স্বাস্থ্য সংরক্ষণে প্রিয়নবী (সা)-এর নির্দেশনা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মহানবী (সা.)-এর ৬ নির্দেশনা

স্বাস্থ্য সংরক্ষণে প্রিয়নবী (সা)-এর নির্দেশনা
মাওলানা খন্দকার মুশতাক আহমদ শরীয়তপুরী
প্রিয়নবী (সা) মানব জীবনের প্রতিটি বিষয় ও প্রতিটি ক্ষেত্রের উপর মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতা নিয়েই ধরায় আগমন করেছিলেন। আর তাই তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রেই পূর্ণতা ও দক্ষতার স্বাক্ষরও রেখে গেছেন। রাসূলে পাক (সা)-এর দেয়া দিকনির্দেশনা যেমন পরকালীন মুক্তির গ্যারান্টি তেমনি ইহকালীন বিষয়াবলীতেও তাঁর (সা) দেয়া নীতিমালাই একমাত্র শান্তি ও স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা।
একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক, একজন আদর্শ সমাজ সংস্কারক, একজন আদর্শ সমরবিদ, একজন আদর্শ আইনবিদ হওয়ার পাশাপাশি প্রিয়নবী (সা) ছিলেন একজন আদর্শ স্বাস্থ্যবিদ। সুস্বাস্থ্য গঠন ও তা সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রিয়নবী (সা)-এর দেয়া স্বাস্থ্য-নীতিই মানব দেহ ও মানব স্বাস্থ্যের যথার্থ গঠন, সংরক্ষণ ও তার অগ্রগতি সাধন করতে পারে।
এ যাবৎ স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা যেসব স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করেছেন তার কোনটাই প্রিয়নবী (সা)-এর দেয়া স্বাস্থ্যবিধানের সাথে বিরোধপূর্ণ নয় বরং তারই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। এরপরও বিরোধপূর্ণ কিছু থেকে থাকলে আমরা বলবো তা যথার্থ স্বাস্থ্যনীতি নয় বরং তাতে ভ্রান্তি ও গলদ রয়েছে। মানবদেহ সৃষ্টির উপাদানসমূহের মধ্যে প্রধানত যেসব উপাদানের আলোচনা করা যায় তা হলো পানি, মাটি, বায়ু এবং অগ্নি। এগুলোকে বিশ্লেষণ করলে এর প্রতিটির মাঝেই ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের উপাদান পাওয়া যায়, যেমন পানির মধ্যে রয়েছে 'হাইড্রোজেন' ও 'অক্সিজেন'। হাইড্রোজেন কার্বন জাতীয় উপাদানের সাথে মিলে কার্বো হাইড্রেটের সৃষ্টি করে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিঃশ্বাসের সাথে আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকি, এ অক্সিজেন রক্তকে শোধন করে এবং বিশুদ্ধ রক্ত শরীরে প্রবাহিত করে মানবদেহের কার্যক্ষমতা এনে দেয়।
মানবদেহের চারটি উপাদানের মধ্যে মাটিই হচ্ছে সর্বপ্রধান। মাটি থেকেই মূলত এ মানব দেহের সৃষ্টি। এ ব্যাপারে প্রিয়নবী (সা)-এর ইরশাদ হচ্ছে ঃ `সমস্ত মানুষ আদম সন্তান, আর হযরত আদম (আ) মাটি থেকেই সৃষ্ট। (সগীর) প্রিয়নবী (সা)-এর এ বাণী বর্তমান বিজ্ঞানীদের বক্তব্য দ্বারাও স্বীকৃত, যেমন বিজ্ঞানের গবেষণামতে মাটির মধ্যে যেসব উপাদান রয়েছে তা হচ্ছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, কোবাল্ট, নিকেল, ফসফরাস প্রভৃতি। শরীর বিজ্ঞানীরা মানব দেহ বিশ্লেষণ করে যেসব উপাদন খুঁজে বের করেছেন তা অবিকল মাটিরই উপাদান। অর্থাৎ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, কোবাল্ট, নিকেল, ফসফরাস।
