দ্রুত ভ্রমণ এবং সুস্বাস্থ্য ট্রাভেল টিপস ভ্রমণ বিষয়ক ফিচার

দ্রুত ভ্রমণ এবং সুস্বাস্থ্য
এ. জেড. এম. শামসুল আলম
হাঁটা এবং দৌড়ানো এ দু'টি শব্দের ৪টি ইংরেজি প্রতিশব্দ রয়েছে। এগুলো হলো- (১) Walking (2) Roving (3) Jogging, ( 8 ) Running। এ ৪টি শব্দের অর্থের পার্থক্য চলার গতিতে। সাধারণত সম উচ্চতায় সম্মুখের দিকে দেহ সঞ্চালনের গতি এ শব্দগুলো দ্বারা প্রতিফলিত হয়। কোনো মুহূর্তে চলার সময় ২টি পায়ের দূরত্ব বা পদক্ষেপ-এর দৈর্ঘ্য দ্বারা চলার গতি নিরূপিত হয়। এ ছাড়া এ শব্দগুলোর অর্থের মধ্যে আরো পার্থক্য আছে।
দাঁড়িয়ে থাকার সময় দু'টি পদই ভূমি স্পর্শ করে থাকে। হাঁটার সময় সাধারণত একটি পা ভূমিতে এবং অপর পা'টি পদক্ষেপের জন্যে ভূমি হতে আলাদা থাকে। Roving অর্থও হাঁটা তবে অতি দ্রুত হাঁটা। দ্রুত হাঁটার (Roving) সময় পা মাটি স্পর্শ করে থাকে অপেক্ষাকৃত কম সময়। ভূমির উপরে থাকে আরো বেশি সময়। দৌড়ানো কি তা আমরা সকলে বুঝি। জগিং হলো একটু কম গতিতে দৌড়ানো । হাঁটার সময় কোনো এক সময়ে বা অবস্থায় দু'টি পা-ই ভূমি স্পর্শ করে থাকে । দৌড়াবার সময় ঘটে তার উল্টো। লম্ফ দেওয়ার সময় যেমন দু'টি পা-ই একসঙ্গে ভূমির ঊর্ধ্বে থাকে, দৌড়াবার সময় সেরূপ ঘটে। অবশ্য কিছুটা কম সময়ে। দৌড়াবার কালে কোনো এক অবস্থায় বা মুহূর্তে দু'টি পা ভূমি থেকে আলাদা হয়। তবে তা ক্ষণিকের তরে। যদি বহুক্ষণ পর্যন্ত দু'টি পা-ই ভূমি থেকে আলাদা বা উপরে থাকে সে অবস্থাকে বলা হয় উড়া বা উড্ডয়ন। যেমন পাখিরা করে থাকে । পাশ্চাত্যবাসী দ্রুত (Roving) হাঁটা এবং দৌড়াবার মাঝামাঝি আরেকটি গতিতে অগ্রসর হন। এটা নিয়মিত এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য। এ শব্দটি হলো জগিং। জগিং-এর সময় চলার গতি দ্রুত হাঁটার চেয়ে বেশি কিন্তু দৌড়ানো থেকে কম। দৌড়ানো থেকে গতি কম হওয়ার কারণে জগিং দীর্ঘক্ষণ করা যায় এবং বহুদূর পর্যন্ত জগিং করা যায়। জগিং-এর সময় একটি পা থাকবে ভূমিতে এবং আরেকটি পা সর্বদা ভূমির ঊর্ধ্বে। রোভিং-এর গতি হাঁটার থেকে বেশি কিন্তু জগিং থেকে কম ।
হৃৎপিণ্ড দেহের একটি বিশেষ ধরনের অঙ্গ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে মোটামুটি দু'ভাগে ভাগ করা যায়। ইচ্ছাকৃত অঙ্গ (Voluntary) এবং অনিচ্ছাকৃত অঙ্গ (Involuntary) হাত-পা ইত্যাদি নড়াচড়া করে । এগুলোর এই নড়াচড়াটা ইচ্ছাকৃত। অর্থাৎ ইচ্ছা করলেই আমি হাত নাড়তে পারি, পা নাড়ি, ঘাড় নাড়ি, চোখ নাড়তে পারি। আবার ইচ্ছা না করলে স্থিরও রাখতে পারি।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে মন। মন যদি ইচ্ছা করে কোনো কিছু দেখবে না, তাহলে চোখ দু'টি বন্ধ করে রাখতে পারে। মন হাঁটতে না চাইলে পা দুটোকে থামিয়ে রাখতে পারে। আর মন ইচ্ছা করলে পা দু'টো যে কোনো মুহূর্তে নড়াচড়া করতে পারে।
