হৃদরোগ থেকে মুক্তির উপায় হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

হৃদরোগের ছোবল থেকে বাঁচুন
ডা. (ক্যাপ্টেন) আব্দুল বাছেত
হৃদরোগ বিষধর সর্পের ছোবলের মতই একটি ভয়ানক রোগ। সবারই এর হাত থেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত। হৃদরোগের মধ্যে যে তিনটি রোগে অধিকাংশ লোকের, বিশেষ করে ধনিক শ্রেণীর লোকের মৃত্যু ঘটে, তা হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure), অ্যানজাইনা পেক্টোরিস (Angina Pectoris) এবং করোনারী থ্রম্বোসিস (Coronary Thrombosis)। এগুলি আবার পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং সবগুলিরই অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এ্যাথেরোসক্লেরোসিস (Atherosclerosis) । অর্থাৎ শিরা-উপশিরায় কোলেস্টেরল (Cholesterol) জমা হওয়া। কোলেস্টেরল মানে চর্বি। চর্বি রক্তের ভিতর দিয়ে যখন সূক্ষ্ম আকারে প্রবাহিত হয়, তখন তাকে কলেস্টেরল বলে।
নদী-নালায় যেমন বালু বা পলিমাটি জমা হয়ে নদীর গভীরতা এবং প্রশস্ততা কমিয়ে দেয়, যার ফলে প্রচুর পানি ঐ নদী দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না, আমাদের শরীরে শিরা উপশিরায় কোলেস্টেরল জমা হলে, পরিমিত রক্ত ঐ রক্তনালী দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে পরিমিত রক্তের অভাবে নানাবিধ রোগের সৃষ্টি হয়। সুতরাং চর্বি খেতে মজাদার হলেও লোভাতুর লোকদের, বিশেষ করে বয়স্ক লোকদের এ ব্যাপারে লোভ সংবরণ করা একান্ত প্রয়োজন। যেহেতু উচ্চ রক্তচাপ থেকেই পরবর্তী মারাত্মক রোগগুলির সৃষ্টি হয়, সুতরাং উচ্চ রক্তচাপ সম্বন্ধেই প্রথমে কিছু বলা দরকার।
উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure)
শরীরে রক্ত চলাচল করার সময় শিরা ও উপশিরায় যে চাপের সৃষ্টি হয়, তাকেই রক্তচাপ বা Blood Pressure বলে। একজন সুস্থ লোকের রক্তচাপ কত থাকা উচিত ? সাধারণত ১২০/৮০ মিলিমিটার অব্ মার্কারীকেই স্বাভাবিক রক্তচাপ বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু এটা সব মানুষের জন্য একই রকম নাও হতে পারে। বয়স ও শরীরের আকার অনুসারে রক্তচাপ কম-বেশী হয়ে থাকে। বিশেষ করে বয়সের সঙ্গে রক্তচাপের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই এ সম্বন্ধে একটি মোক্ষম ফরমূলা হচ্ছে, বয়স+৯০,
অর্থাৎ আপনার বয়স যদি ৩০ বৎসর হয়, তবে আপনার রক্তচাপ হবে ৩০+90 = ১২০ এবং এটা হবে Systolic Pressure । রোগী পরীক্ষার সময়, আপনারা লক্ষ করলে দেখতে পাবেন যে, ডাক্তারগণ রক্তচাপ লিখতে দুটি অংক লিখে থাকেন। দাগের উপরে যেটা লেখেন, এটা হচ্ছে Systolic Pressure, আর দাগের নিচে যেটা লেখেন, ওটা হচ্ছে Diastolic Pressure, Systolic Pressure মানে হৃৎপিণ্ড যখন সঙ্কুচিত হয় (Contraction), তখন যে চাপ হয়, সেটা হচ্ছে সিসটোলিক প্রেসার, আর হৃৎপিণ্ডের যখন সম্প্রসারণ (Expansion) হয়, তাঁকে বলে ডায়াস্টোলিক প্রেসার।
এখন একটা প্রশ্ন জাগে, কত রক্তচাপ হলে সেটাকে আমরা উচ্চ রক্তচাপ বলে গণা করব। বয়সের উপরেই এটা বেশির ভাগ নির্ভর করে। তবে সাধারণত আমরা ১৫০/৯০ চাপকেই উচ্চ সীমার মধ্যে গণ্য করে থাকি। এর বেশি হলেই যেমন ১৬০/৯৫ মিলিমিটার অব মারকারী, তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে (High Blood Pressure) গণ্য করা যায়। উচ্চ রক্তচাপ হিসাব করতে ডায়াসটোলিক প্রেসারের উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তবে মানুষে মানুষে এ ব্যাপারে পার্থক্য রয়েছে। অনেকে ১৮০/১০০ প্রেসার নিয়েও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে, আবার অনেকে ১৬০/৯৫ প্রেসার হলেই ধরাশায়ী হয়ে বিছানায় আশ্রয় নিচ্ছে। সুতরাং এ ব্যাপারে ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই । তবে মোটামুটিভাবে ১৬০/৯৫ বা তদূর্ধ্ব চাপকেই হাই প্রেসার ধরা হয়।
