রোগ জরা ব্যাধি 'সবার জন্য স্বাস্থ্য'

রোগ জরা ব্যাধি
শাহেরা খাতুন বেলা
২০০০ সাল নাগাদ 'সবার জন্য স্বাস্থ্য' এই লক্ষ্যে সরকার প্রশাসনকে ঢেলে সাজান। দেশের ৮৫,০০০ গ্রামের প্রতিটি মানব সন্তানের মাঝে চিকিৎসার সুফল পৌঁছাতে সরকার বদ্ধপরিকর। শিক্ষিতের হার শতকরা যেখানে ২২ জন,
শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১১৭ জন — তা সত্ত্বেও ১৯৯০ সাল নাগাদ সম্প্রসারিত টীকা দান কর্মসূচির আওতায় সব শিশুদের আনার জন্য সকলেই সচেতন। বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের চিত্র বিশেষ করে শহরের বস্তী এবং গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বলা যায় বিপন্ন। স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব মৌল সমস্যাগুলো রয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জ্ঞান । তন্মধ্যে ২,০০০ সাল নাগাদ প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার কথা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন। পঁচাশি হাজার গ্রামের ঘরে ঘরে সুচিকিৎসার সাথে সাথে শিক্ষার প্রদীপ জ্বালানো হবে। আশাব্যঞ্জক এবং প্রশংসনীয় নিঃসন্দেহে। স্বাস্থ্যজ্ঞান, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং সাধারণ শিক্ষার প্রসার ও নিরক্ষরতা দূরীকরণের উচ্চকিত ঘোষণা সব সময়ই শোনা যায়। তদুপরি ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পরিবার কল্যাণ কর্মী, সচেতন ব্যক্তিবর্গ ও সমাজের অন্যান্য মানুষ সবার মধ্যেই একটা চিড়ধরা সম্পর্ক। ডাক্তারের সাথে সমাজের অন্যান্য মানুষের ক্রমবর্ধমান ব্যবধান দিন দিন বাড়ছে। মনে হচ্ছে এটা যেন সমাজের একটা ক্রনিক ব্যাধি। কিছুদিন আগ পর্যন্ত জুনিয়র চিকিৎসকরা তাঁদের ইন্টার্ন প্রশিক্ষণ শেষ করার পর চাকরিতে ধারাবাহিকতাসহ নিয়োগ, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ানোর জন্য ও গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে ধর্মঘট চালিয়ে যেতেন। দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে বছরে দুই থেকে তিনবার এ ধর্মঘট চলতো। শিশুমৃত্যুর হার গ্রামাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। আগে প্রতিটি পরিবারে আট থেকে দশ জন শিশু জন্মাতো। এর মধ্যে চার থেকে পাঁচ জন মারা যেতো এবং বাকীরা জীবিত থাকতো। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় আগের থেকে কিছুটা সচেতন হবার ফলে এখন মারা যাচ্ছে দুই থেকে তিন জন। ফলে পরিবারে সদস্য সংখ্যা বাড়ছে। অতিরিক্ত সন্তানাদির চাপে বাবা-মা বা অক্ষম দম্পতিরা পরিবার পরিকল্পনার ব্যবস্থায় আগ্রহী হচ্ছেন। রুগ্ন ও অপরিণত শিশু জন্ম নিচ্ছে পুষ্টিহীন মাতৃদেহ থেকে। তারা জন্ম নিচ্ছে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনুপযুক্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। শতকরা ৬০-৭০ জন শিশু জন্ম নিচ্ছে অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দাই-যাদের হাতে। এটা ঠিক যে, বড় বড় হাসপাতাল থেকে উপজেলা পর্যায়ে মাতৃসদনের অবস্থা কোনভাবেই পর্যাপ্ত নয়। একইভাবে সবার জন্য হাসপাতালের মাতৃসদনে আসাও সম্ভব নয়। হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বাড়ালেই যে সমস্যার সমাধান হবে- তাও বলছি না। সবার জন্য স্বাস্থ্য- এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে শুধু ডাক্তারের সংখ্যা, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার কল্যাণ কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে হবে- তাই নয়, সেইসাথে জনগণকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, পুষ্টি ও পুষ্টি সংক্রান্ত স্বাস্থ্যজ্ঞান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত করতে হবে। আমাদের দেশে ডায়রিয়া ও পেটের অন্যান্য পীড়া ছাড়া শিশু মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অপুষ্টি। দীর্ঘদিন ধরে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগতে ভুগতে কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয়, কেউ কেউ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে রিকলাঙ্গ হয়ে যায়। সেই সাথে ঐ পরিবারটির সামাজিক ব্যস্ত্র, মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্ব ইত্যাদি বাড়তে থাকে। কারণ একটি পঙ্গু শিশু- শুধু তার নিজের যা ঐ পরিবারের বোঝা নয় বরং সে সমাজেরও বিরাট বোঝা। মা-বাবার অনীহা, অনিচ্ছা, অজ্ঞতার কারণে সমাজের করুণার ছায়া তাকে আশ্রয়ের সন্ধানে থাকতে হয়। উন্নত বিশ্বে, যেমন রাশিয়ায় প্রতি দশ হাজার ৩৭ জন ডাক্তার ও ১০০ জন নার্স, পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ ভারতে প্রতি দশ হাজারে পৌনে তিনজন ডাক্তার এবং দুজন নার্স রয়েছে। আমাদের দেশে সেখানে প্রতি সাড়ে সাত হাজারে একজন ডাক্তার এবং প্রায় প্রতি বাইশ হাজারে একজন নার্স রয়েছে। অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে আমাদের ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা অনেক কম। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা, ওষুধ-পথ্য, চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক প্রযুক্তি ও তার ব্যবহার আরও কম। ১৯৮৪-৮৫ সালে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয় দেখেছিলাম সম্ভবত এক টাকা পঁচিশ পয়সা, যার সবটাই মাথাপিছু ব্যয়ও হয় না। কারণ শিক্ষা ব্যয়, গবেষণার খরচ, যানবাহন ও অন্যান্য প্রশাসনিক খরচও সম্ভবত এর মধ্যেই পড়ে। হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশ রোগীরই রয়েছে অপুষ্টিজনিত নানা সমস্যা। জন প্রতি বা একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ক্যালরীর যোগান প্রায় ১৯০০ ক্যালরী, যা প্রয়োজনের চেয়ে কম এবং এই মানুষদের জন্মের পর প্রায় পঞ্চাশ বছর বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পঞ্চাশ বছরের একটা পরিপূর্ণ জীবনে রোগ, জরা, ব্যাধি থেকে যত দূরে থাকবে, ততই মঙ্গল । এই আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে একজন জুনিয়র ডাক্তার, যিনি আর্তের সেবায় নিয়োজিত মনোভাব নিয়ে আসেন, তিনিই বা কি করবেন। তিনি এই সমাজেরই একজন, এই পরিবারেরই একজন। এই দরিদ্র আর্থ-সামাজিক পরিবেশের উন্নততর প্রতিনিধিও তিনি । তিনি আর্তের সেবা করেন- নিজে অভুক্ত থেকে। কাজেই ভূখানাঙ্গা জনগণের সেবা করবেন তাঁরা কোন সবল হাতে! তবুও তাঁরা এগিয়ে আসেন। কয়েকজন হাতে গোণা বিশেষজ্ঞ প্রবীণ চিকিৎসক ও অবিবেচকভাবে উপার্জনকারী কিছু সংখ্যক ডাক্তার- যেমন ডাক্তার সমাজের মারাত্মক ব্যাধি, যা সমাজের অন্যান্য শাখায়ও বিদ্যমান, তাঁদের জন্য পুরো ডাক্তার সমাজকে দোষারোপ করাও যুক্তিহীন। বরং অর্থগৃধু না হয়ে, অমানবিক মা হয়ে, নিজের সুখ, ঘুম হারাম করে অধিকাংশ ডাক্তারই এগিয়ে আসেন- এটাই সত্য। তবুও কোথায় যেন বিভ্রাট কেউ সইতে পারেন না কাউকে। পরিমিত সময় এবং নিষ্ঠা নিয়ে, ভালভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিবার রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন- তাহলে রোগ ও রোগীর জটিলতা খুলতে তৎপর হবেন আরও সহজভাবে। পক্ষান্তরে, সাধারণ রোগে যদি বিশেষজ্ঞের কাছে দৌড়াতে হয় তাহলে আন্তরিকতা সত্ত্বেও সময়ের অভাবে রোগী ভালভাবে দেখা সম্ভব নয়। কারণ, একজন ডাক্তারের ভাল ব্যবহারে রোগীর অসুখ প্রায় অর্ধেক ভাল হয়ে যায়। ডাক্তারের আন্তরিকতা না থাকলে, ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি বেশি থাকলেই রোগীর সাথে ডাক্তারের ব্যবধান দিন দিন বাড়বে। বিতৃষ্ণা, অসহিঞ্চুতা, ভক্তি, শ্রদ্ধা, সব আভিধানিক শব্দই থেকে যাবে। রোগের সাথে ওষুধ, পথ্য— এগুলোর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করে তোলাও একজন ডাক্তারের কর্তব্য। এসব সমস্যার সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। তবে সমাধান অসম্ভব- এটাও সত্য নয়। বরং চিন্তা-ভাবনা ও পরিমিত মননশীলতার মাধ্যমে একটা সুস্থ সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে উঠুক- এটা আমাদের মত জুনিয়র ডাক্তারণের আগামী দিনের স্বপ্ন।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]