আজ থেকে চৌদ্দ শতাধিক বছর পূর্বে প্রিয়নবী (সা) মানব দেহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে তথ্য দিয়ে গেছেন, বর্তমান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের যুগে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তা বাস্তব প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞানীদের অনেকে হয়েছেন বিস্মিত, আবার অনেকে হতভম্ব। বিস্ময়পূর্ণ এসব তথ্য প্রদানের কারণে দেহবিজ্ঞানীরা প্রিয়নবী (সা)-কে একজন সেরা স্বাস্থ্যবিদ ও শরীরবিজ্ঞানী রূপে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। আর এটাই তো স্বাভাবিক, কারণ মানবদেহের স্রষ্টা মহান আল্লাহ। তাই স্রষ্টাই সৃষ্টির উপকরণ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত । আর মহানবী (সা) হলেন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে প্রেরিত শ্রেষ্ঠ রাসূল যার নিকট মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বাণী অবতীর্ণ হয়েছে, যিনি মি'রাজ রজনীতে মহান আল্লাহর সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছেন। সুতরাং মানব দেহ ও তার আনুসঙ্গিক যে কোনও ব্যাপারে মহানবী (সা)-এর দেয়া নীতিমালাই একমাত্র সঠিক ও নির্ভুল নীতিমালা । স্বাস্থ্য গঠন
স্বাস্থ্যকে সুস্থ সুঠাম করে গঠনের জন্য প্রিয়নবী (সা) যেসব নীতিমালা ও বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন তার মধ্যে একটি হলো অধিক ভোজন থেকে বিরত থাকা । অধিক ভোজন শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরই নয় বরং ডাক্তারী মতে অধিক ভোজনের কারণে অন্তত ৬/৭ ধরনের রোগ জন্ম নিয়ে থাকে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে সতর্ক করা হয়েছে এভাবে : “তোমরা খাও এবং পান কর, তবে অপব্যয় (প্রয়োজনের অধিক প্রয়োগ) করো না (সূরা আরাফ : ৩১)। হাদীস শরীফের একটি বর্ণনা রাসূলে আকরাম (সা) ইরশাদ করেন : 'তোমরা অধিক ভোজন থেকে মহান আল্লাহর দরবারে পানাহ চাও (কামেল লি ইবনে আদী)।
হাদীসে অপর এক বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছে :
“তোমরা উদর পূর্তি করে ভোজন করো না, কেননা তাতে তোমাদের অন্তরে আল্লাহ পাকের আলো নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। (বুখারী)
অনুরূপভাবে বায়হাকীর এক বর্ণনায় অধিক ভোজন থেকে বারণ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে : “অতিরিক্ত ভোজন দুর্ভাগ্যজনক। (বায়হাকী)
একথা সর্বজনস্বীকৃত যে, দেহের ক্ষয় পূরণের জন্য ও তার উন্নতির জন্যই আমরা আহার করে থাকি। তবে এ আহার করারও একটি স্বাস্থ্যসম্মত নীতি রয়েছে। যে নীতিমালা লঙ্ঘিত হলে সে আহারই শরীরের ক্ষয় পূরণের পরিবর্তে তাতে বরং ঘাটতি এনে দেবে। শরীরে জন্ম নেবে নানা রোগের উপকরণ। প্রিয়নবী (সা)-এর এ অমূল্য বাণী আধুনিক বিজ্ঞানীরাও যথার্থ বলে স্বীকার করেছেন। আধুনিক বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হচ্ছে, অধিক ভোজনের ফলে অগ্নিমান্দ্য, পেট ফাঁপা, বদ হজম, ডাইরিয়া, আমাশয় প্রভৃতি রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, আধুনিক বিজ্ঞানীরা বহু পূর্বে প্রদত্ত রাসূলে পাক (সা)-এর স্বাস্থ্যবিধির সাথে একাত্মতা প্রদর্শন করেছেন মাত্র। সুস্থতা রক্ষা ও সুস্থ স্বাস্থ্য গঠনে নবীজী (সা)-এর এ বিধান যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা এখন আর বুঝতে কারো বাকি নেই। স্বাস্থ্যকে সুঠাম ও সুস্থভাবে গঠন ও তার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে 'পানি' একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পানিকে জীবের প্রাণ (পানির অপর নাম জীবন) বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কেননা মানবদেহের শতকরা নব্বই ভাগই হচ্ছে পানি। পানি একটি অতি মূল্যবান খাদ্য উপাদান, যার মাধ্যমে খাদ্যবস্তু তরল এবং তাঁর পরিপাক ক্রিয়ার জন্য তা সহায়ক হয়। এ ছাড়া দূষিত দ্রব্য নির্গমন ও রক্ত প্রবাহের ক্ষেত্রেও পানি খুব গ্রহণযোগ্যভাবেই কার্যকর, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রিয়নবী (সা) পানি পান করার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। সাথে সাথে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দান করতেও তিনি ভোলেননি। হাদীস শরীফের একটি বর্ণনা বিবৃত হয়েছে, ঠাণ্ডা ও সুমিষ্ট পানি হযরত (সা.)- এর কাছে ছিল সর্বাপেক্ষা অধিক প্রিয় (তিরমিযী)।