রক্তচাপের কারণ
আগেই বলেছি, শিরা-উপশিরায় কোলেস্টেরল জমা হওয়াটাই রক্তচাপের প্রধান কারণ। এটা এই জন্য হয় যে, শিরা-উপশিরার ভেতরের দেয়ালে এই কোলেস্টেরল জমা হওয়ায় রক্তনালীর গভীরতা ও প্রশস্ততা কমে যায়, ফলে খরস্রোতা নদীর মতো রক্তনালীর গায়ে রক্তের চাপ বেশি পড়ে, যার জন্য রক্তচাপ বেড়ে যায়। ধনিক শ্রেণী এবং স্থূলকায় লোকদেরই এটা বেশি হয়ে তাকে, কেননা তারা চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পে দ্বারা সর্বদা পেটপূর্তি করে রাখে। এ ছাড়া বংশগতভাবেও রক্তচাপ হতে পারে। এ ধরনের রক্তচাপকে বলে Essential Hypertension বা প্রাথমিক উচ্চ রক্তচাপ । আবার বিভিন্ন রোগের কারণেও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে, তাকে বলে Secondary Hypertension বা কোন কারণজনিত উচ্চ রক্তচাপ। এই রোগগুলি হচ্ছে : মূত্রাশয়ের রোগ (Kidney Diseases), অগ্নাশয়ের টিউমার (Tumour of the pancreas) এবং মেয়েদের কতকগুলি বিশেষ বিশেষ রোগ আছে, যেগুলিতে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে, যেমন গর্ভবতী অবস্থায় এ্যাকলামশিয়া বা খিঁচুনি (Eclamsia) এবং মাসিক বন্ধ হলে (Menopausal Syndrom । এ ছাড়া জন্ম-নিরোধ ট্যাবলেট ব্যবহারে কোন কোন মহিলার উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ : উচ্চ রক্তচাপ হলে সাধারণত মাথা ঘোরায় বা মাথায় চক্কর দেয়, ঘাড়ে এবং মাথায় ব্যথা হয়, রৌদ্রে পথ-চলতে বা কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়, তারা ঠাণ্ডা বেশি পছন্দ করে, বুক ধড়ফড় হতে পারে, রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ডাক্তারী পরীক্ষায় উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে এবং নাড়ির গতি বেশি পাওয়া যায়। বুকের এক্সরে এবং ই.সি.জি (E.C.G.) করে হার্টের অবস্থা দেখে নেওয়া উচিত। অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ এবং প্রস্রাবে সুগার আছে কি না, তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন ।
প্রতিকার ঃ চর্বিজাতীয় খাদ্য যেমন ঘি, মাখন, ছানা, খাসির গোশত, গরুর গোশত্, ইলিশ মাছ, পাঙ্গাস মাছ, সরপুঁটি এবং অন্যান্য তৈলাক্ত মাছ-মাংস না খাওয়াই এ রোগের হাত থেকে বাঁচার প্রধান উপায়। এ ছাড়া Secondary Hypertension-এর বেলায়, যার যে রোগ আছে, তার চিকিৎসা করা একান্ত প্রয়োজন। যেসব মহিলার উচ্চ রক্তচাপ আছে, ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত তাদের জন্ম- নিয়ন্ত্রণ বড়ি না খাওয়াই ভাল। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করা, সিগারেটের অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করা, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা, পারিবারিক কলহ দূর করা এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাবার অভ্যাস করা (Early to bed and early to rise ) একান্ত প্রয়োজন। লবণ কম খাওয়া ভাল।
চিকিৎসা : ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিম্নের ঔষধগুলির যে কোন একটা খাওয়া যেতে পারে, যেমন Serpasil, Ismelin, Aldomet, Inderal, Esidrex. Alpha Methyl Dopa - এসব বড়ি রক্তের চাপ অনুসারে একবার, দুইবার বা তিনবার দেওয়া হয়। এর সঙ্গে প্রস্রাব বাড়াবার জন্য Diuretics যেমন Lasix. Neonaclex. Furalax ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। সেইসঙ্গে ঘুমের জন্য Relaxen, Seduxen দেওয়া যেতে পারে।
