ঘাতক ব্যাধি এইডস : মৃত্যুই যার পরিণাম এইডস প্রতিরোধে ইসলাম

ঘাতক ব্যাধি এইডস : মৃত্যুই যার পরিণাম
কবির উদ্দিন আহমদ
'স্থলে ও পানিতে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়াইয়া পড়ে। আল্লাহ্ তা'আলা তাহাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাইতে চাহেন, যাহাতে তাহারা ফিরিয়া আসে।' (সূরা রূম : 81 ) “লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে, উহার নিকটেও যাইও না। তাহা প্রকাশ্যই হউক আর গোপনই হউক।' (সূরা আনআম : ১১৫)
'আমি কত জনপদের ধ্বংস সাধন করিয়াছি যাহার অধিবাসীরা ছিল পাপী এবং তাহাদের পর সৃষ্টি করিয়াছি অন্য জাতি।' (সূরা আম্বিয়া : ১১)
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না। যে কেহই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিবে তাহাকে তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করিবে। যদি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকিত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হইতে পারিত না।' (সূরা নূর : ২১) রাসূলে আকরাম (সা) বলেছেন, “যখনই কোন জাতি প্রকাশ্যে বেহায়াপনা ও ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে তখনই তাদের মধ্যে এমন ধরনের মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে যা ইতিপূর্বে কোন জাতিতে আসেনি।” (ইবনে মাযা)
নবী করীম (সা) বলেন, “যখন তুমি লজ্জা ত্যাগ করবে তখন যা ইচ্ছা তাই করতে পার।” (বুখারী-মুসলিম)
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা)-এর বর্ণনা মতে জানা যায় যে, নবী করীম (সা) একদা বাণী প্রদান করেন, “হে মুহাজির সম্প্রদায়! এমন পাঁচটি অভ্যাস রয়েছে, সেগুলো যেন তোমাদের মধ্যে পাওয়া না যায়, সে জন্য আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এগুলোর মধ্যে হচ্ছে 'অশ্লীলতা' । যখন কোন জাতির মধ্যে 'অশ্লীলতা' প্রকাশ পাবে তখন তাহাদের মাঝে প্লেগ ও বিভিন্ন প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করিবে, যা তাহাদের পূর্বপুরুষরা কখনো শোনেনি।” (আল- হাদীস, ফিরদাউস লিদ্দায় লামী, ৫ম খণ্ড)
রাসূলে আকরাম (সা) আরো বলেছেন, “অন্যায় দুষ্কর্ম হওয়ার পরও লোকেরা যদি তা নির্মূল করার চেষ্টা না করে তবে অচিরেই তারা সকলে আল্লাহর আজাব দ্বারা পরিবেষ্টিত হবে।” (তিরমিযী) আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন, “সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতের মুঠোয় আমার জীবন—তোমরা অবশ্যই ন্যায়ের আদেশ করবে এবং অন্যায় দুষ্কৃতিতে বাধা দেবে। যদি তা না কর তবে অচিরেই আল্লাহ তা'আলা তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি আজাব নাযিল করবেন। তারপর তোমরা তাকে ডাকবে কিন্তু তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়া হবে না।” (তিরমিযী)
রাসূল করীম (সা) বলেছেন, “আমার উম্মতের কিছু লোক কওমে লুতের অপকর্মে লিপ্ত হবে। যখন এরূপ হতে দেখবে তখন তাদের উপরও অনুরূপ আজাব আসার অপেক্ষা কর।” (তাফসীরে মা'আরেফুল কোরআন, চতুর্থ খণ্ড, পৃঃ ৮০৬-৮০৭)
আজ থেকে ১৪শ বছর পূর্বে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর দেয়া মানব জাতির জন্য সতর্কতামূলক কল্যাণকর বাণী নতুন করে বর্তমান বিশ্ববাসীদের প্রমাণ করে দিল, মানুষের কুৎসিত কর্ম ও বেহায়াপনা অর্থাৎ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড কত ভয়ঙ্করভাবে তাদের ধ্বংস ডেকে আনে।
পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যখনই কোন সম্প্রদায়, জাতি বা মানব গোষ্ঠিকে বিশেষ করে জ্ঞান দান করেছেন, সর্বদিক থেকে অভাবমুক্ত করে সম্পদশালী করেছেন বা অন্যান্য জাতি বা সম্প্রদায়ের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন, ঠিক তখনই তারা নানা ধরনের অন্যায় আচরণ, স্বেচ্ছাচারমূলক কর্মকাণ্ডসহ বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে, যার ফলে তারা সুস্থ চিন্তা-চেতনা সম্পন্ন মানবিক কর্মকাণ্ডগুলো নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সম্পন্ন করার পরিবর্তে অনিয়মতান্ত্রিক ও অমানবিক পন্থা অবলম্বনের কারণে ক্রমে ক্রমে তাদের মস্তিষ্ক বিকৃত রুচিতে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অন্যায় অপরাধ এবং মানবতাবিরোধী যত প্রকার কর্মকাণ্ড আছে, যা মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং যা মানব সভ্যতা তথা শান্তি-শৃঙ্খলাকে বিপর্যস্ত করে তোলে, সম্মিলিতভাবে তাই করেছে এবং একে অপরকে উৎসাহ প্রদান করেছে। যার দরুন দেখা যায় ঐ সমস্ত অঞ্চল, সম্প্রদায়, জাতি বা মানব গোষ্ঠীকে আল্লাহ পাক নানা রকমের আজগুবি রোগ, শোক, প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ বিভিন্ন ধরনের বালা মুসিবত দিয়ে ধ্বংস নতুবা বিপর্যস্ত করে দিয়েছেন। যার সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে পৃথিবীর বুকে রয়েছে বহু নিদর্শন এবং তাদের বিপর্যয়মূলক কর্মকাণ্ডের বহু ইতিহাস। মানুষ তার সৃষ্টির অতীত এবং ভবিষ্যৎ পরিণতি অর্থাৎ মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়ে শয়তানের প্ররোচনায় বিভিন্ন ক্ষতিকর কর্মে লিপ্ত থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে 'আছর' নামক সূরায় যুগের কসম করে বলেছেন :
যাহারা
“নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত এবং সেই ক্ষতির কবল হইতে তাহারাই মুক্ত, চারটি বিষয় নিষ্ঠার সহিত পালন করে। তাহা হইল ঈমান, সৎকর্ম, অপরকে সত্যের পথে আহ্বান করেন এবং সবরের উপদেশ দান করেন। "
যদিও সকল ধর্মেই অন্যায় অপরাধ অর্থাৎ মানবতাবিরোধী অশ্লীল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেয়া হয়েছে, একমাত্র ইসলাম ঐ সকল ব্যাপারে শুধু উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি—এর ফলে মানব সমাজ কি ধরনের বা কিভাবে অথবা কেন ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনে কিংবা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, তার বৈজ্ঞানিক যুক্তি বিচার বিশ্লেষণসহ মানুষের সামনে তুলে ধরেছে এবং মানব জাতি বা সমাজকে নিশ্চিত ধ্বংস কিংবা চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য প্রবল প্রতিরোধসহ দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
আল্লাহ পাক জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানব জাতির সকলকে সীমাবদ্ধ জ্ঞান প্রদান করেছেন, যাতে করে এক মানুষ অপর মানুষের দ্বারা বিভিন্ন দিক থেকে নানা বিষয়ে উপকৃত হতে পারে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বজ্ঞানী। তাঁর জ্ঞানের কোন সীমা-পরিসীমা নেই। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানব জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ জীবের সম্মান দিয়ে এবং পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর খলীফা বা প্রতিনিধি হিসেবে। আর এক এক জনকে দিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমূলক জ্ঞান, যাতে করে সম্মিলিতভাবে বিশেষ বিশেষ জ্ঞানপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা মানব সম্প্রদায় তথা জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণ সাধন করতে পারেন। ঐ সমস্ত বিশেষ জ্ঞানপ্রাপ্ত ব্যক্তিসহ বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণ যাতে করে শয়তানের প্ররোচনায় তাদের অর্জিত জ্ঞান, বুদ্ধি, চিন্তা, চেতনা বিকৃত, ঘৃণিত, অমানবিক অথবা সীমালংঘনকারী রূপে আত্মপ্রকাশ না করতে পারে এবং পথভ্রষ্ট না হতে পারে তার জন্য আল্লাহ পাক যুগে যুগে বহু নবী-রাসূল পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন তাঁর বিধি-বিধান সম্বলিত বাণী বা 'আসমানী কিতাব' দিয়ে। কিন্তু যখনই তারা আল্লাহ পাকের ঐ সমস্ত বিধি বিধান-সম্বলিত সাবধান বাণীকে অবজ্ঞা, অগ্রাহ্য অথবা অবহেলা করেছে, নবী- রাসূলদের সাথে বেয়াদবী করেছে, তাঁদেরকে অপমান কিংবা লাঞ্ছিত করেছে, তখনই ঐ সব জনগোষ্ঠির উপর নাযিল হয়েছে আল্লাহর গজবরূপে বিভিন্ন রকমের দুরারোগ্য ব্যাধি। শুধু তাই নয়, তাদের কার্যকলাপের ধরন অনুযায়ী নানা প্রকারের বালা মুছিবত দিয়ে তিনি ধ্বংস অথবা পঙ্গু করে দিয়েছেন ঐ সমস্ত অভিশপ্ত জনগোষ্ঠিকে, উন্মোচিত করে দিয়েছেন তাদের সভ্যতার আবরণে অসভ্য পৈশাচিক কর্মকাণ্ডগুলো—অতীত ইতিহাসে যার বহু নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে। এরপর এলো “আইয়ামে জাহেলিয়াত” বা “অন্ধকার যুগ” অর্থাৎ পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক যুগ। ঐ সময় সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের আচরণ এবং কার্যকলাপ এতই চরম নিকৃষ্টের পর্যায়ে পৌঁছেছিল যা পশুত্বকেও হার মানায়। মারামারি, খুনোখুনি, নগ্ন-নৃত্য, গান- বাজনা, মদ্যপান, জুয়া খেলা, সুদের কারবার, জেনা-ব্যভিচার, অন্যায়, অত্যাচার এবং অবিচারসহ যত ধরনের অমানবিক কাজ ছিল সবই মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, তারা ঐ সমস্ত সমাজবিরোধী কার্যকলাপকে কোনও অন্যায় বলেই মনে করত না। বরং গর্বের সাথে নির্লজ্জভাবে তাদের ইত্যাকার কার্যাদি চালিয়ে যেত। মানবতার যখন এমনি শোচনীয় অবস্থা, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক যুগ, গোটা মানব সম্প্রদায় যখন নিশ্চিত ধ্বংসের সম্মুখীন, ঠিক তখনই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানব জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পাঠালেন সর্ব যুগের শ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে। তিনি ছিলেন 'সাইয়্যেদুল মুরসালিন' 'সারা বিশ্বের রহমত' স্বরূপ। ফেরেশতা হযরত জিব্রাইল (আ)-এর মারফত তাঁর কাছে আল্লাহ পাঠালেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ কিতাব 'আল-কুরআন, যা মানব জাতির পরিপূর্ণ জীবন-বিধান। তাঁর পেয়ারা হাবীব সাবধান বাণী প্রচার করলেন বিশ্ববাসীর প্রতি পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে। বার বার সতর্ক করে দিলেন সমগ্র মানব জাতিকে তাদের জীবন যাত্রার সকল প্রকার কর্মকাণ্ড যেন অতীতের অভিশপ্ত জাতিগুলোর মত না হয়। কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দিলেন, যাতে মনগড়া বেপরোয়া উচ্ছৃংখল চিন্তাধারার মাধ্যমে কোনও সমাজ, দেশ ও জাতি পরিচালিত না হয়। তাহলে তাদের ভয়াবহ বিপদ, দুর্গতি এবং অধঃগতির কোনও সীমা থাকবে না।
আমরা বর্তমান বিশ্বের মানব সমাজ বিশেষ করে ইউরোপ আমেরিকার মত উন্নত দেশগুলোতে যত ধরনের ভয়ঙ্কর রোগ বালাই, অস্থিরতাসহ নানা রকমের দুর্ঘটনা, বালা-মুছিবত এবং ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হতে দেখছি তার কারণ অনুসন্ধান করলে স্পষ্টভাবেই দেখা যাবে যে, আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর নির্দেশিত পথে না চলা, তাঁদের আরোপিত বিধি-নিষেধগুলোকে অবহেলা করা এবং সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার নির্লজ্জ প্রচেষ্টারই ফল। আল্লাহ পাক অতীতের নাফরমান, সীমালংঘনকারী মানব গোষ্ঠীকে কোন্ কোন্ আচরণ ও কার্যের জন্য কি কি ধরনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করেছিলেন, তা সুস্পষ্টভাবে পবিত্র কুরআনে ব্যক্ত করেছেন। বর্তমানে বিশ্ববাসী আল্লাহ পাকের সকল প্রকার কঠোর হুঁশিয়ারী এবং সতর্কতামূলক বাণী ধৃষ্টতার সাথে উপেক্ষা করে শুধু বিদ্রোহী হিসেবেই চিহ্নিত হয়নি বরং সৃষ্টিকর্তার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ প্রদানের সমতুল্য অপরাধ করেছে। তাই তো আমরা সারা বিশ্বে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে দেখতে পাচ্ছি আতংকজনক হারে সামাজিক অবক্ষয়। তারা সভ্যতার মুখোস পরে সুশিক্ষার দাবীদার হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে নানা ধরনের অপকর্ম এবং তা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে এ অপকর্মের ফসল পৃথিবীর সমস্ত দেশে। ফলে সারা বিশ্বের সমাজ ব্যবস্থায় দেখা যাচ্ছে ধ্বংস এবং ভয়াবহ বিপর্যয়ের আভাস। এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশবাসীসহ সারা বিশ্ববাসীকে রক্ষা করতে হলে এ মুহূর্তে যা করা অতীব জরুরী, তা নিয়েই লেখা এ প্রবন্ধ ভয়ঙ্কর মৃত্যু এইডস থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র উপায়।
সারাবিশ্বের অধিবাসী আজ এইডস নামক এক ভয়ংকর সংক্রামক ব্যাধির ভয়ে প্রকম্পিত। এইডস আজ বিশ্বের চরম সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো এ রোগ নিরাময়ের কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। এ মরণ ব্যাধির কোনও প্রতিরোধক টিকা আবিষ্কারের সম্ভাবনাও এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত । বর্তমান বিশ্বের এ মারাত্মক ব্যাধি যে ভাইরাস-এর দ্বারা সংক্রমিত হয়, তার নাম “এইচ.আই.ভি” বা হিউম্যান ইম্যুনু ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস'। এ ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করার পর 'রক্তের টি-হেলপার শ্বেত কণিকাকে আক্রমণ করে ও তার সকল কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। মানুষের শরীরকে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করাই এ কণিকাগুলির অন্যতম প্রধান কাজ। ফলে এইডস সংক্রমণের কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলতে কিছু আর অবশিষ্ট থাকে না। আক্রান্ত ব্যক্তি এ জন্য ক্রমাগত অন্যান্য ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক কিংবা পরজীবী রোগজীবাণুর সহজ শিকারে পরিণত হয়। সাধারণ রোগ ব্যাধি মানুষকে সহজে কাবু করে ফেলে। এ সমস্ত রোগ যেগুলি সাধারণ ও প্রচলিত ঔষধের দ্বারা সহজে নিরাময়যোগ্য ছিল তা ক্রমান্বয়ে চিকিৎসার অতীত হয়ে পড়ে। তার ফলে পৃথিবীতে প্রচলিত সকল চিকিৎসা প্ৰচেষ্টাকে ব্যর্থ প্রমাণ করে আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং কোনও একদিন নিরতিশয় অসহায়ভাবে মারা যায়।
এইডস বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রোগ, যা ব্যক্তিবিশেষের অশ্লীল এবং অমানবিক কর্মকাণ্ডের পরিণতি। ইউরোপ ও আমেরিকায় রোগটির বিস্তার মূলত সমকামী পুরুষ ও নেশাকর দ্রব্যগ্রহীতাদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। আফ্রিকায় দেখা যায় সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে। এ রোগ নারী-পুরুষ-নির্বিশেষে আক্রমণ করে। অবৈধ যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় সবচেয়ে বেশী। মহিলারা পুরুষদের তুলনায় ১০% এইড্স সংক্রমণের ক্ষেত্রে বেশী ঝুঁকিপূর্ণ। সংসারে সাধারণত মহিলারাই পরিচারিকার কাজসহ সকল প্রকার কার্য করে থাকে। সুতরাং কেউ যদি এইডস আক্রান্ত হয় তবে গোটা পরিবারে ধ্বংস অনিবার্য। যে মহিলার এইডস্ হয়েছে অথবা যার দেহে এইডস ভাইরাস আছে তার গর্ভের সন্তানের মধ্যেও এইড্স-এর জীবাণু সংক্রমণের আশংকা থাকবে এবং সে জন্য তারও যে কোনও সময় এইড্স হতে পারে। এইচ.আই.ভি. আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত ৩ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এইড্স রোগীতে পরিণত হয়। একবার এইডস রোগ শনাক্ত করা হলে ঐ ব্যক্তির আয়ু উন্নয়নশীল দেশে ৬-১২ মাস এবং উন্নত দেশে ১-২ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে। শিশুদের মধ্যে যারা এইচ.আই.ভি. নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তাদের অনেকেরই এইড্স- এর উপসর্গ প্রথম বছরেই দেখা দেয় এবং বাকীরা ৮ বা ততোধিক বৎসরের মধ্যে আক্রান্ত হয়।
যৌন অপকর্মের মধ্যে সমকামিতাকেই চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এ ভয়ংকর রোগ হবার বা প্রসারের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সবচেয়ে লজ্জাকর ব্যাপার এই যে, আধুনিক সভ্যতার দাবীদার পাশ্চাত্য জগতের কোন কোন দেশে আইন করে সমকামিতাকে বৈধ করা হয়েছে কিন্তু দেরীতে হলেও এখন তারা বুঝতে পেরেছে এটি একটি অমানবিক এবং অশ্লীল কাজ; সমাজ এবং দেশ নিশ্চিত ধ্বংস বা বিপর্যয়ের সম্মুখীন। তাই আবার ইউরোপ এবং আমেরিকাসহ সকল দেশেই সমকামিতা পরিহার করার শ্লোগান শুরু হয়েছে। এখন 'এনাল সেক্স' বা সমকামিতায় উৎসাহী পাশ্চাত্য জগতে এনাল সেক্স-বিরোধী শ্লোগানের বাণী থাকে, “এমন কোন যৌনকর্মে অংশ নিও না যাতে তোমার বা তোমার সাথীর লিঙ্গ, যোনীপথ, মলদ্বার বা মুখ গহ্বর বিনষ্ট হতে পারে।” মোটকথা, মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় যে সব অপকর্মের বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের বাণী দ্বারা মানব জাতিকে আল্লাহ পাক এবং তাঁর রাসূল (সা) বারে বারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, আজ আসন্ন ধ্বংসের মুখোমুখি হয়ে মানুষ সেসব অনাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনমুখর হয়ে উঠেছে। কিন্তু শুধু গান গেয়ে, সভা সমিতি করে, বড় বড় বক্তব্য বা বিবৃতি দিয়ে মূল্যবান পোস্টার, লিফলেট লাগালেই এ আন্দোলনে জয়ী হওয়া বা মহাবিপদ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না বরং এ মহাবিপদ এবং বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে মানবতাবিরোধী সকল প্রকার অশ্লীল কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়তে হবে এবং এগুলোকে গুরুতর অন্যায় মনে করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, এইচ.আই.ভি. - আক্রান্ত ব্যক্তিদের বয়স ১৫-৫৯ এর মধ্যে। এর মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশী দেখা যায় ১৫-২০ বৎসর বয়সী তরুণ যুবকদের মধ্যে। তরুণ যুবকরাই জাতির মেরুদণ্ড, জাতির ভবিষ্যৎ চালিকাশক্তি। তাই এদের মাঝে এইড্স সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংসেরই ইঙ্গিত বহন করে। ইউরোপ আমেরিকায় অসংযত ও স্বেচ্ছাচারী যৌন অভ্যাসের প্রবণতা একদিকে যেমন এইড্স-এর দ্রুত বিস্তার ঘটাচ্ছে তেমনি সেখানে প্রতিরোধের ব্যবস্থাও চলছে ব্যাপকভাবে। আবার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এসব দেশের তুলনায় তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোতেই বিপদের আশংকা সবচেয়ে বেশী। এর কারণ অনুন্নত দেশের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সস্তায় যৌন বিনোদন, দারিদ্র্য ও অপুষ্টিজনিত দেহের প্রতিরোধ শক্তির দুর্বলতা, বহু ব্যবহৃত সুঁচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহারের প্রচলিত রীতি, পূর্ব পরীক্ষা ছাড়া রক্ত ভরণের প্রবণতা ইত্যাদি এইড্স-এর পক্ষে এ জাতীয় অনুকূল পরিবেশ রোগটিকে যে কোন সময় সমস্ত বাধা ডিঙিয়ে মহামারীর পর্যায়ে ঠেলে দিতে পারে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীর নাগরিকদের এইড্স সম্পর্কে সচেতন করার জন্য ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১৯৮৮ থেকে প্রতি বছর পয়লা ডিসেম্বর 'বিশ্ব এইডস দিবস' পালিত হয়। এ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তিনটি জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রথমটি হলো এইড্স ভাইরাস-এর সংক্রমণ প্রতিরোধ। দ্বিতীয়ত এ সংক্রমণের ব্যক্তিগত ও সামাজিক অভিঘাত কমিয়ে আনা এবং অতীতে এইডস-এর বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার ঐক্য সাধন। এ তিনটি ক্ষেত্রেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে নিরলস কাজ চলছে যাতে এইড্স-এর ধ্বংসাত্মক বিস্তার বেশিদূর অগ্রসর হতে না পারে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, এ ঘাতক ব্যাধির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার প্রধান উপায় হচ্ছে এইড্স প্রতিরোধ সংক্রান্ত যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা। পাশ্চাত্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে যৌনাচারে সংযত থাকা। অন্যথায়, যৌন সঙ্গী বা সঙ্গীনী এইড্স ভাইরাসের বাহক কি না সে সম্বন্ধে