রোগীর সেবায় মহানবী (সা.)-এর সুন্নত রোগীর সেবায় মহানবী (সা)

রোগীর সেবায় মহানবী (সা)
মুফতী মুতীউর রহমান
হযরত মুহাম্মদ (সা) ছিলেন গোটা পৃথিবীর সকল সৃষ্টি জীবের জন্য রহমত। তাঁর পূত-পবিত্র অস্তিত্ব প্রকৃতি-স্বভাব, আচার-আচরণ সব কিছুই ছিল সেই অফুরান রহমতের অনন্য ধারায় সিঞ্চিত। তিনি মানুষের জন্য যে পূর্ণাঙ্গ দীন নিয়ে এসেছিলেন তার প্রতিটি পরতে পরতে সর্বক্ষেত্রে সুপ্রবাহিত হয়েছে অনন্ত রহমেরত ফল্গুধারা। পৃথিবীর সকল মানুষের ব্যক্তি জীবনের সীমিত গণ্ডি থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক জীবনের পরিব্যাপ্তিতেও উপচে পড়েছে তাঁর আনীত দীনের রহমত ও বরকতের ধারা।
সামাজিক জীবনের অন্যসব বিষয়ের পাশাপাশি রোগী সেবার ক্ষেত্রেও তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ সত্যিই অনুপম। এত মহান মানুষ হয়েও তিনি যেভাবে সর্বশ্রেণীর রোগীর সেবায় এগিয়ে এসেছেন তার দ্বিতীয় নজীর কোথাও পাওয়া যাবে না। তিনি নিজেও রোগীর সেবায় নিঃস্বার্থভাবে, অনাবিল দরদ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন এবং কিয়ামত অবধি তাঁর অনুসারীদেরকেও রোগীর সেবার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। আর্ত, পীড়িতের সেবা-শুশ্রূষার ফযীলত বর্ণনার মাধ্যমে সকল মুসলমানকে আর্ত সেবার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
রোগীর সেবার ক্ষেত্রে রাসূল (সা) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আদর্শকে চার ভাগে ভাগ করা
এক. রোগী-সেবার প্রতি গুরুত্বারোপ ।
দুই. রোগী-সেবার ফযীলত বর্ণনা । তিন. রোগী-সেবা না করার নিন্দা।
চার. নিজে রোগীর সেবা করা।
রোগী-সেবার প্রতি গুরুত্বারোপ
আর্ত সেবার প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন-
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা)-কে বলতে শুনেছি : এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক। সালামের জবাব দেয়া, রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করা, জানাযার অনুসরণ করা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচিদাতার হাঁচির জবাব দেয়া।
১ হযরত আবূ মূসা আশ'আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, তোমরা ক্ষুধার্তকে আহার করাও, রোগীর সেবা কর এবং বন্দীকে মুক্ত কর।
২ (সহীহ বুখারী ২য় খণ্ড, ৮৪৩ ) হযরত বারা ইব্ন আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) আমাদের সাতটি বিষয়ে আদেশ করেছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদের সোনার আংটি, মোটা, পাতলা ও কারুকার্যখচিত রেশমী কাপড় ব্যবহার করতে এবং কাসসী ও মিয়সারা কাপড় ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি আমাদের আদেশ করেছেন : আমরা যেন জানাযার অনুসরণ করি, রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করি এবং সালামের প্রসার করি।
৩ রোগী সেবার ফযীলত বর্ণনা রাসূল (সা) বহু হাদীসে রোগী সেবার বর্ণনা করেছেন। হযরত সাওবান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন । নবী (সা) বলেন, কোনও মুসলিম তার কোনও মুসলিম ভাইকে সেবা-শুশ্রূষা করতে গেলে সে ততক্ষণ যেন জান্নাতের খুরমা বাগানে অবস্থান করে।
