নিরামিষ সুসংবাদ বাচ্চাদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ নিরামিষ খাবার আমিল বতুল

নিরামিষ সুসংবাদ আমিল বতুল
মাছ গোশ্ত বাজার থেকে প্রায় উঠেই গেছে। একা আমার নয়, মধ্যবিত্ত প্রত্যেক পরিবারের একই দশা। আর্থিক টানা-পোড়েন, মাছ-গোশতের চড়া দাম সব মিলিয়ে শাকপাতা আর ডাল ভাত গিলতে হচ্ছে দিনের পর দিন। প্রায় দিনই নিরামিষ বা ডাল পাতে দিতে দিতে বিষণ্ন হয়ে ওঠে মায়ের চেহারা। কখনো বলেই ফেলেন, “দিনের পর দিন নিরামিষ খেয়ে খেয়ে তোদের শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আহা রে।' কেবল আমার মা নয়, প্রায় লোকেরই নিরামিষের প্রতি একটা অবহেলা রয়েছে। ভাষার ব্যবহারের বেলায় এটা টের পাওয়া যায়। আমরা যখন বলি 'জীবন নিরামিষ হয়ে গেছে' তখন জীবনের একঘেয়েমীরই ইংগিত করি। যেন গোত মাছের সাথে জড়িয়ে রয়েছে সব স্বাদ আহলাদ। কিংবা বাধ্য হয়েই নিরামিষী হচ্ছি বলে হয়ত এই নিচু ধারণা ।
আমিষ ছাড়া দেহ টিকতে পারে না, কথাটা সত্য। মাছ-গোশত বাদ দিলেই আমিষও বাদ পড়লো ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রাণীকূল পৃথিবীতে আমিষের একমাত্র উৎস নয় । উদ্ভিদ থেকে দেহ গঠনের জন্যে প্রয়োজনীয় আমিষ পাওয়া সম্ভব। সুতরাং নিরামিষ বলতে আমাদের ভাষায় মূলত উদ্ভিজ্জ খাবার-দাবার বোঝালেও আমিষের অনুপস্থিত বোঝায় না, আসলে নিরামিষেও আমিষ রয়েছে। অভাবে পড়ে নিরামিষী হওয়ার দায় পড়ে না পশ্চিমের শিল্পোন্নত দেশগুলোতে। সেখানে আমিষের বাড়-বাড়ন্ত সব সময়। তারপরও সেসব দেশের অধিবাসীরা প্রাণীজ আমিষত্যাগী হচ্ছে। পশ্চিমের একদল চিকিৎসক ও দেহ-বিজ্ঞানী মনে করছে মানুষের দৈহিক মঙ্গলের জন্যেই প্রাণীজ আমিষ-নির্ভরতা কমানো উচিত। আমার করুণাময়ী মায়ের মতোই অনেকেই জানেন না যে শুধু নিরামিষনির্ভর সুস্থ সবল দেহে জীবন যাপন করা সম্ভব ।
নিরামিষ খেলে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে। সাতটা দেশে খাদ্য ও হৃদরোগের তুলনামূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রাণীজ আমিষাহার যেসব দেখে বেশি সেখানে হৃদরোগের ছোবলও সর্বাধিক। খাবার পাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণীজ আমিষ জোটে ফিনল্যান্ডবাসীদের, হৃদরোগে মরেও তারা বেশি। এ তালিকার দ্বিতীয় সারিতে রয়েছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেভেন ডে এডভেনটিসটস নামের মার্কিন নাসারাদের একটা দল ধর্মীয় কারণেই গরু-মুরগী খায় না। গবেষণায় দেখা গেছে অন্যান্য মার্কিনীদের চেয়ে এ দলের লোকেরা হৃদরোগে ৫০ ভাগ কম ভোগে। শিল্পে সমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে জানা যায় চর্বিজাতীয় খাবারের চল কম, হৃদরোগে এদেশের লোক কম মরে।
মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রাণীজ আমিষ ঠেসে খাচ্ছেন যারা তাদের রক্তে নিরামিষাহারীদের চেয়ে উঁচু মাত্রার কোলেস্টেরল জমছে। আরো দেখা গেছে যে বিশেষ বিশেষ উদ্ভিদের আঁশ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ব্যাপারটা নিয়ে আরো বিশদ গবেষণা অবশ্য হচ্ছে।
ওজন কমানোর বেলায়ও নিরামিষ খাবারের জুড়ি নেই। দেহের ওজন মাত্রা ছাড়ালে হৃদরোগ, বহুমূত্র, রক্তর উঁচুচাপ এবং পিঠের সমস্যার শিকার হতে হয়। আমিষজীবী লোকগুলো নিরামিষ খাওয়া আরম্ভ করার পর ওজন কমতে এবং শরীর ভালো থাকতে দেখা গেছে। তবে পুষ্টি সমস্যার কাহিল এ দেশটায় ওজন বাড়তি মূলত উঁচুতলার মানুষের সমস্যা।