যখন মানুষ ঘুমায়, ইচ্ছাকৃত (Voluntary) অঙ্গগুলো বিশ্রাম হয়। হৃৎপিণ্ড একটি ভিন্ন ধরনের অঙ্গ। এটা কখনও রেস্ট (Rest) নেয় না। মনের হুকুমে চলে না। শিশু বা পিঁপড়া থেকেও হৃৎপিণ্ড অনেক বেশি চঞ্চল মন ইচ্ছা করলে হৃৎপিণ্ডের কাজ বন্ধ করতে পারে না । তাই হৃৎপিণ্ডকে অনিচ্ছাকৃত অঙ্গ বলা হয় ।
হৃৎপিণ্ডও অবশ্য বিশ্রাম নিতে পারে। তবে তা হলো পূর্ণ বিশ্রাম । প্রাণ চলে গেলে হৃৎপিণ্ড বিশ্রাম নেয়। অন্য দিকে বলা চলে হৃৎপিণ্ড বিশ্রাম নিলেই মৃত্যু হয় ।
দেহের মধ্যে সবচেয়ে কর্মঠ অঙ্গ হলো হৃৎপিণ্ড। মস্তিষ্কও বিশ্রাম বা Rest নেয়। কিন্তু হৃৎপিণ্ড Rest নেয় না বা বিশ্রাম নেয় না। এটা একটা Pumping Station - এর মতো। প্রতি মিনিটে হৃৎপিণ্ড হতে ৫ লিটার রক্ত শিরার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তরল পদার্থ সাধারণত উপর থেকে নিচের দিকে যায়। এর কারণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত মাথার দিক অপেক্ষা নিচের দিকে অর্থাৎ পায়ের দিকে বেশি প্রবাহিত হয়। দৌড়ানো, অল্প দৌড়ানো (Jogging), দ্রুত হাঁটা (Roving) -এর ফলে পায়ের দিকে রক্ত বেশি প্রবাহিত হয় এবং পায়ের মাংস Cellগুলো বেশি কর্মঠ হয়।
শিরা-উপশিরায় চর্বি জমে, যেমন- নালার বা খালের পাশে বালি জমে। দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি, মৃদু দৌড়াদৌড়ির সময়ে শিরায় এবং ধমনীতে জমা চর্বিগুলো রক্তকণিকা ঠেলে নিয়ে যায়। এটা সম্ভব রক্তপ্রবাহের গতি যদি বৃদ্ধি পায় ৷
দৈহিক কাজ এবং উপবেশিত (Sedentary) কাজ
Dr. R. S. Papen Barger যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিখ্যাত হৃদয় বিশেষজ্ঞ (Heart Specialist) ও চিকিৎসক। তিনি হৃৎপিণ্ডের উপর বিভিন্ন ধরনের গবেষণা ও জরিপ পরিচালনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ২০,০০০ রেলওয়ে শ্রমিকের উপর একটি গবেষণার জরিপ তিনি পরিচালনা করেন। এই গবেষণার বিষয় ছিলো উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্ট এ্যাটাকের উপর ধূমপান ও অলসতার প্রভাব প্রতিক্রিয়া ।
তিনি একই ধরনের গবেষণা ২০,০০০ অফিস কর্মকর্তার উপর চালিয়েছিলেন যারা বসে বসে কাজ করেন। যে ধরনের রেলওয়ে কর্মচারীদের উপর তিনি গবেষণা চালিয়েছিলেন, তাদের কাজ ছিলো হেঁটে হেঁটে কাজ করা। অর্থাৎ কাজের প্রকৃতি ছিলো শারীরিক।
