বিশ্ব মানবতার কল্যাণে আল-কুরআনের নীতিমালার মধ্যে চারিত্রিক উৎকর্ষের দিক নির্দেশনা অন্যতম। মানুষের প্রকৃত
উন্নতি ও সফলতা নিহিত রয়েছে চারিত্রিক উৎকর্ষের মধ্যে। মৌলিক মানবীয় সদগুণাবলী ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়ে
ইহ-পরকালীন শান্তিও মুক্তি সফলতার উচ্চ-শিখরে আসীন হওয়া যায়। রাসূলুল্লাহর (স) চরিত্রের প্রধান ভিত্তি হল
আল-কুরআন। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ (স) চারিত্রিক সকল গুণ আল-কুরআনের শিক্ষার ছাঁচে গঠিত হয়েছিল। হযরত
আয়েশা (রা) বলেন,
كان خلقھ القرأن
‘পরিপূর্ণ কুরআন হচ্ছে তাঁর চরিত্র।’
সদাচার, সত্যবাদিতা, সৎকার্য, পরের মঙ্গল কামনা, খিদমতে খালকের প্রেরণা, আল্লাহর নির্দেশের অনুসরণ, আচারআচরণে শালীনতা, চিন্তা-চেতনায় দৃঢ়তা, মন-মানসের পবিত্রতা, ইবাদতে নিষ্ঠা, ধর্ম-প্রচারের অদম্য আগ্রহ, সঙ্গীসাথীদের মংগল কামনা, জীবের প্রতি দয়া, সহমর্মিতা ইত্যাদি গুণাবলীতে ভূষিত হওয়ার জন্য পবিত্র কুরআন বারবার
আহবান জানিয়েছে।
পবিত্র কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বে মানব জাতির চরিত্রে বহু ত্রট্টটি-বিচ্যুতি বিদ্যমান ছিল। আল্লাহ্ তা’আলা এ সব
ত্রট্টটি-বিচ্যুতি দূর করার ব্যবস্থা করলেন। মহান আল্লাহ বলেন,
كِتَابٌ أ َنزَ لْنَاهُ إ ِل َیْكَ لِتُخْرِ جَ ٱلنَّاسَ مِنَ ٱلظ ُّل ُمَاتِ إ ِل َى ٱلنُّورِ ب ِإ ِذ ْنِ رَ بِّھِمْ
“এ কিতাব তোমার প্রতি অবর্তীণ করেছি, যাতে তুমি মানব জাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে অন্ধকার থেকে
আলোর দিকে বের করে আনতে পারো।” (সূরা ইবরাহীম : ১)
কুরআনের অপর নাম ফুরকান অর্থাৎ সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী। বাস্তবিকই আল্লাহ্ পাক পবিত্র কুরআনের
মাধ্যমে যুগে যুগে মানব চরিত্র সংশোধন, উন্নত ও সকল প্রকার কলুষ হতে মুক্ত করার জন্য একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ
ব্যবস্থাপত্র দান করেছেন। যাদের তাকদীর ভাল, তারা কুরআনী ব্যবস্থাপত্র ও বিধি-নিষেধ মেনে চলে ইহকালেও অমর
হয়েছেন এবং পরকালেও আরাম-আয়েশ লাভ করবেন। পক্ষান্তরে যারা কুরআনের নির্দেশিত বিধি-নিষেধ মানেনি, তারা
শয়তানী চক্রে পড়ে জীবন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পদদলিত, মথিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত হয়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায়
নিয়েছে। সমগ্র মানব জাতির জন্য কুরআন বহন করে এনেছে সৎপথে জীবন-যাপন করে দুনিয়া ও আখিরাতে সুখ-শন্তি
ভোগ করার ব্যবস্থা।
চরিত্র গঠনে আল-কুরআনের নির্দেশনা
এবার মানব চরিত্র সংশোধন ও উন্নত করার জন্যে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত কতকগুলো বিধি-নিষেধ এখানে উপস্থাপন
করা হল১. অহংকার ও গর্ব না করার জন্য পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে।
২. লোভ-লালসাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। লোভ-লালসাকে হারাম করা হয়েছে। (সূরা আন-নূর :২৮)
৩. স্বার্থের লোভে গরীব, ইয়াতীম ও অসহায়ের ধন-সম্পত্তি আত্মসাৎ করাকে নিজের পেট আগুন দ্বারা পূর্ণ করার মত
জঘন্য ও মারাত্মক কাজ বলা হয়েছে। (সূরা আন-নিসা : ১০)