মহানবী (সা) পানির বিশুদ্ধতা ও পানি ব্যবহারের ব্যাপারে যে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দান করছেন তা বর্তমান বিজ্ঞানীদেরকেও বিস্মিত করে দিয়েছে। হযরত (সা) ইরশাদ করেছেন : ‘যে পানির রঙ, গন্ধ ও স্বাদ তিনটিই বিকৃত হয়ে গেছে, সে পানি দ্বারা কোন কাজ করা বা করতে দেয়া উচিত নয় (আবু দাউদ)।
প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ব্যক্ত করা রাসূলে পাক (সা)-এর এ বাণীর সাথে একাত্মতা পোষণ করে দেহ বিজ্ঞানীরাও একই মত পোষণ করেছেন। তাঁরা বিশুদ্ধ পানির পরিচয় দিয়েছেন এভাবে স্বচ্ছ, বর্ণহীন, গন্ধহীন এমন পানি যার মাঝে কোন ভাসমান জৈব অথবা অজৈব পদার্থ থাকে না এবং যাতে কোন রোগ-জীবাণু নেই এরূপ প্রকৃতির পানিকেই Hyginically Pure Water বা স্বাস্থ্যসম্মত বিশুদ্ধ পানি বলা হয় । (বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ (সা) পৃ. ২০৬)
যে পাত্রে পানি রাখা থাকে পানি পান করার সময় তার মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতেও নিষেধ করেছেন প্রিয়নবী (সা)। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে :
“প্রিয়নবী (সা) পানির মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতে এবং তার মধ্যে ফুঁক দিতে নিষেধ করেছেন (মুস্তাদরাকে হাকিম)।
স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রিয়নবী (সা)-এর বাণী একটি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা । এ ক্ষেত্রে বর্তমান বিজ্ঞানীরা তাঁদের দীর্ঘ গবেষণার ফসল হিসেবে যা বর্ণনা করেছেন তা প্রিয়নবী (সা)-এর উপরোক্ত বাণীর ব্যাখ্যামাত্র। পানি বিশেষজ্ঞ বা পানি বিজ্ঞানীদের মতে প্রাণীর নিঃশ্বাস ও ফুঁকের সাথে কার্বনডাই অক্সাইড বের হয় আর এ কার্বনডাই অক্সাইড যখন পানির সাথে গিয়ে মিশ্রিত হয় তখন তা থেকে কার্বলিক এসিড তৈরি হয়। আজ থেকে চৌদ্দ শতাধিক বছর পূর্বে নবীজীর (সা) এ জাতীয় রাসায়নিক তথ্যাদি আজকের রসায়নবিদদেরও যে হতভম্ব করে ।
স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দুধ একটি প্রয়োজনীয় উপকরণ। অন্যান্য পানীয় দ্রব্যের চাইতে প্রিয়নবী (সা) দুধের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। দুধ এমন এক স্বাস্থ্যকর পানীয় যার মাঝে শরীর ও স্বাস্থ্য গঠনের সব রকম উপাদান বিদ্যমান। দুধ পানের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রিয়নবী (সা) ইরশাদ করেন- “তোমাদের মধ্য হতে কেউ যখন দুধ পান করবে তখন সে বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দাও এবং এর চেয়ে আরো বৃদ্ধি করে দাও। কারণ দুধ ছাড়া অন্য কিছুই আহার ও পানীয়ের ক্ষতি পূরণ করতে পারে না।” (তিরমিযী, দাউদ)
হাদীস শরীফের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, প্রিয়নবী (সা) বলেছেন আবু “উত্তম দান হলো একটি দুধের উটনী বা একটি দুধের বকরী যা সকালে এক পাত্র দুধ দেয় আবার সন্ধ্যায় আরেক পাত্র দুধ দেয়।” (বুখারী শরীফ)
প্রিয়নবী (সা)-এর উপরোক্ত বক্তব্যসমূহ থেকে এ কথা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, তিনি উম্মতদের দুধ পানের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন এবং শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য দুধ যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তাও এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় ।
