বর্ণনা শুনে উক্ত ইয়াহূদীর পক্ষেই রায় দিলেন। কিন্তু এ রায় ঔ মুনাফিক মুসলমানের মনোঃপূত হলোনা। সে ভাবলো, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যেহেতু ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি, তাঁর কাছে গেলে সে বর্মটি পাবে। তাই সে হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে পুনরায় বিচার চাইতে গেলো। হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উক্ত মুনাফিক মুসলিম ব্যক্তির বক্তব্য শুনে প্রশ্ন করলেন, রাসূলের দেয়া রায়ের পর আবার আমার নিকট কেনো এলে? উত্তরে মুসলিমটি বললো, 'আল্লাহর রাসূলের রায় আমার পছন্দ হয়নি।' আর যায় কোথায়? সাথে সাথে

হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর কোমরে বাধা তলোয়ার খাপমুক্ত করেই এক কোপে উক্ত ভণ্ড মুসলিমকে দ্বি-খণ্ডিত করে দিলেন। ঐ কথিত মুসলিম ব্যক্তিটি প্রভাবশালী বংশের ছিলো বিধায় এ নিয়ে সমাজে হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এ মর্মে যে, হযরত উমর একজন মুসলমান হয়ে আরেকজন মুলমানের রক্তপাত করেন কীভাবে? কারণ ইসলামে এক মুসলমানের রক্ত অন্য মুসলমানের জন্য হারাম করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল 'আলামীন ওহীর মাধ্যেমে জানিয়ে দিলেন, উমরই প্রকৃত মুসলমান। যাকে হত্যা করা হয়েছে সে ছিলো মুনাফিক। এ ঘটনার দ্বারা রাগান্নিত হয়ে রূঢ় আচরন করে অনেকে সত্য-ন্যায়ের পক্ষে রাগকে বৈধ মনে করে অধীনস্তের প্রতি। আসলে এখানে বিবেচ্য বিষয়গুলো হচ্ছে-

ক. আপনি আপনার অধীনস্তের ওপর রাগ করেন কিন্তু আপনি যার অধীনে কাজ করেন, অর্থাৎ আপনার প্রতিষ্ঠানের মালিকের হাজারো অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তো টু-শব্দটিও করেননা। অথচ হাদীসে বলা আছে- “জালিম শাসকের বিরুদ্ধে ন্যায় কথা বলা উত্তম জিহাদ।"

খ. হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বয়ং রহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিদ্ধান্তের বিরূাচ্চারন করায় রাগের বশবর্তী হয়ে উক্ত মুনাফিক মুসলমানকে কতল করেছিলো। আপনি যাদের প্রতি রাগ করছেন এ ক্ষেত্রে কিন্তু সেরকম কোনো যুক্তি নেই। নিম্নোক্ত হাদীসের দ্বারা বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে আশা করি ।

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এ পৃথিবীর কোনো বিষয়ে বা কারণে রাগান্বিত হননি। যখন কোনো সত্যের সীমা লংঘন হতো তখন কেউ তাঁর ক্রোধ নিবারণ করতে পারতোনা, যতক্ষণ না তিনি হকের জন্য প্রতিশোধ নিতেন। তিনি নিজের বিষয়ে রাগান্বিতও হতেননা এবং প্রতিশোধও নিতেননা।" (শামায়েলে তিরমিযী) ৮৩১

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা একদা রাগান্বিত হলে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাক ধরে সোহাগের সাথে কাছে নিয়ে এসে বললেন, “হে আমার প্রিয় সহধর্মিণী! তুমি বলো, হে আল্লাহ! আপনি আমার নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রভু। আমার পাপ মার্জনা করুন, আমার অন্তর থেকে ক্রোধ দূর করুন এবং আমাকে ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে রক্ষা করুন।” (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলা, ইবনুস সুন্নী) ৮৩২

প্রশ্ন-২৯৪ : রাগ নিবারণে আর কী উপায় আছে? রাগ সম্বন্ধে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কী বলে? ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল জাতীয় কোনো ঔষুধ খেলে কি রাগ থেমে যাবে? Psychological কোনো চিকিৎসা এর আছে কি?

উত্তর : সম্মানিত দর্শক-শ্রোতা ভাই-বোনেরা! ক্রোধ দূরীকরণের জন্য sedative tablet সেবন করা একেবারেই অনুচিত। কারণ এসব ট্যাবলেট পুনঃ পুনঃ ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যেতে পারে। তবে এসব ওষুধ সেবনে রোগী addict হতে পারে। যেহেতু ক্রোধ মানুষের মানবীয় ব্যবহার ও আচরণের পরিবর্তন ঘটায়, তাই ক্রোধ দমনে মানুষকে তার আচরণ ও ব্যবহার পরিবর্তন করতে হবে এবং

 সময় তাকে পারিবারিক অন্যান্য সমস্যা সমাধানের চিন্তা মাথায় আনতে হবে। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাতো, ক্রোধকে প্রশমিত করার জন্য শান্ত ও স্থির থাকতে হবে। আর চিত্তের প্রশান্তি অর্জন করতে হবে।

ইদানীং ক্রোধান্বিত রোগীদের শান্ত করার জন্য psychotherapy-এর প্রচলন শুরু হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় রোগীকে প্রথমে প্রশিক্ষণ নিতে হবে যে, কীভাবে তার sensitiveness to actions and reactions কমানো যায়। সংকটময় অবস্থায় কীভাবে self control or relaxation করা যায়। অর্থাৎ কীভাবে আত্মসংযম ও শরীর-মন শিথিল করা যায় তার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলে রোগী নিজেই আস্তে আস্তে এই psychotherapy-এর সাহায্যে ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে ।

দ্বিতীয় নিয়ম বা পদ্ধতিটি হচ্ছে muscle and psychological relaxation. এ পদ্ধতিতে চিকিৎসক রোগীকে তার জীবনের সবচেয়ে জটিল ও সমস্যা জর্জরিত মুহূর্তগুলো স্মরণ করতে বলবেন এবং তৎক্ষণাৎ তার অবস্থান পরিবর্তন করতে বলবেন। অর্থাৎ তিনি যে কাজে নিয়োজিত আছেন তা বন্ধ করে অন্য কাজ করতে বলবেন। উদাহরণস্বরূপ রোগী দাঁড়িয়ে থাকলে তাকে বসতে বলবেন, আর বসা থাকলে তাকে বিছানায় শুয়ে ধ্যানে নিমগ্ন হতে বলবেন। অর্থাৎ meditation করতে বলবেন। এ পদ্ধতিই আধুনিক psychotherapist-গণ অনুসরণ করে থাকেন। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, tension kills meditation heals. তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ঠিক একই ধরনের approach আমাদের নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৪৫০ বছর আগে গ্রহণ করার জন্য মুসলিম উম্মাহকে উপদেশ দিয়েছিলেন, যখন psychotherapy বলতে কিছু ছিলোনা 1

হযরত আবূ যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি রাগান্বিত হয় তাহলে দাঁড়িয়ে থাকলে সে যেনো বসে পড়ে, আর বসে থাকলে সে যেনো শুয়ে পড়ে।” (আবূ দাউদ) ৮৩৩

তাই ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ব্যবস্থাপত্রের চেয়ে উৎকৃষ্ট আরো কোনো ব্যবস্থা আছে কি?

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]