বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস বহুমূত্র রোগে কোনটি উপকারী ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ: ডা. আলহাজ্জ মু. মনিরুল আলম

বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস
ডা. আলহাজ্জ মু. মনিরুল আলম
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন এবং বার্ডেম (BIRDEM)-এর জরিপকৃত পরিসংখ্যানে প্রকাশ, বাংলাদেশে ২০ লক্ষের অধিক লোক বহুমূত্র অর্থাৎ ডায়াবেটিক রোগে ভুগছে। এ সংখ্যা নিখুঁত নয়। এভাবে ঘরে ঘরে জরিপ চালালে এ সংখ্যা আরও বাড়বে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ডায়াবেটিস রোগ ও রোগীর এ হার নিশ্চয়ই আতঙ্কজনক। কারণ ১০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২০ লক্ষ ডায়াবেটিক রোগী মানে প্রতি ৫০ জনে একজন।
এ রোগ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার হতে পারে। তবে চল্লিশোর্ধ্ব মানুষেরা এর শিকার বেশি। তাই সবারই এ রোগ সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকা সমীচীন
ডায়াবেটিক রোগ রক্তে, পরবর্তীতে প্রস্রাবে শর্করা অর্থাৎ চিনির ভাগ বেড়ে গেলে বহুমূত্র রোগ হয় । প্রধানত প্ৰতি ১০০ মি.লি. রক্তে অভুক্ত অবস্থায় ১২০ মি. গ্রাম-এর উপর শর্করা জমলে তবেই প্রস্রাবে এ শর্করা ধরা পড়ে। এ জন্যে এ রোগের সর্বজনবিদিত নাম মধুমেহ । ডায়াবেটিস, বহুমূত্র, মধুমেহ একই রোগের ভিন্ন ভিন্ন নাম ৷
ডায়াবেটিস সাধারণত দু'প্রকার : ১. ডায়াবেটিস মেলিটাস, ২. ডায়াবেটিস ইনসেপিডাস। আমাদের বক্তব্য প্রথমোক্ত ডায়াবেটিস অর্থাৎ মধুমেহ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস সম্পর্কে। কারণ, এটা শুধু ভুল নয় বরং জীবনের জন্য ধীর- বিষ (Slow poison) হিসেবে কাজ করে। একদিন জীবন প্রদীপ হঠাৎ নিভিয়ে দেয়।
অনেকে প্রস্রাবের আগে-পরে সাদা জাতীয় কিছু দেখে মনে করেন যে, প্রস্রাবে সুগার বা চিনি যাচ্ছে। আসলে প্রস্রাবের চিনি চোখে দেখা যায় না। আগে পরে বা প্রস্রাবের সাথে যা যায় তা অন্য জিনিস বা অন্য রোগের জন্য। তবে জমানো প্রস্রাবে কালো পিঁপড়া এলে প্রস্রাব পরীক্ষা করানো দরকার- কোনও সুগার বা বহুমূত্র রোগের নিদর্শন আছে কি না তা জানার জন্য।
ডায়াবেটিস-এর কারণ
ডায়াবেটিস একটি বিপাকজনিত ব্যাধি। সাধারণত অগ্নাশয় (Pancreas) নামক আমাদের পেট-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গান (Organ) অর্থাৎ বিপাকীয় অন্ত্রের অসুস্থতা, অকার্যকারিতা, কার্য সম্পাদনে ব্যর্থতা, অন্য রোগের কারণে শৈল্য চিকিৎসার ফলে এ অন্ত্রের ক্ষতি বা ধ্বংস ইত্যাদি কারণে আমাদের বিপাকীয় কাজের অপরিহার্য বিপাকীয় বা হজমী রস 'ইনসুলীন'-যা এ অগ্নাশয় কর্তৃক প্রস্তুত হয়- তার অভাব ঘটলেই বহুমূত্র অর্থাৎ মধুমেহ রোগ হয় ।
ডায়াবেটিসপ্রবণ লোক
যে কোনও বয়সে, যে কোনও সময়ে যে কোন লোক ডায়াবেটিস-এর শিকার হতে পারে। তবে তিন শ্রেণীর লোকের মধ্যে এর প্রবণতা অত্যধিক ।
ক. যাদের বংশের বা রক্তের সম্বন্ধের মধ্যে ডায়াবেটিস আছে তাদের পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে ।
খ. মাত্রাতিরিক্ত ওজন ও মেদবহুল দেহধারী মানুষ ।
গ. শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের অভাব। বিশেষ P জাতীয় লোক। যেমন : P— পুলিশ, P—প্রফেসর বা অধ্যাপক, P—পলিটিশিয়ান বা রাজনীতিবিদ, P Physician বা চিকিৎসক, P – Pupils - রাতজাগা পড়ুয়া শিক্ষার্থী প্রমুখের বেশি হয়।
ডায়াবেটিস সৃষ্টির পরিবেশ
১. শারীরিক স্থূলতা, ২. গর্ভাবস্থা, ৩. আঘাত, ৪. ক্ষত, ৫. অস্ত্রোপচার, ৬. মানসিক বৈকল্য, ৭. দুশ্চিন্তা, হতাশা, ৮. মানসিক বিপর্যয় বা আঘাত, ৯. চল্লিশ বা চল্লিশোর্ধ্ব বয়স। ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ
৭টি—P, একটি R. 1. Polyurea — ঘন ঘন প্রস্রাব, ২. Polydypsia — ঘন ঘন পিপাসা, ৩. Polyphagia - ঘন ঘন ক্ষিধে, 8. Physical Weight Loss যথেষ্ট ভুঁড়ি ভোজন সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া, চামড়া শুকিয়ে যাওয়া, ৫. Physical Feebleness and Tiredness — শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি, ৬. Peripheral Scabies — খোস-পাঁচড়া প্রভৃতি চর্মরোগ, ৭. Peripheral Neuropathy হাত-পা অবশ ও অনুভূতিহীনতা ও Eye Sight Loss— চোখে রক্ত বা ক্যাটার্যাকটজনিত কারণে দৃষ্টিশক্তিহীনতা ।