এবার আমরা দেখতে চাই দুধ সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্যবিদদের বক্তব্য কি ? আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা দুধ নিয়ে গবেষণা করে যে মতামত ব্যক্ত করেছেন তা নিম্নরূপ- শরীর গঠনের জন্য যত প্রকার উপাদান প্রয়োজন তার সবটাই দুধের মধ্যে বিদ্যমান। এতে আমিষ (Protein), শর্করা (Sugar), স্নেহ জাতীয় পদার্থ (Fat), ভিটামিন (Vitamin), ধাতব লবণ (Mineral salts) ও পানি (Water) ইত্যাদি সহ আরো ছয় ধরনের উপাদান রয়েছে। এ কারণেই সুস্থ-অসুস্থ, যুবক-বৃদ্ধ-শিশু, সবল- দুর্বল নির্বিশেষে সকলের জন্যই প্রযোজ্য দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ফসফরাস রয়েছে। এ কারণেই দুধের নাম দেয়া হয় আদর্শ খাদ্য। বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ (সা) ১/২০৮]
বিজ্ঞানের এ গবেষণা মহান আল্লাহ ও প্রিয়নবী (সা)-এর দেয়া তথ্য অতিক্রম করে নতুন কিছু দিতে পারেনি বরং বলা যায় যে তাদের বক্তব্য কুরআন হাদীসের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করেছে মাত্র, পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে যা বলা হয়েছে :
“তোমাদের জন্য চতুষ্পদ প্রাণীর মাঝে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, আমি তোমাদের পান করিয়ে থাকি তাদের উদরস্থিত বস্তুসমূহের মাঝে গোবর ও শোনিতের মধ্য হতে বিশুদ্ধ দুগ্ধ, যা পানকারীদের জন্য উপাদেয়।” (সূরা নাহাল : ৬৬)
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রিয়নবী (সা) আরো যেসব নির্দেশনা দান করেছেন, তার মধ্যে একটি হলো তিনি মদ বা মাদক দ্রব্য সেবন করতে কঠোরভাবে বারণ করেছেন প্রিয়নবী (সা) ইরশাদ করেন : “মদ (মাদক দ্রব্য) হলো একত্রে অনেক গুনাহ বা অপরাধের সমন্বয় সাধনকারী।” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ) মদ বা মাদক দ্রব্যের ব্যবহার সম্পর্কে নবীজী (সা) আমাদের পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর যে বাণী শুনিয়েছেন তা হলো মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন : “(হে নবী!) লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য (সাময়িক ফুর্তি উপভোগের) কিছু ফায়দা রয়েছে, তবে এসবের পাপ ও ক্ষতি এর ফায়দা অপেক্ষা অনেক গুণ বড়।” (সূরা বাকারা : ২১৯)
উপরোক্ত বিধানের আলোকে প্রিয়নবী (সা) মদ পানকে হারাম ঘোষণা করেছেন । আমরা দেখতে পাই, মদ্য পানকারী যে শুধু সমাজকেই কলুষিত করে তাই নয় বরং মদ পান মানবদেহের অপূরণীয় ক্ষতিও সাধন করে থাকে। এটি সাময়িকভাবে কিছু আনন্দ- ফুর্তি উপভোগের উপকরণ হলেও এর দ্বারা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলো একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ফলে মদ্যপানকারী তার দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, তার জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়ে যায়, কুকর্মের নেশায় সে পাগল হয়ে যায়, মা, ভাই, বোন, বন্ধু-বান্ধবের কোনও ভেদাভেদ তার কাছে থাকে না, যার তার সর্বনাশ ঘটাতে সে কোনরূপ দ্বিধা বোধ করে না। এ কারণেই প্রিয়নবী (সা) মদ্যপানকে অনেক প্রকার পাপ বা গুনাহের সমষ্টি বলে আখ্যায়িত করেছেন। . মানবদেহ সংরক্ষণে এবং সুস্থ-স্বাস্থ্য গঠনে পোশাক-নীতির অনুসরণের গুরুত্বও অপরিসীম। যাতে শীত-গ্রীষ্ম, ঝড়-বৃষ্টি, উষ্ণতা আর্দ্রতা দেহের ক্ষতি সাধন করতে না পারে এ জন্য পরিমার্জিত ও যুগোপযোগী পোশাকের ব্যবহার প্রয়োজন।
