স্যানিটেশনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা হাইজিন ও স্যানিটেশন এর মধ্যে পার্থক্য

স্যানিটেশনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
আ.ন.ম. আবদুর রাজ্জাক
স্যানিটেশন বলতে কি বোঝায়
সুস্থ, সুন্দর ও রোগমুক্ত থাকার জন্য যে স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস অনুশীলন করতে হয় তাই স্যানিটেশন। আমাদের সামাজিক জীবনে স্যানিটেশনের যে কত গুরুত্ব রয়েছে তা বিস্তারিত আলোচনা না করলে বোঝা কঠিন। মূলত সৃষ্ট স্যানিটেশন ব্যবস্থা আমাদের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ বালাই থেকে মুক্ত রাখতে পারে, কায়েম হতে পারে একটি সুস্থ সুন্দর ও রোগমুক্ত সামাজিক ব্যবস্থা। আসুন এ বিষয়ে একটু ধারণা নেয়ার চেষ্টা করি।
যেমন :
ক. সকল কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার।
খ. স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার।
গ. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা।
ঘ. পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা ।
ক. সকল কাজে নিরাপদ পানির ব্যবহার : মানব দেহের ৬৫% পানি, পানির অপর নাম জীবন। এখন কিন্তু তা মরণ হিসেবেও দেখা যায়। আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ খাবার পানি হিসাবে নিরাপদ পানির ব্যবহার করলেও অজু, গোসল, থালা-বাসন, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ডোবা, খাল-বিল ও পুকুরের ময়লা পানি ব্যবহার করে থাকে। দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে পানি ও মলবাহিত রোগ ছড়ায়। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক পুকুরের পানি কিভাবে দূষিত হয়। অনেকেই যত্রতত্র মল ত্যাগ করে, পুকুরের পাড়ে খোলা বা ঝুলন্ত পায়খানা, বাড়ির উঠানে বাচ্চাদের মলত্যাগ ইত্যাদি বৃষ্টিতে বা বাতাসের সাথে পুকুরের পানিতে মেশে, তাছাড়া পুকুরে গরু-ছাগল গোসল করান, কাপড় কাচা ইত্যাদি করার ফলে পানি দূষিত হয়। এক জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশের ৬৫% মানুষ খোলা আকাশের নিচে যত্রতত্র মল ত্যাগ করে। হিসেব অনুযায়ী দৈনিক ২০-২৫ হাজার মেট্রিক টন মল খোলা আকাশের নিচে ত্যাগ করে থাকে সেই মল যায় কোথায় ? ঐ একই জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশের মানুষ জনপ্রতি প্রতিদিন ৫-১০ গ্রাম পায়খানা বিভিন্ন উপায়ে তথা পানি ও খাবারের মাধ্যমে খেয়ে থাকে। নিরাপদ পানি ব্যবহার না করায় পানি ও মলবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়ায় কেবল খাবার নয় রান্না বান্নাসহ গৃহস্থালীর সকল কাজে নিরাপদ পানির ব্যবহার করলে আমরা ৮০% ভাগ পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। নিরাপদ পানি অর্থ হলো রোগ জীবাণুমুক্ত পানি। তা-ই ব্যবহার করা দরকার।
নিরাপদ পানি পাবো কোথায়
• নলকূপের পানি।
০ ফুটানো পানি ।
• পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি দিয়ে বিশুদ্ধ করে ।
• ফিটকারী দিয়ে বিশুদ্ধ করে।
মনে রাখতে হবে সকল নলকূপের পানিই নিরাপদ নয়। এ ক্ষেত্রে নলকূপ থেকে পায়খানার দূরত্ব কমপক্ষে ৩০ ফুট হতে হবে, নলকূপের গোড়া পাকা থাকা এবং নলকূপের ভিতরে যেন পুকুরের পানি না ঢুকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। ফুটানো পানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ মিনিট ধরে পানি ফুটাতে হবে, তা না হলে সব ধরনের জীবাণুমুক্ত হবে না। বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি দিয়েই বিশুদ্ধ করতে হয়। খ. স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার : স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা বলতে বুঝি
