একত্রে পানাহার সম্পর্কে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুনির্দিষ্ট উপদেশগুলো কী?

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সচরাচর একাকী খাদ্য গ্রহণ করতেননা। তিনি সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের সাথে একই দস্তরখানে (dining mat) একত্রে খাবার খেতেন এবং খাওয়াতেন। এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস বর্ণনা করছি। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, "একদা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ছয়জন সাহাবী নিয়ে খানা খাচ্ছিলেন। ইতোমধ্যে একজন বেদুঈন এসে তাদের সাথে খানায় যোগ দিয়ে কয়েক লোকমাতেই সব খাবার শেষ করে ফেললো। তখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এই ব্যক্তি যদি আল্লাহ্র নামে শুরু করতো, তবে তোমাদের সকলের জন্য এই খাবারই যথেষ্ট হতো।” (আত-তিরমিযী) ২৭৮
অনেক সাহাবীই এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হযরত ওয়াহশী ইবনে হারব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতিপয় সাহাবী আরজ করলেন, “হে আল্লাহ্ রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা পানাহার করি কিন্তু তৃপ্তি পাইনা বা তৃপ্তি মিটেনা।” তখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সম্ভবত তোমরা পৃথক পৃথকভাবে খাও।” তারা উত্তর দিলেন, “জি, হ্যাঁ।” অতঃপর নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা একত্রে খানা খাও এবং আল্লাহ্র নামে খাও। আল্লাহ্ পাক এতে তোমাদের বরকত দেবেন।” (মুসনাদে আহমাদ, আবূ দাউদ ও ইবনে মাজাহ)
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা'য়ালার নিকট সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য হলো সেই খাদ্য, যার মধ্যে অধিক হাত শরীক হয়।" (আল-মুজামুল আওসাত) ২৮০
সুপ্রিয় দর্শক! আমাদের দেশে একত্রে খাওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। বিশেষ করে পবিত্র রমযান মাসে এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। দেখা যায় প্রায়ই কোনো বাড়িতে, অফিসে বা ভালো কোনো খোলা জায়গায় বা স্কুল-কলেজে ইফতার পার্টি হয়। এতে অনেক লোক একত্রে খানা খান। সত্যি কি সুন্দর নিয়ম। অনেক পরিবারের পিতা-মাতা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে ডেকে নিয়ে একত্রে খানা খান। এটি সত্যি সুন্দর অভ্যাস এবং রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত। সাহাবায়ে কিরাম বলেছেন, একত্রে খাওয়া মহৎ চরিত্রের পরিচয় বহন করে।

খানা শেষ করে হাত ধোয়ার আগে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী করতেন? এ ব্যাপারে তাঁর কী উপদেশ ছিলো?


উত্তর : হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা শেষ করে তিনটি আঙ্গুল চাটতেন।" (আত-তিরমিযী) ২৮১
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল ও বর্তন চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি আরো বলেছেন, তোমরা জানোনা যে খাদ্যের কোন অংশে কল্যাণ (বরকত) নিহীত আছে।” (সহীহ মুসলিম) ২৮২
কা'ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতার থেকে জেনে বলেন, “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর তিন আঙ্গুল দ্বারা খানা খেতেন এবং খানা খাওয়ার পর আঙ্গুলগুলো চেটে খেতেন।” (সহীহ মুসলিম) ২৮৩
হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোনো ব্যক্তি তার আঙ্গুল চেটে পরিষ্কার না করা পর্যন্ত রুমাল দ্বারা স্বীয় হাত সাফ বা পরিষ্কার করবেনা, কারণ কোন খানার ভেতর কি বরকত আছে তা জানা নেই।” (সহীহ মুসলিম ও আত-তিরমিযী) ২৮৪ হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ খানা খেলে ঐ পর্যন্ত আঙ্গুল মুছবেনা, যতোক্ষণ পর্যন্ত সে নিজে চেটে না নেয় অথবা অন্য কারো দ্বারা না চাটায়।” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম) ২৮৫ সুপ্রিয় দর্শক-পাঠক! রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাওয়া শেষ করার পর প্লেট মুছে খেতেন এবং পানি দিয়ে ধৌত করার পূর্বে আঙ্গুল চেটে নিতেন। এতে খানায় বরকত হয়। খানার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয় । কারণ রিযিক আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা'য়ালার সবচেয়ে বড় নিয়ামত ।
নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, “যে ব্যক্তি খানা খাওয়ার পর প্লেট চেটে খায়, ঐ প্লেট তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।” (মুসনাদে আহমাদ ও ইবনে মাজাহ) ২৮৬
তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে যে আঙ্গুল চোষে খাওয়া পরিপাকের জন্য উপকারী। আঙ্গুল চাটা মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস । শৈশব থেকে দেখা যায় যে শিশুরা আঙ্গুল চোষে ৷
সুপ্রিয় দর্শক-পাঠক! আজকাল আমাদের মাঝে অনেকটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে যে প্লেটে কিছু খাবার রেখে দেয়া । এটি নাকি ভদ্রতা? তবে কী ধরনের ভদ্রতা বা কোন্ দেশীয় ভদ্রতা তা জানা যায়না । আমি

কোনো মুসলিম দেশে এটা দেখিনি। অনেকে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার ইচ্ছে করেই প্লেটে নিয়ে নেয়। আর সামান্য কিছু খেয়ে বেশির ভাগ খাবার প্লেটে রেখে দেয়। কার জন্য? সম্ভবত শয়তানের জন্য। তার কি মনে হয়, তার এই কালচার দেখে কেউ তাকে প্রশংসা করবে! Is it the latest fashion? Indeed it is the devil's culture বা শয়তানের সংস্কৃতি ।
সুধী দর্শক! খানা অপব্যয় করা গুনাহের কাজ। কুরআনের সূরা আল আ'রাফের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ পাক বলেন,
كُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ )
“কুল্ ওয়াশরাবু অলাতুসরিফ, ইন্নাহু লা মুহিব্বুল মুসরিফীন।”
“তোমরা খাও এবং পান করো। তবে অপব্যয় করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা'য়ালা অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেননা।” (আল আ'রাফ ৭:৩১)
"Eat and drink, but waste not by extravangence, for Allah does not love those who are extravagant or prodigals." (Al Araf 7:31)
কুরআনের এ আয়াত আমাদের এ শিক্ষাই দেয় যে খাদ্যদ্রব্য নষ্ট বা অপচয় করা গুনাহ। এ জন্য দেখা যায়, গ্রামের মহিলারা চাউল বাছাই করার সময় প্রতিটি চাউল মাটি থেকে খুঁটে খুঁটে কুড়িয়ে নেন। একটি চাউলও ফেলে রাখেননা। অপরদিকে লক্ষ্য করা যায় যে বড় বড় হোটেলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে খাবার নষ্ট হয়। আমার বিশ্বাস, এসব হোটেলে যে পরিমাণ খানা নষ্ট হয়, তা দিয়ে ঢাকা শহরের ফুটপাথের সকল অভুক্ত লোককে খাওয়ানো সম্ভব। স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এদিকে দৃষ্টি দেবেন কি?

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]