প্রতিরোধ, প্রতিবিধান, প্রতিকার
ডায়াবেটিস একবার হলে সারানো কঠিন। সম্পূর্ণ সারানো যায় না কিন্তু এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং এটাই ডায়াবেটিস চিকিৎসার মুখ্য উদ্দেশ্য । এ রোগের প্রতিরোধের জন্য ৪টা ডি (DDDD) অবশ্যই মানতে হবে। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সুনিশ্চিত এবং দীর্ঘায়ু লাভ সহজ হবে। D--Diet Control- খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, DDrugs ওষুধ, D — Discipline শৃঙ্খলা, D-- Daily Exercise and Walking—— দৈনিক ব্যায়াম ও হাঁটা।
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ
যেহেতু রক্তে প্রয়োজনাতিরিক্ত ও অপরিপাককৃত শর্করা অর্থাৎ চিনি বৃদ্ধি তথা অসম খাদ্যই ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ- শর্করাযুক্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রণই ডায়াবেটিসের মোক্ষম ও প্রধান উপায় । ডায়াবেটিস রোগীকে সুষম খাদ্য নিয়মিত ও সময়মত খেতে হবে। মিষ্টি জাতীয় খাদ্য যেমন চিনি, গুড়, খেজুরের রস, যে ফল পাকলে মিষ্টি হয়- কাঁঠাল, পাকা পেঁপে, পাকা কলা, পাকা আম, মিষ্টি ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক কর্মব্যস্ত লোকের জন্য ২০০ ক্যালরী সমৃদ্ধ- শর্করা- ৭১.৫ গ্রাম, আমিষ- ৭৪.০ গ্রাম, চর্বি- ৬৫.৮ গ্রাম ।
খাদ্যই সুষম খাদ্যের উত্তম তালিকা। তবে মিশ্রি, চিনি, গুড় জাতীয় শর্করা সম্পূর্ণ বর্জনীয়। যে কোনও কারণে যদি কোনও মিষ্টি বা মিষ্টি ফল খাওয়া পড়ে ঐ মিষ্টি বা ফলে যে পরিমাণ শর্করা আছে সে পরিমাণ শর্করাসম্বলিত অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য সেদিনের জন্যে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। শস্য জাতীয় খাদ্য ও মাটির নিচের শাঁস ও মূলজাতীয় তরকারী না খাওয়া ভাল ।
ডায়াবেটিস রোগীকে অত্যন্ত সময় ও নিয়মানুগভাবে চলতে হবে। এ নিয়ম ও সময়ানুবর্তিতাই ডায়াবেটিস রোগীর বাঁচার উপায়- তথা জীবনকাঠি । খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা মেনে চললে অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে। শৃঙ্খলার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো প্রধান :
১. নিয়মিত ও সুষম খাদ্য নিতে হবে।
২. নিয়মিত ও পরিমাণমত ব্যায়াম করতে হবে।
৩. ওষুধ ও চিকিৎসা যদি প্রয়োজন হয় তা নিয়মমত চালিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্রাদি- যদি থাকে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।
৪. শরীর, জামা-কাপড়, বিছানাপত্র ও ঘর-দুয়ার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ৫. পায়ের যত্ন নিতে হবে।
৬. নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা—দৈনিক অন্তত দু'বার ভোরে খালি পেটের প্রথম প্রস্রাব এবং দুপুরে খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর করতে হবে। প্রস্রাব পরীক্ষার ফলাফল সংরক্ষণ করার জন্য একটি ভাল খাতা তৈরী করে তাতে ফলাফল নিয়মিত লিখে রাখতে হবে।
৭. মিষ্টি সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে।
৮. শারীরিক যে কোনও অবনতি বা অসুবিধার কারণে সুচিকিৎসকের পরামর্শ বা নিকটস্থ ডায়াবেটিক সেন্টারে দেখা করতে হবে।
৯. একমাত্র ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডায়াবেটিক রোগীর চিকিৎসা না করা।
মনে রাখতে হবে যে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ব্যায়াম ও শরীর (Exercise and Walking )-এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ওষুধ
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা সকল ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অপরিহার্য। কিন্তু তাতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না এলে কালবিলম্ব না করে রক্তে শর্করার আধিক্য অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শমত মৌখিক বড়ি বা ইনসুলিন (একমাত্র ইঞ্জেকশন) ইঞ্জেকশন নিতেই হবে। এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ ও প্রস্রাব পরীক্ষা নিয়মিতভাবে মেনে চলতে হবে। অন্যান্য ভেষজ
উচ্ছে, কাঁচা রসুন, প্রচুর পানি ফলদায়ক। পরিণতি উপরোক্ত চারটি 'D' না মানলে ডায়বেটিস রোগীর গুরুতর পরিণতি অবধারিত 1

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]