নিরামিষ ক্যান্সারের আশংকা কমায়। এক দশকের গবেষণায় জানা গেছে যে উঁচু মাত্রার প্রাণীজ চর্বি ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাদ্য শুধু হৃদরোগ ডেকে আনে না, মলাশয়, স্তন ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়। প্রাণীজ আমিষ গ্রহণের সাথে ক্যান্সারে ভোগার সম্ভাবনা অনেকগুলো ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। কোলেস্টেরল ও সম্পৃক্ত চর্বি যুক্ত (Saturated fat) খাবার বেশি খেলে হয়ত অস্ত্রে নৈসর্গিক ক্যান্সার উৎপাদক রাসায়নিক জমা হয়। এ জাতীয় খাবারে আঁশের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম বলে কোষ্ঠ পরিষ্কার হতে সময় নেয়। ফলে ক্যান্সার উৎপাদক রাসায়নিকসমূহের সাথে দেয় টিস্যুর দীর্ঘ সময় ছোঁয়াছুঁয়ি চলে। এসট্রজেন হরমোন স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার ত্বরান্বিত হয়। আর চর্বি ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার অস্ত্র ও দেহ-চর্বিতে এস্ট্রজেন হরমোন উৎপাদন বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে শালগম, বাঁধাকপি, ফুলকপি সহ কয়েক রকম তরিতরকারী খেলে দেহে ক্যান্সাররোধক এনজাইম উৎপাদন বাড়ে। নিউইয়র্কস্থ বাফলোর স্টেট ইউনির্ভাসিটির সোকজাল এন্ড প্রিভেনটেড মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ম্যাকসন গ্রাহাম পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা বাঁধাকপি পরিবারের তরি-তরকারী নিয়মিত খায় তাদের মলাশয় ও বায়ু ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেক কম। এই তরি- তরকারীর মধ্যে রয়েছে এমন একটা রাসায়নিক পদার্থ যা ক্যান্সার উৎপাদনকারী পদার্থের কাজকর্ম থামিয়ে দেয় । এরপরও কথা থেকে যাচ্ছে- দৈহিক গঠনের দিক থেকে মানুষকে কি গোশত- খোর হিসাবে পয়দা করা হয়নি ? আর দৈহিক তাগদ ও ক্ষমতার জন্য প্রাণীজ আমিষ কি অপরিহার্য নয় ?
আপনি শুনলে অবাক হবেন যে, দুটো প্রশ্নেরই এক জবাব- না। যদি সৃষ্টির প্রায় শুরু থেকেই মানুষ বহুভোজী অর্থাৎ গোশত মাছ-শাক-সব্জি খাচ্ছে। তবুও দাঁত চোয়াল, পরিপাকতন্ত্রসহ মানবদেহের বাদবাকী যন্ত্রপাতির গঠন ও কর্মকৌশল পরীক্ষা করে মনে হয় মানুষকে মূলত উদ্ভিদভোজী করে তৈরি করা হয়েছে। মানুষের ইতিহাসও এ কথার সাক্ষী। ইতিহাসের অধিকাংশ সময় মানুষ বেঁচে থেকেছে নিরামিষ খাবার খেয়ে। উন্নত কয়েকটা দেশের কথা বাদ দিলে দুনিয়ার বাকী অংশের আদম সন্তান মূলত নিরামিষাহারী হয়ে বেঁচে আছে। আর এসব তথ্য পরিবেশন করেছে দ্য আমেরিকান ডায়েটিক এসোসিয়েশন।
দেহের তাগদের কথা বলছেন ? ভুরি ভুরি পরীক্ষায় প্রমাণ মিলেছে যে আমিষ নয় বরং শস্য, শিম্বজাতীয় খাবার থেকে পাওয়া শর্করা দেহ পেশীর শক্তির যোগান দেয়। শুধু নিরামিষ খেয়ে শরীর তর-তাজা রাখতে হলে খাওয়া-দাওয়ার সময় একটু খেয়াল রাখলে ভালো ফল পাবেন । বেশির ভাগ প্রাণীজ আমিষই 'সম্পূর্ণ।' অন্যদিকে বেশির ভাগ উদ্ভিজ্জ আমিষই ‘অসম্পূর্ণ।' দেহের প্রয়োজন সঠিকভাবে মেটানোর জন্য চাই ‘সম্পূর্ণ' আমিষ । দুই বা তিনটা উদ্ভিজ্জ আমিষ মিশিয়ে নিলে 'সম্পূর্ণ' আমিষ তৈরি করা যায় ।
১. শস্যের (চাল গম ইত্যাদির) সাথে শিম্ব জাতীয় (ডাল, মটরশুটি, সীম, চীনাবাদাম) খাবার মিশিয়ে,
২. শিষজাতীয় খাবার বাদাম বা বীজজাতীয় খাবারের সাথে মিশিয়ে ৩. ডিম বা খামারজাত খাদ্যদ্রব্যের সাথে উদ্ভিজ্জ আমিষ মিশিয়ে সুফল পাবেন।
খাওয়ার সময় সাধ্যমত ক্যালোরির যোগান ঠিক রাখার চেষ্টা করবেন। না হলে আমিষ পুড়িয়ে দেহ স্বীয় কাজ কর্ম চালাতে থাকবে, ফলে দেহটিস্যুর পুনর্গঠন ও বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত উপাদানের ঘাটতি ঘটবে। পরিণামে রোগা ও দুর্বল হয়ে পড়তে হবে হয়ত।
দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের যোগানের জন্য প্রথমত বিভিন্ন ধরনের শাক-সব্জি ফলমূল খাবেন। তাতে কাজ না হলে বি-১২ গ্রহণ করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় বা শিশু পালনের সময় দেহে, আমিষ, ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা বাড়ে। এ সময় খাওয়া দাওয়ার বেলায় যথাসাধ্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত ।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]