চোখের রোগ, চিকিৎসা, লক্ষণ, কারণ ও খরচ চক্ষুরোগ ও প্রতিকার ডা. এম. এ. মান্নান কবীর

চক্ষুরোগ ও প্রতিকার
ডা. এম. এ. মান্নান কবীর
মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে চোখ অন্যতম সেরা সম্পদ। কোনও ব্যক্তির অন্য কোনও অঙ্গ না থাকলে তাঁর ভীষণ কষ্ট হবে একথা ঠিক, কিন্তু সে তো সবকিছু দেখতে পাচ্ছে। যার দুটি চোখ নেই কিংবা চোখে দেখে না তাঁর মতো অসহায় এবং হতভাগ্য ব্যক্তি সম্ভবত আর কেউই এ জগতে নেই। সে আল্লাহ্র সৃষ্টি এই সুন্দর বিশাল পৃথিবীর অফুরন্ত নেয়ামতগুলো দেখতে পারছে না। এমনকি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বা আপনজনকেও দেখতে পারছে না। সে কেবল কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গিয়ে একাকার হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এ জন্য সুন্দর এবং ভাল চোখ সকল মানুষই কামনা করে। তাই চোখে কোনও খুঁত কিংবা রোগ দেখা দিলে কখনও বসে থাকা উচিত নয়।
যদিও মানুষ চোখ দিয়ে দেখে, তবু এ ব্যাপারে মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে। চোখ হচ্ছে একটি অত্যন্ত জটিল সেন্স-অরগান বা ইন্দ্রিয়-প্রত্যঙ্গ। আমরা প্রতিদিন যা কিছু দেখি তা প্রথমে পরিবর্তিত হয় একটি 'ইমেজ'। তারপর সেই ইমেজ পরিবর্তিত হয় 'নার্ড ম্যাসেজ' বা 'স্নায়ুবার্তায়' এবং তারপরে এই স্নায়ুবার্তা মস্তিষ্কে পৌঁছলে মস্তিষ্ক সেই বার্তাকে বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দেয় আমরা কী দেখছি। চোখের গঠন মাথার খুলির মধ্যে রয়েছে মস্তিষ্ক। এই মস্তিষ্কের পুরোভাগের একটি অংশ থেকে এবং মুখমণ্ডলের অস্থিগুলোর গোলাকার গর্তের মধ্যে দু'টি চক্ষুগোলক (Eye ball) অবস্থিত। আমরা এর কেবল সামনের অংশটুকু দেখতে পাই। চোখের গোলকদু'টি দেখতে ডিম্বাকৃতির মতো। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ প্রায় ১ ইঞ্চি। ভ্রূণের নীচ ও দুপাশ হতে দুটি উপবৃদ্ধি বের হয়ে আসে এবং পরে মোটা হয়, এটাকে বলা হয় অপটিক প্লেট । অপটিক প্লেট নীচ থেকে ছিদ্র করা রবারের বলের মতো ভিতরে প্রবেশ করে, এটাকে বলা হয় প্রাথমিক চক্ষুকোষ থলি। চক্ষুকোষ থলি সামনের বহিঃস্তকের উপরিতলকে স্পর্শ করে এবং বহিঃস্তকের উপরিতলের কিছু অংশ এর সাথে প্রবেশ করে। ফলে চক্ষুকোষ থলি অপটিক কাপে পরিণত হয়। এই অপটিক কাপের দুটি স্তর আছে।
একটি ভিতরের এবং অপরটি বাইরের। চক্ষুপটের সম্পূর্ণ স্নায়ু-স্তরগুলো তৈরী হয় ভিতরের স্তর থেকে। বহিঃস্তরের উপরিতলের যে অংশ অপটিক কাপে ঢোকে তা ধীরে ধীরে মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্থুল আকার ধারণ করে, এটাকে বলা হয় লেন্সপ্লেট । লেন্সপ্লেটের অনুপ্রবেশে সৃষ্টি হয় লেন্সকোষ থলি । অপটিক কাপের চতুর্দিক দিয়ে এবং মধ্যস্তক অবস্থান দিয়ে শ্বেতপটল (Sclera), চক্ষুস্বচ্ছের (Cornea) উপঝিল্লি ছাড়া সম্পূর্ণ চক্ষুস্বচ্ছ ও চক্ষুকৃষ্ণ তৈরী হয়। অপটিক কাপের সামনের কিছু অংশ মধ্যস্তকের সাথে মিশে সিলিয়ারী বডি ও কনীনিকা তৈরী হয়। চক্ষুস্বচ্ছের সামনে বহিস্ত্বক ক্রমে উপরে ও নীচে সরে যেতে থাকে। কিছু মধ্যস্তক তার মধ্যে প্রবেশ করে; ফলে চক্ষুপল্লব (Eyelied) তৈরী হয়। বহিঃন্ত্রক থেকে চক্ষুবর্ষ (Conjunctive) ও চক্ষুস্বচ্ছের উপঝিল্লী তৈরী হয়। চক্ষুগোলকের বাইরের মাংস মধ্যস্তক থেকে তৈরী। অপটিক কাপের মধ্যের স্তর থেকে কিছু জেলীর মত বস্তু স্ফারিত হয়ে প্রাথমিক কাচীয় (Primary Vitreous) তৈরী করে এবং দ্বিতীয় কাচীয় (Secondary Vitreous ) দ্বারা পরে প্রাথমিক কাচীয় স্থানচ্যুত হয়।
ভ্রূণের কত দিনে চোখের প্রারম্ভকাল, এ ব্যাপারে প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, “ভ্রূণের ৬ সপ্তাহ (ভ্রূণ যখন ১৩ মি. মি.) বয়স থেকেই চোখের ক্রমবিকাশের প্রাথমিক পর্যায় শুরু হয়। অপটিক কাপ প্রায় ১২ সপ্তাহে (ভ্রূণ যখন ৫০ মি. মি.) তৈরী হয়। আইরিশ ৪ মাসে (ভ্রূণ যখন ৬৫ মি.মি.) তৈরী হতে থাকে।”১
চোখের বিভিন্ন রোগ
আমাদের দেশে ১১ প্রকার মারাত্মক চক্ষু রোগের বেশি আক্রমণ ঘটতে দেখা যায়। যেমন (১) গ্লুকোমা (২) মাইওপিয়া (৩) চোখের মণিতে ঘা (৪) অপুষ্টিজনিত কারণে অন্ধত্ব (৫) রেটিনাল ডিটাচমেন্ট (৬) ছানি পড়া (৭) সময়মতো চশমা না নেয়ায় অন্ধত্ব (৮) ট্যারা চোখ পরীক্ষা না করায় অন্ধত্ব (৯) ব্লাডপ্রেসারের কারণে চোখে প্রদাহ (১০) চোখ লাল হওয়া (১১) ডায়বেটিসজনিত কারণে চক্ষুরোগ।
১. গ্লুকোমা
চোখের ভিতরের স্বাভাবিক চাপ অপেক্ষা বেড়ে গিয়ে চক্ষুর পিছনের অপটিক ডিস্কের কাপিং বা চোখের যে কোনও অংশের ক্ষতি করাকে (বিশেষ ক্ষেত্রে দৃষ্টির সীমারেখা পরিবর্তন করে) বলা হয় চোখের উচ্চ চাপ বা গ্লুকোমা (Glaucoma) । আরও ব্যাপকভাবে বলা যায় যে, গাড়ির টায়ার কিংবা ফুটবল বা বেলুন ফুলিয়ে রাখতে যেমন প্রয়োজন হাওয়া, তেমনি চোখকে ফুলিয়ে রাখতে এবং চোখের : স্বাভাবিক আকৃতি ও সুষ্ঠু কর্ম সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় অভ্যন্তরীণ চাপ প্রয়োজন। এই চাপ ঠিক রাখার জন্য চোখে এক ধরনের জলীয় পদার্থ নিঃসৃত হয়ে থাকে, এটাকে বলা হয় অ্যাকোয়াস। চক্ষুগোলকের অভ্যন্তরে সিলিয়ারী বডি নামক অংশ হতে সবসময় অ্যাকোয়াস হিউমার (Aqueous Humour) নামে স্বচ্ছ জলীয় পদার্থ তৈরী হচ্ছে এবং চক্ষুস্বচ্ছ (Cornea) ও শ্বেতপটলের (Sclera) সংযোগস্থলে অবস্থিত সূক্ষ্ম জালিকার মতো ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে রক্তে ফিরে যাচ্ছে। এই জলীয় পদার্থের কিছু অংশ সব সময় চোখের ভিতরে থেকে এর অভ্যন্তরীণ চাপ (১০ হতে ২১ মি. মি. পারদ স্তম্ভ) রক্ষা করে। কোনও কারণে অ্যাকোয়াস হিউমার কম হলে চোখের চাপ কমে যায় এবং বেশি হলে চাপ বেড়ে যায়। চোখের এই চাপ বেড়ে গিয়ে যখন চোখের বিভিন্ন অংশ, বিশেষ করে অতিসংবেদনশীল স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে তখন তাকে বলা হয় চোখের উচ্চচাপ বা গ্লুকোমা (Glaucoma)।