৪. জিনিসপত্র কেনা-বেচার সময় মাপে কম না দেয়ার জন্য হুঁশিয়ার করা হয়েছে। যারা মাপে কম দেবে, তারা দুনিয়া
ও আখিরাতে ধ্বংস হয়ে যাবে।
৫. নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি, ধন সম্পত্তি, দেহের শক্তি ও চিন্তা-শক্তির দ্বারা হলেও অপরকে যথাসম্ভব সাহায্য-সহানুভূতি
করা একান্তপ্রয়োজন। “আল্লাহ্ পাক পরোপকারীকে বড়ই ভালবাসেন।” (সূরা আল-বাকারা : ১৯৫)
৬. বৃথা কাজ-কর্ম, ধ্যানÑধারণা ও আলাপ-আলোচনা ত্যাগ করার জন্য উপদেশ দেয়া হয়েছে, যেন আমরা ভদ্র ও
উন্নত জীবন-যাপনে সক্ষম হই। (সূরা আল-মুমিনুন : ৩-৯) আমাদের প্রতিটি কাজ ও কথার জন্য আল্লাহ্র কাছে
জবাবদিহি করতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে।
৭. আল্লাহ্ প্রদত্ত নিয়ামত প্রয়োজনমত ভোগ করে শোকর করার জন্য বলা হয়েছে। কৃপণতা ও বৈরাগ্য অবলম্বন না
করার জন্য নির্দে দেয়া হয়েছে। (সূরা মুহাম্মাদ : ৩৮)
৮. স্ত্রী-পুত্র, মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজনসহ øেহ-মমতা ও হাসি খুশিতে বসবাস করার জন্য বলা হয়েছে। একে অন্যের
দোষ-ত্রট্টটি ও অন্যায়কে যথাসম্ভব ক্ষমা করে মহত্ব ও বীরত্ব প্রকাশ করার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে। (সূরা
আলে-ইমরান : ১৩৪)
৯. ক্ষণস্থায়ী জীবনে এ পৃথিবীতে ধন-সম্পত্তি ও মালপত্র সংগ্রহ করার পেছনে সর্বদা লেগে না থাকার জন্য বলা
হয়েছে। (সূরা আত-তাওবা : ৩৮) আখিরাতের কাজকর্ম করার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
১০. পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া এবং বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের সেবা করত দোয়া সংগ্রহ করা জন্য বিশেষভাবে তাগিদ
করা হয়েছে। (সূরা বনী ইসরাইল : ২৩-২৪)
১১. এমনকি অপর ধর্মাবলম্বী লোকজনের সাথেও ধর্ম নিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। (সূরা
আল-হাজ্জ : ৫৬)
১২. মিথ্যা কথা বলা, অপরকে ঠকানো, ফাঁকি দেয়া ইত্যাদি খারাপ কাজ হতে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
১৩. চুরি করা মহাপাপ। চোরের হাত কাটার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মানুষ যেন নিজ নিজ ধন-সম্পদ নিয়ে সুখে
শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সে আদেশ করা হয়েছে। (সূরা আল-মায়িদা : ৩৮)
১৪. সুদ খাওয়া মহাপাপ। সুদের কারবার না করার জন্য হুঁশিয়ার করা হয়েছে। নবী (স) সুদ খাওয়া, দেয়া ও সুদের
লেখক, সাক্ষী সকলের জন্য সমপরিমাণ পাপ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। (সূরা আল-বাকারা : ২৭৬)
১৫. মানুষের সাথে ভদ্র ও নম্র ব্যবহার করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। (সূরা আন-নাহল : ১২৫)
১৬. বিপদে-আপদে ভীত না হয়ে সাহস, শক্তি ও ধৈর্যধারণ করে জীবনের পরীক্ষাসমূহে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য উৎসাহ
দেয়া হয়েছে। (সূরা আল-বাকারা : ১২৭)
১৭. কাউকেও বিদ্রƒপাত্মক নামে না ডাকার প্রতি তাগিদ করা হয়েছে।
১৮. অহেতুক তর্ক ও আলাপ-আলোচনা হতে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
১৯. সকল প্রকার লোভ-লালসা দমন করার জন্য বলা হয়েছে এবং ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য উপদেশ দেয়া
