ভাঙা গ্লাস বা কাপে পানি পান করা কি নিষেধ? এ সম্পর্কে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে আছে কী?

হাদীসের বর্ণনাকারী হচ্ছেন হযরত আবূ সা'ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন, “নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রের ভাঙা অংশের দিক থেকে অথবা পাত্রের ছিদ্রপথে পানি পান করতে এবং পাত্রের মধ্যে ফুঁক দিতে নিষেধ করেছেন ।” (আবূ দাউদ) ৩২১
তিনি আরো বলেন, "নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশকিয়ার মুখ খুলে (বা ভেঙ্গে) তাতে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।" (সহীহ আল বুখারী) ৩২২
দুটো রিওয়ায়াত মিলিয়ে একত্র করলে আমাদের সামনে তিনটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়। তা হচ্ছে, ১. পাত্রের ভাঙা অংশ থেকে পানি পান না করা;
২. পানীয়ের মধ্যে ফুঁক না দেয়া, যা আমি আগে আলোচনা করেছি এবং
৩. কলসের বা কাপের ভাঙা জায়গায় মুখ লাগিয়ে পানি পান না করা ।
“পাত্রের ভাঙা অংশ থেকে পানি পান করা যাবে না” রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের প্রথম উপদেশের মধ্যে বিজ্ঞান পুরোপুরি বিদ্যমান। কারণ, ভাঙা কাপ বা গ্লাসের ভাঙা অংশ সাধারণত ধারালো থাকে। এতে পানি পান করার সময় কারো ঠোঁট কেটে যেতে পারে। তদুপরি এ কারণে যে, ভাঙা কাপ বা গ্লাস পরিষ্কার করার পরও ময়লা আবর্জনা ভাঙা স্থানে লেগে থাকতে পারে। অনেক সময় মুখের লালা, খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ আটকে থাকতে পারে যা ঐ দিক দিয়ে পানি পান করার সময় পেটে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। আমাদের অনেকের ঘরে ব্যবহৃত মেটে বা চীনামাটির থালা-বাসনের ক্ষেত্রে এ অবস্থাটি খুবই লক্ষ্য করা যায়। কারণ চীনামাটির থালা-বাসনের ভাঙা অংশের মধ্যে নিঃসন্দেহে ময়লা জমে থাকতে দেখা যায়। পরিষ্কার করা সত্ত্বেও ভাঙা অংশের বিভিন্ন কোণায় তা লেগে থাকে। ফলে তা সম্পূর্ণরূপে দূর হয়না। তাই কলস বা কাপের ভাঙ্গা জায়গা মুখ লাগিয়ে পানি করা উচিত নয়।

মশা-মাছি বা অন্য কোনো কীটপতঙ্গ থেকে খাদ্য ও পানীয়দ্রব্য রক্ষা করার জন্য রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ কী? এ ব্যপারে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান কী বলে? সর্বপ্রথম খাদ্য ঢেকে রাখার বিধান কে চালু করেছেন?