আজ থেকে চৌদ্দ শতাধিক বছর পূর্বে প্রিয়নবী (সা) তদানীন্তন নগ্ন, অসভ্য ও বর্বর জাতিকে পোশাক-পরিচ্ছদে আচ্ছাদিত হওয়ার শিক্ষাদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত পোশাক পরিধানের প্রতিও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। নবীজী (সা) ইরশাদ করেছেন : “টার যে অংশ পরিধেয় বস্ত্রে আবৃত থাকবে তা জাহান্নামে যাবে।” (বুখারী শরীফ)
হাদীসের মর্ম হচ্ছে, পরিধেয় বস্ত্র টার উপরে রাখতে হবে। টার নিচে ঝুলিয়ে দিয়ে বস্ত্র পরিধান করা হলে তা হারাম এবং তার পরিণতিতে পরিধানকারীকে পরকালে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে । উপরোক্ত হাদীসে পায়ের টার নিচে কাপড় পরিধান করতে বারণ করা হয়েছে, কেননা পায়ের টার নিচে কাপড় ঝুলে থাকলে রাস্তার ধূলোবালি, ময়লা আবর্জনা, মল-মূত্র ইত্যাদি কাপড়ে লেগে যাওয়ার আশংকা থাকে। আর এসব ময়লা-আবর্জনার সাথে নানা রোগের জীবাণু মিশে থাকে। এ রোগ জীবাণু ও ময়লা পদার্থ কাপড়ের সঙ্গে মিশে হাত পায়ের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে, এমনকী পেটের মধ্যে ঢুকে পড়ারও সুযোগ পায়। এ রোগ-জীবাণু পেটে ঢুকে পড়লে বা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লে কি ক্ষতি হয় তা আর ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলা লাগে না ।
প্রিয়নবী (সা) দাড়িকে লম্বা করে রাখতে বলেছেন এবং তা কাটতে বারণ করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে গোঁফকে তিনি খাটো করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। নবীজী (সা)-এর নির্দেশ নিম্নরূপ : “তোমরা (তোমাদের ইচ্ছাধীন বিষয়গুলোতে) মুশরিকদের ব্যতিক্রম কর, তোমরা দাড়িকে লম্বা করে রাখ আর গোঁফকে খাটো কর।” (বুখারী- মুসলিম)
রাসূলে আকরাম (সা)-এর এ অমূল্য বাণী একদিকে যেমন ধৰ্মীয় বিধান, অপরদিকে তা স্বাস্থ্য গঠন ও সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়, যা বর্তমান স্বাস্ত্যবিজ্ঞানীরাও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, কেননা দাড়ি না রেখে যদি বারবার রেজার-ব্লেডের মাধ্যমে তা শেভ করে ফেলা হয় তবে তার ফলে স্নায়ুমণ্ডলী আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে, চেখের জ্যোতি কমে যায় এবং চেহারা ও মুখাবয়ব নষ্ট হয়। এ ছাড়া দাড়ি লম্বা রাখার ফলে বায়ু সরাসরি ফুসফুসে আঘাত করতে পারে না বরং দাড়ির ফলে বায়ু বাধাগ্রস্ত হয়ে ধীর গতিতে তার সুফল ফুসফুসে পৌঁছাতে পারে, এর দ্বারা ফুসফুস সুরক্ষিত থাকে। অপর দিকে গোঁফ খাটো করে রাখতে বলা হয়েছে। কেননা গোঁফ লম্বা থাকলে তাতে ধূলা-বালি, ঘাম ও দূষিত রোগজীবাণু লেগে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক, যা মুখের খুব কাছাকাছি হওয়ার কারণে পানীয় পদার্থের সাথে খুব সহজেই পাকস্থলিতে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের সমূহ ক্ষতি সাধন করতে পারে। এ ছাড়া নাকের ছিদ্রপথে শরীরের অভ্যস্তর হতে কার্বনডাই অক্সাইড ও অন্যান্য দূষিত গ্যাস ইত্যাদি নির্গত হয়ে থাকে, যা গোঁফ বড় থাকলে তাতে আটকে থাকা ধূলাবালি ও ঘামের সাথে মিশে বিষাক্ত জীবাণুতে পরিণত হয়। এসব জীবাণু পানি কিংবা অন্য কোনও তরল পদার্থ বা পানীয় পান করার সময় তার সাথে মিশে পাকস্থলিতে প্রবেশ করে মারাত্মক রসায়নিক ক্রিয়া সংঘটিত করে থাকে, গোঁফ সংক্রান্ত উপরোক্ত নির্দেশ নবীজী (সা)-এর স্বাস্থ্য সচেতনতা ও এ ব্যাপারে বিশেষ পাণ্ডিত্যের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