চোখের নানা রোগের মধ্যে গ্লুকোমা একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগ হলে আস্তে আস্তে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। কোনও কোনও গ্লুকোমা রোগী নিজের চোখের রোগের অস্তিত্ব বুঝতে পারার পূর্বেই শতকরা ৯০ ভাগ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে । এই রোগে চোখের যে দৃষ্টিশক্তি চলে যায় তা চিকিৎসা করে কখনও ফিরে পাওয়া যায় না । কেবল অবশিষ্ট দৃষ্টিশক্তিটুকু বাঁচিয়ে রাখার জন্যে চিকিৎসা করা হয়।
চোখের ভিতরে একটা পানির চাপ থাকে। এই পানি চোখের ভিতরেই তৈরী হয় এবং ভিতরে ভিতরেই বেরিয়ে যায়। চোখের বাইরে যে পানি বেরিয়ে আসে তার সাথে ভিতরের পানির কোনও সম্পর্ক নাই। কোন কারণে যদি ভিতরের এই পানি বের হতে না পারে তাহলে সেই পানি এটা চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকলে চোখের সূক্ষ্ম নার্ভগুলো চাপের প্রভাবে শুকিয়ে যেতে থাকে। চোখের এই নার্ভ বা রক্তের শিরা শুকিয়ে গেলে আর কিছু করার থাকে না। এটা পারমান্যান্ট ক্ষতি। এরপরে কেবল (গ্লুকোমার ক্ষেত্রে) চোখের দৃষ্টিশক্তি যেটুকু আছে তা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। গুকোমা রোগের কারণ এই রোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে সাধারণত চল্লিশ বছরের পরে এ রোগ হতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ কোষ্ঠকাঠিন্য, হার্টের দুর্বলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস রোগে ভোগা, অপুষ্টিজনিত স্নায়বিক রোগ, উদরাময়, পুরাতন আমাশায়, এনিমিয়া ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে ।
গ্লুকোমা রোগের লক্ষণ
১. প্রথমে চোখে অস্পষ্ট দেখে এবং দৃষ্টিশক্তির ক্ষীণতা দেখা দেয়। ২. সবকিছুই যেন রামধনুর রঙের মতো দেখতে পায় । ৩. ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নিম্ন রক্তচাপ, এনিমিয়া ইত্যাদি রোগ থাকতে পারে ।
গ্লুকোমা রোগের চিকিৎসার পরামর্শ
এই রোগের প্রথম অবস্থায় সুচিকিৎসা করা হলে সুফল পাওয়া যায়। ভুল চিকিৎসা কিংবা চিকিৎসায় বিলম্ব ঘটলে অথবা অপচিকিৎসা হলে আরোগ্য করা কঠিন হতে পারে। এ জন্য যখন রোগী চোখে ভাল দেখতে পায় না কিংবা আবছা দেখতে শুরু করে তখনই সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সাধারণত চল্লিশ বছরের আগে গ্লুকোমা হয় না। এক্ষেত্রে বিলম্ব মারাত্মক ক্ষতিও করতে পারে। যেমন চোখ অন্ধ পর্যন্ত হতে পারে।
পুষ্টিকর হালকা খাদ্য খেতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
মাইওপিয়া
মাইওপিয়া অর্থ নিকট দৃষ্টি বা 'শর্ট সাইটেডনেস'। চোখের গোলকের (Eye- ball) সামনে পিছনের দূরত্ব বেড়ে যায়। ফলে বিষয়বস্তুটি খুব কাছে না আনলে দেখা যায় না। এই অবস্থায় অবতল পরকলা (Minus Lens) ব্যবহার করলে বস্তুটি ঠিকভাবে দেখা যায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে চোখের এই অবস্থায় দৃষ্টির প্রখরতা এতো কম থাকে যে, অবতল পরকলা (Minus Lens) ব্যবহার করলেও সম্পূর্ণ দৃষ্টি ঠিকভাবে আসে না। মনে রাখতে হবে যে, মাইওপিয়া যদি কম থাকে তাহলে এটা চোখের রোগ নয় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মাইওপিয়া বেশি থাকলে তার সাথে চোখের রোগ থাকতে পারে। মাইওপিয়া বেশি থাকলে তার সাথে চোখের রোগ থাকতে পারে। মাইওপিয়া যাদের আছে তাদের অনেকের চোখ বেশ বড় এবং খুব সুন্দর দেখা যায়। তাই বলে সকল বড় ও সুন্দর চোখের ব্যক্তিরই যে মাইওপিয়া আছে এটা ভাবা উচিত নয় । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি হওয়ার পরেও মাইওপিয়া রোগের সমস্যা আজও বিদ্যমান। এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা নিকটের সবকিছু অত্যন্ত পরিষ্কার দেখেন কিন্তু দূরের কোনও কিছুই পরিষ্কার দেখেন না। সবকিছু অস্পষ্ট বা ধোঁয়াটে দেখেন । এই অবস্থা বাচ্চা বা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বেশি হতে দেখা যায় । বয়স যতো বাড়তে থাকে অর্থাৎ কুড়ি-পঁচিশ পর্যন্ত চোখের গোলক (Eye-ball) লম্বা হতে থাকে । এই লম্বা হওয়াকে বলা হয় হ্রস্ব দৃষ্টি বা মাইওপয়া (Mypia)।
চোখের গোলক (Eye-ball) লম্বা হতে থাকলে চোখের পাওয়ার একটু একটু করে বাড়তে থাকে। কুড়ি-পঁচিশ বছরের পর যখন শারীরিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় তখন চোখের পাওয়ারও আর তেমন বাড়তে দেখা যায় না। যেসব ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি বেড়ে যেতেই থাকে সেসব ক্ষেত্রে এই ধরনের মাইওপিয়াকে বলা হয় কমপ্লিকেটেড বা ডেওডোরাস মাইওপিয়া। কোনও কোনও চিকিৎসক এটাকে ম্যালিগন্যান্ট মাইওপিয়া বলেন। কারণ, এই ধরনের মাইওপিয়া পরে দৃষ্টিহীনতা নিয়ে আসতে পারে। চোখ যতো লম্বা হয়, পিছনের পর্দাগুলোয় ততোই টান পড়তে থাকে।