ড. আর. এস. পাপেনবার্জার (Dr. R.S. Papen Barger)-এর গবেষণার জরিপে প্রাপ্ত একটি তথ্য হলো- যাঁরা চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করেন, তাদের হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা যাঁরা দাঁড়িয়ে এবং হেঁটে কাজ করেন তাদের থেকে প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ রেলওয়ে শ্রমিকদের মধ্যে যারা শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের হার্ট এ্যাটাক হয় যারা বসে বসে কাজ করে তাদের অর্ধেক।
যারা বসে বসে কাজ করে তাদের হার্ট এ্যাটাক কমাবার একটি পদ্ধতি হলো দৈনিক অন্তত ১ ঘন্টা Roving বা দ্রুত হাঁটা Jogging করা। তা করতে হবে দিনে দু'বার। ৩০ মিনিট সকাল বেলা এবং ৩০ মিনিট বিকেল বেলা। অর্থাৎ দৈনিক ২৪ ঘণ্টা সময়ের অন্তত দু'ঘণ্টা এমন মানের কায়িক পরিশ্রম করতে হবে যাতে দেহ ঘর্মাক্ত হয়।
হাঁটার গতি অবশ্যই স্বাস্থ্যের পক্ষে যতটুকু দ্রুত হাঁটা সম্ভব তার বেশি করা উচিত নয়। কেউ দ্রুত হাঁটছেন কি শ্লথ গতিতে হাঁটছেন তা নির্ণয়ের একটি ফর্মুলা আছে।
কিছুক্ষণ দ্রুত হাঁটা বা দৌড়ানোর পর এক মিনিট বিশ্রাম করতে হবে। তারপর হার্টবীট গণনা করতে হবে। যদি হার্টবীট প্রতি মিনিটে ১০০ হয় তাহলে বুঝতে হবে হার্টবীট স্বাভাবিক এবং যুক্তিসঙ্গত। যদি হার্টবীট প্রতিমিনিটে ১৩০ অতিক্রম করে তখন বুঝতে হবে ভ্রমণের গতি ব্যক্তির স্বাস্থ্যসম্মত গতি থেকে বেশি হয়ে গেছে।
দ্রুত ভ্রমণ এবং জগিং-এর গতি
একটি মানুষের দ্রুত ভ্রমণ বা দৌড়ের গতি কত হওয়া উচিত— এটা নির্ভর করবে ভ্রমণের উদ্দেশ্য, ব্যক্তির বয়স, তার স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য কয়েকটি বিষয়ের উপর। যুক্তরাষ্ট্রের Harvard School of Public Health-এর প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. আই. মিনলী (Dr. I. Minllee) ২০ বছরব্যাপী ১,৭৩০০০ জন মধ্যবয়সী ব্যক্তির (পুরুষ) উপর তাদের হাঁটার গতিবেগ, প্রতিক্রিয়া, স্বাস্থ্যের অবস্থা, খাদ্যরুচি, জীবনকাল ইত্যাদির উপর ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছিলেন। এই গবেষণার ফলে তার প্রাপ্ত একটি তথ্য হলো, যাঁরা প্রায় প্রত্যেক দিন দ্রুতবেগে হাঁটেন তাঁরা দীর্ঘজীবী হন। তাঁদের থেকে বেশি দীর্ঘজীবী যারা সাপ্তাহে একদিন-দু'দিন ভ্রমণ বা দৈহিক ব্যায়ামে ঘর্মাক্ত হন ।
ড. মিনলীর আরেকটি সিদ্ধান্ত হলো আধমনা (Half-hearted) ভ্রমণ বা উদ্দেশ্যবিহীন ভ্রমণ (Hopping) জীবনকাল বা স্বাস্থ্যের উপর তেমন কোনো শুভ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। ড. আই. মিনলী-এর গবেষণার তথ্য বিবরণী 'জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন' এপ্রিল ১৯৯৫ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। বহুল প্রচারিত মার্কিন সাপ্তাহিক 'টাইম ইন্টারন্যাশনাল'-এর মে ১, ১৯৯৫ সংখ্যায়ও ড. মিলী'র ২০ বছরব্যাপী গবেষণার ফলাফলের উপর ফিচার মুদ্রিত হয় ।