স্বাস্থ্য সুগঠন ও সংরক্ষণের জন্য একদিকে যেমন শারীরিক শ্রমের প্রয়োজন অপরদিকে প্রয়োজন পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণও অপরিহার্য। কেননা শারীরিক শ্রম না করা হলে শরীরের চর্চা হয় না, ফলে তা সুস্থ ও সবল হতে পারে না বিধায় শরীর চর্চার জন্য শারীরিক শ্রম অপরিহার্য। আবার প্রয়োজনীয় বিশ্রাম গ্রহণ না করে শুধু শ্রম দিতে থাকলে একটানা শ্রমের ধকল সইতে না পেরে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়বে। অনেকে বিশ্রামের ব্যাপারে চরম উদাসীনতাও প্রদর্শন করে থাকে, সেদিকে ইঙ্গিত করেই প্রিয়নবী (সা) ইরশাদ করেছেন : “দুটি সম্পদ সম্পর্কে অধিকাংশ লোকই অমনোযোগী । একটি হলো স্বাস্থ্য আর অপরটি হচ্ছে বিশ্রাম।” (বুখারী শরীফ)
রাসূলে আকরাম (সা)-এর এ মহান বাণীর আলোকে আমরা যদি শারীরিক শ্রম ও পরিমিত বিশ্রামসহ স্বাস্থ্য সচেতন হই তবে আমাদের জীবন হতে পারে সুখী ও শান্তিময়। শরীর ও স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে হাজারো ধন-সম্পদ আর বিলাসবহুল, গাড়ি- বাড়ি মানুষকে শাস্তি দিতে পারে না। পক্ষান্তরে দুটো শুকনো রুটি অথবা দুমুঠো ঠাণ্ডা ভাত খেয়ে সুস্থ শরীর নিয়ে স্ত্রী-পুত্রসহ যে ঝুপড়ির মধ্যেও রাত কাটায় তাকেই বরং প্রকৃত সুখী বলা যেতে পারে।
বিশ্রামের ক্ষেত্রে আরো স্বাস্থ্যতথ্য হলো, রীতিমত বিশ্রাম না নিলে মানবদেহ স্বভাবতই দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে বার্ধক্য আসার পূর্বেই বার্ধক্যের কোলে ঢলে পড়তে হয় এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুমুখে পতিত হতে হয়।
মানবদেহ একটি ইঞ্জিন বা যন্ত্রের মতো। একটানা কোনও ইঞ্জিন চলতে থাকলে সেটা যেমন খুব দ্রুত অকার্যকর হয়ে পড়ে, তেমনি মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না হলে তাও তদ্রূপ দ্রুত অকর্মণ্য হয়ে যায়। বিশ্রাম বলতে পরিশ্রমমুক্ত ও নিদ্রা গ্রহণকে বোঝায়। তিন-চার ঘন্টা একটানা শারীরিক পরিশ্রমের পর অন্তত এক ঘন্টা বিশ্রাম গ্রহণ করা প্রয়োজন। মস্তিষ্কের ক্ষয় পূরণের জন্য দৈনিক অন্তত চার থেকে ছয় ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন, সুনিদ্রা একদিকে যেমন মস্তিষ্ক সবল করে অপরদিকে তা শরীরের দূষিত পদার্থ নির্গমনেও সহায়তা করে। এ ছাড়া কিভাবে শয়ন করা বা শয্যা গ্রহণ করা স্বাস্থ্যসম্মত সে ব্যাপারেও প্রিয়নবী (সা) আমাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দান করেছেন। শয্যা গ্রহণের পদ্ধতি নির্দেশ করে রাসূলে আকরাম (সা) ইরশাদ করেছেন ঃ “যখন তোমরা (শয্যা গ্রহণের উদ্দেশ্যে) নিজেদের শয়নকক্ষে গমনের ইচ্ছা কর তখন প্রথমে ওযু করে নাও, যেমন তোমরা নামাযের জন্য ওযু করে থাক। অতঃপর ডান কাতে শুয়ে পড়।” (বুখারী শরীফ)
প্রিয়নবী (সা)-এর এ নির্দেশ খুবই স্বাস্থ্যসম্মত মানুষের শরীরে হৃদযন্ত্র (Heart) বামপার্শ্বে অবস্থিত । এ ক্ষেত্রে কেউ বাম কাতে শয়ন করলে স্বভাবতই তার উপর চাপ পড়ে থাকে। এর ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হয়। আর রক্ত তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে বাধাগ্রস্ত হলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
প্রিয়নবী (সা)-এর ব্যক্তি ও সমাজের স্বাস্থ্য গঠন ও তা সুরক্ষার অগণিত বাণী ও বিষয়সমূহ হতে এখানে মাত্র কয়েকটি বিষয় নিয়ে খুবই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
অবশেষে একথা অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলা যায় যে, আমাদের প্রিয়নবী (সা) একমাত্র নবী, যিনি ইবাদতের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ মানবদেহ ও মানব জীবনের প্রতিটি বিষয়ের উপরই অত্যন্ত যৌক্তিক আলোচনা করেছেন এবং তিনি ইবাদত ও স্বাস্থ্য রক্ষার মাঝে সমন্বয় সাধন করেছেন। এবারে আমরা রোগ প্রতিকার ও রোগমুক্ত থাকার ক্ষেত্রে মহানবী (সা)-এর নির্দেশনার উপর সামান্য আলোকপাত করব। রোগ ও তার প্রতিকার