মাইওপিয়া রোগের কারণ
১. বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বয়স বেশি হলে পরকলার (Lens thickness )-এর কিছু পরিবর্তন হয়। ফলে এই রোগ হতে পার ।
২. মাইওপিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বংশগত রোগ। আব্বা-আম্মার যদি এই রোগ থাকে তাহলে সন্তানদেরও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক আব্বা-আম্মা বলেন যে, আমাদের চোখ ভাল অথচ আমাদের ছেলেমেয়ের এই রোগ হলো কীভাবে! এই ক্ষেত্রে বংশের ইতিহাস জানতে গেলে দেখা যায় যে, বংশের অন্য কারোর কিংবা দু' এক পুরুষ পূর্বে কারোর এই রোগ ছিলো ।
মাইওপিয়া রোগের লক্ষণ
এই রোগ হলে বই কিংবা কোনও বস্তু খুব কাছে না আনলে পরিষ্কার দেখা যায় না। অর্থাৎ ৫/৬ ইঞ্চি দূরে আনলে তখন স্পষ্ট দেখা যায়। আবার দূরে কম দূরত্ব পর্যন্ত সবকিছু পরিষ্কার দেখা যায় কিন্তু বেশি দূরের কোনও কিছু স্পষ্ট দেখা যায় না ।
মাইওপিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসার পরামর্শ
১. এই রোগ হলে প্রতিদিন ৩/৪ বার পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধোয়া খুব উপকারী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, “চোখে রোগ হোক বা না হোক দৈনিক ৩/৪ বার পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুইলে চোখের অর্ধেক রোগ বেরিয়ে যায়।” এতে চোখের ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে এবং দীর্ঘদিন দৃষ্টিশক্তি ঠিক যাকে
২. নোংরা কাপড় বা রুমাল দিয়ে চোখ পরিষ্কার করা উচিত নয় এবং অতি উজ্জ্বল আলো, অক্সি-অ্যাসিটিলিন গ্যাসের আলো, সূর্য বা সূর্যগ্রহণ প্রভৃতির দিকে তাকানো উচিত নয় ৷
৩. বই পড়ার সময় ১২-১৪ ইঞ্চি দূরে রেখে পড়া উচিত ।
৪. শিশুদের চোখে কম দেখার ভাব দেখলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ৫. চল্লিশ বছর বয়সে চোখ পরীক্ষা করা কর্তব্য। প্রয়োজনবোধে চশমা ব্যবহার করতে হবে।
৬. চকচকে সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত নয়।
৭. ফ্লুরোসেন্ট আলোতে বা টিউব লাইটে চোখের উপকার হয় ।

৮. মাইওপিয়া হলে অনেকে জিজ্ঞেস করেন যে, কী খাব, কী খেলে এই রোগ কমবে ? এ ব্যাপারে প্রফেসর পি. মণ্ডল বলেন : “ভালো পুষ্টিকর খাবার দাবারের সঙ্গে মাইওপিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। পুষ্টির অভাব থেকে মাইওপিয়া হয় না। ঠেলাওয়ালা, রিক্সাওয়ালাদের মাইওপিয়া হয় না। মায়েরা জিজ্ঞেস করেন, ছেলেকে গাজর খাওয়াব কি না, মাছের মাথা খাওয়াব কি না, গুগলি খাওয়াব কি না ! এসব খাওয়ালে চোখ ভাল থাকবে এমন কোন কথা নেই। পুষ্টিকর খাবার খেলে শরীর ভাল থাকে। সেই হিসেবে চোখও ভাল থাকবে কিন্তু চোখ খারাপ হয়েছে অতএব গাজর খেলে, কডলিভার অয়েল খেলে, বেশি করে ভিটামিন 'এ' খেলে মাইওপিয়া ভালো হয়ে যেতে থাকবে এমন ধারণা ঠিক নয়।
৯. যেসব ছেলেমেয়ের মাইওপিয়া হয়েছে, চশমা পরছে, তাদের ক্ষেত্রে অনেককে দেখা যায় বই পড়তে খুব ভালবাসে। এরা বাইরে কম মেশে এবং খেলাধুলাও কম করে। এতে চোখ আরও খারাপ হতে পারে।
১০. মাইওপিয়ার ক্ষেত্রে চশমার বদলে 'কন্টাক্ট লেন্স' ব্যবহার করা ভাল। কোনো ছোট ছেলে বা মেয়ের মাইওপিয়া হলে তাকে চশমার পরিবর্তে কন্টাক্ট লেন্স দেওয়া হলে পাওয়ার আর বাড়ে না। বাড়লেও খুব বেশি বাড়ে না । কন্টাক্ট লেন্স- এর কাজ হচ্ছে চোখের পাওয়ার আটকানো । ৩. চোখের ছানি
চোখে ছানি পড়া আমাদের দেশে একটা সাংঘাতিক মারাত্মক ধরনের রোগ বলা যায়। কারণ, আমাদের দেশে বয়সকালে যত লোক অন্ধ হচ্ছে তার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ হয় ছানি থেকে। এই রোগ সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পরে বেশি হয়।
চোখের ছানি কী
আমাদের চোখের অভ্যন্তরে পরকলা (Lens) নামক একটি অংশ আছে। এই লেন্সের মাধ্যমে বাইরের কোন বস্তু হতে আলোকরশ্মি চোখের ভিতর প্রবেশ করে এবং চোখের অভ্যন্তরে অবস্থিত রেটিনা নামক স্থানে ঐ বস্তুর প্রতিবিম্ব তৈরী করে, ফলে উক্ত বস্তুকে আমরা দেখতে পাই। চোখের লেন্স বিভিন্ন উপাদানে গঠিত। এর মধ্যে প্রোটিন একটি অংশ। বৃদ্ধ বয়সে অনেক সময় এই প্রোটিন তার নিজস্ব গুণাবলী পরিবর্তন করে কিছুটা পরিবর্তিত রূপ ধারণ করে। ফলে লেন্স-প্রোটিন কিছুটা জমাট বেঁধে গিয়ে লেন্সকে অস্বচ্ছ করে তোলে, ফলে স্বচ্ছ লেন্স দিয়ে যতটা সহজে আলোকরশ্মি চোখের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, অস্বচ্ছ লেন্স দিয়ে সেভাবে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে রেটিনার উপরও বস্তুর কোনও প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় না এবং যার কারণে আমরা চোখে দেখতে পাই না। এই অবস্থার সৃষ্টিকে বলা হয় চোখের ছানি বা (Cataract)। অনেকের ধারণা, ছানি বলতে চোখের মধ্যে পর্দা পড়া বোঝায়। তাই অনেকে গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক দ্বারা চোখের পর্দা কাটায়। আর হাতুড়ে চিকিৎসক পর্দা কাটার নামে ঘোলাটে লেন্সকে ধাক্কা দিয়ে চোখের পিছনের দিকে ফেলে দেয়। প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন : “যেহেতু ঘোলাটে লেন্স আলোকরশ্মি চোখের ভেতরে প্রবেশে বাধা হচ্ছিল, এর অনুপস্থিতিতে আলোকরশ্মি চোখের ভেতর প্রবেশ করতে পারে, এভাবে হাতুড়ে ডাক্তারের দ্বারা বেশ কিছু রোগী ভালো হতে পারে, তবে মনে রাখতে হবে যে, এই দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়াটা খুবই