উত্তর : এ প্রশ্নের উত্তর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীস থেকে দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশা'আল্লাহ, যা সহীহ আল বুখারী, মুসলিম ও আবূ দাউদ শরীফে উদ্ধৃত আছে ।
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা (রাতে) ঘুমানোর সময় বাতিগুলো নিভিয়ে দাও। (ঘরের) দরজাগুলো বন্ধ করে দাও, পান পাত্রের মুখ বন্ধ করে দাও এবং খাবার ও পানীয়ের পাত্রগুলো ঢেকে রাখো। সম্ভবত তিনি একথাও বলেছেন যে ঢাকবার কিছু না পেলে অন্তত একটি কাঠি হলেও আড়াআড়িভাবে তার উপর রেখে দাও।” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম) ৩২৩
আবূ দাউদ শরীফে উদ্ধৃত হাদীসটিও বর্ণনা করেছেন হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন, “তোমরা ঘরের দরজা 'বিসমিল্লাহ' বলে বন্ধ করবে। কেননা, এভাবে দরজা বন্ধ করলে শয়তান তা খুলতে পারেনা । আর আল্লাহর নাম নিয়ে বাতি নিভাবে এবং স্বীয় পাত্রের মুখ ঢেকে রাখবে, যদিও তা এক টুকরা কাঠি দিয়েও হয়। আর তুমি আল্লাহর নাম নিয়ে তোমার মশকের মুখ বন্ধ করবে।” (আবূ দাউদ) ৩২৪ জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারেনা, সে বন্ধ মশকের মুখও খুলতে পারেনা এবং সে পাত্রের মুখও খুলতে সক্ষম হয়না। (আর তোমরা এজন্য বাতি নিভিয়ে রাখবে যে), অধিকাংশ সময় ইঁদুর লোকের ঘর জ্বালানোর কারণ হয়ে থাকে।” (আবূ দাউদ) ৩২৫
কারণ অধিকাংশ সময় বাতি জ্বালানো থাকলে রাতে ইঁদুর তা টেনে নিয়ে যায়, ফলে গৃহে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য ঘরের উন্মুক্ত বাতির আগুন নিভিয়ে শয়ন করা উত্তম। প্লেগ বা মহামারী নামক ব্যাধি থেকে নিরাপদে থাকার জন্য তিনি ১৪৫০ বছর পূর্বেই খাদ্যদ্রব্য ও পানির পাত্রের মুখ রাতে বন্ধ বা ঢেকে রাখতে উপদেশ দিয়েছেন, যা সত্যি বিস্ময়কর। নিম্নবর্ণিত হাদীসটি থেকে এ বিষয়ে জানা যায় । হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন যে আমি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “তোমরা খাদ্যদ্রব্যের পাত্র ঢেকে রেখো, পানির মশকের মুখ বেঁধে রেখো, কারণ সত্যিই বছরে এমন একটি রাত রয়েছে যখন মহামারী নেমে আসে এবং যেসব পাত্র ঢাকা থাকেনা এবং যেসব পানির মশক ভালোভাবে বাঁধা থাকেনা, সেসব জায়গায় তা প্রবেশ করে।” (সহীহ মুসলিম) ৩২৬ লাইস ইবনে সা'দ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণিত হাদিসে দিনের কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন যে, “বছরে এমন একটি দিন আছে যে দিনে মহামারী নাযিল হয়। রাবী হাদীসের শেষে বাড়িয়ে বলেছেন যে লাইস বলেন, আমাদের মধ্যে অনারবগণ এ সময় সতর্ক থাকে।” (সহীহ মুসলিম) ৩২৭
মশক হচ্ছে চামড়ার থলে, যাতে করে পানি বহন করা যায়। আমাদের এদেশে এর বিকল্প হচ্ছে কলস বা পানির জার। খাদ্যদ্রব্য বা পানীয়দ্রব্য ঢেকে রাখার বিষয়ে আরেকটি হাদীস আছে যা বর্ণনা করেছেন হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন, “আবূ হুমাইদ নামক জনৈক আনসার ব্যক্তি নকী নামক স্থান থেকে এক পেয়ালা দুধ নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে নিয়ে আসলেন। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি ঢেকে আনোনি কেনো? এক টুকরা কাঠি দিয়ে হলেও ঢেকে আনা উচিত ছিলে।” (সহীহ আল বুখারী) ৩২৮
এ হাদীস থেকে জানা যায় যে তরল পদার্থ দূষিত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য তিনি পাত্র ঢেকে রাখার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করতেন।
সম্মানিত দর্শক, পাঠক ও শ্রোতামণ্ডলী! এ দুটো হাদীস থেকে আমরা যেকথা জানতে পারি তা হচ্ছে, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সর্বপ্রথম খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখার মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের কথা বলে গেছেন, যখন বিজ্ঞানের আবিস্কার বলতে কিছুই ছিলোনা। চিকিৎসা বিজ্ঞান আমাদের বলে যে খাদ্য ও পানীয়দ্রব্য খুবই সাবধানে রাখা উচিত। কোনো কিছুই যেনো খাদ্যদ্রব্য বা পানীয়কে দূষিত করতে না পারে, যাকে ইংরেজিতে বলি food safety or food security. এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড প্রকাশিত হয়েছে, যা ISO 22000 Food Safety Management System (FSMS) নামে অভিহিত।
বস্তুত মশা-মাছি হঠাৎ করে কোথা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে খাদ্যদ্রব্যে বসে যায় তা বলা কঠিন। উদাহরণস্বরূপ কাঁঠালের রোয়া খাওয়ার সময় কতো বড় বড় মাছির হঠাৎ সমাগম, সত্যি আশ্চর্যের বিষয়। এসব মাছি তাদের পায়ে অসংখ্য রোগজীবাণু নিয়ে আসে। মাছির আক্রমণ ও উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়া এবং খাদ্যদ্রব্য দূষিত হওয়া থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে খাদ্যদ্রব্যের পাত্র ঢেকে রাখা। আর স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের এই মূলনীতির কথাই বলে গিয়েছেন, আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় ১৪৫০ বছর আগে, যখন বিজ্ঞান এসব বিধি-বিধান আবিষ্কারের ধারে কাছেও ছিলোনা।
খাবার পাত্র খোলা রাখার আরেকটি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে, খাবার পাত্রে এমন কিছু পড়তে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এতে রোগ সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে টিকটিকি বাস করে । এদের দেহ যেমন বিশ্রী, তেমন এদের শরীরও বিষাক্ত। কোনো খাদ্রদ্ৰব্য বিষাক্ত হওয়ার জন্য এর মধ্যে একটি টিকটিকি পতিত হওয়াই যথেষ্ট। সুতরাং আমি সম্মানিত দর্শক ও পাঠকবৃন্দকে স্বাস্থ্যরক্ষার এই দিকটির উপর সতর্ক দৃষ্টি দেবার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাবো। বস্তুত শত শত বছর ধরে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞান আজ যেসব সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে, তা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক আগেই অর্থাৎ ১৪৫০ বছর পূর্বেই বলে গেছেন। খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় পাত্র ঢেকে রাখার বিধান এর অন্যতম উদাহরণ। বস্তুত সে জাতিই প্রকৃত কল্যাণ লাভ করেছে যে জাতি রসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ও উপদেশকে তাদের ব্যবহারিক জীবনে কাজে লাগিয়েছে।

FOR MORE CLICK HERE
NTRCA COLLEGE LEVEL HISTORY/ইতিহাস গাইড/ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ইতিহাস
১০ তম বিসিএস -৪৪তম বিসিএস এর প্রশ্ন ও সমাধান 10th BCS to 44th Bcs MCQ Question Solution
বিসিএস ব্যাংক প্রাইমারি পরীক্ষার-এর প্রশ্ন ও সমাধান
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন SEO বই লেখক : মোঃ মিজানুর রহমান
মাতৃস্বাস্থ্য/Motherhood
ওষুধ নির্দেশিকা
সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৫৬৩ টি হাদিস)
সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৭৪৫৩ টি হাদিস)
সুনানে তিরমিজি শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৩৯৫৬ টি হাদিস)
সুনানে নাসায়ী শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫৭৫৮ টি হাদিস)
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৪৩৪১ টি হাদিস)
সুনানে আবু দাউদ শরীফ হাদিস আরবি বাংলা (৫২৭৪ টি হাদিস)

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]