রোগ কি কষ্টিপাথর? এ বিষয়ে কুরআন মজীদ বা হাদীস শরীফে কী কী সুস্পষ্ট বক্তব্য আছে?

সম্মানিত দর্শক-শ্রোতা-পাঠক! আপনারা সবাই জানেন যে এই নশ্বর জীবনে মানুষকে প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। কোনো সফলতাই পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই ব্যতীত অর্জিত হয়না। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মজীদে কতিপয় আয়াত রয়েছে। যার সারমর্ম হচ্ছে, “তোমরা কি কোনো সময় চিন্তা করে দেখেছো যে কোনো প্রকার পরীক্ষা, জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিভিন্ন প্রকার নিয়ামত তোমরা অর্জন করে ফেলবে?” এ সম্পর্কে সূরা বাকারাহর ২১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা'য়ালা বলেন,
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مُسَتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِينَ آمَنُوْا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ الْآإِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيْبٌ
“তোমরা কি মনে করে নিয়েছো, এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল, তাদের ওপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনো তোমাদের ওপর সেসব নেমে আসেনি। তাদের ওপর নেমে এসেছিল অত্যাচার-নির্যাতন, কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুসীবত। আঘাতে আঘাতে তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল। এমনকি সমকালীন রসূল ও তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল, আল্লাহ্র সাহায্য কখন আসবে? তখন তাদেরকে এই বলে
সান্ত্বনা দেয়া হয়েছিল যে, আল্লাহ্র সাহায্য অতি নিকটে ।” (আল বাকারাহ ২:২১৪ ) এ ধরনের সতর্কবাণী মহান আল্লাহ্ সূরা আলে ইমরানের ১৪২ আয়াতে, সূরা আম্বিয়ার ৩৫ আয়াতে, সূরা আনকাবূতের ২ ও ৩ আয়াতে এবং সূরা মুহাম্মদের ৩১ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পরীক্ষা ও যাচাই কীভাবে হবে? এর উত্তরে সূরা বাকারাহর ১৫৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তা'য়ালা ইরশাদ করেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَ بَشِّرِ الصُّبِرِينَ
“নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে অর্থাৎ উপার্জন ও আমদানি হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো।” (আল বাকারাহ ২:১৫৫)
এ আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি, পরীক্ষার বিভিন্ন ধরনের ভেতর প্রাণের ক্ষতিও রয়েছে। আর স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো প্রাণের ক্ষতিরই অন্তর্ভুক্ত। কারণ স্বাস্থ্যের অবনতিই তো প্রাণের ক্ষতি। বর্তমান বিশ্বে অসুস্থতার কারণে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যাই বেশি। তাই প্রাণের ক্ষতি মৃত্যুর আকারেও হতে পারে আবার রোগের আকারেও হতে পারে। আর এসব কারণে বুযুর্গ ব্যক্তিবর্গ ও সূফীগণ রোগকে আল্লাহ্ রহমত লাভের অসীলা বা পদোন্নতির সোপান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তারা যে ব্যক্তির রোগ হয় না, তাকে দুর্ভাগা মনে করেছেন। সূফীবাদের পুস্তকাদিতে এ ধরনের অনেক ঘটনার উল্লেখ আছে যে মুরিদ যদি কখনো রোগগ্রস্ত না হয়েছে, তবে মুর্শিদ তার কামালিয়তের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছেন। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহ আলাইহি বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুঃখ-কষ্ট সৎকর্মশীলদের জীবনে বেশি আসে। যখনই কোনো মু'মিন বালা-মুসীবত বা দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়, সেটা কাঁটা বিধুক অথবা তার চেয়ে বড় কিছু হোক না কেনো, এর ফলে তার একটি পাপ মার্জনা করা হয় এবং জান্নাতে তার মর্যাদা একধাপ বেড়ে যায়।” (মুসনাদে আমাদ ও আত-তিরমিযী) ৩
এ বিষয়ে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত হাদীসটি তিরমিযী শরীফে উদ্ধৃত আছে। হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে তিনি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ্ তা'য়ালা ইরশাদ করেন, “আমি দুনিয়ায় যখন আমার কোনো বান্দাকে দু'টি প্রিয় জিনিস দ্বারা কষ্ট দিই এবং সে যদি ধৈর্যধারণ করে, তবে এর বদলায় আমি তাকে জান্নাত দিয়ে থাকি । আর 'উত্তম ও প্রিয় জিনিস দ্বারা' কথার অর্থ হলো তার দুচোখ।” (সহীহ আল বুখারী) ৪ হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মাহমূদ ইবনে লাবিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “আল্লাহ তা'য়ালা যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালবাসেন তখন তাদেরকে (বিপদ-আপদ দ্বারা) পরীক্ষা করেন। যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে সে ধৈর্যের প্রতিদান পায় । আর যে অধৈর্য হয়ে যায় সে অধৈর্যের ফল পায়।” (মুসনাদে আহমাদ) ৫
আত-তিরমিযী শরীফে উদ্ধৃত হাদীসটি বর্ণনা করেন আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন যে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যখন তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ সাধনের ইচ্ছা করেন তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তাঁর কোনো বান্দার অকল্যাণ সাধনের ইচ্ছা করেন তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন।” তিনি আরো বলেন, “বিপদ যত মারাত্মক হবে প্রতিদানও ততো মহান হবে। আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। যদি তারা তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবেন । আর যারা এতে অসন্তুষ্ট হয় তারা আল্লাহর রোষ ছাড়া কিছুই পাবে না।” (আত-তিরমিযী) ৬ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, “আমি আল্লাহ্র নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে আর কাউকে অসুস্থতায় এতো কষ্ট পেতে দেখিনি।" (সহীহ আল-বুখারী) ৭
সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, “এই পৃথিবীতে আল্লাহ্র নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামই বেশি দুঃখ-কষ্ট ও অত্যাচার ভোগ করে থাকেন, তারপর আল্লাহ্র অলিগণ, তারপর সৎকর্মশীল বান্দাগণ। একজন মানুষের দুঃখ-কষ্ট পাওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে দ্বীনের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসার গভীরতার ওপর। এ পৃথিবীর বুকে অলিগণের জীবন থেকে দুঃখ-কষ্ট কখনো দূর হয়না যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা আল্লাহ্র রাস্তায় চলেন এবং তাদের কৃতকর্মকে বিশুদ্ধ রাখেন।” (মুসনাদে আহমাদ ও ইবনে মাজাহ) ৮

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]