মায়ের দুধের উপকারিতা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ার উপকারিতা বুকের দুধের গুরুত্ব

মায়ের দুধের উপকারিতা
মোহাম্মদ রফিকউল্লাহ্ এমরান
মা! একটি মাত্র বর্ণের কি অনুপম, কি অতুলনীয় শব্দ। এক বর্ণের শব্দটি আমাদের দেহের প্রতিটি অণু-পরমাণুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। মা ও শিশুর মধ্যে যে সম্পর্ক পৃথিবীর মধ্যে বোধ করি এই সম্পর্কটিই সবচেয়ে বেশি নির্মল, নিষ্পাপ, নির্মোহ এক অনাবিল অনুভূতিসম্পন্ন সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পর্ক । পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার মা ও শিশু অধিকার সম্পর্কে সচেতন। বিশেষত বাংলাদেশের শিশুদের সার্বিক কল্যাণে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় শিশুনীতি প্রণয়ন করে। উক্ত শিশুনীতি বাস্তবায়ন-পদক্ষেপ সমূহের মধ্যে 'শিশুর জন্ম ও বেঁচে থাকা' শীর্ষক শিরোনামে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে- সকল শিশুর নিরাপদ জন্মগ্রহণ ও বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং পরিবার পরিকল্পনা সেবার মাধ্যমে শিশুর নিরাপদ জন্ম এবং বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা নেওয়া এবং প্রসব-পূর্ব ও প্রসব-উত্তর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কর্মজীবী মহিলাদের প্রসূতিকালীন ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেয়া ।

শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়েদের উদ্বুদ্ধ করা। কর্মজীবী মহিলারা যাতে তাদের কর্মস্থলে বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াতে পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
আজকের শিশু আগামী দিনের রাষ্ট্রীয় কর্ণধার। সুস্থ শিশু মানেই সুস্থ জাতি । বাংলাদেশের শিশুদের পুষ্টিহীনতা অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। শিশুদের সুস্থ, নিরাপদ ও সবলভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মায়ের দুধের কোনও বিকল্প নেই। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধনে মায়ের দুধই সর্বোত্তম ও নিরাপদ খাবার। সচেতন শিশুদের স্বাস্থ্যবান হয়ে গড়ে ওঠার জন্য মায়ের স্তন্য দানের সমতুল্য অন্য কোনও পন্থা নেই; এই উপায়ে মা ও শিশু উভয়েই স্বাস্থ্যের জন্য বিবেচিত হয় অনন্য শারীরিক মানসিক ভিত্তি; মায়ের দুধের সংক্রমণকারী শক্তি শিশুকে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং স্তন্য দান ও ঘন ঘন সন্তান না হওয়ার মধ্যে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।
মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর পবিত্র কালাম পাকের সূরা আল-বাকারায় সুস্পষ্ট উল্লেখ করেন, “মায়েরা তাদের সন্তানদের পুরো ২ বছর বুকের দুধ পান করাবে ....।” (আয়াত ২৩৩)। এমতাবস্থায় একথা অনস্বীকার্য যে, শিশুর প্রতি মায়ের স্তন্য দান রক্ষা ও উৎসাহিত করা শিশুদের সুষমভাবে বেড়ে ওঠার পক্ষে অন্যান্য সামাজিক ব্যবস্থার অন্যতম জরুরী অংশ এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
শিশুদের পুষ্টি ও সু-স্বাস্থ্যের জন্য শিশুকে মায়ের দুধ দেওয়া অব্যাহত রাখা এবং যেখানে এর ব্যত্যয় ঘটেছে সেখানে অভ্যাসটি ফিরিয়ে আনার ওপর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘ শিশু তহবিল (UNICEF) বেশ কয়েক বছর পূর্ব থেকে গুরুত্ব আরোপ করে আসছে। শিশুদের মায়ের দুধ দেয়ার নিয়ম পালনে উৎসাহ যোগান এবং যেসব সমস্যা এই অভ্যাসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তার প্রতিবিধান করা জাতিসংঘের এই দুই অংগ-সংগঠনের মা ও শিশু-স্বাস্থ্য এবং নানাবিধ কর্মসূচির অন্যতম অনুষঙ্গ। শিশুদের স্বাস্থ্য উন্নয়ন, স্বাস্থ্য রক্ষা ও পুষ্টিহীনতা দূর করার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও মাতৃদুগ্ধের প্রচার অভিযানে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন প্যাকেজ সার্ভিস দিচ্ছে এবং নানাবিধ কর্মসূচি পালন করে আসছে।