• এবং চোখের পেছনে সরে যাওয়া পরকলা চোখের মধ্যে এমন ক্রিয়ার সৃষ্টি করে যাতে চোখ অন্ধ হতে বাধ্য, অন্ধ হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। ”
চোখের ছানির কারণ
১. সঠিক কারণ অজানা। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রোগ হতে দেখা যায়। আবার আব্বা-আম্মার ছানি থাকলে ছেলেমেয়েরও সম্ভাবনা থাকে। তবে আব্বা- আম্মার যদি বেশি বয়সে অর্থাৎ ৬০-৬৫ বছর বয়সে ছানি হয় তাহলে ছেলেমেয়ের আরও কম বয়সে অর্থাৎ ৪৫-৫০ বছর বয়সে ছানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাঁরা দু'ভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। (ক) রোগীর দেহে সুগারের পরিমাণ অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেলে চোখের পরকলার (Lens) বিপাক প্রণালীতে জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে অনেক দিন ধরে রক্তে সুগারের মাত্রা ২০০ মি. গ্রা. বা ততোধিক হলে 'সেরবিটাল' নামক এলকোহলের আধিক্য দেখা দেয়। যার উপস্থিত পরকলার জন্যে ক্ষতিকর। ফলে লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে পড়ে। এই প্রকার ছানি কম বয়সের ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। (খ) দ্বিতীয় প্রকারের ছানি ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি হতে দেখা যায়।
২. ভিটামিন-'এ' এবং 'ই' এই দুটি অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাবে চোখে ছানি পড়ার আশংকা থাকে। যাদের শরীরে ভিটামিন 'ই' এবং 'ক্যারোটিনের' অভাব আছে তাদের পরবর্তীকালে চোখে ছানি পড়ার আশংকা তিনগুণ বেড়ে যায়। গবেষকরা মনে করেন, “যেসব রাসায়নিক পদার্থ চোখের (প্রোটিন) উপাদানগুলোকে অক্সিজেনযুক্ত করে সেগুলোর কারণে সংঘটিত ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে চোখের ছানির সম্পর্ক আছে। এই ক্ষয়ক্ষতির প্রতিহত করার ক্ষমতা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়। ভিটামিন 'এ' ও 'ই' এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং এগুলো ঐ ক্ষতিরোধে সহায়তা করে।”৪
৩. অধিক উত্তাপ বা রোদে ঘোরা, রোদে বসে কাজ করা ইত্যাদি কারণেও ছানি পড়তে পারে'।
৪. সিফিলিস রোগের কারণেও চোখে ছানি পড়তে পারে।
৫. জন্মের সময় শিশু চোখে ছানি নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। এটাকে Congenital Cataract বলা হয়। এই ধরনের ছানির হার খুব কম ।
৬. অনেক সময় চোখে আঘাতজনিত কারণে ছানি সৃষ্টি হতে পারে। এটাকে বলা হয় Traumatic Cataract. আমাদের দেশে এই ধরনের চোখের ছানির হার কিছুটা বেশি।
চোখের ছানির লক্ষণ
আস্তে আস্তে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। চোখের লেন্স ও আবরণী পর্দা দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে দূরের কোনও পদার্থ পরিষ্কারভাবে দেখা যায় না। সবকিছুই ঝাপসা বা আবছা দেখে। উজ্জ্বল আলো দেখে দূরের প্রদীপের আলো বলে ভুল করে। আবার অনেক সময় একটি আলোকে অনেকগুলো আলো বলে মনে করে। চোখের স্বাভাবিক বর্ণ ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে জটিলতা সঠিক সময় সুচিকিৎসা করা না হলে অন্ধ হয়ে যেতে পারে। ছানি পড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কিংবা একেবারে শেষ পর্যায়ে গ্লুকোমা বেড়ে যেতে পারে এবং শেষ পর্যায়ের এই গ্লুকোমাকে বলা হয় Phacolytic Glaucoma.
ছানির চিকিৎসার পরামর্শ
চোখের ছানির প্রাথমিক অবস্থায় হোমিওপ্যাথি ওষুধ অত্যন্ত কার্যকর। এতে অপারেশনের কোনও প্রয়োজন হয় না । কিন্তু যখন চোখের পুতলী এবং শ্বেতাংশ ক্রমে ক্রমে শক্ত হয় তখন সাধারণত অপারেশন ছাড়া আরোগ্য হয় না। প্রধানত দু'প্রকার অপারেশন প্রচলিত আছে। ১. Intracapsular cataract extraction এবং (২) Extracapsular cataract extraction. চোখের ছানির যে কোনও অবস্থায় এবং যে কোনও বয়সে অপারেশন করা যায়। ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগ থাকলে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। অবশ্য বর্তমানে ডায়াবেটিস থাকলেও সেটা নিয়ন্ত্রণ করে অপারেশন করা যায়। প্রফেসর পি. মণ্ডল বলেন, “বেশি বয়স হলে অনেকেই অপারেশন করাতে চান না। অথবা বয়স হয়ে গেছে একটা চোখে ছানি অপারেশন হয়েছে এমন ব্যক্তিরা প্রায়ই বলেন, একটা চোখে দিব্যি দেখতে পাচ্ছি আর অপারেশনের ঝামেলার দরকার নেই। এটা খুব বিপজ্জনক ভাবনা। ছানি থেকে যাওয়ার পরও কেউ যদি ছানি কাটাতে গড়িমসি করেন তা হলে তাঁর ছানি থেকে গ্লুকোমা হতে পারে। চোখ লাল হয়ে অস্বস্তি হতে পারে, শেষকালে এমন হতে পারে যে চোখটা হয়তো তুলে ফেলতে হবে।”
৪. ট্যারা চোখ
মানুষের শারীরিক ত্রুটি নানা রকমের হয়। ট্যারা চোখও একটি শারীরিক ত্রুটি । মানুষ এই ত্রুটির জন্য হীনমন্যতার শিকার হয়ে পড়েন। কারণ, এটা ভয়াবহ রূপও ধারণ করতে পারে। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি কোন একটি নির্দিষ্ট দ্রষ্টব্য বস্তুর দিকে তাকাতে গেলে এক চোখ থাকে সোজা এবং অন্য চোখ বেঁকে যায়। এই বাঁকা চোখেই বলা হয় ট্যারা চোখ বা Squint Eyes.
