: রোগ বা অসুস্থতা কি পাপের ক্ষতিপূরণ হতে পারে ?

: আগেই বলেছি কোনো কোনো ব্যক্তি রোগ-ব্যাধিকে এক ধরনের আযাব মনে করে থাকে । অথচ সকল প্রকার কষ্ট সত্ত্বেও অধিকাংশ মুসলমানের জন্য রোগ-ব্যাধি রহমতের অসীলা হিসেবে বিবেচিত। যা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতিপয় হাদীস থেকে জানা যায়। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন যে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুসলমানদের উপর যে কোনো বিপদ-মুসীবতই আসে, আল্লাহ্ এর বদলে তার গুনাহ মোচন করে দেন, এমনকি তার শরীরে কাঁটা বিদ্ধ হলে তার দ্বারাও।” (সহীহ আল বুখারী, মুসলিম ও মুয়াত্তা ইমাম মালিক)
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুসলমান কোনো যাতনা, রোগ-কষ্ট, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, নির্যাতন ও শোকগ্রস্থ হলে, এমনকি তার দেহে কাঁটা বিদ্ধ হলেও এর বদলে আল্লাহ্ তা'য়ালা তার গুনাহ মাফ করে দেন।” (সহীহ আল বুখারী)
কাজেই আমাদের গায়ে বা পায়ে কোনো কাঁটাও যদি বিঁধে যায়, তবে তা আমাদের গুনাহের কাফ্ফারা বা পাপ মোচনের একটি উত্তম উপায় হয়ে যায়। হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হলে কোনো একজন লোক উক্ত মাইয়্যেত বা মৃত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলল, “কতই না সুন্দর মৃত্যু হয়েছে। কোনো রোগে ভুগলো না আর মৃত্যু হয়ে গেলো!” একথা শুনে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমার জন্য আসোস! তুমি কি জানো না, আল্লাহ্ কোনো ব্যক্তিকে কোনো রোগে ফেললে, এর কারণে তিনি তার পাপরাশি মার্জনা করে দেন?” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)
এ বিষয়ে আরো রিওয়ায়াত হাদীস গ্রন্থসমূহে পাওয়া যায়, যা থেকে আমরা জানতে পারি যে রোগের কারণে গুনাহ মাফ হয়ে যায় । আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللهِ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُوْنَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَبِكَ يَتُوْبُ اللهُ عَلَيْهِمْ
“অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবূল করবেন যারা ভুলবশতঃ মন্দকাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হলো সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ মাফ করে দেন।” (আন-নিসা ৪: 19 ) আল্লাহ তা'য়ালা অন্যত্র বলেন,
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلوةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيَّا إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا
“অতঃপর তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তিরা। তারা নামায নষ্ট করলো এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হলো। সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি পথভ্রষ্টতা তথা জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা তওবা করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে।” (মরিয়াম ১৯:৫৯-৬০) আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেন,
وَمَنْ يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمُ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُورًا رَحِيمًا.
“যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল করুণাময় হিসেবে পায়।” (নিসা ৪:১১০) উপরোক্ত আয়াতগুলোতে প্রণিধানযোগ্য যে গুনাহ মাফের জন্য তওবা শর্ত। তওবা ব্যতীত গুনাহ মাফ হবেনা, যদিও তা মৃত্যুর শেষ মুহূর্তের পূর্বক্ষণে হয়। হাদীস শরীফে এসেছে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মহা মহিম আল্লাহ তা'য়ালা বান্দার তওবা তখন পর্যন্ত কবূল করেন যে পর্যন্ত তার উপর মৃত্যু যন্ত্রণার গরগরা প্রকাশ না পায় (অর্থাৎ রূহ্ কণ্ঠাগত না হয়)।” (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
