রোযায় পেপটিক আলসারভীতি বিজ্ঞান ও ইসলামী দৃষ্টিতে সমাধান ডা. এইচ. এম. এ. আর. মামুনূর রশীদ

মাহে রমযানের রোযা - প্রত্যেক বালেগ মুসলমান নর-নারীর জন্য অবশ্যকর্তব্য দুঃখের বিষয়, এ বরকতপূর্ণ ও কল্যাণময় রোযা বিপুল সংখ্যক জনগণ পেপটিক আসারভীতির কারণে রাখেন না। আমি ডাক্তার হিসাবে এ বিষয়টি যখন বিজ্ঞান ও ইসলামের দৃষ্টিতে দেখি তখন দেখতে পাই যে, রোযা পেপটিক আলসার সৃষ্টি করে না।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হ'ল যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। (সূরা বাকারা : ১৮৩ আয়াত)
রমযান শরীফের রোযা পাগল ও নাবালেগ ব্যতীত নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, অন্ধ- বধির-শ্রমিক সকলের উপর ফরয। শরীয়তে বর্ণিত ওযর ব্যতীত রমযানের রোযা না রাখা কারো জন্য বৈধ নয় (বেহেশতী জেওর, পৃষ্ঠা ২৫২)। এ আয়াতে কারীমা থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল মাহে রমযানের গুরুত্ব এবং ঠুনকো ওজর আপত্তিতে রোযা ছাড়া যাবে না।
বাংলাদেশের কয়েকজন উচ্চপদস্থ গবেষক-ডাক্তার রোযার উপর যে গবেষণা চালান তার বিবরণ ও গবেষণার ফলাফল বর্ণনা করা হলো : পাকস্থলির এসিড- ১৯৫৯ সালের রমযান মাসে ৭ জন রোযাদার ও ৫ জন বেরোযাদার ভলান্টিয়ারের পাকস্থলির এসিড (Hcl) পরীক্ষা করা হয় (Gastric Juice Analysis)। রোযার আগে ও পরে বেরোযাদার কন্ট্রোলদের এসিড প্রায়ই অপরিবর্তিত থাকে, কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। রোযাদারদের সংখ্যা কম বলে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৮ জন ভলান্টিয়ারের উপর পরীক্ষা চালানো হয় । উভয় পর্যায়ে মোট ২৫ জন রোযাদারের এসিড ১৭ জনের স্বাভাবিক (Isochlorhydria), ৭ জনের বেশী (Hypochrlorhydric) এবং ১ জনের কম (Hypochlorhydria) ছিল। রোযার মাসে চতুর্থ সপ্তাহে এদের এসিড দাঁড়ায় ২০ জনের স্বাভাবিক আর ৫ জনের বেশি। ৭ জনের বেশি এসিড রোযা শেষে ৭ জনের স্বাভাবিক হয়ে যায় ও ২ জনের বেশিই থাকে। তবে ১৭ জনের
স্বাভাবিক এসিড রোযা শেষে ১৪ জনের এসিড স্বাভাবিক থাকে আর ৩ জনের এসিড বাড়ে ৷ একজনের কম এসিড রোযা শেষে স্বাভাবিক হয়। সুতরাং রোযায় এসিড বৃদ্ধির তুলনায় হ্রাস পায় অনেক বেশি। পাকস্থলির এসিড ঃ কেউ কেউ মনে করেন যে, রোযায় পাকস্থলির এসিড (Gastric Hcl) বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে পাকস্থলির বা ক্ষুদ্র অস্ত্রের প্রথমাংশে (Doudenum) ঘা (Peptic Ulcer) হতে পারে। বর্তমান গবেষণায় একথা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তা ছাড়া এরূপ ধারণা শারীরবিদ্যারও বিপরীত। রোযায় পেপটিক আলসার হয় বলে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণও নেই ।
এবার ডাঃ ক্লীভ সাহেবের গবেষণার দিকে দৃষ্টি দেই। তিনি Peptic Ulcer নামক একটি গবেষণামূলক পুস্তকে যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে বিশ্বের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় এ রোগ অনেক কম অথচ দক্ষিণ ভারত, জাপান, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ নাইজেরিয়ায় এ রোগ অত্যন্ত বেশি। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় মুসলমান ও মালয়েশিয়ার মালয়ী মুসলমানদের তুলনায় ঐসব দেশের চীনাদের মধ্যে এ রোগ বেশ কয়েকগুণ বেশি। এ ছাড়া দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জার্মান ও জাপানী বন্দী শিবিরের অনাহারক্লিষ্ট যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে কারো Peptic Ulcer বা Ulcer ছিদ্র হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। ডাঃ ক্লীভ জোর দিয়ে বলেন, 'Fasting does not produce organic disease' (দেখুন Cleave T. L. (1962) Peptic Ulcer, John Wright & Sons Ltd. Bristol. p-93.)
পেপটিক আলসারে চিকিৎসা-বিজ্ঞানীদের কথা
পাকস্থলি এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ ডুয়োডেনাম-এর মিউকোসাতে 'ঘা'কে পেপটিক আলসার বলে। এ ছাড়াও ওসোফেগাস (Oesophegus ), জেজুনাম (Jejunum) এবং মেকেলস্ ডাইভারটিকুলাম (Meckels Divertoculum) এ 'ঘা' হতে দেখা যায়। ডুয়োডেনাম আলসার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এটা পাকস্থলির আলসার থেকে ২-৩ গুণ বেশি পাওয়া যায়। ডুয়োডেনামের আলসার মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বেশি হয়। যার অনুপাত ১ : ৪। বৃদ্ধ ব্যক্তিদের পাকস্থলিরও ডুয়োডেনাম আলসার উভয়ই হতে দেখা যায়।
পেপটিক আলসারের কারণ
• যখন এসিড ও পেপসিন (Acid and pepsin) মিউকোসার প্রতিরোধের (Mucosal defence) মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকে না তখন এ রোগের সৃষ্টি হয়।
• হেলিকোব্যাকটোর পাইলোরি (H. Pylori) এ রোগের জন্য দায়ী। ০ বংশগত- যারা ব্লাড গ্রুপ 'ও' এন্টিজেন (Blood group 'O' antigen ) ক্ষরণ গ্যাসট্রিক রসে ভরেন না । o ক্ষতিকর ওষুধ সেবন। বিশেষ করে এসপিরিনজাতীয় ওষুধ।
• অন্যান্য কারণ ।
পেপটিক আলসারের লক্ষণসমূহ
-- এ রোগে প্রায়ই হয়ে অজীর্ণ থাকে কিন্তু নাভীর উপরে (Epigastric region ) - এ ব্যথাই এ রোগের প্রধান লক্ষণ। রোগী এক আঙুল দিয়েও ব্যথার এলাকা দেখাতে পারেন। এটা রোগ নির্ণয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডুয়োডেনাম আলসার রাতে বেশি হয়, অবশ্য দিনেও হয়ে থাকে। যখন রোগী ক্ষুধার্ত হয় তখন ব্যথা ওঠে। বমি বমি ভাব অথবা বমি হয়। বমি হলে ব্যথা কমে যায়। অনেক সময় পাকস্থলি থেকে এসিড উঠে আসার ফলে জ্বালা-পোড়া অনুভূতি আসে। এটাকে হার্টবার্ন (Heart burn) বলে। অরুচি এবং ওজন কমে যাওয়া গ্যাসট্রিক আলসারের লক্ষণ। ...
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
১.' এনডোসকোপি ঃ (Endoscopy) : এ পরীক্ষার সাহায্যে এ রোগ সহজেই নির্ণয় করা যায়। এ যন্ত্রের সাহায্যে বায়োপসি (Biopsy) নেওয়া যায়, যা রোগের কারণ নির্ণয় করতে সহায়ক হয়।
২. বেরিয়াম মিল X-ray : এ X-ray-র সাহায্যে পাকস্থলি ও ডুয়োডেনাম ঘা ধরা পড়ে। চিকিৎসা
এন্টাসিড (Antacid) জাতীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এসিড কমানোর জন্য ওমিপ্রাজল (Omeprazol) এবং রেনিটিডিন (Ranitidin) বহুল ব্যবহৃত হয়। ক্ষত পূরণের জন্য সুক্রালফেট (Sucralfate) একটি ভাল ওষুধ।
আমরা পূর্বেই পেটের ব্যথার কারণ হিসাবে ধূমপান লক্ষ করেছি। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, ধূমপান ক্ষত শুকাতে দেয় না এবং এ রোগ বার বার হওয়াকে ত্বরান্বিত করে। ধূমপান এসিড ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় এবং অগ্নাশয় (Pancreas)-এর বাইকার্বোনেট ক্ষরণ হতে বাধা দেয়, যার ফলে পেটে ঘা হয় (Robbin and Kumar, Barsic Pathology, 4th Edition, p-517) বাংলাদেশের মানুষসহ পৃথিবীর সবদেশেই ধূমপান করা যায়। সম্প্রতি দেখা গেছে, ধূমপানের ফলে বিভিন্ন রোগ হওয়ার জন্য উন্নত দেশে এটার হার কমে এসেছে অথচ অনাহারক্লিষ্ট অস্বাস্থ্যবান বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এ হার বেড়ে চলেছে। সুতরাং পেপটিক আলসার থেকে মুক্তি পেতে হলে ধূমপান অবশ্যই ছাড়তে হবে।
পেপটিক আলসারের আর এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন। এসপিরিন এবং এ জাতীয় ওষুধ যা মাথাধরা, বাত রোগে সচরাচর ব্যবহৃত হয়।
এসপিরিন, ফিনাইলবুটাজোন (Phenylbutazone), ইনডোমিথাসিন (Indomethacin), আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen), পাইরোক্সিকাম ( Piroxicam ) । এছাড়াও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ (Steroid) সেবনে পেটের আলসার বেশি হয়। রক্তক্ষরণ (Haemorrhage), কালো পায়খানা (Malaene) এবং শেষে নাড়ী ছিদ্র হয়ে ( Perforation) যায়।
পেটব্যথার রোগী ও রোযা ঃ যাঁরা পেটব্যথায় ভোগেন এবং রোযা রাখলে ব্যথা বৃদ্ধি হবে ভাবেন, তাদের জন্য ফয়সালা এই যে, তাঁরা ধূমপান বন্ধ করবেন। ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন করবেন না। ডাক্তার সাহেবের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলে দেবেন যে আপনার পেটে ক্ষতিকারক আলসার (Active ulcer) আছে কি না। Endoscopy এ পরীক্ষার জন্য বেশ ভালো। যদি Active ulcer না থাকে তবে অতি সাধারণ ওষুধ খেলে ভালো হয়। তাদের রোযা রাখাতে কোন অসুবিধা নেই, যা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাতে প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং রোযার জন্য গ্যাসট্রিক বেড়ে যাবে- এ অহেতুক ভয়ভীতি মন থেকে বের করে দিয়ে রোযা রাখবেন। আর যাদের পেটে Active Ulcer আছে তাদের রোযা রাখা না রাখার ব্যাপারে কুরআনিক দৃষ্টিভক্তি তুলে ধরছি। পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারায় আল্লাহ্ পরিষ্কারভাবে বলেছেন, “যদি তোমাদের কেউ অসুস্থ হও বা ভ্রমণে থাকো তবে সে (রোযা না রেখে) পরে (সুস্থ হয়ে) সেই রোযাগুলির কাযা আদায় করবে। (২:১৮৪) পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ্ পাক বলেন- আল্লাহ্ তোমাদের কোনও কঠিন দায়িত্ব দিতে চান না বরং দায়িত্ব সহজ করে দিতে চান। (২ : ১৮৫)
যাদের পেট Peptic Ulcer তাজা এবং খালি পেটে খুব ব্যথা হয় তাদের রোযা রাখা উচিত নয়, কারণ তারা অসুস্থ। তাদের ঘন ঘন Alkali / Antacid বা অন্যান্য ওষুধ খেতে হয়। ওষুধ না খেলে Peptic Ulcer Perforation হয়ে যেতে পারে এ অবস্থায় রোযা না রেখে এর কাযা পরে আদায় করে নেবেন। যদি রোগ দুরারোগ্য হয় তবে ফিদইয়া দেবেন ।
একজন দীনদার ডাক্তার যদি সার্টিফিকেট দেন যে আপনার পেটে মারাত্মক 'ঘ' ( Active Ulcer) আছে, তা হ'লে রোযা ছাড়া জায়েয হবে। যদি ডাক্তার কাফির (অমুসলিম) হন অথবা এমন মুসলমান হন যে, তিনি দীন ইসলামের ঈমানের পরওয়া করেন না, তবে তাঁর কথায় রোযা ছাড়া যাবে না (বেহেশতি জেওর, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ২৬৫)।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]