এই রোগে আক্রান্ত অনেক রোগীর চোখ সবসময়ই ট্যারা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রোগীর চোখ ঠিক আছে অথচ রোগীর এক চোখ বন্ধ করে আবার খুললে তখন দেখা যায় যে চোখ ট্যারা আছে। এই প্রকার গুপ্ত ট্যারা রোগ একমাত্র বিজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসক ব্যতীত বুঝতে পারেন না। যাদের চোখ ট্যারা অনেক সময় মানুষের কাছে নিজেকে লুকোবার চেষ্টা করেন। অথচ সঠিক সময়ে এই রোগের সুচিকিৎসা করা হলে ট্যারা চোখ স্বাভাবিক হতে পারে এবং ভাতে সামান্য বিপদও নেই।
ট্যারা চোখ রোগের কারণ
১. নির্দিষ্ট দূরত্বে পাশাপাশি রয়েছে দুটি চোখ। এই চোখদুটি উপরে-নীচে, ডানে- বামে ঘুরানোর জন্য চোখে কতগুলো মাংসপেশী (Muscle) আছে এবং সেই মাংসপেশীগুলো নিজেদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে কাজকর্ম করে ও দু'চোখে পড়া আলোকরশ্মি সমান্তরাল অক্ষরেখা চোখের ভিতরের সংবেদনশীল পর্দা চক্ষুপটে (Retina) গিয়ে পড়ে, ফলে দু'চোখে একই সাথে একই বস্তুর ত্রিমাত্রিক পায় অতি স্বচ্ছভাবে এবং এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় Binowlar Vision. কোন কারণে দু'চোখের ভারসাম্য রক্ষাকারী মাংসপেশী অসুস্থ হলে কিংবা অন্য কোন কারণে দু'চোখের উপর সমান্তরাল পড়া অক্ষরেখা সমান্তরাল না থাকতে পারলে চোখ ট্যারা হতে পারে।
২. দু'চোখের অসম দৃষ্টির একটি কিংবা উভয়ের অস্বচ্ছতার কারণে চোখ ট্যারা হতে পারে। অবশ্য এই ক্ষেত্রে এই অস্বচ্ছতা কর্নিয়া, অ্যাকোয়াস, লেন্স কিংবা ভিট্রিয়াস-এর যে কোনও স্থানে থাকতে পারে ।
৩. চোখকে উপরে-নীচে, ডানে-বামে ঘোরানোর মাংসপেশীগুলো কোনও কারণে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় তখন এক চোখ অন্য চোখের সমান্তরাল অক্ষরেখা থেকে সরে যায়, এ কারণে চোখ ট্যারা দেখায়।
৪. বহুদিন কোনও জটিল রোগে ভোগার পর চোখ ট্যারা হতে পারে।
৫. চোখের পেশীর পক্ষাঘাত ছাড়াই চোখ ট্যারা হতে পারে। ট্যারা চোখের লক্ষণ
চোখের মণি বাঁকাভাবে থাকে। অনেক সময় রোগী যে দিকে তাকায় চোখের মণি তা থেকে ভিন্ন দিকে থাকে বলে মনে হয়। অবশজনিত ট্যারা থাকলে কোনও একটি বিশেষ বস্তুর দিকে তাকালে দুটি মনে হয়। চোখ বিশেষ দিকে সম্পূর্ণ ঘোরানো যায় না (Limitation of Movement)। কারও কারও বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে। ঘূর্ণানুভূতি (Vertigo) হতে পারে। কারও কারও বংশগতভাবে চোখ ট্যারা হতে দেখা যায় ।
সতর্কতা (ট্যারা চোখের )

১. শিশুদের জন্মের পর বিশেষ করে যাদের Flat Nasal Bridge অথবা চওড়া Epocantitic Ford চীনা বা গারো শিশুদের মতো কিংবা দু'চোখ তুলনামূলকভাবে কাছাকাছি রয়েছে, তাদের ট্যারা চোখ বলে ভুল হতে পারে। তবে শিশুদের স্বাভাবিক
বিকাশের সাথে সাথে এই অসামঞ্জস্যতা আর দৃষ্টিগোচর হয় না। শিশুদের ক্ষেত্রে এই ত্রুটি সঠিকভাবে নির্ণয় করার পর দ্রুত চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২. অনেক ক্ষেত্রেই অসম দৃষ্টি এবং দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা। চশমা ব্যবহার করে এই ত্রুটি দূর করা যায়।
৩. শিশুর জন্য সঠিক সময়ে চিকিৎসা তার দৃষ্টিশক্তির উপর এক জরুরী সাহায্য হিসাবেই গণ্য হয়। তা না হলে শিশুর স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি চিরতরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে চশমা ব্যবহার ও ঔষধ সেবনের পরও যদি এই ত্রুটি থাকে তাহলে অবশ্যই অপারেশন করতে হবে।
৪. ছোট সময়ে চিকিৎসা করা হলে চোখ ভাল হয় কিন্তু তা না হলে এই সমস্যা বেড়ে গিয়ে অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে ।
প্রতিকার (ট্যারা চোখের)
১. বদ্ধ আবহাওয়ায় এবং তীব্র আলোতে বই পড়া কিংবা কাজকর্ম করা নিষেধ ২. ভোরে ঘুম থেকে উঠে খালি পায়ে কিছুদূর দৌড় দিয়ে যাবে এবং আবার দৌড়ে ফিরে আসতে হবে। এইভাবে প্রতিদিন সকালে ২-৩ বার করতে হবে।
৩. দিনে কমপক্ষে এক ঘন্টা চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে।
৪. দেওয়ালের উপর কয়েকটি অক্ষর লিখে ২০ ফুট দূর থেকে ভাল চোখটি বন্ধ করে ট্যারা চোখের সাহায্যে সেই লেখা পড়তে হবে কমপক্ষে একটি মিনিট। আবার ট্যারা চোখ বন্ধ করে ভাল চোখ দিয়ে পড়তে হবে। এইভাবে ৫-৭ দিন পড়তে হবে প্রতিদিন ৩-৪ বার করে।
৫. হাতে একটি কলম নিয়ে এক হাত দূরত্বে রেখে কলমের নিবের উপর লক্ষ করতে হবে এবং আস্তে আস্তে কাছে আনতে হবে; আবার একহাত দূরে নিয়ে যেতে হবে। এইভাবে প্রতিদিন ২-৩ বার করতে হবে।
৬. একটি যে কোন ও ধাতুর গ্লাসে ছোট একটি ছিদ্র করে সেই ছিদ্র দিয়ে দূরের কোন বস্তু কিংবা অক্ষর পড়ার চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন ৫-৬ বার। ৭. একটা চেয়ারে সোজাভাবে বসে চোখ দু'টো বন্ধ করে আবার খুলতে হবে এবং আবার চোখ বন্ধ করে আবার খুলতে হবে। এই সময়ে হাতে একটি বই রেখে বই পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এইভাবে ২০-২৫ দিন করতে হবে এবং প্রতিদিন ৩-৪ বার করে।