হযরত আলী (রা) বলেন, আমি রাসূল (সা)-কে বলতে শুনেছি, কোন মুসলিম যদি কোন মুসলিম রোগীকে ভোরে দেখতে যায় তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করেন। আর যদি সন্ধ্যার সময় কোন মুসলিম রোগীর সেবা- শুশ্রূষা করতে যায় তবে তার জন্য ভোর পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করেন। আর তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান হবে। হযরত আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন: যে ব্যক্তি খুব ভালভাবে ওযু করল অতঃপর সওয়াবের নিয়তে কোনও মুসলমান রোগী ভাইয়ের সেবা-শুশ্রূষা করল তার ও জাহান্নামের মধ্যে সত্তর বছরের দূরত্ব সৃষ্টি করে দেয়া হবে।
৬ রোগীর সেবা না করার অশুভ পরিণতি বর্ণনা রাসূল (সা) বিভিন্ন হাদীসে রোগীর সেবা না করার পারলৌকিক অশুভ পরিণতি উল্লেখ করেছেন। যা একজন প্রকৃত মুমীনকে রোগীর সেবায় উদ্বুদ্ধ করবে। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন : কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা (কোন কোন বান্দাকে) বলবেন : হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম কিন্তু তুমি আমার সেবা করনি। বান্দা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনি তো সমস্ত বিশ্বের প্রতিপালক। আমি কি করে আপনার সেবা-শুশ্রূষা করতে পারি ? আল্লাহ তা'আলা বলবেন, তুমি কি জাননি যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল কিন্তু তুমি তার সেবা করনি! যদি তুমি তার সেবা করতে তাহলে তুমি সেখানে আমাকে পেতে।
৭ হযরত উসামা ইবন যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন : প্লেগ আযাবের আলামত — মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ পাক তা দিয়ে তাঁর বান্দাদের কিছু লোককে বিপদগ্রস্ত করেছেন। সুতরাং কোনও এলাকায় এর প্রাদুর্ভাবের সংবাদ পেলে তোমরা সেখানে যেও না আর তোমরা কোনও এলাকায় অবস্থানকালে সেখানে প্লেগ দেখা দিলে সেখান থেকে পলায়ন করবে না।
এতক্ষণ যা আলোচনা করা হলো তা হলো—রাসূল (সা) কর্তৃক রোগী সেবার প্রতি গুরুত্বারোপ, রোগী-সেবার ফযীলত বর্ণনা, রোগীর সেবা না করার পারলৌকিক অশুভ পরিণতির ভীতি প্রদর্শন। এই ত্রিবিধ কর্ম পদ্ধতির মাধ্যমে রাসূল (সা) রোগী- সেবার আদর্শ স্থাপন করেছেন। তবে এবার রাসূল (সা)-এর জীবনের ঘটনা-পরিক্রমা পর্যালোচনা করে দেখা যাক, তিনি নিজে কীভাবে সেবা করেছেন এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর 'উওয়াতুন হাসানা' মধুরতম চরিত্র কী ছিল- যা কিয়ামতাবধি সর্বকালের সর্বশ্রেণীর মানুষের জন্য অনুকরণীয়।
রাসূল (সা)-এর রোগী-সেবা
রাসূল (সা) যেভাবে অন্যদের রোগী সেবার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন তেমনি তিনি নিজেও রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করেছেন। মুসলিম-অমুসলিম, ধনী- দরিদ্র, বন্ধু-শত্রু, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সর্ব শ্রেণীর আর্তের সেবায় দরদী চিত্তে এগিয়ে এসেছেন। আর্ত সেবায় তাঁর অনুসৃত নীতিতে তাঁর 'রাহমাতুল্লিল আলামীন' গুণেরই ব্যঞ্জনা ঘটেছে। পরম শত্রুরও অসুস্থাবস্থায় তিনি তার শুশ্রূষা করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। হযরত আনাস (রা) নবী করীম (সা) সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি অসুস্থের সেবা শুশ্রূষা করতেন।..... হযরত জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তখন নবী করীম (সা) ও আবূ বক্র (রা) পায়ে হেঁটে আমার সেবা-শুশ্রূষা করার জন্য আমার নিকট এলেন। তাঁরা আমাকে সংজ্ঞা বিলুপ্ত অবস্থায় পেলেন। তখন নবী (সা) ওযু করলেন। তারপর তিনি তার অবশিষ্ট পানি আমার গায়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন। ফলে আমি সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে দেখলাম নবী (সা) উপস্থিত। আমি নবী (সা)-কে বললাম : হে আল্লাহর রাসূল (সা), আমার
সম্পদের ব্যাপারে আমি কি করবো ? তিনি তখন আমাকে কোনও উত্তর দেননি। অবশেষে মীরাসের আয়াত নাযিল হলো ।
১০ হযরত আয়েশা বিনতে সা'দ (রা) থেকে বর্ণিত। তাঁর পিতা সা'দ (রা) বলেছেন : আমি মক্কায় ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ি। নবী করীম (সা) আমার সেবা-শুশ্রূষার জন্য আমার কাছে এলেন। হযরত যায়েদ ইবন আরকাম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার চোখের পীড়ার জন্য রাসূল (সা) আমাকে দেখতে এলেন।
১২ হযরত উসামা ইবন যায়েদ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী-তনয়া হযরত যায়নাব (রা) নবী করীম (সা)-এর খিদমতে সংবাদ পাঠালেন— আমার শিশু কন্যার মৃত্যু আসন্ন। এ জন্য আপনি আমাদের এখানে একবার আসুন।' উসামা সা'দ ও উবাই ইবন কা'ব (রা) তখন রাসূল (সা)-এর সাথে ছিলেন। হুযুর (সা) তাঁর নিকট সালাম পাঠালেন এবং বলে দিলেন, আল্লাহ তা'আলার মর্জি তিনি যা চান নিয়ে নেন এবং যা চান দিয়ে যান। তাঁর কাছে সব কিছুরই একটা সুনির্দিষ্ট সময়সূচি আছে। সুতরাং সওয়াবের প্রত্যাশা এবং সবর করা উচিত।' এরপর আবারও তিনি কসম দিয়ে নবী করীম (সা)- এর নিকট একজন লোক পাঠালেন। তখন নবী কারীম (সা) উঠলেন, আমরাও উঠলাম এবং যায়নাব (রা)-এর বাড়ি গেলাম। (সেই মরণাপন্ন) শিশুটিকে রাসূল (সা)-এর কোলে তুলে দেয়া হল। তখন তার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হচ্ছিল। নবী করীম (সা)-এর দু'চোখ বেয়ে অশ্রু নেমে এলো। হযরত সা'দ আরয করলেন : হে আল্লাহর রাসূল (সা), এটা কি ? রাসূল (সা) উত্তর দিলেন, এটা রহমত। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা করেন তার অন্তরে এই দয়া, রহমত স্থাপন করেন।
১৩ রোগীর সাথে বা তার সামনে তার রোগের জটিলতা বা মারাত্মকতার ব্যাপারে আলোচনা করলে তাতে সে চিন্তান্বিত হয়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। মানসিক বিপর্যস্ততার কারণে সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। এজন্য রোগীর সাথে বা তার সামনে তার রোগের জটিলতা, মারাত্মকতা নিয়ে আলোচনা অনুচিত বরং তাকে অভয় দেয়া ও তার মনে সাহস যোগানো বাঞ্ছনীয়। রাসূল (সা) রোগীকে অভয় দিতেন। তার সামনে তার রোগকে হালকা করে আলোচনা করতেন। উম্মতকেও তিনি শিক্ষা দিয়েছেন— রোগীর সামনে ভাল কথা বলতে। তাকে দীর্ঘায়ুর আশ্বাস দিতে। তার মনে সাহস যোগাতে। এতে রোগী মানসিকভাবে সুস্থ থাকে।