সৃষ্ট জীবমাত্রই অসুস্থ বা রোগাক্রান্ত হতে পারে। মানুষও এ সাধারণ নিয়মের বাইরে নয়। মানুষেরও রোগব্যাধি হয়ে থাকে, তাদেরকেও তার প্রতিকার বা প্রতিষেধক তালাশ করতে হয়। রোগ বা ব্যাধি ঠিক কত প্রকার ও কি কি, তা কোনও মানুষই অবগত নয়। কোনও দেহবিজ্ঞানীই আজ পর্যন্ত এর সঠিক সংখ্যা খুঁজে বের করতে সক্ষম হননি । তার সঠিক পরিসংখ্যান একমাত্র আল্লাহ পাকই ভাল জানেন, তবে শরীরবিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণার মাধ্যমে আনুমানিক যে মন্তব্য করেছেন তা হলো, যেসব রোগ মানবদেহে আক্রমণ করে থাকে, তার সংখ্যা মোটামুটি দু'লক্ষাধিক। (বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ (সা), পৃ. ২৩৪ )

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান অধিকাংশ রোগের চিকিৎসা বা নিরাময় ব্যবস্থা আবিষ্কার করতে সক্ষম হলেও এমন কিছু রোগও তারা নির্ণয় করতে পেরেছেন যার সুষ্ঠু কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি বা প্রতিষেধক তারা আজো আবিষ্কার করতে সক্ষম হননি। যেমন ক্যান্সার, এইডস ইত্যাদি রোগের ব্যাপারে কোনও কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি আজো বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি। তবে আমরা এ ব্যাপারে প্রিয়নবী (সা)-এর বাণীর প্রতি লক্ষ্য করলে দেখি তিনি সকল রোগেরই চিকিৎসা তথা প্রতিষেধক রয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন : “মহান আল্লাহ এমন কোনও রোগ পৃথিবীতে প্রেরণ করেননি, যার জন্য তিনি কোনও ঔষধ বা প্রতিষেধক দান করেননি।” (বুখারী)
হাদীসে বর্ণিত বক্তব্যের মর্ম এই দাঁড়ায় যে, প্রতিটি রোগের জন্যই আল্লাহ পাক প্রতিষেধক তথা প্রতিকার ব্যবস্থা রেখেছেন ।
হাদীস শরীফের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, প্রিয়নবী (সা) ইরশাদ করেন :
“তোমাদের কারো (তরল) খাদ্য পাত্রে মশা-মাছি পড়লে তাকে প্রথমে ঐ খাদ্যের মাঝে ডুবিয়ে দাও। অতঃপর সেটা বের করে ফেলে দাও। কেননা তার এক পাখায়
রোগজীবাণু থাকে এবং অপর পাখায় সে রোগের প্রতিষেধক থাকে, আর সে রোগযুক্ত পাখাটিকেই প্রথমে নিক্ষেপ করে থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস থেকে এ কথাই পরিষ্কার প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ প্রত্যেক রোগের খুব কাছাকাছিই তার প্রতিষেধক বা ঔষধ রেখে দিয়েছেন।
রোগ-ব্যাধি মহান আল্লাহই দিয়ে থাকেন। এর অর্থ এই নয় যে, রোগ হলে তা নিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। প্রিয়নবী (সা) কেউ রোগাক্রান্ত হলে কস্মিন- কালেও তাকে চিকিৎসা গ্রহণ না করে হাত-পা গুটিয়ে শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থাকতে বলেননি। তবে একথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে যে, প্রকৃত আরোগ্য ও সুস্থতা মহান আল্লাহই দিতে পারেন। কিছু উপায়-উপকরণ গ্রহণ করে সুস্থতার জন্য কিছু বাহ্যিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই শুধু আমাদের দায়িত্ব। রাসূল (সা) সর্বদা মহান আল্লাহর দরবারে এই বলে ফরিয়াদ করতেন ঃ
“হে আল্লাহ! আমাকে অপ্রিয় ব্যবহার, কার্য ও বাসনা এবং অনিষ্টকর রোগ হতে রক্ষা কর।” (তিরমিযী) এ তো ছিলো রোগমুক্ত থাকার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ; রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে সে ক্ষেত্রে তা নিরাময়ের জন্য রাসূল (সা) আমাদের প্রতি কি নির্দেশনা দিয়েছেন তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নে তুলে ধরা হচ্ছে।
হযরত রাসূল (সা) ইরশাদ করেন : “জ্বর মূলত দোযখের উত্তাপ থেকে সৃষ্ট, অতঃপর তোমরা তা পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর।” (মিশকাত)
