এইডস প্রতিরোধে ইসলামী অনুশাসন
ডা. খিজির হায়াত খান
এইচ.আই.ভি. (হিউম্যান ইমিউন ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস) মানুষের শরীরে প্রবেশের পর মানবদেহে পরিলক্ষিত উপসর্গসমূহের সমাহারই হচ্ছে এইডস (এ্যাকোয়ার্ড ইমিউন ডেফিশিয়েন্সি সিনড্রোম) যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় রোগ প্রতিরোধের অভাবজনিত উপসর্গ । এইডস এমন এক ভয়াবহ রোগ যা দ্বারা একবার কেউ আক্রান্ত হলে মৃত্যু অনিবার্য। এ যাবত এইডসের কোন ফলপ্রসূ চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। এটা আল্লাহর অশেষ রহমত যে, ভয়াবহ হলেও এইডস প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। ভাল কাজ করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সাথে এইডস প্রতিরোধের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আল্লাহর উপর ঈমান আনার পর যে কাজটির উপর আল্লাহর তরফ থেকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে আমালুস সালেহ অর্থাৎ সৎকাজ করা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যে কোন কাজই আমালুস সালেহ হিসেবে পরিগণিত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে মহানবী (সা)-এর উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে আখ্যায়িত করে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। নৈতিকতা, নিরাপত্তা এবং শান্তির ধর্ম ইসলাম। দেহ-মনের পরিপূর্ণতা এবং বিকাশে সহায়ক সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত নীতিমালাই হচ্ছে নৈতিকতা। প্রিয়নবী (সা) নৈতিকতা সম্পর্কে বলেছেন, চরিত্রের বিচারে যে লোক উত্তম, মুমিনদের মধ্যে সে-ই পূর্ণ ঈমানের অধিকারী'। মানুষের জীবন-দর্শন ও জীবনবিধানকে প্রাকৃতিক নিয়মনীতি ও বিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলা এবং মানুষের মধ্যে কল্যাণকর উত্তম গুণাবলীর বিকাশ সাধন করাই হচ্ছে নৈতিকতার উদ্দেশ্য। মানব চরিত্রের উজ্জ্বল দিকগুলো যেমন- সত্য কথা বলা, স পথে চলা, জীবনের সর্বক্ষেত্রে ন্যায়নীতিকে সঠিকভাবে প্রয়োগ ও অনুসরণ করা এবং সর্বোপরি ঈমানকে ঠিকভাবে বাঁকড়ে থাকা সদাচরণের অন্তর্ভুক্ত। নৈতিকতা বিবর্জিত লোকই সমাজে অন্যায়, অশ্লীল ও অনৈতিক কর্মের জন্য দায়ী। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় নৈতিকতা একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে ইসলামে আইন-কানুন প্রণীত হয়েছে। নৈতিকতা সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, “যৌন অংগের হিফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, ইহাদিগের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান” (৩৩:৩৫)। উপরোক্ত আয়াতে যে গুণাবলীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো—-শুদ্ধতা যৌনসম্ভোগের ক্ষেত্রে পবিত্রতা, পবিত্র উদ্দেশ্য, চিন্তা, বাক্য এবং ধর্ম। আর সার্বক্ষণিক আল্লাহর জিকিরে অন্তরকে মশগুল রাখার মধ্য দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছা অন্তরে লালন করা।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সতর্ক করেন, “আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না । নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ" (১৭ : ৩২)। ব্যাভিচার- যার মাধ্যমে যৌনরোগ ছড়ায় শুধু অশ্লীলই নয়, এটা আত্মসম্মান এবং অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও কর্তব্যবোধকে বিলুপ্ত করে এবং অন্যান্য মন্দ কাজের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। ব্যভিচার পারিবারিক ভিত্তিকে ধ্বংস করে দেয়; ব্যভিচারের ফলে জন্ম নেয়া এবং গর্ভে থাকা সন্তানের অধিকারের পথে অন্তরায় সৃষ্টি হয়; জাতিগত চিরশত্রুতা এবং হত্যার মতো অপরাধ সংঘটিত হয়, সম্পদ এবং সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এবং সামাজিক বন্ধন স্থায়ীভাবে দুর্বল হয়ে যায় ।