হয়েছে। প্রত্যেককেই নিজ নিজ কর্মফল ভোগ করতে হবে। আল্লাহ্ বলেন, “ধর্মে কোন জোর-জবরদস্তিনেই।”
আল-কুরআনে আল্লাহ্ আরো উল্লেখ করেন, “যে অণু-পরিমাণ সৎকাজ করেছে, সে তার প্রতিদান পাবে।”
২০. মুক্ত ও পরিস্কারভাবে নিজ নিজ বুদ্ধি-বিবেচনা ও জ্ঞান-সম্পদকে কাজে খাটাবার আহবান জানান হয়েছে। আল্লাহ্র
কুদরত, নিয়ামত, রহমত, হায়াত-মাউত ইত্যাদি স্মরণ করে তাঁর অনুগত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অন্ধ বিশ্বাস পরিহার করে যুক্তি ও বুদ্ধি বিবেচনা খাটিয়ে আল্লাহ্কে বিশ্বাস করার জন্য আহবান জানানো হয়েছে।
(সূরা কাহাফ : ২৯)
২১. এ বিশ্বের যত কিছু সৃষ্ট বস্তু আছে-সব কিছুর প্রতি চিন্তা করত আল্লাহ্কে বিশ্বাস করতে হবে। এতে নিজের
গবেষণা-শক্তি বৃদ্ধি পাবে, অন্তরের সীমাবদ্ধতা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভাব দূর হবে।
সারকথা
মানবজাতির চরিত্র সংশোধন ও উন্নত করার জন্য আল্লাহ্র কুরআন এক অমোঘ ব্যবস্থাপত্র। এ পবিত্র কিতাব যাঁর উপর
নাযিল হয়েছিল তাঁর সম্বন্ধে আল্লাহ্ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে আমি একজন উত্তম চরিত্রের অধিকারী রাসূল
পাঠিয়েছি।” হযরত মুহাম্মাদ (স) উত্তম চরিত্রের অধিকারী বলেই পৃথিবীতে আল্লাহর নির্দেশিত জীবনব্যবস্থা কায়েম
করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর উত্তম চরিত্রে মুগ্ধ হয়েই বহু অমুসলিম ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। পবিত্র
কালামের ধারক ও বাহক হিসেবে নবী (স) সে অনুযায়ী নিজের চরিত্র গঠন করেছিলেন। তাঁর জীবন-চরিত স্বচ্ছ
দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যে কেউ পাঠ করে সেই মুগ্ধ হয়। নবী(স)-এর অবর্তমানেও দেশবরেণ্য ও খ্যাতনামা অমুসলিম জ্ঞানী-
গুণীগণ তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁরা নবীজী সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ অভিমত প্রদান করেছেন।
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মাদ (স) বলেছেন, “মানব চরিত্রের উত্তম গুণাবলীর পূর্ণতা দান করার জন্য আমাকে
পাঠানো হয়েছে।”
মানব চরিত্র সংশোধন ও গঠনের এ মহান ব্রতে বিশ্বনবী (স)-এর প্রধান অবলম্বন ছিল পবিত্র কুরআন। বস্তুত কুরআনই
হলো মানব চরিত্র গঠনের অমোঘ ব্যবস্থাপত্র।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দিন
১. মহানবী (স)-এর উত্তম চরিত্রের প্রধান ভিত্তি হলক. আল্লাহর সান্নিধ্য
খ. আল-হাদীস
গ. আল-কুরআন
ঘ. মহানবী (স)-এর বাণী।
২. ফুরকান শব্দের অর্থ হলক. পাঠ করা
খ. পৃথক করা
গ. সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করা
ঘ. সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী
৩. অহংকার ও গর্ব না করার শিক্ষা আমরা পাইক. আল-কুরআনে
খ. মহানবীর (স) অনুমোদনে
গ. ইমাম আবু হানীফার মাধ্যমে
ঘ. মনীষীগণের আচরণে
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর ঃ ১.গ, ২.ঘ, ৩.ক
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. চারিত্রিক ও নৈতিক উৎকর্ষ বিধানে আল-কুরআনের কয়েকটি নীতি উল্লেখ করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. নৈতিক ও চারিত্রিক উৎকর্ষ বিধানে আল-কুরআনের শিক্ষা আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত