আবেগ ও হৃদরোগ টেনশন ও স্ট্রেস হৃদরোগের অন্যতম কারণ

আবেগ ও হৃদরোগ
নুরুল ইসলাম মানিক
বর্তমান পৃথিবীতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি লোকের মৃত্যু হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা হৃদরোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন। বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কিছু নাটকীয় সাফল্যও অর্জন করেছে। অচল হৃদযন্ত্রের স্থলে কৃত্রিম হৃদযন্ত্রও কাজে লাগানো হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক সফলতা পাওয়া গেলেও পুরোপুরি সার্থকতা অর্জন করতে পারেনি বিজ্ঞান। মানুষের যত বুদ্ধি ও মেধাই থাক প্রকৃতিকে পুরোপুরি বশে আনা কখনোই সম্ভব নয়। তাই বলে মানুষ বসে থাকেনি। আবিষ্কারের সাধনা এগিয়ে চলেছে অব্যাহত গতিতে।
হৃদরোগ কেন হয় ? কিই-বা তার প্রতিকারের উপায় — এ নিয়ে আজো মতবিরোধ রয়েছে। একদল বিশেষজ্ঞ যদি একটা মতবাদ দাঁড় করান, অন্যদল বলেন, না ঠিক নয়। এমনটিই দেখা গেছে কয়েক বছর আগে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হৃদরোগের কারণ'- শীর্ষক এক বিশেষজ্ঞ সম্মেলনে। এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন পৃথিবীর সেরা সেরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ। এতে আমেরিকার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রিচার্ড কন্টি মন্তব্য করলেন, ধূমপান করলে হৃদরোগ হয়। কিন্তু বৃটেনের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ডি বোলাও রস তাঁর ভাষণে বললেন, সিগারেট বা ধূমপান করলেই যে হৃদরোগ হয় নিশ্চিতভাবে এরূপ মন্তব্য করা যায় না, তবে ধূমপান হৃদরোগের অন্যতম কারণ।
সম্মেলনে একদল বিশেষজ্ঞ বললেন, বেশি খেলে, মেদাধিক্য হলে, অতিরিক্ত যৌন-জীবন যাপন করলে বা মদ খেলে হৃদরোগ হয়। আরেক দল বললেন, কম খেলে, হালকা-পাতলা থাকলে, সীমিত যৌন-জীবন যাপন করলে কিংবা মদ খাওয়া ছেড়ে দিলেই যে হৃদরোগ হবে না এমন কোনও কথা নেই। লন্ডনের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জন মূর বলেন, নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানুষ দীর্ঘদিন বাঁচে এবং তাদের হৃদরোগও খুব একটা হয় না। একদল ডাক্তার বলেন, একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হলে পরবর্তী সময়ে ব্যায়ামের ফলে এ রোগ আরো বেশি বেড়ে যেতে পারে ।
পৃথিবীর বেশির ভাগ ডাক্তারই বলেন, রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বাড়লেই হৃদরোগ হয়। কিন্তু ভারতের বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেখা পাঠক বলেন, রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লেই যে হৃদরোগ বাড়বে বা হার্ট অ্যাটাক হবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, রক্তে দু'ধরনের কোলেস্টেরল থাকে। একটিকে বলা হয় লো ডেনসিটি আর অন্যটিকে বলা হয় হাই ডেনসিটি। লো ডেনসিটির কোলেস্টেরল শিরার পক্ষে ক্ষতিকর কিন্তু হাই ডেনসিটির কোলেস্টেরল শিরার দেয়ালকে রক্ষা করে থাকে। তিনি বলেন, যত রকমের হৃদরোগী দেখা যায়, তাদের অধিকাংশই লো ডেনসিটি কোলেস্টেরলের।
হৃদরোগ সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞদেরই যদি মতামত হয় এই, তবে সাধারণ মানুষ কি করবে ? কিভাবে তারা নিজেদের রক্ষা করবে সর্বনাশা হৃদরোগের হাত থেকে ?
ভাবনার বিশেষ কোনও কারণ নেই। বিশেষজ্ঞ মহলের মধ্যে হৃদরোগের কারণ. নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও কি পর্যায়ে হৃদরোগ মানুষ আক্রান্ত হয় এ নিয়ে খুব একটা মতবিরোধ নেই বললেই চলে । বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় মানসিক উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ও আবেগের ভারসাম্যহীনতার জন্যে। মানুষ যদি এসব রিপুগুলোকে নিজের আয়ত্তে আনতে পারে তবে হৃদরোগের হাত থেকে সহজেই মুক্ত হতে পারে অধিকাংশ মানুষ । ক্রোধের বিস্ফোরণই হৃদরোগের অন্যতম কারণ। এ সত্যটি আবিষ্কার করেছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডের সেন্ট জর্জেস হাসপাতালের বিখ্যাত ডাক্তার জন হান্টার তাঁর জীবনের বিনিময়ে
ডাক্তার হান্টার চিকিৎসার ব্যাপারে যেমন ছিলেন ভুবনজয়ী সুনামের অধিকারী, তেমনি বদ-মেজাজের জন্যেও তাঁর জুড়ি মেলা ছিলো ভার। তাঁর সাথে রোগীরা একটু এদিক সেদিক ব্যবহার করলেই তিনি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে রেগে-ক্ষোভে ফেটে পড়তেন । ডাক্তার হান্টার বুঝতে পারলেন অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়লে তাঁর বুকে মৃদু যন্ত্রণা হয়। এই অপ্রকৃতিস্থ অবস্থা যেদিন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, সেদিন এই যন্ত্রণা হয় অসহ্য রকমের।
ডাক্তার হান্টার তাঁর বন্ধুদের বলতেন, দেখো, যদি আকস্মিকভাবে আমার মৃত্যু হয় তবে তা এই বদ-মেজাজের জন্যেই হবে। আমি জানি, হৃদরোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্রোধের বিস্ফোরণ। কিন্তু জেনেও নিজেকে সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না। নিজের সম্বন্ধে ডাক্তার হান্টারের ভবিষ্যতবাণী ঠিক হয়েছিলো।
একবার তাঁর চেম্বারে এলো একজন খুঁতখুঁতে স্বভাবের রোগী। রোগীটি তার কি রোগ হয়েছে, এসব রোগ কেন হয় ইত্যাদি প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে ডাক্তার হান্টারকে উত্যক্ত করে তুললো । হান্টার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেন না। বললেন, দেখো বাপু, এতো প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারবো না।' রোগীর সাথে কথা বলতে বলতে জন হান্টার একসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, আবেগে ফেটে পড়লেন। আর তারপরই অসহ্য যন্ত্রণা। নিজের বুকে হাত চেপে ধরেই তিনি রোগীকে বললেন, মাফ করবেন, আমি একটু পাশের ঘরে যাচ্ছি। পাশের ঘরে গিয়েই মেঝের উপর ঢলে পড়লেন এবং ক্রোধের বিস্ফোরণেই হলো তাঁর মৃত্যু। বলা যায়, তখন থেকেই মানুষ হৃদরোগে তাৎক্ষণিক মৃত্যুর কারণ হিসেবে এই ক্রোধের বিস্ফোরণকে দায়ী করে আসছে। অনেক সময় পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে কিংবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে স্নায়ুবিক অভিঘাতে মৃত্যুবরণ করে। কেউ কেউ আবার কোন দুঃসংবাদে বা দুঃসংবাদের আশংকায় বিমর্ষ হয়ে পড়ে এবং এর ফলে অনেকেই হৃদরোগেও আক্রান্ত হয়। মূলত এসবের কারণ হচ্ছে আবেগ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আবেগের এ অবস্থায় হৃদযন্ত্রের পেশীর সংকোচন ও বিমোচনে দেখা দেয় অসংগতি, রক্ত-সঞ্চালনে দেখা দেয় অস্থিরতা, কাজেই যতদূর পারা যায় ধৈর্যের সাথে বাস্তবকে মেনে নিয়ে পারিপার্শ্বিকতায় দ্রুত নিজেকে খাপ-খাইয়ে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
মানসিক ও স্নায়বিক পরিস্থিতি যে করোনারি হৃদরোগের অন্যতম কারণ এ নিয়ে গত দশক ধরে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা ক্রমেই সোচ্চার হচ্ছেন। ধূমপান হৃদরোগের কারণ এ সম্বন্ধে মতবিরোধ থাকলেও হাসপাতালে যে-সব লোক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় তাদের ৫০ শতাংশ ধূমপানের শিকার বলে বিশেষজ্ঞ মহলের বেশির ভাগের ধারণা। আর বাকী ৫০ শতাংশের হৃদরোগ হওয়ার পেছনে কাজ করে মানসিক ভারসাম্যহীনতা। তার উৎস সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি ।
আধুনিক সভ্যতা আমাদের যেমন দিয়েছে জীবন ধারণের উপায়, তেমনি আমাদের সুখও হরণ করে নিচ্ছে কড়ায় গণ্ডায় হিসেব করে। নগর সভ্যতা যতই দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে, আমাদের জীবনের চাহিদাও বাড়ছে তত বলগাহীনভাবে। কোন কিছুতেই আমরা আর তৃপ্ত থাকতে পারছি না। ফলে দেখা দিচ্ছে স্নায়বিক চাপ ও উত্তেজনা। এর ফলে দিনদিন হৃদরোগ বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে কলকারখানার নানা রকম শব্দ, যানবাহনের গতি ইত্যাদির ফলেও আমরা প্রতি মুহূর্তে বিরূপ পরিবেশের শিকার হচ্ছি। নগর সভ্যতায় প্রতিযোগিতার সাথে বেঁচে থাকার জন্য প্রাত্যহিক কাজ- কর্মে প্রতিটি মানুষের মধ্যে যেসব Anxiety দেখা দিচ্ছে- এই সুযোগটিকেও কাজে লাগাচ্ছে সর্বনাশা হৃদরোগ । কয়েক বছর আগে, হেলসিংকিতে হৃদরোগের সাথে মানসিক কারণ নির্ণয়ের জন্য একটা আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। আলোচনায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ সিদ্ধান্ত নিলেন— মানসিক চাপ কখনো কখনো তাৎক্ষণিক হৃদরোগের কারণ হতে পারে । তারা এও মত দিলেন যে, দীর্ঘ সময় ধরে হৃদপিণ্ড বা হৃদপিণ্ডে রক্ত সংবহনে গড়ে উঠতে পারে ক্রনিক বৈকল্য যার পরিণতিতে মানুষের মৃত্যু হতে পারে ।
বোস্টনের হার্ভার্ট স্কুল অব পাবলিক হেল্থ-এর বিজ্ঞানীরা মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর উপর চাপ প্রয়োগ করে দেখেছেন যে, স্থান সংকুলানের অভাবে ইঁদুর, গিনিপিগ ইত্যাদি প্রাণীরা মুক্তির জন্যে পাগল হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন এসব মুক্তিপিয়াসী প্রাণীর স্নায়ুমণ্ডলের উপর চাপ প্রয়োগের ফলে দেখা গেছে, ক্রমশ তাদের হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা ধীরগতি হয়ে পড়ে, এমনকি কারো কারো হৃদপিণ্ড বিকল হয়ে যায়। এসব পরীক্ষা থেকে তারা মন্তব্য করেছেন, পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের বাসস্থানের যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে— এর ফলে দিন দিন হৃদরোগের সংখ্যা বাড়ছে।
তাঁরা ওসব প্রাণীর উপর ইলেকট্রিক শক দিয়ে উত্তেজিত করে দেখেছেন, অত্যধিক উত্তেজনার ফলে স্নায়ুমণ্ডলে যে চাপ পড়ে এতে তাৎক্ষণিকভাবে অনেক প্রাণীর মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। তাঁরা মন্তব্য করেছেন, স্নায়বিক উত্তেজনা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে— উদার-শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ। বর্তমানে এই প্রশান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের অনুকূলে না থাকায় হৃদরোগের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। তাঁরা এটাও মন্তব্য করেছেন, ক্রোধ, উত্তেজনা, মাত্রাতিরিক্ত আনন্দ বা ভীতি ছাড়াও করোনারি রক্ত সংবহন অবস্থার অসংগতির জন্যেও অনেকের হৃদরোগ হতে পারে। এ পর্যায়ে তাঁরা হৃদরোগের কারণ বংশগত বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতাকে দায়ী করেন ।
হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখেছেন আবেগের সাথে যেমন হৃদরোগের কারণ বিদ্যমান, তেমনি ঘুমের সাথেও তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য হচ্ছে, যেসব লোক হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেন তাদের বেশিরভাগই মারা যায় ভোর ৪টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে। এর মানে কি ? তাঁরা বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি এটা একটা গোলমেলে সময়, এ সময় মানুষের চোখের পাতায় চলে দ্রুত কম্পন এবং এ সময় ঘুমন্ত মানুষের ধমনীর রক্তচাপে ঘটে দ্রুত হ্রাস-বৃদ্ধি, হৃদপিণ্ডের স্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রেও ঘটে একই অবস্থা। কাজেই হৃদরোগের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে এই বিপজ্জনক মুহূর্তটি থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন ।
ইসলাম ধর্মে এ সময় ঘুম থেকে ওঠে সালাতে যোগ দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। আমাদের মনে হয়, যথাসময়ে জামাতে ফজরের সালাতে অংশগ্রহণের জন্য যারা নিয়মিত খুব ভোরে শয্যা ত্যাগ করেন, তাদের মধ্যে অনেক হৃদরোগীই অলক্ষ্যে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে পরিত্রাণ পেয়ে যান। অনেকেই ঘুমের মধ্যে প্রচণ্ড নাক ডাকে। নাক ডাকার সাথেও হৃদরোগের অজ্ঞাত কারণ নিহিত রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। নাসারন্ধ্রের ঊর্ধ্বস্থানিক বায়ু চলাচলের পথটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলেই মানুষ ঘুমের মধ্যে নাক ডেকে থাকে। এ অবস্থায় ধমনীর উপর রক্তে চাপ বৃদ্ধি পায় এবং এ রক্তচাপ বৃদ্ধির ফলে ঘুমের মধ্যেই কারো কারো স্নায়ুতন্ত্র ছিঁড়ে যেতে পারে। পরিণামে মানুষ হৃদরোগের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে। ঘুমের মধ্যে যাদের নাক ডাকার অভ্যাস রয়েছে তিনি চিকিৎসার মাধ্যমে অপারেশন করিয়ে এ রোগটি সারিয়ে ফেলতে পারেন এবং আকস্মিক মৃত্যুর হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন । বিশেষজ্ঞ মহল বিভিন্ন অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন, যেসব পুরুষ রাতে ৬ ঘণ্টার কম এবং ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমায় তাদের মধ্যে করোনারি হৃদরোগের প্রকোপ বেশি। কোন কারণে কারো হৃদযন্ত্রের বা করোনারি ধমনী যদি আগে থেকে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সে ক্ষেত্রে মানসিক চাপের প্রভাবে হৃদস্পন্দন আকস্মিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। উত্তেজিত হলে বা নিজেকে বিপন্ন মনে হলে এ সময় রক্তে অ্যাড্রিনেলিস নামে একশ্রেণীর হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে। অ্যাড্রিনেলিস বিভিন্ন পেশীতে রক্ত-সঞ্চালন ত্বরান্বিত করে রক্তপেশীর শক্তি যোগায়। এ শক্তি আসলে যোগায় রক্তে মিশে থাকা ফ্যাড-এসিডে –এ মন্তব্য করেছেন লন্ডনের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্কুলের চিকিৎসাবিজ্ঞানী মরিস ব্রাউন। দৈহিক কাজ-কর্মে এই শক্তি ব্যয় না হলে তখনই দেখা দেয় অসুবিধা। করোনারি ধমনীর ছিদ্রপথ বন্ধ হতে থাকে। ফলে হৃদস্পন্দন হয় অনিয়মিত এবং রক্ত সঞ্চালনও হয় বাধাগ্রস্ত।
মরিস ব্রাউন ও তাঁর সহযোগিরা মানুষের উপর একটা পরীক্ষা চালিয়ে দেখলেন ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে এ্যালিড্রন হরমোন প্রবেশ করলে প্লাজমা (রক্ত) এ্যালিড্রনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায় ।
এই অবস্থা ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে অতিরিক্ত মানসিক উত্তেজনার সৃষ্টি করে। মানসিক উত্তেজনার এক পর্যায়ে মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
বোসটন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডেভিড জেনকিন্স যাদের মানসিক অভিঘাতজনিত হৃদরোগ হয় তাদের চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন।
যাদের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা কম তাদের প্রথম শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এদের জীবনে রয়েছে নানা রকমের টানাপোড়েন, সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে তারা খাটো। চাকরি জীবনে এদের নিরাপত্তা কম। আর্থিক উন্নতির জন্যে এদের এমন পেশা গ্রহণ করতে হয় মানসিকতার দিক থেকে যা মোটেই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এরা কাজ করে বটে কিন্তু কাজে কোনও স্বাধীনতা নেই। কর্মকর্তাদের চাপে কখনো কখনো এরা মনের দিক থেকে পঙ্গু হয়ে পড়ে। বছরের পর বছর পারিপার্শ্বিকতার শিকার হয়ে এরা মানসিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য নানারূপ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। ধূমপান ছাড়া যেন এদের এক মুহূর্তও চলে না। পরিণামে এরা শিকার হয় করোনারি ধমনী রোগের।
জেনকিন্স দ্বিতীয় শ্রেণীতে ফেলেছেন তাদের যারা অত্যন্ত আবেগপ্রবণ আকাঙ্ক্ষার জিনিসের একটু তারতম্য হলেই এরা মানসিক দিক থেকে অত্যন্ত ভেঙে পড়ে, ফলে দেখা দেয় অনিদ্রা, অনিদ্রা থেকে মানসিক অবসাদ এবং হৃদস্পন্দনে অস্বাভাবিকতা এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু ঘটারও সম্ভাবনা থাকে। জেনকিন্স তৃতীয় শ্রেণীতে ফেলেছেন দু'ধরনের মানুষকে। এদের একশ্রেণী হয় অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও উদ্যোগী, সময়ানুবর্তিতার উপর এদের থাকে দারুণ বিশ্বাস। কোথাও এসবের বিচ্যুতি দেখলে, এরা অত্যন্ত মানসিক চাপবোধ করেন। ফলে এদের মধ্যে হৃদরোগ হয়ে থাকে। দ্বিতীয় স্তরের চরিত্র হলো— যতদিন বেঁচে আছো খাও- দাও ফুর্তি করো। এদের কোনও কিছুতেই দায়িত্ববোধ নেই। এরা অত্যধিক ভোজনবিলাসী ফূর্তিবাজ। বেশি খেয়ে স্কুল হলেও এরা সাধারণত হৃদরোগে আক্রান্ত হয় কম।
চতুর্থ শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে তাদের, দায়িত্ব যাদের কাছে বোঝার মতো। শারীরিক শক্তি নিঃশেষিত হয়ে গেলেও যাদের পরিশ্রম করতে হয়। যারা মিলকারখানায় রাতদিন অভারটাইম খাটে। ন্যূনতম জীবন ধারণের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে এদের মনের উপর সৃষ্টি হয় মারাত্মক ধরনের চাপ। এর ফলে এরা কোন না কোন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়।
যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এতোদিন নানা রকম ভেজাল খাদ্য, ধূমপান, চর্বি জাতীয় খাদ্য, লবণ ইত্যাদিকে হৃদরোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হতো, বলা হতো এসব খাওয়ার ফলেই শরীরের স্বাভাবিক বিপাকীয় কাজ-কর্মে ব্যাঘাত ঘটে। চর্বি জাতীয় খাবারের ফলে রক্ত-সংবহন ধমনী ক্ষীণকায় হওয়ার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে মানসিক চাপও এই রোগের অন্যতম কারণ। মানসিক দ্বন্দ্বকে এড়িয়ে জীবনকে যত চাহিদামুক্ত করা যাবে হৃদরোগের হাত থেকে মানুষ তত বেশি মুক্তি পাবে ।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]