৮. একটি দেওয়ালের গায়ে কালো কালি দিয়ে কয়েকটি অক্ষর লিখে বিশ ফুট দূরে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে অক্ষরগুলো প্রতিদিন ৩-৪ বার পড়তে হবে ।
পথ্য ঃ দুধ, ছানা, শরবত, ডাব, ফলমূল, শাক-শক্তি এবং লঘুপাক খাদ্য খেতে হবে।
ট্যারা চোখ চিকিৎসার পরামর্শ
মা-বাবা যখনই দেখবেন যে, শিশুর চোখ ট্যারা ভাব, তৎক্ষণাৎ চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অস্বচ্ছ বা দু'চোখের মধ্যে অসম দৃষ্টির কারণে চোখের মাংসপেশীগুলো ভারসাম্য হারাতে পারে। চোখ সামান্য ট্যারা হলে কেবল ওষুধ সেবন, চশমা ব্যবহার বা চোখের ব্যায়াম করে কখনও কখনও ভাল ফল পাওয়া যায়। বেশি ট্যারা চোখের ক্ষেত্রে অপারেশন না করে চোখ সোজা করার অন্য কোনও উপায় নেই। আবার চোখ খুব বেশি ট্যারা হলে একটি চোখের উপর অপারেশন করে পুরো ফল নাও পাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় চোখের অপারেশন করে চোখ একেবারে স্বাভাবিক করা যায়। ডা. পার্থ হাজারি বলেন, “অস্বচ্ছ বা অসম দৃষ্টির কারণে যদি শিশুর চোখ ট্যারাভাব দেখা যায়, চশমা বা অন্যান্য চিকিৎসার সাহায্য না নিলে সেই ট্যারাভাব ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া কোনও কোনও শিশুর চিকিৎসা না করানোর জন্য একটি চোখের দৃষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। বেশী বয়সে চিকিৎসা শুরু করলে আর ওই চোখে দৃষ্টিই ফিরে পাওয়া যায় না। অবশ্য ট্যারা চোখটা বাইরে থেকে দেখতে সোজা করে দেওয়া যে কোনও বয়সেই সম্ভব।”৬
৫. চোখের আঘাত
চোখে কোনও সামান্যতম আঘাত লাগলে বা পাপড়ি চলে গেলে কিংবা অন্য কোনও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু প্রবেশ করলেই সৃষ্টি হতে পারে অতি জটিল সমস্যা। চোখে আঘাতজনিত কারণে শতকরা ৫-১০ ভাগ লোক অন্ধত্বের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে আঘাতজনিত চক্ষুরোগের অচিকিৎসা ও কুচিকিৎসার কুফল অর্থাৎ অন্ধত্ব। গ্রামের মানুষ চোখের আঘাতে বিভিন্ন পাতার রস কিংবা শামুকের রস চোখে লাগিয়ে দেয়; এটা আঘাতের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। আঘাতের পরে সঠিক চিকিৎসা না হলে সংক্রমণ দ্বারা আক্রান্ত হয়েও চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
চোখের আঘাতের কারণ
১. অজান্তে, অসতর্কতাবশত কিংবা হঠাৎ কোনও দুর্ঘটনা থেকে চোখে আঘাত লাগতে পারে। ২. চোখে কোনও পোকা-মাকড় ইত্যাদির ধাক্কা বা আঘাত লেগে ইনজুরি হতে পারে। ৩. রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় চোখে ধূলোবালির সাথে আঘাত লাগতে পারে । ৪. কল-কারখানায় কাজ করার সময় লোহার কণা, এলুমনিয়ামের কণা ইত্যাদি দ্বারা চোখ ইনজুরি হতে পারে। ৫. গ্রামের কৃষকরা ধান কাটার সময় ধানের সাথে চোখে আঘাত লাগতে পারে। ৬. ধান মাড়াইয়ের সময় তুষের গুঁড়া বাতাসের সাথে উড়ে এসে চোখে আঘাত লাগতে পারে। ৭. ট্রেনে, বাসে প্রভৃতি যানবাহনে চলাচলের সময় কয়লার গুঁড়া, ধূলোবালি ইত্যাদি বাতাসের সাথে উড়ে এসে চোখে আঘাত লাগতে পারে। ৮. কোন কেমিক্যাল কিংবা বিষাক্ত গ্যাস দ্বারা চোখ ইনজুরি হতে পারে। ৯. যুদ্ধ, গণআন্দোলন ও অসামাজিক কাজের সময় হাত বোমা ইত্যাদি দ্বারা চোখে আঘাত কিংবা ইনজুরি হতে পারে। ১০. নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণের সময় প্রসূতির সঠিক পরিচর্যা না হলে, চোখে আঘাত লেগে অনেক সময় নবজাতক শিশুর চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।
চোখে আঘাতের লক্ষণ
২. চোখে আঘাত লাগার কারণে চোখ ফুলে ওঠে, লালবর্ণ হয়, ব্যথা ও যন্ত্রণা হয়। ২. চোখ দিয়ে পানি পড়ে, ৩. চোখের সাদা অংশে কখনও কখনও রক্ত জমে যায়, ৪. রাতে চোখ জড়ে যায় এবং পিচুটি পড়ে; একই সাথে মাথা ব্যথা ও যন্ত্রণা হতে পারে, ৫. আলোক অসহ্য, ৬. কোনও আকস্মিক দুর্ঘটনার কারণে চোখের সাদা অংশ কিংবা মণি পর্যন্ত ইনজুরি হতে পারে, ৭. রাস্তার দুর্ঘটনায় সরাসরি চোখে আঘাত লেগে স্বচ্ছ ঝিল্লির (Conjunctiva) নীচে রক্ত জমতে পার, এমনকি স্বচ্ছ ঝিল্লি ছিঁড়েও যেতে পারে, ৮. চক্ষু গোলকের বাইরের মাংসপেশী আঘাতে ছিঁড়ে যেতে পারে।
সাবধানতা (চোখের আঘাতে)
১. ধূলোবালি ইত্যাদির কণা কিংবা রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা পুড়ে যাওয়া ছাড়া চোখে কোনো অবস্থাতেই পানি দেওয়া যাবে না। ২. শিশুদের সূক্ষ্মাগ্র খেলনা দেওয়া যাবে না । তাতে বিপদ হতে পারে। ৩. দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেলে কিংবা ব্যাথাযুক্ত লাল চোখ নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোগীর কাজে যোগদান করা যাবে না। ৪. চোখে প্রাথমিক পরিচর্যার জন্য শ্রমিকের নিজের স্বার্থেই কল-কারখানায় চোখের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫. চোখে যে কোনও ধরনের ওষুধ ব্যবহারের পূর্বে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, চোখের সামান্য আঘাতও মারাত্মক হতে পারে এবং আঘাতের ২৪ ঘন্টা পর চক্ষু পরীক্ষা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে চিকিৎসাও কঠিন হতে পারে। ৬. অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষার জন্য ঝালাই মিস্ত্রীদের প্রয়োজন অনুযায়ী কালো চশমা (Gogles) কিংবা প্রটেকটিভ ডিভাইসেস (Protective devices) ব্যবহার করতে হবে। চোখের আঘাতের প্রাথমিক চিকিৎসার পরামর্শ