১. যে পায়খানার মল দেখা যাবে না।
২. যার মধ্যে মশা, মাছি কটিপতংগ ঢুকতে পারবে না।
৩. যে পায়খানা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াবে না।
৪. যে পায়খানা কোন পানির উৎসকে দূষিত করবে না।
৫. যে পায়খানা পরিবেশ দূষিত করবে না।
৬. যে পায়খানা পরিবেশ, মাটি/ভূমি দূষিত করবে না।
গ. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা : নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। নখ ছোট রাখা, নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করা। খাওয়ার আগে এবং পায়খানার পরে হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ধোয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে কেবল নিজে স্বাস্থ্য পরিচর্যা করলেই হবে না, পরিবারের সবাইকেই স্বাস্থ্যসচেতন করে তুলতে হবে।
ঘ. পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা ঃ কোনভাবেই যেন পরিবেশ দূষিত না হতে পারে সে বিষয়ে যত্নবান হওয়া। পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে নিজে সচেতন থাকতে হবে, সমাজকে সচেতন করতে হবে। নিজে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করলেই হবে না, প্রতিবেশীকেও এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। তা না হলে প্রতিবেশীর খোলা পায়খানা থেকে রোগ জীবাণু এসে আপনাকে আক্রান্ত করে তুলতে পারে।
সুষ্ঠু স্যানিটেশনের অভাবে সাধারণত যেসব রোগ হয়
১. ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, যকৃতের প্রদাহ সহ বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়া ও পলিও রোগ ৷
২. টাইফয়েড, প্যারা টাইফয়েড।
৩. জনডিস ।
৪. খুজলী, পাঁচড়া, চুলকানীসহ বিভিন্ন চর্মরোগ।
৫. কৃমিরোগ। (বিভিন্ন প্রকার কৃমি) যেখানে-সেখানে মল ত্যাগ করলে কি হয়

১. বাতাস দূষিত হয়, ফলে বায়ুবাহিত রোগ হয় ।
২. পানি দূষিত হয়, এর দ্বারা পানিবাহিত রোগ হয়।
৩. মাটি দূষিত হওয়ার ফলে মাটিবাহিত রোগ হয়। ৪. খাদ্য দূষিত হয়ে খাদ্যবাহিত রোগ হয়।
৫. মাছির জন্ম হয় এবং মাছিবাহিত রোগ হয় ।
৬. দুর্গন্ধ ছড়ায় ও পরিবেশ নষ্ট করে।
৭. রোগ জীবাণু ছড়ায়।
স্যানিটারী ল্যাট্রিন পাবো কোথায়
সুষ্ঠু স্যানিটেশন ব্যবস্থার জন্যে স্যানিটারী ল্যাট্রিন এবং জলাবদ্ধ পায়খানার কোন বিকল্প নেই। এ ব্যবস্থা করার জন্য খুব দূরে যেতে হবে না, খুব টাকা পায়সাও ব্যয় করতে হয় না, কেবল ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এ ব্যবস্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী নিম্নের যে পদ্ধতিতে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
১. শক্ত মাটিতে গর্ত করে তার উপর বাঁশ দিয়ে ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করা যায়। ২. মটকা বা এ জাতীয় কোন কিছু দ্বারা ৩. রিং স্লাভ দেয়া ল্যাট্রিন যা থানা পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক বাজারজাত করা হয়। ৪. পাকা ল্যাট্রিন তৈরি করে।
সুষ্ঠু স্যানিটেশনের অভাবে কি কি প্রভাব পড়তে পারে • অসুখ বাড়ায়।
০ মৃত্যু বাড়ায়।
০ আয়ু কমায়।
০ অর্থনৈতিক অবনতি হয় ।
• সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি ব্যাহত করে।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
০ শ্রমশক্তি কমে যায়।
• সামাজিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।
নিম্নমানের স্যানিটেশন ও পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলে • রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি করে মৃত্যুহার বাড়ায়।
• রোগ বিস্তার লাভ করে।
• পরিবেশ দূষিত হয় ।