বিশেষভাবে নিশ্চিত হওয়া আর তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে পুরুষের পক্ষে কনডম ব্যবহার করা। অত্যন্ত ভালভাবে পরীক্ষা না করে কোন ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ অবশ্য পরিত্যাজ্য। এ ছাড়া জীবাণুমুক্ত সুঁচ ও ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যতীত ইন্জেকশন নেওয়া কখনই উচিত নয়। এমনকি এইডস আক্রান্ত মহিলাদের সন্তান ধারণ করা থেকেও বিরত রাখা। এইডস এখন একটি প্যানডেমিক সমস্যা। বিশ্বব্যাপী এ ব্যাধি শুরু থেকে ব্যাপক আকারে দেখা দেয়া পর্যন্ত প্রায় ১৩ মিলিয়ন নারী, পুরুষ ও শিশু এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত হয়েছে, যা এইডস রোগের কারণ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী ২০০০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন এবং এইডস রোগীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৮ মিলিয়ন হতে পারে। প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার লোক এইচ.আই.ভি-তে আক্রান্ত হচ্ছে।
এইচ.আই.ভি-তে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ৩ থেকে ১০ বৎসর পর্যন্ত অত্যন্ত নীরবে এইডস-এর জীবাণু বসবাস করতে থাকে, যা সে নিজেও টের পায় না। এ কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের অজান্তেই সুস্থ ব্যক্তির শরীরে এ ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়। মার্কিন চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এইডস একটি পুরনো ও জটিল যৌন রোগ এবং অবৈধ যৌন সম্পর্ক এ রোগ ছড়াতে সাহায্য করে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে লক্ষ লক্ষ লোক এইডস-এ আক্রান্ত। ভারতে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ৫০ লক্ষ লোকের রক্তে এইডস জীবাণু এইচ.আই.ভি. বহন করছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এইচ.আই.ভি. আক্রান্তের হার নতুনভাবে বেড়ে চলছে, যা সারা বিশ্ববাসীর আতংক এবং উদ্বেগের কারণ। চীন, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে এ মারাত্মক ঘাতক ব্যাধি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের ১৬৩টি দেশে দশ লাখ শিশুসহ ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখেরও বেশী এইডস রোগী রয়েছে। ১৯৮৬ সালের নভেম্বর-এ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে বিশ্বব্যাপী এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল ১ লাখ লোক এবং পরবর্তী ৫ বছরে প্রায় ৩০ লাখ লোক এইডস-এ মারা গেছে।
যদিও এইডস নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনের জোর প্রচেষ্টা চলছে, তবুও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে কার্যকরভাবে এইডস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের ব্যাপারে প্রতিটি দেশের জাতীয় এইডস কমিটিগুলোর সাথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। এ ভয়ংকর ব্যাধির মরণ ছোবল থেকে বিশ্বব্যাপী মানব জাতি বিশেষত তরুণ সমাজকে রক্ষা করার এখনই চরম ও পরম সময়। আর এজন্য সর্বপ্রথম জোরাল পদক্ষেপ নিতে হবে নৈতিক চরিত্র গঠনে। নৈতিক চরিত্রের প্রতি সুতীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। কারণ, নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন জাতি এবং সমাজকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। তারপর এইচ.আই.ভি. যাতে বিস্তার লাভ না করতে পারে সে ব্যাপারে সঠিক এবং সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। সবচেয়ে জরুরী হল তরুণ সমাজকে ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষাদান করতে হবে এবং ধর্মীয় বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে পালন করতে উৎসাহিত করতে হবে। তা হলে বিশ্বব্যাপী এ ভয়ঙ্কর রোগ থেকে মুক্তি পাবে এবং এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]