নিম্ন রক্তচাপ (Low Blood Pressure)
সবাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়েই মাথা ঘামায় কিন্তু নিম্ন রক্তচাপ বলেও একটি রোগ আছে, যা অনেককে ভোগায়। এতে রক্তের চাপ কম থাকে পুষ্টিহীনতা, নানাবিধ রোগ আর শরীরে রক্ত কম থাকাই (Anaemia) এর প্রধান কারণ। শরীরের দুর্বলতা, কানে তালা লাগা এবং কাজকর্মে অনীহা ও অক্ষমতাই এর প্রধান লক্ষণ।
প্রতিকার : প্রচুর পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া, বিশ্রাম নেওয়া এবং রক্তশূন্যতা থাকলে রক্তবর্ধক ঔষধ খাওয়া প্রয়োজন ।
Angina pectoris ঃ যে শিরা স্বয়ং হৃৎপিণ্ডকে রক্ত সরবরাহ করে, তাকে বলে করোনারী আর্টারী (Coronary Artery) । এই করোনারী আর্টারীর ভেতর চর্বি জমাট হলে বা অন্য কোন কারণে এর সংকোচন বা Contraction হয়, যার ফলে
হৃৎপিণ্ডে ঠিকমত রক্ত সাপ্লাই হয় না, তখন বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, এই রোগকে অ্যানজাইনা পেক্টোরিস বলে। মনে ক্রোধ-চিন্তা ভাবনা থাকলে, অধিক পরিশ্রম করলে বা ঠাণ্ডায় ভ্রমণ করলে বা তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে এই রোগ হতে পারে। লক্ষণ ঃ বুকের মাঝখানে (Sternun -এর নিচে) প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং ব্যথা ক্রমশ বাড়তে থাকে। রক্তের চাপ ও নাড়ির গতি বৃদ্ধি পায়, রোগী ঘামতে থাকে। চিকিৎসা : Angised Tab. ১ বা ২ বা বড়ি, তাড়াতাড়ি জিহ্বার নিচে দিতে হয়। সেইসঙ্গে Segontin বা Persantin বা Coroxin বা Cardinal ১ বড়ি করে তিনবার খাওয়ার পূর্বে খেতে হয়। এর সঙ্গে Relaxen বা Seduxen দেওয়া যেতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্য নিতে হবে।
করোনারী থ্রম্বোসিস : হৃদরোগের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি মারাত্মক এবং মানুষের হঠাৎ মৃত্যুর কারণই হচ্ছে এই করোনারী থ্রম্বোসিস্ । সিফিলিস, চর্বি জমাট বা Thrombus থেকে করোনারী আর্টারী বন্ধ বা ব্লক হয়ে গেলে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে Heart muscle-এর Necrosis শুরু হয়ে যায়, আর তখনি বুকের মাঝখানে (একটু বামে) এমন প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয় যে (Stabbing pain) রোগী আর চলতে পারে না, হঠাৎ করে বসে পড়ে বা ধপাস করে পড়ে যায়, আর উঠতেই পারে না । অনেকে বাব্রুমে গিয়ে সেখান থেকে আর বের হয়ে আসতে পারে না, কেউ কেউ আবার চেয়ারে বসে বসে কর্মরত অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে।
লক্ষণ : রক্তের অভাবে মুখ ফ্যাকাশে আকার ধারণ করে, শরীরে ঘাম দেখা দেয়, অসহ্য ব্যথায় রোগী ছট্ফট করতে থাকে, এমনকি গড়াগড়িও দিতে পারে। সেইসঙ্গে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়। রক্তের চাপ কমে যায়, নাড়ির গতি বেড়ে যায়। রক্তের E.S.R. বৃদ্ধি পায়, E.C.G. তে Q-ধরা পড়ে। চিকিৎসা : এ রোগের চিকিৎসা খুবই জটিল। কাজেই হাসপাতাল বা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত নয়। তবে জরুরী ভিত্তিতে Angised ট্যাবলেট জিহ্বার নিচে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া, অক্সিজেন দিতে পারলে ভালো হয়। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, রোগীকে হাসপাতালে পাঠানোই শ্রেয়।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]