হযরত আবূ সাঈদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেন, তোমরা যখন কোনও রোগীর সেবা করতে যাবে তখন তাকে তার জীবনের ব্যাপারে শংকামুক্ত করো। কারণ এটা তার (তকদীরের) কোনও কিছুকে দূর করতে পারবে না। তবে এতে তার মন খুশী হবে। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (র) তাঁর অনবদ্য হাদীস ভাষ্যগ্রন্থ লুমআ'তে লিখেছেন, 'তোমরা তাকে তার জীবনের ব্যাপারে চিন্তামুক্ত কর' বাক্যের মর্মকথা হল— তোমরা তার দীর্ঘায়ুর জন্য দোয়া করো। তাকে অভয় দাও। আনন্দিত করো । তাকে বলো, চিন্তা করবেন না, আপনার রোগ কোনও জটিল নয়। ইনশাআল্লাহ আপনি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবেন। এতে সে আনন্দিত হবে। তার চিন্তা দূর হবে। তার অসুস্থতাও তার কাছে হালকা মনে হবে। ফলে সে মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে।
১৫ হযরত ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) জনৈক বেদুঈনের সেবা করতে যান। নবী করীম (সা)-এর নিয়ম ছিল তিন যখন কোনও রাগীকে দেখতে যেতেন তখন তাকে বলতেন, কোন অসুবিধা নেই। ইনশাআল্লাহ গুনাহসমূহ থেকে পবিত্রতা লাভ হবে।' তখন বেদুঈন বলল, আপনি কি বলছেন যে এটা গুনাহ থেকে পবিত্র করে দেবে! কখনো নয় বরং এটা এমন এক জ্বর যা এক অতি বৃদ্ধকে উত্তপ্ত করছে। যা তাকে কবরস্থান দেখিয়ে ছাড়বে। রাসূল (সা) বললেন, হ্যাঁ তাহলে তাই ।
১৬ রাসূল (সা) কোনও রোগীকে দেখতে গেলে বা তার কাছে কোনও রোগীকে নিয়ে আসা হলে তিনি তার মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত বুলাতেন। দোয়া করতেন। কোন সময় চিকিৎসাস্বরূপ ওযু করে ওযুর পানি বা অবশিষ্ট পানি অসুস্থের শরীরে ছিটিয়ে দিতেন। উম্মতকেও তিনি অসুস্থের সেবা করতে গেলে বিশেষ দোয়া করতে শিখিয়েছেন।
হযরত সা'দ (রা) বলেন, ---- অতঃপর রাসূল (সা) আমার কপালে তাঁর হাত রাখলেন। তারপর আমার মুখে ও পেটে হাত বুলালেন এবং দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! সা'দকে আরোগ্য দান কর এবং তার হিজরতকে পূর্ণতা দান কর।
১৭ হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা) যখন কোনও রোগীর নিকট যেতেন অথবা কোনও রোগীকে তাঁর নিকট আনা হতো তখন তিনি বলতেন- (দোয়া করতেন) “হে মানুষের প্রতিপালক! কষ্ট দূর কর। আরোগ্য দান করো। তুমিই আরোগ্য দানকারী। তুমি ছাড়া আর কোনও আরোগ্যদানকারী নেই। এমন আরোগ্য দাও যা কোনও রোগ বাদ না দেয়।”
রোগীর কাছে শোরগোল করলে তার কষ্ট হয়। কোন কোন সময় বেশি সময় রোগীর কাছে বসলে তাতেও সে বিরক্তি বোধ করে। এসব কারণে রাসূল (সা) রোগীর কাছে শোরগোল করাকে অপছন্দ করেছেন এবং নিষ্প্রয়োজনে তার কাছে বেশি সময় বসতেও নিষেধ করেছেন।
হযরত ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রোগীর নিকট কম সময় বসা এবং শোরগোল কম করা সুন্নত।
হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন : (উত্তম) রোগী সেবা হলো দু'বার উটনী দোহনের মাধ্যবর্তী বিরতি পরিমাণ সময় (তার কাছে বসা)। সায়িদ ইবন মুসায়্যাব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেছেন : সর্বোত্তম রোগী সেবা হলো খুব তাড়াতাড়ি তার কাছ থেকে উঠে যাওয়া । উটনীকে একবার দুধ দোহনের পর কিছু সময় বিরতি দেয়া হয়। যেন তার বাচ্চা দুধ পান করে এবং তার স্তনে আবার দুধ নামে অতঃপর আবার দোহানো হয়। এই দু'বার দোহানোর মধ্যবর্তী বিরতি অতি সামান্য। সুতরাং হাদীসের মর্মকথা হচ্ছে- উত্তম রোগী সেবা হলো রোগীর নিকট অল্প সময় বসা। রাসূল (সা) নিজেও কোন কোন সময় রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করতেন এবং তিনি অন্যদেরকেও রোগীকে ঝাড়ফুঁক করতে উৎসাহিত করেছেন।
হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা) এই দোয়া দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতেন——মানুষের প্রতিপালক, বিপদ সংকট দূর করুন। আপনার হাতেই রয়েছে উপশম। আপনি ব্যতীত আর কোনও (বিপদ) বিদূরণকারী নেই।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে। হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা)-এর নিয়ম ছিল—কেউ তার দেহের কোনও অঙ্গে অসুস্থতা বোধ করলে কিংবা তাতে কোন ফোঁড়া বা জখম হলে রাসূল (সা) তাঁর আঙুল দিয়ে এভাবে করতেন- (একথা বলে 'এভাবে করার' রূপ বোঝানোর নিমিত্ত হাদীস বর্ণনাকারী) সুফিয়ান (র) তার বৃদ্ধাঙ্গুলি মাটিতে রাখলেন, এরপর তা তুলে নিতেন এবং তখন এ দোয়া পড়তেন : “আল্লাহর নামে আমাদের যমীনের ধূলাবালি আমাদের কারো লালার সাথে (মিলিয়ে) আমাদের প্রতিপালকের হুকুমে তা দিয়ে আমাদের রোগীর আরোগ্য লাভের উদ্দেশ্যে (মালিশ করছি)। "
অসুস্থ ব্যক্তি যদি বিশেষ কোনও কিছু খেতে চায় তাহলে শুশ্রূষাকারীদের জন্য উচিত সে খাদ্যের ব্যবস্থা করা এবং তাকে তা আহার করানো। রাসূল (সা) কোনও অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে তাকে জিজ্ঞাসা করতেন, তুমি কি কোনও কিছু খেতে চাও ? যদি রোগী কোনও কিছু খাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করত তাহলে তার জন্য সে খাদ্যের ব্যবস্থা করতেন। নিম্নবর্ণিত হাদীসটি দ্বারা বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। হযরত ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা) জনৈক রোগীকে দেখতে গেলেন। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কি কিছু খেতে চাও ? রোগী উত্তর দিল, যবের রুটি। রাসূল (সা) বললেন- যার কাছে যবের রুটি আছে সে যেন তার এই (মুসলমান) ভাইয়ের কাছে তা পাঠিয়ে দেয়। অতঃপর বললেন, যখন তোমাদের কোনও রোগী কোনও কিছু খেতে চায় তাহলে (তার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন) তাকে তা আহার করায়।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে- রাসূল (সা) অমুসলিমদেরও সেবা-শুশ্রূষা করতেন। যেহেতু তিনি ছিলেন 'রাহমাতুল্লিল আলামীন' 'সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ' তাই তার রোগী সেবা শুধু মুসলমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। মানুষের দুঃখ- দুর্দশায়, অসুস্থতায় অন্য মানুষের মানবতাবোধ জাগ্রত হবে। অন্যের সেবায় নিবেদিত হবে। ধর্মের পরিচয়ে নয়, মানুষের পরিচয়ে। এই শিক্ষাই পাই রাসূল (সা)-এর অমুসলিম রোগী-সেবা থেকে। এখানে রাসূল (সা)-এর অমুসলিম পীড়িত সেবার দু'টি ঘটনা আলোচনা করা হল ।
হযরত সাঈদ ইব্ন মুসায়্যাব (রা) থেকে বর্ণিত। আবূ তালিব মৃত্যুর সময় রাসূল (সা) তার কাছে উপস্থিত হলেন। তিনি আবূ জাহল, আবদুল্লাহ ইব্ন আবী উমাইয়্যাহ ইবন মুগীরাকে দেখতে পেলেন। রাসূল (সা) বললেন : হে চাচা! আপনি কালিমা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলুন। আল্লাহর নিকট আপনার জন্য এ সাক্ষ্য দেব।.......
হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। এক ইয়াহুদী ছেলে নবী করীম (সা)-এর খিদমত করত । ছেলেটি অসুস্থ হলো। নবী করীম (সা) তাকে দেখতে এলেন। এরপর বললেন : তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। সে ইসলাম গ্রহণ করল ।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে। হযরত ইবনুল মুসায়্যা (রা) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আবূ তালিব মৃত্যুমুখে পতিত হলে নবী করীম তার কাছে যান।
উপসংহার
মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক জীবনে একে অপরের মুখাপেক্ষী। পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমেই মানুষের সমাজবদ্ধ জীবন সুখ-সুন্দর হয়ে ওঠে। রাসূল (সা) এই সামাজিক জীবনের অনুপম আদর্শ রেখে গেছেন। যখন কোন মানুষ রুগ্ন হয় তখন স্বভাবতই অন্যরা তাকে সেবা-শুশ্রূষা করার প্রয়োজন হয়। কোনও সমাজের অসুস্থদের যদি অন্যরা সেবা-শুশ্রূষা না করে তাহলে তার জীবন বিষিয়ে উঠবে। রাসূল (সা) এ ক্ষেত্রে যে আদর্শ স্থাপন করেছেন তা বিরল। তিনি অসুস্থের সেবাকে একজন মু'মিনের ঈমানী দায়িত্ব স্থির করেছেন এবং এ ক্ষেত্রে তিনি কোনও বিতর্কের অবকাশ রাখেননি বরং সমাজের প্রত্যেক সদস্যই অপরের কাছ থেকে এ হক্ পাবে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের সেবায় এগিয়ে আসবে। আক্ষেপের বিষয় হলো রাসূল (সা)-এর এ মহান আদর্শ থেকে আজ আমরা দূরে, বহু দূরে। আমরা যদি রাসূল (সা)-এর আদর্শকে আবারও নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হই তাহলে আমাদের জীবন হবে সুন্দর, সুখের ও শান্তিময় । -S. 2. ৩. মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈল, সহীহ বুখারী, দেওবন্দ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬৬৷ মুসলিম ইবন হাজ্জাজ আল-কুশাইরী, সহীহ মুসলিম, দেওবন্দ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬৬ । মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈল, সহীহ বুখারী, দেওবন্দ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৪৩। মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈল, সহীহ বুখারী, দেওবন্দ, ২য় খণ্ড, পৃ. 88৩ 88 । ৪. মুসলিম ইব্ন হাজ্জাজ আল-কুশাইরী, সহীহ মুসলিম, দেওবন্দ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩১। মুহাম্মদ ইবন ঈসা, জামি তিরমিযি, দেওবন্দ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯১। ৫. মুহাম্মদ ইব্ন ঈসা, জামি তিরমিযি, দেওবন্দ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯১। সুলাইমান ইব্ন আশাআ'স, সুনানে আবূ দাউদ, দেওবন্দ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৪১। ৬. সুলাইমান ইব্ন আশআ'স, সুনানে আবূ দাউদ, দেওবন্দ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৪১-৪২। ৭. মুসলিম ইব্ন হাজ্জাজ আল-কুশাইরী, সহীহ মুসলিম, দেওবন্দ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩১৮ । ৮. মুসলিম ইব্ন হাজ্জাজ আল-কুশাইরী, সহীহ মুসলিম, দেওবন্দ, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৭৮। ওলী উদ্দীন খাতীৰ তাবরিযী, মিশকতা, দেওবন্দ, ১ম পৃ. 1

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]