তাই ব্যভিচার শুধু পরিহার করাই উচিত নয় বরং এর সংশ্রব এবং এর প্রতি যে কোনরূপ কামনাও অবশ্য অপরিহার্য। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় নৈতিকতার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মানুষের জৈবিক ও সামাজিক চাহিদা ও প্রয়োজন এবং তার আত্মিক চাহিদা ও বিকাশের মধ্যে একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ ভারসাম্য স্থাপন করার মধ্য দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভে সমর্থ করা।
নৈতিক মূল্যবোধের কারণে এইডস ছড়ানোর দু'টি প্রধান মাধ্যম অবৈধ যৌনাচার এবং মাদকাসক্তি থেকে মানুষ বিরত থাকে। ইসলামে নৈতিকতাবিবর্জিত মানুষকে পশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যদিকে নৈতিকতায় উৎকর্ষতা অর্জনকারী মানুষ আল্লাহর নিকট অত্যন্ত মর্যাদানে বলে বিবেচিত হন। অবৈধ, অনৈতিক ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে যারা নিজেদের হেফাজত করে ইসলামে তারা শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে পরিগণিত। যারা অনৈতিক, অবৈধ, অশ্লীল এবং ঘৃণ্য কাজে জড়িত আল্লাহ তাদেরকে কঠোর শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। মহানবী (সা) বলেন, “যখনই কোনও জাতি বা সম্প্রদায় অশ্লীল এবং ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয় তখন তাদের মধ্যে এমন এক ভয়ঙ্কর মহামারী দেখা দেয় যা তারা অতীতে কখনও দেখেনি।” (ইবনে মাজা) ।
অবৈধ যৌনাচার এবং সমকামিতার জন্য আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, “আমি লুতকে প্রেরণ করেছি, যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললো, তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বে কেউ করেনি ? (৭:৮০)। তোমরা তো কামবশত পুরুষের কাছে গমন কর নারীদের ছেড়ে বরং তোমরা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায় (৭ : ৮১)।
পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত আয়াতসমূহে প্রতীয়মান হচ্ছে যে লুত (আ)-এর সম্প্রদায় বিকৃত যৌনাচারে অভ্যস্ত ছিল। লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের পুরুষদের অনেকেই আল্লাহ নির্দেশিত বিপরীত লিঙ্গের তথা স্ত্রীদের সাথে স্বাভাবিক যৌনাচার না করে সমলিঙ্গের তথা পুরুষদের সাথে যৌনাচার পছন্দ করতো। লুত (আ) আরও বলেন, তাদের পূর্বে পৃথিবীতে অন্য কোনও সম্প্রদায় এরূপ ঘৃণ্য কুকর্ম করেনি বাইবেল থেকে আমরা জানতে পারি যে, লুত (আ)-এর এলাকা “সোডম” এবং “গোমোরো” নামে পরিচিত ছিল। এ স্থানটি মরু সাগরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত ছিল। লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান বিকৃত যৌনাচার পুরুষে পুরুষে সমকামিতা নামে পরিচিত। না ছিল পৃথিবীর কোথাও এটা জনপ্রিয়, না ছিল কোনও সম্প্রদায়ের মধ্যে এটা প্রচলিত। পবিত্র কুরআনের ভাষায় কেবল সোডম এবং গোমোরো অধিবাসীরাই এককভাবে এই কুকর্ম করতো। পুরুষে পুরুষে সমকামিতা সুনির্দিষ্টভাবে আল্লাহ কর্তৃক অনুমোদিত সীমালংঘন হিসেবে আল কুরআনে চিহ্নিত হয়েছে। লুত (আ)-এর সম্প্রদায় আল্লাহর আদেশ লংঘন করে এইরূপ কুকর্ম করার কারণে আল্লাহর এমন গজবে পতিত হয়েছিল যে পুরো জনপদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল এবং আজ পর্যন্ত সেই মুক্ত সাগরে কোনও জীবিত প্রাণীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত সীমালংঘনকারীদের শাস্তি কত কঠোর হয় এটা তারই প্রমাণ। সম্প্রতি দেখা যায় পুরুষে পুরুষে সমকামিতার পক্ষে ফলাও প্রচারসহ কোন কোন দেশে এটাকে খাপ খাইয়ে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে আধুনিক মানব সভ্যতার প্রতি মারাত্মক হুমকি হিসেবে সমকামীদের মধ্যে দুরারোগ্য ব্যাধি এইডসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। নিশ্চয়ই যারা তাদের অসৎ জৈবিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অনৈতিক, অবৈধ এবং বিকৃত যৌনাচার পছন্দ করে তাদের জন্য এইডস আল্লাহর গজবস্বরূপ। অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচার এইডস বিস্তারে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। শুধু