এই কর্মসূচিসমূহের মধ্যে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা অন্যতম। প্রতি বছরে ১ হতে ৭ আগস্ট বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করার উদ্যোগ নেয়। এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য “মায়ের দুধ জীবন ও শিক্ষার মান বাড়ায়।” মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ '৯৯-এর মূল লক্ষ্যসমূহ হলো : (ক) শিশুর দেহ মনের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে মায়ের দুধ খাওয়ানোর রীতি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও সহায়তা দানের জন্য গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা। (খ) সকল স্তরের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতিতে শিশু পালনের একমাত্র আদর্শ খাবার মায়ের দুধ এবং সেই সাথে শিশুকে সঠিকভাবে খাওয়ানোর তথ্য সংযুক্ত করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা । (গ) শিক্ষক-প্রশিক্ষকদের সহযোগিতায় সকল পর্যায়ের পাঠ্য বিষয়ে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সঠিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা। যেমন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা বিদ্যা, নার্সিং, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা ইত্যাদি।
(ঘ) শিশু মনের বিকাশ সাধনে ব্যবহৃত খেলনা ও অন্যান্য উপকরণ মায়ের দুধ খাওয়ানোর অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনের সাথে সংগতি রেখে তৈরি করার জন্য উৎসাহ প্রদান । ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ' যথাযথভাবে পালনের উদ্দেশ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এই উপলক্ষে সমগ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান- র্যালী, রচনা প্রতিযোগিতা, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, মায়ের দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান, সেমিনার, ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়।
পরিবার সমাজের একটি মৌল কাঠামো। আত্মীয়তার নিখুঁত বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রথম সোপান হলো পরিবার। সেই পরিবার থেকে সমাজ, জাতি তথা সমগ্র বিশ্ব শিশুদের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ চায়। তবে অর্থনৈতিক বিশেষ করে সম্পদের অপর্যাপ্ততার প্রেক্ষিতে পুষ্টিকর ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ও যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা বাধাপ্রাপ্ত হয়। সত্যি কথা বলতে কি, মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য তেমন একটা বিনিয়োগ করতে হয় না বললেই চলে। অথচ বুকের দুধ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। মাতৃ-দুগ্ধ দান, সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও সম মাধ্যমে পরিবার, নিয়োগকর্তা, স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানসহ সমাজ এবং সরকার বিভিন্নভাবে সাশ্রয় করতে পারে।
বিশ্ব মাতৃ-দুগ্ধ সপ্তাহ উদযাপনের মূল উদ্দেশ্যই হলো জাতীয় স্বাস্থ্য খাতে প্রধান বিনিয়োগ হিসাবে মায়ের দুধ খাওয়ানোর রীতি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও সহায়তাদানে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা । মায়ের দুধের অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা বলে শেষ করা যায় না। মায়ের দুধ সকল স্তরে অশেষ কল্যাণ বয়ে আনে। এর অর্থনৈতিক উপকারিতাসমূহের মধ্যে (ক) পারিবারিক (খ) নিয়োগকর্তা ও (গ) জাতির প্রেক্ষিতসমূহে সদম্ভভাবে পদচারণা করেছে। মায়ের দুধ পরিবারের জন্যে যে অশেষ কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে, সেগুলো হলো :
• কৃত্রিম শিশুখাদ্য এবং তা খাওয়ানোর আনুষঙ্গিক সামগ্রীর মত অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটার অপচয় রোধ করে।
০ মায়ের দুধ স্বাস্থ্য খাতে কম খরচ করেও অর্থ সাশ্রয় করছে। যেহেতু মায়ের দুধ পান করেছে এ ধরনের শিশুরা কম অসুস্থ হয়; কাজেই স্বাস্থ্য সেবা খাতে খরচ কমে যায়। বারবার শিশুকে হাসপাতালে / চিকিৎসকের কাছে নেওয়া-আনা, চিকিৎসকের ফি, ঔষধ এবং অসুস্থ শিশুদের সেবা দানে যে সময় ব্যয় হয় ইত্যাকার বিষয়াবলী।
০ কৃত্রিম শিশু-খাদ্য প্রস্তুত এবং তা ব্যবহারে আনুষঙ্গিক সামগ্রী বিশুদ্ধ করার পেছনে দুষ্প্রাপ্য বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানী ও সময় ব্যয় হয় তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
• কর্মজীবী মায়েদের সন্তানের অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতির হার কমে যায়, ফলে কর্মক্ষেত্রে মায়েদের উৎপাদানশীলতা বৃদ্ধি পায় ।
নিয়োগকর্তাদের জন্য যেসব উপকার বহন করে আনে সেগুলো হলো : ০ কর্মজীবী মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগ পেলে শিশুরা সুস্থ থাকে, মায়েরা কাজে অধিক মনোযোগী ও বিশ্বস্ত থাকে, অনুপস্থিতির হার কমে যায়, ফলে মায়েদের কার্য সম্পাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
যেসব নিয়োগকর্তা কর্মজীবী মায়েদের দুধ খাওয়ানোর জন্য যথাযথ সহায়তা দান করে তাদের দক্ষ কর্মী বাহিনী/ মানব সম্পদ হারানোর সম্ভাবনা কমে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠান অধিক লাভবান হয় । এবং মায়েদের দুধ সর্বোপরি একটি জাতির জন্য যে অশেষ কল্যাণ বয়ে আনে তাও নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে। মায়ের দুধ কৃত্রিম শিশুখাদ্য আমদানি, বিতরণ এবং ব্যবহার রোধ করে; ফলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয় না ।
নির্ভরযোগ্য তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশে বছরে ৭০০ মিলিয়ন লিটার মায়ের দুধ উৎপন্ন হয়। মায়েরা যদি সফলভাবে বুকের দুধ খাওয়ান তবে আরো ৪০০ মিলিয়ন লিটার বাড়তি বুকের দুধ উৎপন্ন হবে। ফলে বাৎসরিক মোট পরিমাণ দাঁড়াবে ১১০০ মিলিয়ন লিটার, যা আমদানিকৃত ৮৩৭ মিলিয়ন লিটার গুঁড়ো দুধের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি লিটার গরুর দুধের মূল্য যদি আমরা ২০ টাকাও ধরি তবে বাংলাদেশে বর্তমানে ১৪০০ কোটি টাকা মূল্যের বুকের দুধ উৎপন্ন হয়। প্রতি লিটার গুঁড়ো দুধের মূল্য ৪০ টাকা হিসাবে ১৪০০ কোটি টাকা মূল্যের মায়ের দুধের মূল্য দাঁড়ায় ৪,৪০০ কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের কৃষি খাতে বছরে মোট আয়ের ২১%।