• পানি দূষিত হয়।
• পানি ও মলবাহিত রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়।
• মহামারী দেখা দেয়।
• স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়।
• স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যয় বৃদ্ধি পায় ।
০ প্রতি বৎসর ডায়রিয়ার মারা যায় ( ০-৫ বৎসরের) প্রায় দেড় লক্ষ শিশু। • প্রতি বৎসর ৩ কোটি ৬০ লক্ষ শিশু কৃমি রোগে আক্রান্ত হয়। • কৃমি রোগ প্রতি দিন ১৪ কোটি ১৪ লক্ষ টাকার খাবার নষ্ট করে।
০ প্রতি বৎসর কৃমি ও ডায়রিয়া রোগের প্রতিরোধের জন্য প্রায় ৭৯০৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ সব প্রতিরোধের উপায়
• রোগের বিস্তার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলা ।
• সুষ্ঠু স্যানিটেশন ব্যবস্থা জোরদার করা।
• সকল কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার করা।
০ স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানায় মল ত্যাগ করা।
• মলত্যাগের পর সাবান বা ছাই দিয়ে ভাল করে হাত ধোয়া ।
• খাওয়ার আগে সব সময় সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ।
০ নখ ছোট রাখা।
০ রান্নার আগে শাক-সবজি ভালভাবে ধুয়ে নেয়া।
• কাঁচা ফল-মূল ধুয়ে খাওয়া।
০ খাবার ঢেকে রাখা। মশা, মাছিপড়া খাবার না খাওয়া। হোটেলের রান্নাঘরে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখা ।
• কেবল নিজে এ সকল বিধিবিধান মানলে চলবে না, প্রতিবেশীকেও এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে, তাহলেই পানি ও মলবাহিত রোগ হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। স্যানিটেশন কার্যক্রমে ইমামদের ভূমিকা কেবল স্যানিটেশন নয় সামাজিক সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ইমামগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। সমাজে নেতা হিসাবে ইমামের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। তিনি যা বলেন তাঁর মুসল্লীগণ তা করতে সচেষ্ট হন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে জনগণকে কোনও কথা জানাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় এবং সময়ও লাগে অনেক। তাতেও সকল জনগণকে জানানো সম্ভব হয় না, কেননা এ দেশের মানুষ দরিদ্র এবং অশিক্ষিত, অথচ এই সংবাদ ইমামগণের মাধ্যমে অতি স্বল্প সময়ে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠিকে অবহিত করা সহজ। কারণ ইমাদের রয়েছে ফ্রি প্লাটফর্ম, যেখানে প্রতি শুক্রবার তাঁরা কথা বলে থাকেন। খুৎবার পূর্বে ইমাম সাহেবগণ এ সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করে তুলতে পারেন। তাহলে ব্যক্তি সমাজ ও জাতি উপকৃত হবে, আমাদের মসজিদগুলো আবার মসজিদে নববীর মত কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে, যার ফলে মসজিদকেন্দ্রিক সমাজ গঠিত হবে, ইমামদের মর্যাদা তথা নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
আমরা আশা করি “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ' মহানবী (সা) -এর এ বাণী সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য সম্মানিত ইমামগণ সচেষ্ট হবেন তা হলেই স্যানিটেশন কার্যক্রম জোরদার হবে। ঈমানের অঙ্গ 'পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা' আর স্যানিটেশন একই সূত্রে গ্রথিত দু'টি শাখা। এ বিষয়ে সমাজের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে সচেতনতা জাগ্রত হোক, দেশের সকল খোলা পায়খানায় এবং যত্রতত্র মল ত্যাগ বন্ধ হোক, বিদেশীরা যেন আর বলতে না পারে, “বাংলাদেশটাই কোটি খোলা পায়খানা”।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]