দ্রুত ভ্রমণ এবং দৌড়ের একটি উদ্দেশ্য হলো শারীরিকভাবে সুস্থ এবং প্রফুল্ল থাকা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো সুস্বাস্থ্য নিয়ে জীবন যাপন করা। তৃতীয় উদ্দেশ্য হলো জীবনকাল বা মেয়াদ বৃদ্ধি করা। অনেকেই বলে থাকেন, মৃত্যু যখন নির্ধারিত তখন মৃত্যু হবেই। কথাটি পূর্ণ সত্য নয় ।
আল্লাহ্ সর্ব-শক্তিমান। তাঁকে কারো নিকট জবাবদিহি করতে হয় না। মানুষকে আল্লাহ্ ফিত্রাতে সৃষ্টি করেছেন। তদুপরি তাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন যা অন্যান্য প্রাণীর নেই ! স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির কারণে একমাত্র মানুষের হাশরে বিচার হবে, কোনো প্রাণীর নয় ।
মানুষ নিজের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির দ্বারা স্বভাববিরুদ্ধ পাপ কাজ করতে পারে। মানুষের আচরণের ফলে তাদের হায়াৎ আল্লাহ্ বৃদ্ধি করতে পারেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতীয় জনগণ ও বাঙালিদের গড়পরতা আয়ু ছিলো ইউরোপীয়ান এবং রাশিয়ানদের থেকে বেশি। রাশিয়ানদের আয়ু এখন ৭০-৮০ এর ঊর্ধ্বে। জাপানীদের তো ১০০ ছোঁয়াছুঁয়ি করছে। আমাদের ৩০ থেকে ৫০ এর ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। হার্ভার্ড চিকিৎসক ড. লী-এর গবেষণায় দেখা যায় যে, যারা ১২ মিনিটে ১ মাইল (1.6km) দৌড়ান তারা ভ্রমণ থেকে দৌড় ও আধা দৌড়ে পূর্ণ সফলতা লাভ করেন, তাদের আয়ু দীর্ঘতর হয়।
ড. লী-এর গবেষণায় হাঁটার গতির সঙ্গে জীবনকালের মেয়াদের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দ্রুত না হাঁটলে অতিরিক্ত ক্যালরী খাওয়ার ফলে মেটাবলিক রেইট বা ক্যালরিতে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় রূপান্তর (মেটাবলিজম) প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হয় না। এর ফলে কোলেস্টেরল চর্বি শিরা এবং ধমনীতে জমা হয়। যদি হাঁটার ফলে দেহ ঘর্মাক্ত না হয়, তবে এ হাঁটা ডায়াবেটিক রোগীদের বড় একটা উপকারে আসে না। অবশ্য কিছুটা উপকার যে একেবারেই হয় না তা নয়। যুবকদের অন্তত ঘন্টায় ৫ মাইল গতিতে অর্থাৎ ১২ মিনিটে ১ মাইল হাঁটা উচিত। যদি কেউ স্বাস্থ্যবান, প্রফুল্ল এবং দীর্ঘজীবী হতে চান এই মেয়াদের হাঁটা অত্যাবশ্যক ।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]