মায়ের বুকের দুধ সম্পর্কে এ যাবৎ উদ্ঘাটিত বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, শিশুর পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য বুকের দুধের কোনও বিকল্প নেই। শিশু খুব তাড়াতাড়ি এবং খুব সহজেই বুকের দুধ হজম করতে পারে। সন্তান প্রসবে প্রথম দুই তিন দিন মায়ের বুকে ঘন ও হলুদ রঙের আঠালো একপ্রকার দুধ আসে যাকে বলা হয় 'শাল দুধ'। শিশুকে শাল দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে আমাদের দেশে অনেক ধরনের কুসংস্কার রয়েছে। অনেক মা একে পচা দুধ মনে করে ফেলে দেন, আবার অনেকে মনে করেন শাল দুধ খাওয়ালে শিশুর অমঙ্গল বা নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ হবে। অথচ শাল দুধ হচ্ছে নবজাতকের শ্রেষ্ঠ খাদ্য, জন্মের পর শিশুর পুষ্টির জন্য যা প্রয়োজন তার সবই রয়েছে শাল দুধে । শাল দুধে রয়েছে পর্যাপ্ত রোগ- প্রতিরোধক উপাদান, যা শিশুকে নানাবিধ রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করে। এই বিবেচনায় শাল দুধকে আমরা বলতে পারি শিশুর জন্য প্রকৃতি-প্রদত্ত প্রথম টিকা। তাই প্রতি মায়েরই উচিত জন্মের পর পরই শিশুকে বুকের শাল দুধ খাওয়ানো। বুকের দুধে রয়েছে- • শিশুর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সবচেয়ে উপযোগী আমিষ ও চর্বি • অন্যান্য দুধের চেয়ে অধিক পরিমাণে শর্করা, যা শিশুর জন্য অতীব প্রয়োজন । ০ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ। যে সকল শিশু বুকের দুধ খায় তাদের আলাদা করে কোন ভিটামিন খাওয়াতে হয় না । • বুকের দুধে যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন থাকে। এর প্রায় সবটাই শিশু হজম করতে পারে বলে বুকের দুধ খেলে শিশুরা রক্তশূন্যতায় ভোগে না। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে পানি, যে কারণে গ্রীষ্মকালেও শিশুকে আলাদা করে পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না ।
• বুকের দুধে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ লবণ ও খনিজ পদার্থ । ০ তা ছাড়া বুকের দুধে থাকে এক ধরনের এনজাইম, যা চর্বি হজম করতে সহায়তা করে।
• বুকের দুধে কোনও রোগ-জীবাণু থাকে না বলে এ দুধ খেয়ে শিশু কখনও অসুস্থ হয় না। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, যে সকল শিশু বুকের দুধ ছাড়া অন্য দুধ পান করে তারা প্রায়ই পেটের অসুখ, নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বুকের দুধে রয়েছে প্রতিরোধক বহু উপাদান যা শিশুকে রক্ষা করে নানাবিধ অসুখ-বিসুখ থেকে। বুকের দুধে যে সকল রোগ প্রতিরোধক উপাদান রয়েছে সেগুলো হলো-
• জীবাণু ধ্বংসকারী শ্বেতকণিকা বা লিউকোসাইটস ।
• রোগ প্রতিরোধক ইমিউনো গ্লোবোলিন বা এন্টিবডি। শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত এইসব এন্টিবডি শিশুকে রক্ষা করে রোগের সংক্রমণ থেকে ।
• বুকের দুধে থাকে 'বাই ফিডাস ফ্যাক্টর' নামে এক ধরনের পদার্থ, যা শিশুর পেটে বিশেষ এক ধরনের জীবাণু বা ব্যাক্টেরিয়ার বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।
• এই জীবাণুর নাম ল্যাক্টোব্যাসিলাস, যা পেটে অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে শিশুর ডায়রিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

• বুকের দুধে থাকে ল্যাক্টোফেরিন যা শিশুর পেটে লৌহ আয়রন বেঁধে রাখতে পারে, ফলে যে সকল জীবাণু লৌহ ছাড়া বাঁচতে পারে না, সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