একটিবার অবৈধ যৌনক্রিয়া মানুষকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দিতে পারে। নৈতিকতাবিবর্জিত মানুষ তার নিজের ভালমন্দ বিবেচনা না করে অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়। পরিণামে সে নিজে যেমন তার জীবনের উপর হুমকি বয়ে আনে তেমনি এর দ্বারা তার পরিবার তথা সমাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপর দিকে নৈতিক স্খলনের কারণে সে ব্যভিচার, সমকামিতা, মাদকাসক্তি ইত্যাদিতেও প্রবৃত্ত হতে পারে। এ সকল কর্মও এইডস বিস্তারের জন্য সমানভাবে দায়ী। সুতরাং একথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, ইসলামী অনুশাসনমতে নিয়ন্ত্রিত যৌনাচার এইচ.আই.ভি বিস্তার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিয়ে একটি মৌলিক সামাজিক প্রথা। ইসলামে বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। ইসলাম কখনো অবৈধ ও বিকৃত যৌনাচার সমর্থন করে না । যৌন সম্ভোগের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক জৈবিক চাহিদা মেটানোর মধ্য দিয়ে মানসিক শান্তি ও চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনে বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিয়ের দ্বারা অনেক উপকার লাভ করা যায়। মহানবী (সা) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা বিয়ে কর; কারণ বিয়ে তোমাদের পবিত্রতা রক্ষায় এবং দৃষ্টিকে সংযত `রাখতে সাহায্য করে। অপরদিকে যাদের সামর্থ্য নেই তারা রোযা রাখ; কারণ রোযা যৌন ক্ষুধা সংবরণে সহায়ক”। নবী করীম (সা) আরও বলেন, “যে ব্যক্তি পূত-পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাৎ প্রার্থনা করে সে যেন একজন মুক্ত (আজাদ) নারীকে বিয়ে করে"। মহানবী (সা) উল্লেখ করেন, “যে ব্যক্তি বিয়ে করল সে দ্বীন -এর অর্ধেক পরিপূর্ণ করলো"।
ইসলাম কখনো মানুষের যৌন চাহিদাকে অবদমিত করার পরামর্শ দেয় না। তাই ইসলাম বিয়ে করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। বিয়ে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অন্যদিকে বিয়ে না করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর; এটা মানুষকে ব্যভিচার, বিকৃত যৌনাচার এবং যৌন সংশ্লিষ্ট অপরাপর অপরাধের পথে ধাবিত করে। ইসলাম প্রকৃতির সাথে মানুষের জৈবিক চাহিদার একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে মানুষকে আল্লাহর আজাব হতে রক্ষা করে।
একজন মুসলমানের জন্য সার্বক্ষণিক অবশ্যপালনীয় কাজের অন্যতম হচ্ছে : ঈমানকে মজবুতভাবে আঁকড়ে থাকা; নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে রাখা এবং স্বীয় স্ত্রীকে পর্দার ভিতরে রাখা। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে সামাজিক অস্থিরতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ইসলামী অনুশাসন মতে মহিলাদের পর্দা না করার প্রবণতা। যার ফলে যৌন অপরাধ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নবী করীম (সা) স্বীয় স্ত্রী ও সাহাবীগণকে যৌন অপরাধ প্রতিরোধে পর্দার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নবী করীম (সা) অন্ধ লোকদের সামনে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রেও স্বীয় স্ত্রীগণকে পর্দা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে আমাদের ব্যভিচার এবং যৌন অপরাধ করা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যে কাজ যত ঘৃণ্য সে কাজের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তিও তত কঠিন। ইসলামে ব্যভিচারের জন্য প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাদীসে আছে “যেখানে কোনও অপরিচিত পুরুষ এবং মহিলা একত্রিত হয় সেখানে শয়তান তৃতীয় ব্যক্তির (প্ররোচনাকারী) ভূমিকা পালন করে। ইসলাম নর-নারীকে লজ্জাহীনতা পরিহারের নির্দেশ দেয় যেন তারা ব্যভিচার এবং যৌন অপরাধ হতে দূরে থাকতে সমর্থ হয়। রাসূল (সা) আরও বলেন, “মানুষ এবং পশুর মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে লজ্জা।” একজন লজ্জাহীন মানুষ তার নৈতিক মূল্যবোধকে অবদমনপূর্বক খেয়াল খুশিমত যে কোনও কাজ করতে পারে। নবী করীম (সা) বলেন, “দৃষ্টি হচ্ছে শয়তানের তীর, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে দৃষ্টিকে সংযত ও অবনত রাখে তাকে আল্লাহ ঈমান দিয়ে এর প্রতিদান দেয়া এবং সে পরিপূর্ণ ঈমানের স্বাদ লাভ করে। হাদীসে আছে, যে চোখ আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ জিনিস দেখা থেকে বিরত থাকে সে চোখকে জাহান্নামের আগুন কখনো স্পর্শ করবে না।