জ্বর এমন একটি ব্যাধি যাতে দু চার দশবার আক্রান্ত হয়নি এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ জ্বর আবার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। তবে আধুনিক বিজ্ঞানে প্রধানত জ্বরের যে কারণ বর্ণনা করা হয়ে থাকে তা হলো, শরীরে রোগজীবাণু প্রবেশ করায় তার সাথে রক্তের শ্বেত কণিকার সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়, ফলে স্নায়ুমণ্ডলীতে বড় ধরনের আঘাত লাগে এবং তা থেকে এক ধরনের উত্তাপের সৃষ্টি হয়। আর এ উত্তাপকেই বলা হয় জ্বর। পানিই হচ্ছে এর প্রধান ঔষধ বা প্রতিষেধক, কেননা কেউ যখন জ্বরে উত্তাপে ছটফট করতে থাকে, কোন ঔষধেই যখন তার কোনও কাজ হয় না তখন পানিই একমাত্র উপাদান যা অসহ্য যন্ত্রণার উপশম ঘটিয়ে থাকে।
দীর্ঘ চৌদ্দ শতাধিক বছর পূর্বে প্রিয়নবী (সা)-এর শেখানো পানি দ্বারা জ্বরের চিকিৎসার বিষয়টিকেই অকপটে মেনে নিলেন বর্তমান বিজ্ঞানীরা। জ্বরের জন্য তাঁরা যে সব ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন তার মধ্যে পানিই হচ্ছে প্রধান।
রাসূলে আকরাম (সা) রোগের প্রতিষেধক হিসেবে মধুর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থ বুখারী শরীফের একটি বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে, মধু ছিল হযরত (সা)-এর প্রিয় খাবার। বুখারী শরীফের অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত (সা) ইরশাদ করেছেন, “মধুর শরবত রোগমুক্তির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।” এ ছাড়াও মধু সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে একটি দীর্ঘ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে :
“(হে নবী!) আপনার পালনকর্তা মধুমক্ষিকাকে আদেশ দিলেন, পর্বত গাত্রে, বৃক্ষ ও সকল উঁচু স্থানে মৌচাক নির্মাণ করো। এরপর সবরকম ফল ফুল থেকে (মুধ) ভক্ষণ করো (মধু সংগ্রহ কর) এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথসমূহে চলমান হও। (মধু মক্ষিকা এমন প্রাণী) যার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (সূরা নাহল : ৮-৬০)
পবিত্র কুরআনের দেয়া এ তথ্যের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে একমাত্র মধুর ব্যবহারেই হাজারো রকমের কঠিন জটিল রোগ থেকে অতি অল্প সময়েই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়েছে।
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এ মধু কাশি, শ্বাস, জ্বর, অতিসার, বমি, কৃমি ও বিষদোষ নাশের ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে কাজ করে থাকে। এ ছাড়া আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে মধু সাধারণত রস, রক্ত, গোশত, মেদ, অস্থিমজ্জা, শুক্র, স্তন, কেশ, বল, বৰ্ণ 13 দৃষ্টিশক্তি বর্ধনে। মধু বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মানবদেহের সুস্থতার জন্য যত প্রকার ভিটামিন আবশ্যক তার শতকরা ৭৫ ভাগই মধুর মধ্যে বিদ্যমান। চিকিৎসাশাস্ত্রের মতে মধু অপেক্ষা শক্তিশালী ভিটামিনযুক্ত আর কোনও পদার্থ পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়নি। (কুরআন না বিজ্ঞান, ৩১৯ পৃষ্ঠা)
উল্লিখিত আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম, মানবদেহের উপকারিতা ও তার কার্যকারিতার উপাদান মধুর মাঝে কত দৃঢ়ভাবে বিদ্যমান। সুতরাং প্রিয়নবী (সা)-এর মধু সেবন ও অন্যদের তা সেবন করতে উৎসাহিতকরণ হযরত (সা)-এর রোগ-ব্যাধি ও তা থেকে আরোগ্য সম্পর্কে সর্বাধিক সচেতনতার প্রমাণ ।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]