আয়োডিন ঘাটতি : সমস্যা ও প্রতিকার আয়োডিনের ঘাটতি কেন হয় ? Iodine Deficiency in Bengali |

আয়োডিন ঘাটতি : সমস্যা ও প্রতিকার
দলিল উদ্দিন আহমদ
আয়োডিন মূলত একটি রাসায়নিক উপাদান। শরীরে থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য এর আবশ্যক হয়। গলার সামনের দিকে অবস্থিত থাইরয়েড গ্লাণ্ডের মাধ্যমে এই থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয়। থাইরয়েড হরমোন রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশে চলাচল করে। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক বিকাশ ও সক্রিয় রাখা এবং শরীরের তাপ সংরক্ষণে আয়োডিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানবদেহে যখন প্রয়োজনীয় আয়োডিন থাকে না, তখন দেহ চাহিদামাফিক থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে অসমর্থ হয়। ফলে দেহ আয়োডিনের অভাবজনিত নানা রকম রোগের কবলে পড়ে।
বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ আয়োডিনের অভাবে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। আয়োডিন ঘাটতির অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো গলগণ্ড । গলগণ্ড রোগটি এ দেশের মানুষের কাছে ঘ্যাগ নামে বহুল পরিচিত। সাম্প্রতিক এ জরিপ থেকে জানা যায়, দেশে পাঁচ লাখেরও বেশি লোক গলগণ্ড বা ঘ্যাগ রোগে আক্রান্ত । গলগণ্ড বা ঘ্যাগ হলে থাইরয়েড গ্লাণ্ডটি স্বাভাবিক আকারের চেয়েও অনেক বড় হয়ে যায়। আগেই উল্লেখ করেছি আয়োডিনের ঘাটতি থাকলে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন তৈরি হতে পারে না। থাইরয়েড হরমোনের এই অভাব পূরণের জন্য থাইরয়েড গ্লাণ্ডকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। ফলে এই গ্লাণ্ডটি ক্রমান্বয়ে আকারে বড়ো হয়ে যায়।
গলগণ্ড ছাড়াও আয়োডিনের অভাবে এ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগের শিকার হচ্ছে। প্রয়োজনীয় আয়োডিনের অভাবে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শিশু বিকলাঙ্গ ও মানসিক জড়তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এর অভাবে মহিলাদের গর্ভপাত হয়ে থাকে। গর্ভবতী মায়ের শরীরে আয়োডিনের অভাব থাকলে তার গর্ভস্থ সন্তানও আয়োডিনের অভাবজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হবে। আয়োডিন ঘাটতিজনিত মানসিক প্রতিবন্ধকতা অনেক জটিল আকার ধারণ করে। একটি শিশু দেখতে সুস্থ হলেও লেখাপাড়া বা কাজকর্মে মনঃসংযোগ করতে পারে না। পারিণামে তাকে দুঃসহ ব্যর্থতা ও গ্লানিময় জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। আয়োডিনের অভাবজনিত কারণেই এ রকম হয়ে থাকে। একজন মারাত্মক আয়োডিন সংকটগ্রস্ত গর্ভবতী মা হাবাগোবা বোবা-কালা এবং বামন সন্তানের জন্ম দেন। এই প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের আজীবন যন্ত্রণাবিদ্ধ কাল কাটাতে হয়। সমাজে আবর্জনা ও উচ্ছিষ্টের মতো বেঁচে থাকা ছাড়া তাদের আর কোনও গত্যন্তর থাকে না। আয়োডিনের অভাবগ্রস্ত শিশুরা নিদারুণ অপুষ্টিতে ভোগে এবং তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। আয়োডিন ঘাটতিজনিত ভয়াবহ আরেকটি রোগের নাম হাইপোথায়রডিজম। দেহে থাইরয়েড হরমোনের অভাব হলেই এ রোগটি দেখা দেয়। ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পারা, নিদ্রাহীনতা, আলসেমী, চামড়া শুকিয়ে যাওয়া এ রোগের বিশেষ লক্ষণ। অল্পবয়সী শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমশ মানসিক প্রতিবন্ধীতে পরিণত হয় ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত এক জরিপ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের শতকরা সত্তর জন মানুষের দেহে আয়োডিনের অভাব রয়েছে এবং এ ধরনের লোকের সংখ্যা প্রায় ৮কোটি । এক কোটি মানুষ দৃশ্যমান ও চার কোটি মানুষ অদৃশ্যমান গলগণ্ড বা ঘ্যাগের শিকার। উপরন্তু পাঁচ লক্ষ লোক মারাত্মকভাবে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হিসাবে সমাজের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে আছে। এ ছাড়া আয়োডিনের অভাবে গর্ভাবস্থায় শিশু মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বামনত্ব, বধিরত্ব, টেরা চোখ ইত্যাদি সমস্যা দিন দিন প্রলম্বিত হচ্ছে; শিশুদের চিন্তাশক্তি ও মেধার স্বাভাবিক বিকাশ ঘটতে পারছে না।
বাংলাদেশের সর্বত্রই খাদ্যে আয়োডিনের কমবেশি ঘাটতি রয়েছে। তাই আমরা মোটেই বিপদমুক্ত নই বরং বড়ো রকমের ঝুঁকির সম্মুখীন। আয়োডিন প্রাকৃতিকভাবে মাটি ও পানিতে পাওয়া যায়। যেসব প্রাণী ও উদ্ভিদ এই মাটি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে, তাদের মাধ্যমেও আয়োডিন পাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত ও ঘন ঘন বন্যার ফলে মাটি হতে এই আয়োডিন ধুয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যে আয়োডিনের এই অনাকাঙ্ক্ষিত সংকট দেখা দিয়েছে। আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যার সমাধান করতে হলে আমাদের খাদ্যে অবশ্যই বাড়তি আয়োডিনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর তা সম্ভব হবে প্রতিদিনের খাবারে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের মাধ্যমে। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন। বাজারে সারা বছরই কমবেশি সামুদ্রিক মাছ দেখা যায়। সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে বাজারে সামুদ্রিক মাছের সরবারাহ আরও বাড়ানো সম্ভব। আমাদের প্রাত্যহিক আয়োডিনঘাটতি পূরণে সামুদ্রিক মাছ হতে পারে অনিবার্য সহায়ক।
আয়োডিনের অভাবজানিত কারণে আমাদের জনগণের এক বিরাট অংশ শারীরিক ও মানসিকভাবে জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচিতে অবদান রাখতে পারছে না । আমরা যদি আমাদের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় আয়োডিনযুক্ত লবণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছকে ও অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তবে এদেশের বিপুল জনশক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের সন্ধান পাবে, দেশের মানুষের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে মেধা ও চিন্তাশক্তির স্ফুরণ হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে আমরা রাখতে পারবো গৌরবোজ্জ্বল স্বাক্ষর।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]