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, মূল্যবোধের অবক্ষয় যৌন বিকৃতির প্রবণতা সৃষ্টি করে। ইসলাম আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে শিক্ষা দেয়। আল্লাহর নির্দেশ এবং রাসূলের সুন্নতের উপর দৃঢ়ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ সুগম হয় এবং ইহলোকে এবং পরলোকে সফলতা লাভ করা যায়।
মানুষ পাপের ফলে মানুষের উপর মহামারী, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অপরাপর বিপর্যয় নেমে আসে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, (“জাহারাল ফাসাদি......... আইদননাস”) “জলে স্থলে আবির্ভূত বালা মুসিবত মানুষের নিজ হাতে অর্জিত কর্মেরই ফল। তাদের কর্মফলের কিছু অংশের স্বাদ আল্লাহ পাক দুনিয়াতে তাদেরকে আস্বাদন করতে দেন যেন তারা পাপ কাজ হতে নিজেদের ফিরিয়ে নেয়” (৩০ : ৪১)। আল্লাহর সৃষ্টি উত্তম ও পবিত্র। যাবতীয় অনিয়ম দুর্নীতি ও অপবিত্রতা এসেছে শয়তানের প্ররোচনা তথা পাপ কাজের মাধ্যমে। পাপের পরিণতিতে পাপই অবশ্যম্ভাবী। তারই কিছু আংশিক শাস্তির মাধ্যমে দেখানো হয়ে থাকে যা মানুষের স্বীয় হস্তে অর্জিত কর্মেরই ফল। এরূপ আংশিক শাস্তির মাধ্যমে আল্লাহ পাক মানুষকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে অনুশোচনার দিকে আহ্বান করেন। আল্লাহ তা'আলার বিচার এবং শাস্তির আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে পাপ থেকে ফিরিয়ে এনে ঐ রকম পূত-পবিত্র করা যে রকমভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, মানুষের প্রতি লক্ষ করলে দেখা যাবে তার দুর্ভোগ তার দ্বারা সাধিত কর্মেরই ফল। সে সবের দায়-দায়িত্ব ব্যক্তিগতভাবে তাকেই বহন করতে হবে এবং এগুলোর দোষ অন্য কারো উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না।
পবিত্র কালামে পাকে আল্লাহ সতর্ক করেন, “পরকালের কঠিন আযাবের পূর্বে দুনিয়াতে আমি তাদের কিছু শান্তি দিয়ে থাকি যেন তারা অনুতপ্ত হয় এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে (৩২ : ২১)।” চূড়ান্ত ও কঠিনতম শাস্তি পরকালে আসবে এতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু তার আগে ইহকালে অল্পস্বল্প শাস্তি আসে। কখনও এরূপ শাস্তি কোন বিপর্যয়-দুর্ভোগরূপে আসে; আবার কখনো তা বিবেকের দংশনে কান্নার অশ্রুরূপে আসে। একথা সত্যি যে, এ ধরনের ছোটখাট শাস্তিও আল্লাহর অনুগ্রহ স্বরূপ; কারণ তা মানুষকে অনুতপ্ত এবং সংশোধিত হওয়ার সুযোগ দেয়। অবৈধ যৌনাচার এবং ব্যভিচারকে মহামারীর কারণ হিসেবে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত, “যখন কোনও জাতি বা সম্প্রদায় আত্মসাৎ-প্রবণ হয় তখন ভয়ভীতিতে তারা আক্রান্ত হয়; যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন মহামারী দেখা দেয়।”
ইসলামে পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইসলামী অনুশাসনের আলোকে জীবন-যাপন করার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে সত্যিকারের শান্তি অর্জন করা যায়। যৌনতার ব্যাপারে কেবল ইসলামের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে বিশ্বমানবতার উপর আপতিত এইডস-এর মত ভয়াবহ দুর্যোগ যে মোকাবেলা করা সম্ভব তা আজ ব্যাপকভাবে প্রচার করা প্রয়োজন। মহান রাব্বুল আলামীন প্রদর্শিত পথে চলার মধ্য দিয়ে মানব জীবনের সকল অশান্তি নিরসনের সামর্থ্য যেন বিশ্ববাসী অর্জন করতে পারে সেটিই হোক আমাদের আজকের প্রত্যাশা । ইফা-২০০৮-২০০৯ ৫/৯৬৭৮ (উ)- ৩,২৫০

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]