শিশুরা জাতির অমূল্য সম্পদ। শিশুদের মায়ের দুধ পান করানো সমাজে মায়েদের এক অদ্বিতীয় অবদান। মায়ের দুধ এমনই অকল্পনীয় সম্পদ যে, মায়ের দুধ শিশুদের জীবাণু শিক্ষার মান বাড়ায়। বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের এই প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত, যৌক্তিক ও সময়োপযোগী। মায়ের দুধের বিকল্প নেই, এই বাস্তব সত্যটি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতে অনেক মায়েরাই জানেন না। আমরা অবশ্য আশাবাদী, বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালনের প্যাকেজ সার্ভিস মায়েদের এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের ইতিবাচক সাড়া জাগাবে । মায়ের দুধের উপকারে রয়েছে বহুমাত্রিকতা। মাতৃদুগ্ধ কেবল শিশুদের পুষ্টি বা শারীরিক বৃদ্ধিতে নয়, শিশুর মানসিকতা বিকাশের মাধ্যমে তাদের জীবন ও শিক্ষার মান বাড়ায়, দুই বছর অবধি শিশুর পুষ্টিহীনতার মত গুরুতর সমস্যা লাগবে না মায়ের দুধ খাওয়ালে। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও খাদ্যনালীর দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা থেকেও রক্ষা করে আমাদের অনেকেই হয়ত জানি না, মায়ের দুধে এমন ধরনের ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা কোনও পশুর দুধে থাকে না। শিশুর দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতেও মায়ের দুধ ঔষধের মতো কাজ করে। এমতাবস্থায় আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, মায়ের দুধ জীবন ও শিক্ষার মান বাড়ায়। মায়ের দুধের এই বহুমাত্রিক উপকারিতার কথা ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজকর্মী থেকে শুরু করে সকলেরই উচিত মায়েদের জানিয়ে দেওয়া। গুঁড়ো দুধ যে মায়ের দুধের বিকল্প হতে পারে না একথা বলার দায়বদ্ধতা শুধু চিকিৎসক সমাজের প্রতি ন্যস্ত করলেই চলবে না, আমাদের জাতীয় গরজেই এ দায়িত্ব আমাদের সকলের ওপর বর্তায়। এই বিষয়টিকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। উন্নত জাতির জন্য চাই সুস্থ মাতা। একমাত্র সুস্থ মাতাই উপহার দিতে পারে সুস্থ সন্তান। সন্তানের সুস্থতা, পুষ্টি বা স্বাভাবিক মানসিক বিকাশে মায়ের দুধের কোনও বিকল্প নেই।
সুতরাং শুধু বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রচারণায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের পূর্ণ স্বীকৃতি ও সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। মায়ের দুধ খাওয়ানোর সাথে নিবিড় ভালবাসা বা নিঃস্বার্থপরতা অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করা উচিত নয়। অধিকাংশ মা মায়ের দুধ খাওয়ানোকে বাঁকা চোখে দেখে। এটা বাঞ্ছনীয় নয়। পুষ্টি মানের বিচারের দিক থেকে মায়ের দুধের মূল্য অপরিসীম ! মায়ের বুকের দুধ পান করা যেমন প্রতিটি শিশুর জন্মগত অধিকার, তেমনি প্রতিটি মায়েরও অধিকার রয়েছে তাদের সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ানো। মায়ের দুধের উপযোগিতা ও ফলপ্রসূতা সম্পর্কে গোটা বিশ্বে ইতোমধ্যে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে অতি সাম্প্রতিক কালে দেশে দেশে গুঁড়ো দুধের বিরূপ তথা ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও আমাদের দেশের অনেক মা এখনও প্রত্যাশিত পর্যায়ে ওয়াকিবহাল হতে পারেননি। সফলভাবে মায়ের দুধ খাওয়ানো ধনী, সম্পদশালী কিংবা ভাগ্যবানদের বিলাসিতা নয়, বরং মায়ের দুধ খাওয়ানো সব মায়েরই ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালনে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি আমাদের সদাশয় সরকার যে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে তা যাতে কেবল আনুষ্ঠানিক গণ্ডির ভেতর সীমাবদ্ধ না থাকে, সে ব্যাপারে সর্বস্তরের জনসাধারণ স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে যার যার দায়িত্ব পালন করলেই এ দিবসটি যথাযথ গুরুত্ব লাভ করবে ও তাৎপর্যবহ হবে।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]