১. চোখে কোনও কিছু পড়লে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি তাতে বেরিয়ে না যায় তাহলে পরিষ্কার কাপড়ের কোণা দিয়ে কিংবা তুলা দিয়ে বের করার চেষ্টা করতে হবে। তাতেও যদি বের না হয় তাহলে চক্ষু চিকিৎসককে দেখাতে হবে। কখনও চোখ রগড়ানো যাবে না। তাতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
২. চোখে ঘুষি বা ভোঁতা বস্তুর আঘাতে (সামান্য আঘাতেও) ও অস্বাভাবিক ক্ষতের কারণে চোখের পাতায় (Eyelids) রক্তক্ষরণ হয়ে কালো বর্ণ হলে, কনীনিকা (Iris) ছিঁড়ে গেলে, চোখ কালো বর্ণ হলে, চক্ষু ঝিল্লির নীচে রক্ত জমা হলে, চোখের ভিতর রক্তক্ষরণ হলে, চক্ষুপটে (Retina) রক্তক্ষরণ হলে, চক্ষুপট বিচ্ছেদ হলে, চক্ষুগোলক কেটে গেলে, পরকলা (Lens) স্থানচ্যুতি হলে, কাচীয়ে (Vitreous) রক্ত ক্ষরণ হলে, চক্ষুগোলকের পানির চাপ বেড়ে গেলে, চক্ষু-স্নায়ুতে (Optic nerve ) আঘাত লাগলে, চক্ষুগোলকের হাড় ভেঙে গেলে, চোখের পাতা বন্ধ থাকলে ইত্যাদি ক্ষেত্রে কখনও দেরী না করে চোখে পরিষ্কার পট্টি দিয়ে তাড়াতাড়ি চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তা না হলে চোখে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. জামাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাহ্যিক সামান্য ক্ষতের চিহ্ন থাকলেও দেরী না করে চোখে পরিষ্কার পট্টি দিয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। এমতাবস্থায় যত দেরী করবেন চোখের তত ক্ষতি হবে। কোনও অবস্থাতেই চোখে ওষুধ বা পানি দেবেন না।

৩. কর্নিয়ায় ঘর্ষণ বা আঁচড় লেগে চোখে যদি বালুবালু কিংবা ময়লা অনুভব করে অথচ চোখে কিছুই দেখা যায় না, এমতাবস্থায় মনে করতে হবে যে, নিশ্চয়ই কর্নিয়ায় ঘর্ষণ বা আঁচড় লেগেছে এবং তখনই কোন দেরী না করে চোখে পরিষ্কার পট্টি দিয়ে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ২৪ ঘণ্টা পার না হলে পট্টি খোলা যাবে না ।
৪. চোখ কালো বর্ণ হলে তাড়াতাড়ি চোখে বরফ দিয়ে ঠাণ্ডা শেক দিতে হবে এবং ব্যথা হলে, ব্যথা বেড়ে গেলে, ব্যথা না কমলে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৫. চোখে গুতা লেগে ফুটা হলে কখনও চোখে পানি কিংবা মলম ব্যবহার করা যাবে না এবং জোর করে দেখার চেষ্টা করা যাবে না। চক্ষু চিকিৎসক দেখাতে হবে। ৬. আগুনের তাপে পুড়ে গেলে পরিষ্কার পট্টি দিতে হবে এবং হাসপাতালে নিতে হবে।
৭. রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা পুড়ে গেলে আঙুল দিয়ে চোখের পাতা (Eyelids) ফাঁক করে পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি তাৎক্ষণিকভাবে চোখে ঢালতে হবে। এক চোখে হলে পুরো চোখের দিকে মাথা কাত করতে হবে। তা না হলে ভাল চোখও কলুষিত হতে পারে। দু' চোখে হলে পানি পাত্রে মাথা ডুবিয়ে চোখ খুলে ধুয়ে নিতে হবে কমপক্ষে ২০-৩০ মিনিট এবং তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। প্রখ্যাত চক্ষুবিশেষজ্ঞ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন : “যে কোনও রাসায়নিক দ্রব্য চোখে পড়লে সাথে সাথে চোখে পানি দিতে হবে। পরিষ্কার পানি না পেলে যে কোনও পানি চোখে দেবার জন্যে ব্যবহার করা উচিত। প্রথমে চোখ ভালভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে পরে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে রাসায়নিক দ্রব্যকে পানি দিয়ে দ্রুত ধুয়ে ফেলতে পারলে বহু চোখ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অন্ধ হওয়া থেকে রক্ষা পায়।”৮
৬. রাতকানা
আমাদের দেশে রাতকানা মানুষের সংখ্যা অনেক। প্রতিবছর কেবল ভিটামিন 'এ'-এর অভাবজনিত কারণে প্রায় একলাখ শিশু রাতকানা রোগে ভোগে। রাতকানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার শিশু অন্ধ হয়ে যায়। ৬ মাস বয়স হতে ৬ বছরের নীচের বয়সী শিশুদের রাতকানা রোগ বেশি হয়।
রাতকানা কী? দিনের বেলায় চোখে সবকিছু ভালভাবেই পরিষ্কার দেখে অথচ রাতে কিছুই স্পষ্ট দেখতে পায় না, এই অবস্থাকে বলা হয় রাতকানা । আমার মনে হয়, দেশে এমন কোনও গ্রাম নেই যে, খোঁজ করলে ২/৪ জন রাতকানা রোগী পাওয়া যাবে না। এই রোগ তিন ধরনের হতে দেখা যায়। ১. জন্মগত—এই প্রকার রাতকানা রোগ একেবারেই আরোগ্য হয় না। ২. রেটিনাইটিস পিগমেনটোসা—এই প্রকার রাতকানা রোগও আরোগ্য হতে দেখা যায় না। ৩. কেরাটোম্যালেশিয়া ---এই প্রকার রাতকানা রোগটি ভিটামিন-এ'র অভাবে হয়। এজন্য ভিটামিন 'এ' এবং পুষ্টিকর খাদ্য খেলে এই প্রকার রোগ আরোগ্য হয়।
রাতকানার কারণ
এই রোগের মূল কারণ হলো অপুষ্টি। তা ছাড়া দীর্ঘদিন রোগে ভোগা, অস্বাস্থ্যকর স্থানে বসবাস করা, কোনও কারণে রক্তহীনতা বা ভিটামিন-এ'-এর অভাব প্রভৃতি কারণে এ রোগ হতে পারে।
রাতকানার লক্ষণ
১. চোখে প্রথম অবস্থায় প্রদাহ ও সামান্য ঘায়ের মত হতে দেখা যায়। ২. চোখ দিয়ে পানি পড়া, ব্যথা, জায়গায় জায়গায় ঘা ইত্যাদি হতে দেখা যায়। ৩. চোখের বিভিন্ন অংশের এপিথিলিয়াম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বিভিন্ন অংশের Lesion হতে থাকে। ৪. দিনের বেলা সবকিছু স্পষ্ট দেখে, কিন্তু যতো সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে থাকে ততো ক্রমশ চোখে সবকিছু অস্পষ্ট দেখতে শুরু করে এবং রাতে একেবারেই দেখতে পায় না। রাতকানার উপসর্গ
চোখে ঘা কিংবা রাতকানা রোগের সময়মত সুচিকিৎসা করা না হলে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। রাতকানা প্রতিরোধ ভিটামিন-সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে শিশুর অন্ধত্ব সহজে প্রতিরোধ করা যায়। শালদুধসহ শিশুকে দু'বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যের চাহিদার সাথে ভিটামিন 'এ' জাতীয় খাদ্য খাওয়াতে হবে। শিশুকে সবুজ শাক-সব্জি ও ফলমূল খাওয়াতে হবে। শিশুর হাম, ডায়রিয়া ও অপুষ্টির চিকিৎসা করাতে হবে।
৭. চোখ ওঠা
জীবাণুর আক্রমণ, অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন কারণে নেত্রবর্থকলার প্রদাহ হলে তাকে বলা হয় চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিক থেকে চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস জাতীয় চক্ষুরোগ অর্থাৎ লাল চোখ বা রক্তচক্ষু একটি বিপদের পূর্ব সংকেত।
চোখ ওঠা রোগ হলো একটি অতি সাধারণ চক্ষুপ্রদাহ। এই রোগ হলে চোখের বাইরের সাদা অংশ এবং চোখের পাতা আক্রান্ত হয়। ফলে চোখ লাল হয়, মাঝে মাঝে পিচুটি পড়ে, চোখ দিয়ে বারবার পানি পড়ে, চোখ ফোলে।
রোগের কারণ
(১) কখনও কখনও Virus-এর আক্রমণ থেকে এই রোগ হতে পারে। (২) দীর্ঘ সময় চোখে ধূলোবালি, ধোঁয়া, রোদের তাপ, ঠাণ্ডা বাতাস, জীবাণুর আক্রমণ ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে। (৩) চোখ ওঠা রোগীর ব্যবহৃত রুমাল, তোয়ালে, গামছা, কাপড় ইত্যাদি ব্যবহারের কারণেও এই রোগ হতে পারে। চোগের লক্ষণ
(১) চোখের সাদা অংশ লাল হয়, চোখ করকর করে,মনে হয় যেন চোখের মধ্যে আগুনের মতো তাপ। আলোক অসহ্য। (২) চোখ দিয়ে পানি পড়ে, পিচুটি পড়ে । (৩) চোখের পাতাদুটি ভারী হয়। (৪) ঘুমালে চোখ জুড়ে যায় এবং তাতে কুটকুট করে কাটা বেঁধার মতো কষ্ট পায়। (৫) চোখ সবসময় জ্বালা করতে থাকে এবং মনে হয় চোখে যেন কেউ মরিচ গুলে দিয়েছে। (৬) চোখের রোগ বাড়লে ব্যথা হয় এবং চোখ টনটন করে। (৭) শিশুর জন্মের সময় মায়ের গনোরিয়া থাকলে সে জন্য শিশুর চোখও আক্রান্ত হতে পারে। এটাকে বলা হয় Opthalmia Neonotorum রোগ।
উপসর্গ
এই রোগ জীবাণুজনিত কারণে হলে এবং তার সুচিকিৎসা না হলে এই রোগ থেকে পরে আইরাইটিস রোগ হতে পারে।
চিকিৎসা পরামর্শ
(১) চোখ ভাল পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুতে হবে এবং কালো চশমা পরতে হবে। (২) চোখ কখনও রগড়াবেন না এবং হলুদ বা কাল পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো ভিজিয়ে তা দিয়ে মাঝে মাঝে চোখ মোছা ভাল । (৩) হালকা পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে। (৪) টক দ্রব্য খাওয়া নিষেধ। (৫) টেলিভিশন সবসময় ১০ থেকে ১২ ফিট দূরে থেকে বসে দেখা উচিত এবং খালি চোখে টেলিভিশন দেখা ক্ষতিকর, চোখে রঙিন চশমা পরে নিতে হবে।
(৬) ডা. আই. এস. রায় বলেন, “অসুখ হোক বা না হোক দিনে অন্তত চারবার পরিষ্কার পানিতে চোখ ধোয়া দরকার। এতে চোখের অর্ধেক জীবাণু বেরিয়ে যায়।””
তথ্যসূত্র (১) আপনার চোখ, সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, অনাময় পাবলিশার্স, ৩৬৭ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫। পৃষ্ঠা ১৬।
(২) নিকট দৃষ্টিতে চশমা অত্যাবশ্যক নয়, গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়, মাসিক গণস্বাস্থ্য, ৮ম বর্ষ ১ম সংখ্যা, মাঘ ১৩৯৭।
(৩) আপনার চোখ, সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, অনাময় পাবলিশার্স, ৩৬৭ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫, পৃষ্ঠা ৬৩-৬৪ ।
(৪) বৃটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, ৫ ডিসেম্বর ১৯৯২ ।
(৫) লেজার চিকিৎসা, সানন্দা, ৪র্থ বর্ষ ২৫ সংখ্যা, ১২ জুলাই ১৯৯০
(৬) ট্যারা চোখ সোজা, ডা. পার্থ হাজারি, সানন্দা, ঐ।
(৭) চোখের আঘাতজনিত সমস্যায় করণীয়, দৈনিক ইত্তেফাক, ১২/১২/১৯৯৪
(৮) আপনার চোখ, সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, অনাময় পাবলিশার্স, ৩৬৭ এলিফ্যানট রোড, ঢাকা-১২০৫। পৃষ্ঠা ৭৩।
(৯) চোখ ওঠা, ডা. আই. আই.এস. রায়, সানন্দা, ১২ জুলাই ১৯৯০, ৪র্থ বর্ষ ২৫ সংখ্যা।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]