এই হাদীসটি হাসান। হাদীসটিতে স্পষ্ট যে মৃত্যু রোগে পতিত থাকলেও তওবা করতে হবে। সুতরাং কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং হাদীস শরীফের আলোকে প্রমাণিত হয় যে নামায, রোযা, হজ্ব- উমরা, রোগ, মুসীবত ইত্যাদির দ্বারা সগীরা গুনাহ মাফ হয়, কাবীরা গুনাহ মাফ হয়না। এজন্য নামায-রোযার পাশাপাশি রোগ-মুসীবতের সময় তওবা-ইস্তিগফার খুব গুরুত্ব সহকারে করা উচিত। উল্লেখ্য যে সংক্রামক গুনাহ ও অসংক্রামক গুনাহ অর্থাৎ বান্দার হকের সাথে কিংবা আল্লাহর হকের সাথে সম্পর্কযুক্ত সব গুনাহই তওবা ও ইস্তিগফার দ্বারা মাফ হতে পারে। তবে তওবা-ইস্তিগফারের স্বরূপ জানা জরুরী। শুধু মুখে 'আসতাগফিরুল্লাহ' বলার নাম তওবা ও ইস্তিগফার নয়। তাই আলেমগণ এ বিষয়ে একমত যে, গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি সেজন্য অনুতপ্ত হয়ে এবং অবিলম্বে তা পরিত্যাগ করে ও ভবিষ্যতে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে তওবা করবে। তবেই তা গ্রহণযোগ্য হবে ।
অবশ্য যে গুনাহের ক্ষমা চাওয়া হয় কোনোভাবে যদি তার ক্ষতিপূরণ সম্ভব হয়, তাহলে তার ক্ষতিপূরণ করাও তওবার অন্যতম শর্ত। যেমন, কেউ কারো টাকা আত্মসাৎ করেছে, এখন সে বসে বসে তওবা করেছে যে “হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দিন”-এ তওবা কবুল হবেনা। এ কারণে যে, যে ব্যক্তির টাকা আত্মসাৎ করেছে, যতোক্ষণ পর্যন্ত তার টাকা ফেরত না দিবে বা তার থেকে মাফ না নিবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত তওবা কবূল হবে না। কারণ, এ অবস্থায় ক্ষতিপূরণ সম্ভব। কিংবা কারো অন্তরে ব্যথা দিয়েছে বা কাউকে কষ্ট দিয়েছে। তার ক্ষতিপূরণ সম্ভব। তা হলো, তার থেকে মাফ নিয়ে নিবে। তদ্রূপ আল্লাহর হকের বিষয়ে তওবা করার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। যেমন, বালেগ হওয়ার পর যে নামাযগুলো পড়েনি, তওবা করার সাথে সাথে তার ক্ষতিপূরণও করতে হবে। নামায ছুটে গিয়ে থাকলে বা রোযা বাদ পড়ে থাকলে, যাকাত অনাদায়ী থাকলে আগে সেগুলোর ক্ষতিপূরণ করা তওবা কবূলের পূর্বশর্ত। এখন প্রশ্ন হতে পারে যে যদি তাই হয় যেমনটি বললাম, তাহলে হাদীস শরীফে 'সকল মরিচা দূর করার ন্যায়' শব্দগুলো বলা হলো কেন? একজন প্রকৃত মুসলমান কবীরা গুনাহ করবে এটা দুরূহ ব্যাপার । তারপরও করে ফেললে তওবা করতে দেরি করেনা। তাছাড়া শহীদের ফযীলতের ব্যাপারেও তো এমন মাফের কথা এসেছে । কিন্তু তাই বলে তো তার ঋণ ইত্যাদি মাফ হবেনা। সুতরাং হাদীসে ব্যাপক ক্ষমা
উদ্দেশ্য নয়। বস্তুত রোগ বা বালা-মুসীবত, মানুষের মধ্যে অনুতাপ, কোমলতা, বিনয়, বশ্যতা, নম্রতা, আল্লাহভীতি ও পরকালের স্মরণ সৃষ্টি করে এবং ধৈর্য ও শুকরিয়া আদায়ের মানসিকতা পয়দা করে । ফলে আল্লাহ তা'য়ালা চাইলে নিজ বিশেষ অনুগ্রহে কারো কাবীরা গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন । সেটা ভিন্ন কথা। তাই রোগাক্রান্ত সময় উপযুক্ত নিয়মে তওবা-ইস্তিগফার করার মোক্ষম সুযোগ। এই সুযোগকে কেউ যদি যথার্থ কাজে লাগাতে পারে, তখন আমরা আশা করতে পারি, সেই ব্যক্তি সৌভাগ্যবান যিনি এ নশ্বর পৃথিবীতে রোগের মাধ্যমে তার সকল পাপরাশি মার্জনা করাতে সক্ষম হয়েছেন এবং স্বীয় যিন্দেগিকে নেকি দ্বারা পরিপূর্ণ করে নিয়েছেন ।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]